–আজ পরাগ এর জন্মদিন অনেকের থেকে উইশ পেয়েছে । অনেক বিশেষ বিশেষ উপহার পেয়েছে।
তার মধ্যে অন্যতম হলো প্রিয় এক ছোট ভাই পরাগের ছবি এঁকেছে একদম মিল রেখে চেহারা সাথে।
এক আপু গল্প লিখে উৎসর্গ করলো তার নামের পরে।
কিন্তু তাতেও তার মন ভরছে না মুখে লোক ভুলানো হাসি হেসে সবাইকে দেখাচ্ছে সে বেশ খুশি।
–এতো জন্মদিন গেলো কারো উইশ এর অপেক্ষা ছিলোনা। কিন্তু এবছর অপেক্ষা করছে,পরাগের আত্মবিশ্বাস আজ বোকা চাহনির মেয়েটা তাকে উইশ না করে থাকতে পারবেনা।
কিন্তু কোথায় তার তো কোন খবর নেই,বন্ধুদের সাথে জন্মদিন উপলক্ষে সময় কাটানোর পর রাত দশটায় বাসায় আসে ছোট খাটো এক এলাহি কান্ড দেখে হা করে আছে পরাগ।
–এই হা বন্ধ কর ভাই বড় মাছি না হলে আর অপেক্ষা করবেনা সোজা তোর পেটে চলে যাবে।(পরাগের বোন)
–আপু তুই ?? আর এগুলা কি?? আমি বিশ্বাস করতে পারছিনা।(পরাগ)
–আরে বলিস না তোর জন্মদিন শুনে আয়াত(বোনের মেয়ে) এর তো নাওয়া খাওয়া বন্ধ শুধু বলে নানু বাড়ি যাবো মামার জন্মদিনের কেক কাটবো,কেক খাবো,বেলুন দিয়ে ঘর সাজাবো, নাচবে আরো কতকিছু তুই গিয়ে শুন।
আমি যা পারছি ছোটখাটো আয়োজন করছি।তুই আয়াত কে শান্তু কর এখন কাঁদছে তুই বাসায় নাই বলে।(পরাগের আপু)
–আয়াত এর অভিমান ভাঙ্গিয়ে তার সব আশা পুরন করে সবাই মিলে এক সাথে রাতের খাবার খেয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি করলো।
*
–পরাগ ডাটা অন করে ফেইজবুক লগইন করলো সাথে সাথে একটা এসএমএস টন বেজে উঠলো।
সিন করে দেখলো সাহেব আপনার নাম্বারটা পেতে পারি? তাড়াহুড়া করে আইডির নাম দেখলো “বোকা পরী”।
দেখলো মেয়েটা লাইনে আছে এসএমএস লিখতে যাবে এমন সময় আবার এসএমএস আসলো “আমি কখনো এতোক্ষন সময় ফেবুকে থাকিনা আপনার জন্য অপেক্ষা করতে করতে হাত ব্যাথা হয়ে গেলো,দয়া করে আপনার নাম্বারটা দায়ে বাধিত করবেন”
এতো লম্বা মেসেজ দেখে পরাগ অবাক হয়ে রিপ্লে দিলো ” দয়া করে আগে পরিচায় দিয়ে উদ্বার করুন তারপর নাম্বার “মেয়েটা রাগের ইমু দিয়ে বললো আমি পাপড়ি।আপনার বাবার বন্ধুর মেয়ে। বারোটা বাজতে চলছে পাঁচ তারিখ শেষ হয়ে ছয় তারিখে পড়বে”
পরাগ কাঁপা কাঁপা হাতে নাম্বার লিখে সেন্ড করে দিলো।
–হঠাৎ পাওয়া আনন্দে হাত কাঁপছে আর বুকের মাঝ খানে ডোল পিটছে এমন অনুভুতি হচ্ছে।
প্রায় দুই মিনিট পর কল আসলো রিসিভ করে ছোট্ট করে সালাম দিলো পরাগ ।
পাপড়ি সালামের উত্তর দিয়ে বললো আপনি জানেন আমি আপনার নাম্বার এর জন্য কতো চেষ্টা করছি। বাবা কে বলিনি বাবা জিজ্ঞাস করবে কেনো? তখন আমি কি বলবো এ মিলে কথা বলেই যাচ্ছে উইশ করার কথা মনে হয় ভুলে গেছে।
তাই পরাগ বললো আপনি যে এতো কথা বলতে পারেন চোখ দেখে বুঝা যায়না।
তা যে উদ্দেশ্যে ফোন দিলেন তা কি বলা হবে?
