প্রপোজসমূহ

প্রপোজসমূহ

-> দেখো নিশি, আমি তোমাকে সত্যিই অনেক বেশি ভালবাসি। আর কতো বার বলবো। তুমি বুঝো না কেনো?
— কি বুঝবো?
-> তোমাকে ছাড়া আমার কেমন যেন একা একা লাগে। খুব অসহায় ফিল করি
— দেখেন উৎস ভাইয়া, আপনাকে আমি আগেও বলছি আর এখন আবারো বলছি রাস্তা মাপেন। আমার কাছে এইসব হবে না।

কথা টা বলেই নিশি ওর বান্ধবীদের নিয়ে হাসতে হাসতে চলে গেলো। সেই ১ম দিন থেকে এখন পর্যন্ত ওকে যতবারই আমার ভালবাসার কথা বলেছি ও ততোবারই “রাস্তা মাপেন” বলে হাসতে হাসতে চলে গেছে। দিনের পর দিন সে হাসি যেন বেড়েই চলেছে আর আমার কষ্ট। এবারেও তার ব্যতিক্রম হলো না। আর ওকে ভাইয়া ডাকতে অনেকবার মানা করছি। তাও প্রতিবার বলবেই। ফাজিল মাইয়া। যেন খুব মজা পায় বলে। আমি ওর চলে যাওয়া রাস্তার দিকে তাকিয়ে আছি। খুব রাগ লাগছে। আরে বদ মেয়ে আমার রাস্তা তো তোর কাছে। তুই যেদিকে যাবি সেদিকেই আমার রাস্তা।
.
আমি এবার ভার্সিটি তে থার্ড ইয়ারে পড়ি। আর নিশি সেকেন্ড ইয়ার। নিশি যখন ফার্স্ট ইয়ারে তখন ওকে দেখেই আমার ভালো লেগে যায়। কেমন যেন শান্ত বাদামি চোখ, পাতলা ভ্রু, ঘন চুলের মেয়েটার ভেতর অসম্ভব মায়া। সেই মায়ায় মুহূর্তেই আমি ওর প্রেমে পড়ে গেলাম। পরে শুনলাম নিশির বাবা নাকি পুলিশ অফিসার। তাই ৫ মাস শুধু চেয়ে চেয়ে দেখেছিলাম। তারপর একদিন এক গ্লাস পানি খেয়ে হাঁটু কেঁপে কেঁপে ওকে আমার জীবনের ১ম এবং ব্যর্থ প্রেম টি নিবেদন করেছিলাম।
আগেই বুঝেছিলাম এই মেয়ে এতো সহজে ধরা দিবে না। তাই আমি হাল ছাড়িনি। এখন আস্তে আস্তে ভয় কেটে গেছে। তাই এক দুই মাস পরপরই ওকে গিয়ে প্রপোস করে আসি। আজও গিয়েছিলাম। ফলাফল নিয়মিত যা হয় তাই ই হলো।
.
.
এ.আর. প্লাজার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। একটু পর পুলিশের বদ মাইয়া এই দিক দিয়ে ভার্সিটি থেকে আসবে। এবার ভাবছি একটু অন্য ভাবে ট্রাই মারবো। অনেক ভাবেই তো পটানোর চেষ্টা করলাম। কখনো গোলাপ হাতে, কখনো কবিতা শুনিয়ে, কখনো দু হাত বাড়িয়ে শাহরুখ খান স্টাইলে। কোনো কিছুতেই তো কিছু হলো না।
ওইতো নিশি আসছে! সাথে ওর মোটা দুই বান্ধবীও আছে দেখছি। এই দুইটা মনে হয় ওর বডিগার্ড। আমি ডাক দিলাম
-> নিশিইই…
ও আমাকে দেখে এগিয়ে এলো। তারপর বলল
— কি ব্যাপার। আজ ভার্সিটি না গিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে আছেন যে।
-> এইতো একটা কাজে আসছিলাম তো… শুনলাম এখানে যেই নতুন রেস্টুরেন্ট টা হয়েছে ওখানকার খাবার গুলা নাকি অনেক ভাল। তাই ভাবছি টেস্ট করতে যাবো নাকি।
— ও আচ্ছা যান তাহলে। বাই…
-> এই না শুনো
— কি
-> তোমার প্রিয় স্যান্ডউইচও আছে ওখানে
— যান খেয়ে আসেন
-> না মানে একা একা যেতে ঠিক ইচ্ছা করছে না। তুমি ফ্রি থাকলে চলো দুজনে যাই।
এটা শুনে নিশির ভাবের কোনো পরিবর্তন এলো না। শুধু কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। ও হয়তো জানতোই আমি এমন কিছু বলবো। এরপর ও পিছে ঘুরে হাতের ইশারায় ওর বান্ধবীদের ডাকলো।
— এই তোরা ভাইয়ার সাথে রেস্টুরেন্টে যা। ভাইয়া নাকি তোদের ট্রিট দিবে। আমি বাসায় যাচ্ছি। তোরা খেয়ে দেয়ে আয় কেমন।
ওর বান্ধবীদের উদ্দেশ্যে কথাটা বলেই নিশি সোজা হাঁটা ধরলো। যাবার আগে একবার পিছনে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল
— এবার তো আপনাকে আর একা যেতে হলো না
তারপর ওর বান্ধবী দুইটা আমার দিকে হায়েনার মতো লুক দিয়ে আমাকে রেস্টুরেন্টের ভেতর নিয়ে গেল। মনে হলো কত দিন ধরে যেন খায়নি। কাজের কাজ তো কিছুই হলো না মাঝখান দিয়ে মুটকি দুই টা খেয়ে নিজেদের ওজন বাড়িয়ে আমার মানিব্যাগের ওজন টা কমালো। এসব যন্ত্রণা কি সহ্য হয়। তাও নিশির বান্ধবী বলে সহ্য করে নিতে হলো।
