প্রাইমারী স্কুলে থাকতে একটি মেয়েকে ভাল লাগত। যদিও প্রেম ভালবাসা তেমনটা বুঝতামনা। তবে সপ্তাহে শুক্রবারে টেলিভিশনে একটি করে বাংলা ছায়াছবি প্রচারিত হত। ছবিতে দেখেছি নায়ক ফুল দিয়ে বলে অামি তোমাকে ভালবাসি। এই ভাল লাগাটা খুব করে বুঝতাম।
তাইতো একদিন ফুল নিয়েই স্কুলে গেলাম। কোন ফুল না পেয়ে শাপলা ফুল নিয়ে গিয়েছিলাম। উপরের ক্লাসের দুই মেয়ে একসাথে এসে বলতেছে, “ফুলগুলো খুব সুন্দর, অামাদের দিবা”? বলেছিলাম তোমাদের দিব কেন? অামিতো ফুল এনেছি ফারজানার জন্য। দুই মেয়ে এক প্রকার তেড়ে এসে বলল, “এখনি প্রেম পিড়িতি শিখে গেছো? দাড়াও মেডামের কাছে বলতেছি।” অনুরোধ করে বললাম, মেডামকে বলিওনা। সেদিন মেয়ে দুটি মেডামকে কিছু বলেনি। কিন্তু বিনিময়ে অামার হাতের ফুলগুলো কেড়ে নিয়েছিল।
চিঠির মাধ্যমে নাকি ভালবাসার কথা জানানো যায়। তাইতো জীবনের প্রথম ভালবাসার চিঠি লিখেছিলাম ইতি নামের এক মেয়ের জন্য। পাশের এলাকাতেই থাকত। মনে অাছে, চিঠির ভাষা মনমত হয়না বলে প্রায় খাতার অর্ধেক পৃষ্ঠা ছিড়ে ছিড়ে লিখেছিলাম ইতিকে নিয়ে প্রেম পত্র। এক ছোট ভাইকে দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলাম ইতির কাছে। বিকেলেই চিঠি হাতে করে নিয়ে এসে অাম্মুর কাছে ইতি বিচার দিয়ে গেছে। চিঠির শেষে অামার নাম লিখিনি বলে সে যাত্রায় বেঁচে গিয়েছিলাম।
মোবাইলে নাকি প্রেম করা যায়। প্রথম যখন নোকিয়া মোবাইলটি কিনেছিলাম মনে অনেক অাশা ছিল প্রেম করব। পরিত্যাক্ত বাড়ির ছাদে বসে বিভিন্ন নাম্বার বানিয়ে বানিয়ে ফোন দিতাম। কখনো রিসিভ করত অান্টি টাইপের মহিলা। কখনোবা রিসিভ করত কর্কশ গলার অাঙ্কেল। মোবাইলের বহু টাকা ফুরিয়ে অবশেষে এক মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব করলাম। অনেকেই বলে অাগে বন্ধুত্ব করে ঘনিষ্ট হতে হয়। তারপর প্রেম হয়ে যাবে। সাত মাস কথা বলে ঘনিষ্ট হয়ে জানতে পারলাম মেয়েটির স্বামী বিদেশ থাকে অার তিনি দুই বাচ্চার মা। অবশেষে বুঝতে পারলাম প্রেম এত সহজে হবেনা। প্রেমের জন্য পরিশ্রম করতে হবে। সময় ব্যায় করতে হবে। ফেয়ার এন্ড হেন্ডসাম স্নো কিনে এনে সকাল বিকাল ঘষা শুরু করলাম গালে। কখনো হাত ভর্তি স্নো নিয়ে গালে মেখে ভূতের মত সাদা বানিয়ে রাখতাম। কিন্তু অামার কালো মানিকের চেহারা কালোই রয়ে গেল।
একশত পঞ্চাশ টাকা করে খুব সুন্দর সুন্দর টিশার্ট পাওয়া যেত। অনেকগুলো কিনেছিলাম। সকালে একটা বিকালে একটা পড়ে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতাম। কোন রমনীর নজরে পড়লামনা। অবশেষে বুঝতে পারলাম অামার দ্বারা অার প্রেম হবেনা। ফেইসবুকে একেকজন নাকি দশটা বারোটা করে প্রেম করে। লোভ সামলাতে না পেরে এক বন্ধুকে দিয়ে ফেইসবুক একাউন্ট খুলেছি। মেয়েদের নাম দেখে দেখে রিকুয়েস্ট পাঠানো শুরু করলাম। সারাদিনে যদি একটি মেয়ে এক্সেপ্ট করত খুশিতে লাফিয়ে উঠতাম। অার মনের ভিতর অাশার অালো এই বুঝি প্রেম হতে চলল। দেখা গেল একটা মেসেজ দিলে তিন দিনেও উত্তর মিলতনা।
কেউ রিপ্লে দিলেও দুই মিনিট মেসেজ করে উধাও। অবশেষে অনেক চেষ্টায় দুই মেয়েকে পটাইছি। কি অানন্দ, অামিও একসাথে দুইটা প্রেম করি। কেমন প্রেম? মেসেজেই কথা। ফোন নাম্বার দিতে চায়না। ছবি দিয়েছে কিন্তু মডেল তারকাদের ছবির মত লাগে। চারমাস যাওয়ার পর অাস্তে অাস্তে জানতে পারলাম দুজনই ছেলে ছিল। তারা মেয়ের নামে অাইডি খুলে চালায়। অামার অার প্রেম হলনা। কেউ একজন বলেছিল, “সারা দুনিয়া ঘুরে প্রেম পাবিনা। তোর মনে যখন প্রেম অাসবে নিজেই টের পাবি। ” কিন্তু কতদিন অার অপেক্ষায় থাকব??? সব সুন্দর মেয়েদের এক এক করে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। অামার ভাগ্যে একজন থাকবেতো?
পাশের বাড়ির “দিয়া” মেয়েটি দুদিন পর পরই মেহেদী তুলতে অাসে অামাদের বাড়ি। একেক সময় বলে তাকে মেহেদী তুলে দিতে। কখনো দেই কখনো কাজের কথা বলে চলে যাই। হঠাৎ বিষয়টা মাথায় এল। দুদিন পর পর মেয়েটি মেহেদী দিয়ে কি করে? হাতের মেহেদীর রং না মুছলে অাবার মেহেদী দিবে কোথায়? একদিন জিজ্ঞেস করেই ফেললাম, “এই দিয়া তুমি দুদিন পর পর মেহেদী নিয়ে কি করো?”
যাবার সময় বলেছিল, “এতদিনে জিজ্ঞেস করলেন দুদিন পর পর মেহেদী নিয়ে কি করি? অাজো বুঝলেননা যে মেহেদী নেয়ার ছলে কাউকে দেখতে অাসি।” একটু অবাক হয়ে দিয়ার চলে যাওয়া দেখছিলাম অার ভাবছিলাম অামাকে ছাড়া অার কাকে দেখতে অাসবে? কত বোকা অামি। ঘরের কাছে প্রেম রেখে সারা দুনিয়া প্রেমের জন্য ঘুরে মরি। অথচ অামাকেই ভালবাসে “পাশের বাড়ির মেয়েটি।”