বিয়ের জন্য কেমন পাত্রী খুঁজবেন এই ইস্যুটা প্রত্যেক ছেলের জন্য খুবইগুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু জীবনের পথ চলতে গিয়ে দেখেছি অনেকেই খুব কনফিউজড, কিংবা পরিস্কার কোন ধারনা নাই কেমন মেয়ে বিয়ে করা উচিত। একজন আত্মীয়কে দেখেছি ৩ বছরে ৩৩ টা মেয়ে দেখার পর তার মনে হয়েছে সবচেয়ে ভাল ছিল ৩ নম্বরটা, তারপর ২২ নম্বর আর তারপর ১৩ নম্বর। ততদিনে ২ জনের বিয়ে হয়ে গেছে আর ৩য় জন এই ছেলেকে বিয়ে করতে রাজি না, কারণ একবার ‘না’ বলে গিয়েছিল। আপনার মধ্যে পরিস্কার ধারনা থাকতে হবে কি কি ক্রাইটেরিয়া খুঁজবেন পছন্দের পাত্রীর মধ্যে। একই সাথে আপনার মধ্যে ছাড় দেয়ার মানসিকতাও থাকতে হবে। আপনি বিশ্বব্রহ্মাণ্ড চষে বেড়ালেও আপনার পছন্দ অনুযায়ী দশে দশ পাবে এমন মেয়ে খুঁজে পাবেন না।
শতকরা ৭০-৭৫ ভাগ পছন্দ হলেই আপনার আলহামদুলিল্লাহ বলা উচিত। বাকীটুকু আপনি এডজাস্ট করবেন কিংবা মেনে নিবেন। আপনি ও তো সুপার হিরো না। আপনার মধ্যেও অনেক সমস্যা থাকতে পারে। মেয়েটা তার জীবনসঙ্গীর মধ্যে যা খুঁজছে আপনার মধ্যেও অনেক কিছু নাও থাকতে পারে। কাজেই ২০-২৫ শতাংশ উভয়পক্ষ কম্প্রোমাইজ করলেই দাম্পত্য সুখের হবার সম্ভাবনা। মূল শর্তাবলিতে আসি।
১। বয়সের ব্যবধান – এই যুগের জন্য ৩-৫ বছর ব্যবধান আদর্শ মনে হয়। একটা সময় ছিল যখন ১৫-২০ বছর ব্যবধান থাকলেও সংসার সফল হত। তখন মানুষের এত ভুল করার অবকাশ ছিল না। এমন কোন কথা নাই যে মেয়ে বয়সে একটু বড় হলেই কিংবা ব্যবধান ৯ বছর হলেই সংসার টিকবে না। ভালবাসা থাকলে, বুঝাপড়া থাকলে টিকতেও পারে। আমি শুধু আদর্শ ব্যবধান এর কথা বললাম।
২। শিক্ষা – মেয়েদের শিক্ষিত হওয়া এবং নিজ পায়ে দাঁড়ানোর যোগ্যতা অর্জন করা খুবই জরুরী। মায়ের শিক্ষা আর ব্যক্তিত্বের উপর সন্তানের বেড়ে উঠা নির্ভর করে।সচরাচর বাবার চাইতে সন্তান মায়েরসাহচর্যে বেশী থাকে। আর যে কোন বিপদআপদে একজন শিক্ষিত মেয়ে পাশেদাঁড়াতে পারে। স্বামীর মৃত্যুতেও সবদিক সামলে নিতে পারে।
৩। ক্যারিয়ার – এটা বিতর্কিত ইস্যু। আমার কাছে ফ্যামিলি ফার্স্ট প্রায়োরিটি। যদি সন্তান, সংসার বঞ্চিত না হয় তাহলে মেয়ের যে কোন ক্যারিয়ারে সমস্যা নাই।কিন্তু যৌথ পরিবার না হলে, সন্তান আয়া, বুয়ার কাছে মানুষ হলে ক্যারিয়ার কিভাবে সাজানো যায় ভেবে দেখা দরকার। আজকাল চরিত্র নষ্ট হতে এক মুহূর্ত লাগে না। ক্লাস টু থ্রি এর বাচ্চারা মোবাইলে পর্ণ চালু করে দেয়। ক্লাস সিক্স সেভেনে ইয়াবা সেবন করে। সন্তান বিপথে গেলে বেশী খ্যাতি কিংবা ডিগ্রি কি কাজে আসবে ভেবে দেখা দরকার। এমন ক্যারিয়ার হলেই ভাল যেখানে স্বামী, সংসারের জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকবে।