.
.
আজ আরেকটা বুদ্ধি পাইছি ওরে পটানোর। কিন্তু নিশি কোথায়? ওইতো ও ক্যাম্পাসের জাড়ুল গাছটার নিচে বসে আছে। আজ দেখছি ও একাই আছে। যাক ভালই হলো। আর একটু এগিয়ে গিয়ে দেখি ওর হাতে বই খাতা। মনে হয় ক্লাসের নোট করছে।
আমি ওর কাছে গিয়ে বললাম
-> কি নিশি পড়াশোনা হচ্ছে নাকি
ও মুখ তুলে আমাকে একবার দেখে নিলো। তারপর আবার খাতার কাজে মনযোগ দিলো। তারপর বলল
— জি… দেখতেই তো পাচ্ছেন
-> আমি কি তোমার পাশে একটু বসতে পারি?
ও আমার দিকে না তাকিয়েই বলল
— জি না ভাইয়া।
ফাজিল মাইয়া। মুখের ওপর না বলে দিলো। মনে হয় এই মেয়ের কাছে আমার এক পয়সাও দাম নাই। কি লজ্জার ব্যাপার। আবার ভাইয়াও ডাকলো। সুন্দর কথায় বাঁশ দেয়া এই মেয়ের থেকে শেখা উচিৎ। যাই হোক প্রেম করতে হলে এতো কিছু ভাবলে চলবে না।
আমি বললাম
-> নিশি একটা কথা
— বলে ফেলেন
-> আমার সাথে এক জায়গায় যাবা?
— কোথায়?
-> শপিং মলে…
— কি করতে?
-> শপিং মলে মানুষ কি করতে যায়? আজ তুমি যা চাও তাই তোমাকে কিনে দিবো
কথাটা শোনার পর নিশি আমার দিকে এমন ভয়ংকর চোখে তাকালো যেই দৃষ্টির সাথে আমার আগে কখনো পরিচয় হয়নি! তারপর বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। একদম আমার সামনা সামনি। ওর চোখেমুখে রাগের ছড়াছড়ি! ও আমার ওপর চেচিয়ে বললো
— কি বললি তুই! আমাকে শপিং করাতে নিয়ে যাবি! আর একবার বল! বল কি বললি!
কি ব্যাপার! নিশি এতো রেগে গেল কেন??? রেগে আমাকে তুই করে বলতেছে। প্লান অনুযায়ী এমন তো হওয়ার কথা ছিল না। আরিফ ই আমাকে এই বুদ্ধিটা দিয়ে বলল মেয়েরা শপিং এর কথা শুনলে নাকি খুশিতে গদগদ করে। আর এ তো উলটে রেগে গেল! রাগে রীতিমত ফুঁসতেছে!! পুলিশ বাপকে বলে দিবে নাতো!!! পরিস্থিতি মারাত্মক দেখে পেছনে ঘুরে দৌড় দেবো তখন নিশি বলল
— এই কোথায় যাচ্ছ… দাঁড়াও বলছি…
আমি সামনে ঘুরে মাথা নিচু করে দাঁড়ালাম। ও বলল
— তুমি কি ভাবলে যে শপিংয়ের কথা বললে আমি তোমার সাথে ডিং ডিং করে চলে যাবো?
-> না মানে সব মেয়েরাই তো…
— আমাকে তোমার ওসব মেয়েদের মত মনে হয়?
-> না… আমি যাই এখন…
— এক পাও নড়বে না এখান থেকে…
আমি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকলাম। খেয়াল করলাম ও তুই থেকে তুমিতে নেমে এসেছে। এই প্রথম ওর মুখে তুমি করে শুনলাম। ও বলল
— আমি একটা ডিসিশন নিলাম
এবার আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম। ওর চোখ এখন অনেক টাই শান্ত। আমার জিজ্ঞাসু দৃষ্টি দেখে ও বলল
— বুঝেছি তোমার প্রপোজের স্টক সব শেষ হয়ে গেছে। এখন কোথা থেকে কি সব শুনে সেসব এপ্লাই করতেছো। বাজে বাজে বুদ্ধি সব
-> তাহলে কি করবো?
— আর কিছু করতে হবেনা। অনেক করেছেন। এবার আপনাকে একসেপ্ট করা হলো। না হলে আরো কত কি দেখতে হবে কে জানে…
আমি ওর কথা শুনে পুরাই ঘোরের মধ্যে চলে গেলাম। কি বলল নিশি!
এরপর ও বই খাতা ব্যাগে ঢুকিয়ে খুব স্বাভাবিক ভাবে এসে আমার হাত ধরল। তারপর বলল
— চলো
আমি ওর দিকে তাকিয়ে শুধু হাঁটতে লাগলাম।
.
-> আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি?
— কেন শপিং মলে
-> ও…
— ও কি গাঁধা। আমার বাবা কি ফকিন্নি নাকি যে তোমার টাকায় শপিং করা লাগবে। আমরা তো রেস্টুরেন্টে স্যান্ডউইচ খেতে যাচ্ছি
-> ওকে চলো
— বিলটা কিন্তু আমিই দিবো। ধরে নাও এতদিন তোমাকে ঘুরাইছি তার জন্য এটা তোমার ট্রিট।।।

আমি কি এখনো ঘোরের ভেতর? এটা কি সেই নিশি যাকে আমি এতটা চেয়ে এসেছি? এখন তার হাত আমার হাতের মুঠোয়। আর তাহলে রাস্তা মাপতে হবে না। তার রাস্তা আর আমার রাস্তা এখন এক। গেবন নিশিময়…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত