নীল জান্নাত

নীল জান্নাত

আমি নীল।সময়টা ছিল ২০০৬ এর শুরুর দিকে।আমি সমাপনীতে এ প্লাস পেয়ে আমাদের এলাকার ই একটা হাইস্কুলে ভর্তি হই।এলাকার স্কুল বলে শুরু থেকেই আমার অনেক বন্ধু ছিল।তাই নতুন স্কুলে মানিয়ে নিতে আমার কোনো সমস্যাই হয়নি।বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে আর পড়ালেখা করে বেশ কেটে যাচ্ছিল সময়।পড়ালেখায় ভালো ছিলাম আর কারো সাথে কখনো খারাপ ব্যবহার ও করতাম না বলে টিচারগনও আমাকে খুব ভালবাসতো।আমিও স্যারদের খুব সম্মান করতাম।স্যারদের ভালবাসা আর বন্ধুদের হারামিপনার মধ্য দিয়ে ২ টি বছর কিভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না।
.
২০০৮ সাল।আমি তখন ক্লাস এইটে উঠেছি।তখনি আমাদের ক্লাসে একটি নতুন মেয়ে এসে ভর্তি হল।মেয়েটিকে দেখেই বুঝতে পেরেছিলাম মেয়েটি আমাদের এলাকার নয়।যদিও আমি একটু লাজুক টাইপের ছিলাম বলে কখনো কোনো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ত হয়ে উঠেনি।কিন্তু এই মেয়েটিকে দেখার পর কেনো জানি মনের মধ্যে এক অন্যরকম অনুভুতি ঢেউ খেলে গিয়েছিল।তখন বুঝতে পারিনি ঐ অনুভুতি টা কিসের ছিলো।আর সেই অনুভুটি কে বুঝার মত বয়স ও তখন আমার ছিলনা।তখন সুধু এইটুকুই বুঝতে পেরেছিলাম যে যেভাবেই হোক এই মেয়ের সঙ্গে আমার বন্ধুত্ত করতেই হবে।
.
যেই ভাবনা সেই কাজ।লেগে গেলাম মেয়েটির সম্পর্কে ইনফরমেশন যোগার করার কাজে।কিন্তু হারামি বন্ধুগুলিকে কিছু বললাম না।কারন আমি জানতাম ওদের বললে ওরা আমাকে সেই বাশ লেভেলের দিবে।টানা ৭ দিন ছোটাছোটির পর ওর সম্পর্কে সামান্য কিছু ইনফরমেশন যোগার করতে পেরেছিলাম।যেমন এলাকার বন্ধুদের থেকে জানতে পেরেছিলাম ও এলাকায় নতুন এসেছে।তারপর থেকে ওকে ফলো করতে শুরু করলাম।ওকে ফলো করাটা ছিলো আমার জিবনের সব থেকে ভয়ের কাজ।সারাক্ষন ভয়ে ভয়ে থাকতাম যদি দেখে নেয় তখন কি হবে।টানা ৩-৪ দিন ফলো করার পর জানতে পেরেছিলাম ওর বাড়ির ঠিকানা। তারপর ওর ছোট ভাইকে চকলেট গিফট করে জানতে পারি ওর নাম হচ্ছে জান্নাত।ব্যাস,এইটুকুই ইনফরমেশন যোগার করতে পেরেছিলাম এই ৭ দিনে।
.
কিন্তু আমার কাছে এটুকুই যেন ছিল অনেক বড় পাওয়া।মনের মধ্যে বিশ্বজয়ের আনন্দ অনুভব করতে লাগলাম।এই ৭ দিন আমার স্কুলে যাওয়া হয়নি।আমি কখনো এতদিন স্কুল বন্ধ করিনি।বাড়িতেও অনেক বকা শুনতে হয়েছিলো স্কুলে না যাওয়ার জন্য।যে কারনে আমার মাঝে মাঝে একটু মন খারাপ হতো কিন্তু জান্নাতের কথা মনে হলেই কেন জানিনা মন খারাপ কোথায় যেনো পালিয়ে যেতো।
.
পরদিন স্কুলে যেতেই সব বন্ধুরা আমার দিকে কেমন করে যেনো তাকাতে লাগলো।আমি কিছুটা ভয় পেয়ে গেলাম।হারামিগুল
া কিছু জানতে পেরে যায়নি তো?
আমি = কিরে তো তোরা সবাই আমার দিকে এভাবে তাকাচ্ছিস কেন?
আবির > কই ছিলি এতদিন?