৪। বয়স – মেয়েদের জন্য সঠিক বিয়ের বয়স ২২ হতে ২৮। নিরাপত্তার সমস্যা থাকলে গ্রামে আগেই বিয়ে হয়ে যাবে কিছু করারনেই। আর শহরে গ্র্যাজুয়েশন এর পর পর বিয়ে করা যেতে পারে। যদি শ্বশুরবাড়িতে কিংবা স্বামীর সাথে থেকেও পড়াশুনাতে সমস্যা না হয়, তাহলেকিছুটা ছাড় দেয়া যায়। ৩০ বছরের আগে প্রথমবার ‘মা’ না হলে এরপর গর্ভধারনেবিভিন্নরকম জটিলতা তৈরি হওয়া বিচিত্র না।
৫। মেয়ের মা – মেয়ের মাকে দেখেও অনেক সময় বলে দেয়া যায় মেয়ে কিরকম হবে। মেয়ের মা অবশ্যই বিয়ের পর বেশী নাক গলাবেন না। কিন্তু অভিভাবকের মত প্রয়োজনে পরামর্শ দিবেন। মেয়ের মা শিক্ষিত আর ভাল মনের হলে মেয়ের ও সেরকম হবার সম্ভবনা প্রচুর।
৬। মেয়ের বাবার উপার্জন – সৎ পেশা আর হালাল উপার্জন থাকলে মেয়ের মধ্যেও নৈতিকতা আশা করতে পারেন।
৭। চেহারা / রঙ / উচ্চতা – এই তিন দিকের উপর কোন মেয়ের নিজের হাত নেই। পুরুষ মাত্রই এই বিষয়গুলোর উপর চোখ যাওয়া বিচিত্র না। কিন্তু গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, আদর্শ বউ হবার জন্য দীপিকার উচ্চতা, ক্যাটরিনার চেহারা কিংবা শাবানার গায়ের রঙ জরুরী না। একজন ভাল স্ত্রীর মধ্যে চরিত্র আর মানবিক গুণাবলী বেশী জরুরী। এই তিনটা ইস্যুতে প্রয়োজনে ছাড় দিতে পারেন, আপনিও তো ঋত্বিক রোশান নন। আর ঋত্বিককেও ওর বউ কিন্তুছেড়ে চলে গেছে মনে রাখবেন।
৮। গুণ – খুব খুব জরুরী। এই গুণাবলীই বলে দিবে মেয়ের নিজস্বতা কি। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, মানবিকতা, আতিথেয়তা, ব্যবহার, চরিত্র ইত্যাদি বিবিধ গুণ একজন ভাল ব্যক্তিত্বসম্পন্নমানুষ তৈরি করে।
৯। আর্থিক অবস্থা – সাধারণত সমান অথবা ছেলের আর্থিক অবস্থা একটু উপরে হলেইভাল। যে মেয়ে পাজেরো চড়ে তাকে টয়োটা করলাতে চড়ালে অতটা প্রীত নাও হতে পারে। যে খুব দামী পারফিউম ব্যবহার করে তাকে মাঝারি দামের কিনে দিলে অতটা আনন্দ অনুভব নাও করতে পারে। যে সুইজারল্যান্ডে গিয়ে হলিডে ট্যুর করে তাকে নেপাল দেখিয়ে খুব বেশী লাভ নেই। এগুলো হল থাম্ব রুল। ব্যতিক্রম অবশ্যই থাকবে। কিন্তু বেশী উপর নীচ হলে দুই পরিবারে নানা সমস্যা তৈরি হয়।