–পাপড়ি কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো ‘শুভ জন্মদিন পরাগ’ একটু চুপ করে বললো সরি শুভজন্মদিন পারগ ভাইয়া।আপনার মনের সব পবিত্র আশা পুরন হোক।আগামীর পথ চলা সহজ-সরল সুন্দর হোক।পরিবারের সবার সাথে হ্যাপি হোন সাথে মনের মানুষের সাথেও
–পরাগ বলে উঠলো আমার কোন মনের মানুষ নেই তবে কয়েক মাস যাবত একজনের বোকা চাহনির মায়া পড়ে হাবুডুবু খাচ্ছি জানিনা সে আমায় এ থেকে উদ্বার করতে সাহায্য করবে কি না?
–পাপড়ি কয়েক সেকেন্ড কানের সাথে খুবকরে ফোন চেপে ধরে রাখলো, তারপর বললো সে কি জানে আপনার মনের কথা?
–পরাগ বললো এখন তো জানলো।
–পাপড়ি চুপ করে আছে।আসলে ঠিক চুপ করেনা কথা মুখ দিয়ে বের হচ্ছে না।
–পরাগ বুঝতে পেরে বললো পরে বললে হবে।এখন ঘুমাও শুভরাত্রি ভালো একটা স্বপ্ন দেখবে তাতে যেনো আমি থাকি এ বলে হাসতে হাসতে ফোন কেটে দিলো।
খুশিতে কি করবে বুঝতে না পেরে চুপ করে বসে পড়লো খাটে।
কিছুক্ষন পর চিন্তা এলো পাপড়ি আমার লিস্টে এতোদিন আমায় অনুসরন করে যাচ্ছে আমি একটু বুঝতে পাইনি বুঝবো কি ভাবে? ও নিজেই তো বুঝতে দেয়নি।
★
–পাপড়ির বিয়ের জন্য আসতেছে কখন তার বাবার কোন জায়গায় পছন্দ হয়ে যায় আর পাঁকা কথা দিয়ে দেয় তাই পরাগকে জানালো পাপড়ি।
পরাগ চিন্তা তরে কুল না পেয়ে আপুর বাসার দিকে রওনা হলো ।
কারন আপু ছাড়া এ বিপদ থেকে কেউ উদ্বার করতে পারবেনা।
–একদিন শেষ করে দিলেও বলতে পারেনি।কি ভাবে শুরু করবে তা বুঝতে পারছেনা।বিকালে তার আপু নাস্তা বানাচ্ছে সবার জন্য। ভাইয়া অফিস থেকে আসার সময় হয়ে যাচ্ছে তাই কিচেন রুমে গিয়ে বললো আপু তোর সাথে একটা কথা আছে কিন্তু বলতে সাহস পাচ্ছি না।
–পরাগের আপু বলে উঠলো বলে ফেল মনে শান্তি পাবি। আশার পর থেকে কেমন চিন্তিতো দেখাচ্ছে বললে হালকা লাগবে।
–আপু তুমি পাপড়ি কে চিনো?
–হ্যাঁ কাহিনি কি? মুচকি হেসে ভাই এর দিকে তাকালো।
–আপু পাপড়িকে আমি পছন্দ করি পাপড়ি ও আমাকে আমরা দু’জন দু’জন কে না ফেলে হয়তো বেঁচে থাকবো তবে স্বাভাবিক ভাবে বাঁচবোনা।
–চিন্তা করিসনা আমি দেখবো বিষয়টা।
আংকেল আমাকে অনেক ভালোবাসে আর তোকেও অনেক পছন্দ করে তোর অনেক প্রশংসা করে আমার সাথে আর বাবা মাকে মেনেজ করতে পারবো তুই চিন্তা মুক্ত থাক।
হেসে বললো আমার ভাই এর পছন্দ আছে বলতে হবে।
*
ছয় বছর পর ….