আমি = কেন?আমি তো বাড়িতেই ছিলাম।
আকাশ = বাড়িতে ছিলি তাহলে স্কুলে আসিসনি কেন?কোনো প্রবলেম হইছিলো?তুই তো কখনো স্কুল বন্ধ করিসনা।
আমি = নারে দোস্ত। এমনি।বাদ দে না দোস্ত এই টপিক।
রনি = আচ্ছা বাদ দিলাম।চল এবার ক্লাসে যাই।
আমার বেপারটাতে কেমন যেন খটকা লাগলো।হারামিগুলা আমার কথা এত সহজে বিশ্বাস করে নিলো কিভাবে?পরক্ষনেই ভাবলাম যাক ভালোই হইসে।আমাকে কিছু বলতে হবেনা।মুখে হাসি নিয়ে বললাম ঠিকাছে।চল ক্লাসে যাই।
তারপর বন্ধুদের সাথে ক্লাসে গিয়ে বসলাম।একটু পরেই টিচার এসে ক্লাস নিতে শুরু করলেন।কিন্তু জানিনা আজ কেনো জানি ক্লাসে মন দিতে পারছি না।ইচ্ছে করছে সুধু জান্নাতকে দেখতে।কিন্তু আগে কখনো এমন হয়নি।আমি সবসময় ক্লাসে মনযোগী থাকি।বুঝতে পারছিলাম না কি করবো।অনেক্ষন ধরে মনের সাথে যুদ্ধ করে সিদ্ধান্ত নিলাম যত যাই হয়ে যাক না কেনো সবার আগে পড়ালেখা তারপর বাকি সবকিছু।লেখাপড়ার সময় অন্য কোন চিন্তা মাথায় আসতে দেবোনা।এই সংকল্প নিয়ে ক্লাসে আবার মনযোগ দিলাম।
.
দুইটা ক্লাসের মাঝখানে যে অফটাইমটা থাকতো,সেই সময়টাতে সুধু জান্নাতের দিকে তাকিয়ে থাকতাম।কখনো চোখে চোখ পরলে চোখ ফিরিয়ে নিতাম।খুব ইচ্ছে করতো গিয়ে একবার কথা বলি।কিন্তু তা আর হয়ে উঠত না।ওকে দেখলেই কেন জানিনা সব ভাষা হারিয়ে ফেলতাম।মনে হতো যেনো কোনো কথা না বলে চুপচাপ সুধু তাকিয়ে থাকি ঐ নিস্পাপ মায়াবি মুখের দিকে।এভাবেই কেটে গেলো আরো একটি বছর।
.
জে.এস.সি তেও যথা্রীতি এ প্লাস পেয়ে ক্লাস নাইনে উঠলাম।এই একটি বছরে একবারের জন্য হলেও জান্নাতের সাথে কথা বলতে পারিনি।আর এতদিনে আমার হারামি বন্ধুগুলাও সব জানতে পেরে গেছে।ওদের তো সেদিন্ই সন্দেহ হয়েছিলো যখন আমি টানা ৭ দিন স্কুল মিস করেছিলাম।পরে ওরা আমার উপর গোয়েন্দা মিশন চালিয়ে বুঝতে পারে যে আমি জান্নাতকে পছন্দ করি।
.
নতুন ক্লাস,নতুন বই,নতুন পড়া।আর গ্রুপ সাবজেক্ট সায়েন্স নিয়েছি বলে তো পড়ার চাপটা একটু বেশিই।কিন্তু আমার জন্য যেন সব একই ছিলো।একটি বছর কেটে গেলো এখনো পর্যন্ত জান্নাতের সাথে বন্ধুত্ত তো পরের কথা,এখনো কথাই বলতে পারিনি।আগের মত করেই কেটে যাচ্ছিল সময়।
.
দেখতে দেখতে কেটে গেলো আর ৪ মাস।সামনে চলে এলো আমাদের স্কুলের ফুটবল টুর্নামেন্ট। ক্লাস নাইন বনাম ক্লাস টেন।সবাই লেগে গেলাম প্র্যাকটিসে।আমি একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম প্রতিদিন আমাদের প্র্যাকটিসের সময় জান্নাত মাঠের পাশে বসে থাকতো।বেপারটা আমার কাছে খুব ভাল লাগতো।এভাবে একদিন দুদিন করে চলে এলো আমাদের ফুটবল টুর্নামেন্ট।
.