১০। পোশাক – ব্যক্তি স্বাধীনতার নামে খোলামেলা কিংবা উগ্র পোশাক আপনাকে বিব্রত করতে পারে। অন্য পুরুষের দৃষ্টি হজম করা বেশ শক্ত। কাজেই শালীন পোশাক পরার অভ্যাস থাকা ভাল। আবার বোরখা পরলেই যে খুবই ভালমনের আর চরিত্রের মেয়ে হবে এমন কিন্তু নয়।
১১। নেশা – সিগারেট, মদ, ইয়াবা ইত্যাদি নেশাসক্ত মেয়েকে বিয়ের তালিকায় না রাখাই ভাল। মেয়েরা মা হয়। যে কোন নেশা দ্রব্য মেয়েদের শরীরে জটিলতা তৈরি করে।
১২। মেয়ের পরিবার – শিক্ষিত, মার্জিত,ভদ্র পরিবার হলে ভবিষ্যতে যে কোন সমস্যায় মেয়ের পরিবারের ও সাপোর্ট পাবেন। যদিও আজকাল সবাই শুধু প্রভাবশালী আর বিত্তশালী পরিবার খুঁজে।
১৩। ধর্ম – ছেলে আর ছেলের পরিবারের ধর্ম পালনের সাথে মানানসই হলে ভাল। এতে স্বামী স্ত্রীর বুঝাপড়া ভাল হয়। আর ধার্মিক মেয়ে ভাল হবার সম্ভাবনা বেশী থাকে। ধার্মিক না হলে খারাপ হবে এটাও কিন্তু বলছি না। পারিবারিক শিক্ষার উপর নির্ভর করে।
১৪। পেশা – মেয়ে কর্মজীবী হলে আগেই ভেবে দেখবেন সেই পেশার সাথে আপনি তাল মিলিয়ে চলতে প্রস্তুত কিনা। আগে মেনে নিলে পরে আর সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় না। আর হ্যাঁ, মিডিয়াকে ক্যারিয়ার হিসেবে নেয়া পাত্রীদের নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। অনেকটা জুয়ার মতই।
১৫। অতীত – মেয়ের অতীত অনেকের কাছে জরুরী না। আমার কাছে জরুরী। বলার মত অতীত থাকলে দুজনেই শেয়ার করে নেয়া উচিত। সেটা মেনে নিতে পারলে এগিয়েযান নইলে অন্য কাউকে খুঁজে নিন। বিয়ের পর কেউ যদি অন্য ছেলের সাথে ভিডিও কিংবা অন্তরঙ্গ ছবি পাঠায়, সেটা হজমকরা খুবই কঠিন ব্যাপার। এসব নিয়ে ব্ল্যাকমেল, থানা পুলিশ, পারিবারিক বৈঠক এসব করতে রাজি না।
একজন ভাল মনের স্ত্রী আপনার জীবনকে রঙিন করে তুলতে পারে, সাজিয়ে দিতে পারে। তাই আপনার সাথে মানানসই আর উপযুক্ত পাত্রীর ভাবনা মাথায় রাখুন। উপরেই কিন্তু বলেছি কিছু বিষয়ে ছাড় দেয়ার মানসিকতা নিয়েই আগাতে হবে। সবচেয়ে বড় শর্ত কিন্তু হল ভালবাসা। জীবনসঙ্গীর জন্য এটা থাকলে আপনাদের মধ্যকার খালি জায়গাগুলো এটাই ভরাট করে দিবে। তখন সংসারের সব থালাই পরিপূর্ণ মনে হবে। আর এই ভালবাসাও ধরে রাখার ব্যাপার আছে। চারাগাছকে আস্তে আস্তে পানি দিয়ে যত্নের সাথে বড় করার নামই সংসার……