–পরাগ আর পাপড়ির বিয়ে হয়েছে তিন মাস শেষ হতে চলছে।পরাগ একটা মাল্টি ন্যাশনাল কম্পানিতে জব পায়।
ভালোই চলছে তাদের পরিবার সুখে ভরপুর একটা সুখি পরিবার।
–প্রতিদিনের মতো আজকেও পরাগ অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে কিন্তু আজ পাপড়িকে একটুও ডাকছেনা ।
প্রতিদিন পাপড়িকে বিরক্ত করে তারপর অফিস যাবে না হয় যেন পরাগের যাত্রা শুভ হয় না।পাপড়ি উপরে বিরক্তি দেখলেও মনে মনে বেশ খুশি।
তাই আজকে না ডাকা সত্বেও কয়েক বার এলো কিন্তু পরাগের কোন সাড়া না পেয়ে নাস্তা বানাতে মনযোগ দিলো।
–খাওয়ার টেবিলে গিয়ে মা বলে ডাক দিলো। পারগের মা বললো কি হয়েছে বাবা।
মা আমাকে নাস্তা দাও।পাপড়ি নাস্তা দিয়ে গেলো কোন কথা না বলে।
পাপড়ি চিন্তা করে পাচ্ছেনা আজ পরাগের কি হলো,কেনো এমন আচরন করছে।
কিচেনে যাওয়ার পর শাশুরি জিজ্ঞাস করলো পাপড়ি মা পরাহের সাথে কি কিছু হয়েছে তোমার?
আরেনা মা ও কেনো এমন করছে বুজতে পারছিনা ।
–আজকে জন্মদিনের দিন পরাগ এমন করছে কেনো আমার সাথে।আমি তো তাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছি তাই সকালে ইচ্ছা করে উইশ করিনি।(মনে মনে পাপড়ি বলছে)
–রাত হয়ে গেলো এখনো পরাগ আসছেনা দেখে সবাই চিন্তা করছে এদিকে পাপড়ির তো দুপুর থেকেই খাওয়া বন্ধ পরাগের আচরনের পরাবর্তন দেখে।
–কল দিচ্ছে সবাই। পরাগের বড়ো বোন এলো ভাই এর বৌ এর অনুরোধে আজ তার বরকে সারপ্রাইজ দিয়ে চমকে দিবে।
কিন্তু একি এখন তো ভাই এর জন্য চিন্তা করে মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে সবার।যে ভাই সন্ধ্যার মধ্যে বাসায় চলে আসতো তার আজ রাত নয়টায় ও কোন পাত্তা নেই।
–কলিং বেল এর শব্দে সবাই যেনো প্রান ফিরে পেলো। পরাগের মা গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে বকা শুরু করে দিলো এতো বড় হয়েছো কোন জ্ঞান নেই না কি? ফোন অফ অফিসে ফোন দিয়ে যখন মেয়েটা (পাপড়ি)জানতে পারলো তুই বিকালে অফিস থেকে বের হয়ে গেলি
তখন থেকে মেয়েটা কান্না করতে করতে শেষ সকাল থেকে এসব কি দেখাচ্ছিস।
–কিছু না বলে পাপড়ির সামনে গিয়ে বললো এই প্রকৃতি দেখো আমি তোমার সামনে স্ব-শরীরে দাঁড়িয়ে আছি।(পাপড়ি মন খারপ করলে পরাগ তাকে প্রকৃতি বলে ডাকে).
–পাপড়ি কোন কথা না বলে সবার সামনে জড়িয়ে ধরে নাকের পানি চোখের পানি দিয়ে শার্টের বুকের অংশ পরিস্কার করে দিচ্ছে ..।
–পাপড়ির এ অবস্তা দেখে যে যার রুমে চলে গেলো।
–এই প্রকৃতি আমি তোমাকে এতো কষ্ট দিতে চাইনি আমি শুধু অপেক্ষার পালাবদল করতে চেয়েছি।
–কিসের পালাবদল? জিজ্ঞাসুক চোখে পাপড়ি তাকালো পারাগের দিকে।
–ঐ যে ২০১৭ সালে আমি অপেক্ষা করছি তোমার উইশ এর আর আজ তোমাকে অপেক্ষা করিয়েছি।
–কথা শেষ না হওয়ার সাথে সাথে উড়াধুড়া মাইর শুরু করলো পাপড়ি।
……………………………………………..
এমন পবিত্র সম্পর্ক গুলো বেঁচে থাকুক হাজার বছর।
গল্পের বিষয়:
ভালবাসা