২০০৯ সালের ১৩ এপ্রিল।সেদিন ছিল আমাদের ফুটবল টুর্নামেন্ট।অনেক মানুষ খেলা দেখতে এসেছে।জান্নাত ও এসেছে।আমরা যথাসময়ে মাঠে উপস্থিত হলাম।কিছুক্ষন পরেই রেফারির নির্দেশে খেলা শুরু হলো।আমরা প্রানপনে খেলতে লাগলাম।অনেক হাড্ডাহাড্ডির মধ্য দিয়ে খেলার প্রথমার্ধ শেষ হলো।প্রথমার্ধের পর আমাদের স্কোর ছিলো ২-১।তারপর কিছুক্ষন বিশ্রামের পর আবার শুরু হল দ্বিতীয়ার্ধের খেলা।আমরা আবারো প্রানপনে খেলতে লাগলাম।আমি শুনতে পাচ্ছিলাম জান্নাত আমাদের টিমকে চিয়ার করছে।আমার উৎসাহ আরো বেড়ে গেল।মনে মনে ভাবলাম যেভাবেই হোক হারা চলবেনা।জিততে আমাদের হবেই।অনেক হাড্ডাহাড্ডির পর দ্বিতীয়ার্ধও শেষ হল।তখন আমাদের স্কোর ছিল ৩-২।আমরা বিজয়ি হলাম।
.
খেলা শেষে জান্নাত আমাকে এসে বললো আপনি তো খুব ভাল খেলেন।একচুয়ালি আপনারা সবাই খুব ভাল খেলেন। তখন আমার মনের মধ্যে যেন আনন্দের তুফান বয়ে গেলো।কারন জান্নাত প্রথমবার আমার সাথে কথা বলেছে।আমি মুখে হাসি নিয়ে ধন্যবাদ জানালাম।তারপর সেদিনের মত সেখান থেকে চলে আসলাম।কারন বেশিক্ষন থাকলে হয়ত আবেগ কন্ট্রোল করতে পারবোনা।
.
তারপর থেকেই আমাদের টুকটাক কথা হতে থাকে।কথা বলতে বলতে একসময় জান্নাতের সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ হয়ে যায়।একসময় যার সাথে কথা বলতেই লজ্জা পেতাম এখন তার সাথে প্রায় সারাক্ষনই কথা হয়।কিছু দুস্টুমি,কিছু আবেগ আর কিছু ভাললাগার মুহুর্ত নিয়ে গভীর হতে থাকে আমাদের বন্ধুত্ত।এভাবেই দেখতে দেখতে কেটে গেলো আরও একটি বছর।আমি এবং জান্নাত দুজনেই ভাল রেজাল্ট করে দশম শ্রেনীতে উঠি।
.
এতদিনে আমি বুঝতে পেরেছি আমি জান্নাতকে ভালবেসে ফেলেছি।তাই ঠিক করলাম জান্নাতকে আমার মনের কথা জানাবো।কিন্তু মনের মধ্যে এক অজানা ভয় কাজ করতে লাগলো।যদি জান্নাত রেগে যায়।জদি জান্নাতের সাথে আমার বন্ধুত্ত নস্ট হয়ে যায়।আর তাছাড়া জান্নাত ছিল অনেক স্মার্ট।আর আমি ছিলাম অনেকটা বোকা টাইপের।তাই আর বলা হলোনা।ভালবাসা নিজের মনের মধ্যেই লুকিইয়ে রেখে জান্নাতের সাথে বন্ধুত্তের সম্পর্ক স্থির রাখলাম।
.
বন্ধুদের সাথেও এখন তেমন আড্ডা দেয়া হয়নি।সারাক্ষন সুধু জান্নাতকে নিয়েই ভাবতে থাকি।এদিকে আমার পড়াশোনা লাটে উঠছিল।দেখতে দেখতে টেস্ট এক্সাম চলে এল।পড়ালেখা না করার ফলসরূপ টেস্ট এক্সামে কোনমতে টেনেটুনে পাশ করতে পেরেছি।কিন্তু সেদিকে আমার কোনো খেয়াল ছিলনা।কিন্তু জান্নাত হয়তো বেপারটা কিছুটা বুঝতে পেরেছিল।জান্নাত সেদিন আমাকে বলেছিলো এস.এস.সি তে ভাল রেজাল্ট করতে হবে।আর ততদিন আমার সাথেও যোগাযোগ বন্ধ থাকবে।মন দিয়ে সুধু পড়ালেখা করবে বাকি সব বন্ধ।
.
সেদিন থেকে আমি পড়তে পড়তে সারা দিন রাত এক করে দিলাম।আড্ডা,ফেস
বুক,খেলাধুলা সব বাদ দিয়ে সুধু পড়েছি।এমনকি জান্নাতের সাথেও কোনো যোগাযোগ রাখিনি।একসময় চলে এলো এস.এস.সি এক্সাম।কিন্তু আমার মনে তখন আর কোনো ভয় নেই।কারন আমার প্রিপারেশন ছিল যথেস্ট ভালো।
.
আর তাছারা দীর্ঘ কয়েক মাস পর জান্নাতকে দেখে দেহের মধ্যে যেন প্রান ফিরে পেলাম।এক আন্যরকম আনন্দের ঢেউ খেলে যেতে লাগলো মনের মধ্যে।এক এক করে সবগুলো এক্সামই দিলাম।সবগুলোই যথেস্ট ভালো হয়েছে।এখন সুধু রেজাল্ট এর অপেক্ষা।
.
লাস্ট এক্সাম শেষে সব বন্ধুরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে অনেক কেদেছি।জানিনা আর কখনো দেখা হবে কিনা।দেখা হলেও কেউ কাউকে মনে রাখবে কিনা।নাকি নতুন বন্ধুদের ভিড়ে পুরনো এই বন্ধুদের ভুলে যাবে।তবে এইটুকু জানি আমার এই বন্ধুগুলোকে মনে থাকবে আজীবন।জীবনে যত বন্ধুই আসুক এদের জায়গা কেউ নিতে পারবেনা।
.
সব বন্ধুরা একে একে বাড়ি চলে গেল।সবার চোখেই জলধারা বইছে।এখন সুধু রয়েছি আমি আর জান্নাত।আমি ঠিক করেছি আজ জান্নাতকে আমার মনের কথা জানাবো।কারন আজ না বললে হয়তো আর কখনোই বলা হবেনা।জান্নাতকে বললাম চলো বাড়ি যাই।জান্নাত মাথা নাড়িয়ে সায় দিল।
.
দুজনে রাস্তার পাশ দিয়ে হাটতে লাগলাম।দুজনের মাঝেই বিরাজ করছে নিরবতা।এভাবেই কিছুক্ষন চলার পর নিরবতা ভেঙ্গে আমি বললাম
>জান্নাত
=হুম
>আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই।
=বলো।
>জানিনা এর কথাটা শুনে তুমি কি ভাববে।হয়তো বন্ধুত্তটাও নস্ট হয়ে যাবে।কিন্তু তবু আমাকে বলতেই হবে।
.
কারন আজ না বললে হয়তো আর কখনোই বলা হবেনা।জান্নাত জানিনা তুমি আমার জন্য কি ফীল করো।হয়তো তোমার কাছে আমি বন্ধুর থেকে বেশি কিছুই না।কিন্তু আমার কাছে তুমি বন্ধুর থেকেও অনেক বেশি কিছু।আমার পৃথিবী আমি তুমি।আমি তোমাকে ভালবাসি।কতোটা ভালোবাসি তা আমি নিজেও জানিনা।সুধু এইটুকুই জানি আমার জীবনে মা-বাবার পরেই তোমার স্থান।এইটুকু বলেই আমি জান্নাতের উত্তরে অপেক্ষা করতে লাগলাম ।কিন্তু জান্নাত কিছুই বললো না।সারাটা রাস্তা চুপচাপ ছিল।আমি মনে মনে ভাবতে লাগলাম হয়তো জান্নাত আমার থেকে এটা এক্সপেক্ট করেনি।মনের কথাটা মনের মধ্যে রেখে দিলেই হয়ত ভালো হত।কিছু না হোক অন্তত বন্ধুত্তটা তো টিকে থাকতো। এসব ভাবতে ভাবতে একসময় জান্নাতের বাড়ির সামনে চলে এলাম।জান্নাত চুপচাপ বাড়িতে চলে গেলো।বাই পর্যন্ত বলেনি।আমার নিজেকে সত্তিই তখন অপরাধী মনে হতে লাগলো।আমিও বাড়ি এসেই ফোন বন্ধ করে রুমের দরজা বন্ধ করে শুয়ে পরলাম।সারাদিন আর রুম থেকে বের হইনি।রাতে একবার র্রুম থেকে বের হয়ে ডিনার করে আবার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে শুয়ে পরলাম।পরদিন সকালে রুমের বাইরে শোরগোল শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল।রুমের দরজা খুলে বাইরে বেরুতেই একটা শক খেলাম।দেখি জান্নাত,তার আম্মু,আব্বুর সাথে সোফায় বসে আছে।এই রে…এই মেয়ে আবার বাড়িতে গিয়ে আমার নামে নালিশ করেছে নাকি?যদি করে থাকে তাহলে তো আজকে আমি শেষ। . মনের মধ্যে ভয় নিয়েই আরেকটু সামনে এগিয়ে গেলাম।আমাকে দেখেই বোন বলে উঠলো,
–ভাইয়া তোর এতক্ষনে ঘুম থেকে উঠার সময় হয়েছে?যা জলদি রেডি হয়ে নে।
>রেডী?কিসের জন্য।
ওপাশ থেকে মা বললো,আজ তোর অ্যাঙ্গেজমেন্ট।যা রেডি হয়ে আয়।
>মানে কি মা?আমি ত সবেমাত্রো এস.এস.সি পরিক্ষা দিলাম।আর তুমি আমার অ্যাঙ্গেজমেন্ট করাবে?
ঃ অ্যাঙ্গেজমেন্ট হবে তোর।বিয়ে না বুঝলি।আগে লেখাপড়া শেষ করে জব করবি।তারপর বিয়ে।মানে কমপক্ষে ৭-৮ বছর।
>তাহলে এখন অ্যাঙ্গেজমেন্ট করাচ্ছো কেন?
ঃ গতকালকে ঐ মেয়েটাকে ভালবাসার কথা তো খুব সুন্দর করে বলেছিলি ।এখন এত নাটক করছিস কেনো।যা গিয়ে চুপচাপ রেডি হয়ে নে।
>আমার আর আসল ঘটনা বুঝতে বাকি রইলনা।কি মেয়েরে বাবা।কাল প্রপোজ করলাম আর আজই মা বাবাকে রাজি করিয়ে নিয়ে চলে আসছে অ্যাঙ্গেজমেন্ট করানোর জন্য । আকাশ বেটা তোর কপালে কি আছে ঐ আল্লাহই জানে।এসব বির বির করতে করতে রুমে চলে গেলাম।কিছুক্ষন পর একটা পাঞ্জাবি পরে বেরিয়ে এলাম। ওইদিন খুব আনন্দের সাথেই অ্যাঙ্গেজমেন্ট সম্পন্ন হলো।আবার তার পরদিনই বাড়িতে সব নরমাল হয়ে গেল।যেন কিছুই হয়নি।মা,বাবা আর বোনের এমন কান্ড দেখে সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না
.
এরপর সবকিছু নরমালি চলতে লাগলো।পরে অবশ্য জান্নাতকে জিজ্ঞেস করেছিলাম সে এমন কেন করলো।উত্তরে বলেছিল আমি যাতে ওকে কখনো ছেড়ে যেতে না পারি সেজ্ন্যই এমনটা করেছে ।
.
জেহেতু এক্সাম শেষ তাই জান্নাতের সাথে কথা বলেই সময় কাটতে লাগলো।২ মাস পর এস.এস.সি রেসাল্ট দিল।আমি পেয়েছি ৪.৮৫ আর জান্নাত পেয়েছে ৫.০০ . দুজনে একই কলেজে ভর্তি হলাম।পড়ালেখা আর প্রেম ভালোই চলচিল আমাদের।এভাবেই কেটে গেল এইচ.এস.সি,তারপর গ্রেজুয়েশন।কখনো আলাদা হতে হয়নি আমাদের।গ্রেজুয়েশনের পর বাবার পরিচিত এক বন্ধুর অফিসে ছাকরি ও পেয়ে গেলাম।একেই হয়ত বলে লাক। .
২০১৭ এর ১৮ নভেম্বের খুব ধুমধামের সাথেই আমার আর জান্নাতের বিয়ে সম্পন্ন হল।রাতের বেলা কোলবালিশ নিয়ে বাসর ঘরে ঢুকলাম।জান্নাত আমার হাতে কোলবালিশ দেখে চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেশ করলো,
=এটাকে এনেছ কেন?
>এটাই আমার এতদিনের সঙ্গি ছিলো।
এখন বেচারিকে একা করে দিলে কষ্ট পাবে।
=ফেলো এটাকে এক্ষুনি । আর বেচারি মানে?এটা মেয়ে নাকি?
>না না ।বেচারি না বেচারা ।
=সে যাই হোক । ফেলো এটাকে এক্ষুনি ।
>তাহলে আমি কি জডিয়ে ধরে ঘুমাবো?
=কি জড়িয়ে ঘুমাবা মানে?বউ আছে বউকে জড়িয়ে ঘুমাবা ।
>বৌয়ের মুখে এমন কথা শুনে মনটা খুশিতে নাচতে লাগলো।কোলবালিশ কে ফেলে দিয়ে বৌকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলাম।
.
আজ মনে হচ্ছে সত্যিই আমি অনেক লাকি । নাহলে এত ভালো পরিবার, এত ভালো বউ আর এত সুন্দর একটা জীবন সব একসাথে কজনই বা পায় ।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত