ফিরে পাওয়া ভালবাসা

ফিরে পাওয়া ভালবাসা

সন্ধ্যা বেলা দাড়িয়ে চোখ দুটা বের করিয়ে রক্তিম সূর্যকে দেখতে লাগলাম। অনেক ভাল লাগছে মুহূর্ত টি। সূর্য ডুবে যাওয়া পর্যন্ত দেখে গেলাম। আল্লাহ র কি অপরুপ সৃষ্টি। চুপচাপ হয়ে দাড়িয়ে আছি, পিছন থেকে কে যেনো কিছু বললো। ভাল ভাবে শুনতে পায় নি। তাই পিছনে ফিরে তাকালাম। পিছনে ফিরে তাকাতেই চোখ গুলি যেনো মার্বেল হয়ে বেরিয়ে পড়বে। আমার সামনে একটা মেয়ে দাড়িয়ে আছে, যেনো পরি। আমার ফেলফেল করে তাকা দেখে বলে উঠে…

: এই যে মিস্টার, কি দেখছেন এভাবে??
= আপনাকে দেখছি।
: আমাকে দেখার কি আছে? আগে কখনও মেয়ে দেখেননি, বুঝি???
= দেখেছি, তবে আপনার ব্যাপার টা একদম ভিন্ন
: এসব পুরান ডায়ালগ পেশ করে লাভ নেয়,,, নতুন কিছু থাকলে ট্রাই করতে পারেন। (কথাটি বলেই হাসছে,, হাসি দেখে মনে হচ্ছে মুক্ত ধরে পড়ছে।তাতে মেয়েটি কে আরো দারুণ লাগছে। বলেই মেয়েটি চলে যেতে থাকে,, আমি হা করে তাকিয়ে দেখছি ওর দিকে)

= এই যে শুনন (সাহস করে কথা বলার চেষ্টা, আমি আবার মেয়ের কাছে গেছে একটু বোকা হয়ে যায় তো)
: জ্বি, বলুন???
= আপনার নাম টি কি বলা যাবে?
: এখন নাম জানতে চাবেন, পরে কিসে পড়ি, কোথায় থাকি, ইত্যাদি ইত্যাদি। ছেলেরা কেমন আমার জানা আছে।

= আমাকে আপনার কি মনে হয়???
: দেখতে তো ভালোই আছেন. কিন্তু থাক বলব না।ওটা না হয় বাকী রেখে দিলাম। আর আপনাকে আমি চিনি ভালো ভাবেই। আপনি হয়ত আমায় চিনতে পারছেন না।
= কি??? আমায় চিনেন আপনি? বিশ্বাস হচ্ছে না।
: সন্ধ্যা হয়ে এলো,, আজ আর নয়,, এমুনি অনেক সময় লস হইলো।

রাত হয়েছে তাই আমিও আর দেরি না করে বাসায় ফিরে আসলাম। মনে মনে ভাবতে থাকি মেয়েটা কে?? ওকে দেখার পর নিজেকে এমন কেনো লাগছে, ও যেনো হাজার বছরের চেনা কেউ। উফফ আমি কে দেখা তো বলতেই ভুলে গেছি। আমি সামিউল, এবার ডিগ্রি ১ম বর্ষের ছাত্র & পাশাপাশি একটা পার্টটাইম চাকুরী করি। খাওয়া দাওয়া সেরে রুমে গিয়ে আবার ভাবনায় মগ্ন হলাম। মেয়েটা র চেহারা বার বার চোখের সামনে ভাসছে। ওর হাসি টা আমায় পাগল করে দিচ্ছে। তা হলে আমিও কি প্রেমে পড়ে গেলাম নাকি? উফফ কি ভাবছি এসব। আমি কেনো প্রেমে পড়বো,, সেটা তো অনেক আগেই একজন নিয়ে গেছে। তবুও কেনো জানি না মন এতো অস্থির অস্থির লাগছে,, কিছুই বুঝতেছি না।

কিং কিং কিং করে ফোন টি বেজে উঠলো, ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি প্রায় রাত ১১ টা বাজে। এতো রাতে কে ফোন করলো আমায়। ফোন হাতে নিয়ে দেখি অপরিচিত নম্বর। মনে মনে ভাবছি ফোনটি রিসিভ করব কি না। অনেক ভেবে রিসিভ করে ফেলি। কারণ এতো রাতে কোনো প্রয়োজনে হয়ত কল দিয়েছে।

= আসসালামু আলাইকুম, কে বলছেন??
: (মেয়েলি কণ্ঠ ভেসে আসলো) ওয়ালাইকুম সালাম, আমি কে সেটা না জানলেও চলবে। এতো চিন্তা করছেন কেনো? বেশি চিন্তা করবেন না তা হলে পাগল হয়ে যাবেন।
= (আমি তো কথা শুনেই পাগল হয়ে গেলাম, কারণ আমি গভীর চিন্তায় মগ্ন আছি, সেটা মেয়েটা জানলো কি ভাবে???) আপনি কে বলুন তো?
: আমায় এতো তাড়াতাড়ি ভুলে গেছেন? যার সাথে সন্ধ্যায় কথা বললেন আমি সেই।

= (শুনে মনে মনে লাড্ডু ফুটেছে,, মেঘ না চাইতেই জল) আপনি আমার নম্বর পেলেন কই?
: চাইলে সবকিছু পাওয়া যায়। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতে পারছি না,, তুমি আমায় এভাবে ভুলে যাবা?
= (আমি তো আরো আশ্চর্য হয়ে গেলাম।আপনি থেকে তুমি হয়ে গেলাম) কি বলছেন এসব?
: যার জন্যে স্কুল শেষ করে দেখার জন্যে দাড়িয়ে থাকতা। যাকে একটি গোলাপ দিয়েই লজ্জায় পালিয়ে গেলা,, আর ফিরে আসলে না,, সেই আমি।
= (আমি তো একটা মেয়ের জন্যে এমন কাজ করে ছিলাম. তা হলে সেই কি?) আপনি কি সন্ধ্যা?
: হুম, আমায় চিনতে এতো দেরি করলে,, আর আপনি আপনি বলবে না। বললে থাপ্পড়ে সব কয়টি দাঁত ফেলাই দিবো কিন্তু???

= (নিজের সুন্দর দাঁত বাঁচাতে হলে আর আপনি আপনি বলা যাবে না।) ওকে তুমি করেই বলবো। এতো দিন পর কোথা থেকে এলে? আর আমার নম্বর পেলে কোথায়?
: আমি এতো দিন লন্ডন ছিলাম, তাই যোগাযোগ হয়নি। লন্ডন থেকে ফিরে সবার আগে তোমার নম্বর নিয়েছি, তোমার ফ্রেন্ডস এর থেকে। তারপর সোজা দেখা করলাম,, কিন্তু আমায় চিনতেই পারলে না।
= (আমি চুপচাপ শুনে যাচ্ছি)
: চুপ কেনো কালকে আমার সাথে দেখা করতে পারবে ৬ টায়, নদীর তীরে।

আমি অপেক্ষা করব তোমার জন্যে
(বলেই টুট টুট করে ফোন টি কেটে দিলো) একটা নীল রং পাঞ্জাবী পরে বেরিয়ে পড়েছি। মনে মনে ভাবছি কিসের জন্যে ডাকছে আমায়? আমার সেদিন ওভাবে চলা আসা ঠিক হয়নি, কেনো জানি না কাজটি করলাম, তখন বুঝি নাই। আচ সেটার জন্যে বড়ই আপসোস হচ্ছে। ভাবতে ভাবতে পৌঁছে গেছি নদীর তীরে। নদীর তীর আমার খুব পছন্দের একটি স্থান। সন্ধ্যা আজ নীল রং এর শাড়ি পরে এসেছে। ওকে দেখে মনে হচ্ছে যেনো আকাশ থেকে পরী নেমে এসেছে।

= কেমন আছো সন্ধ্যা?
: ভালো,তুমি?

= আছি এক রকম। কেনো ডাকছো বলো?? তুমি এখন কি করছ, তোমার প্রেমিক কেমন আছে??
: (হাসি মুখে) হুম, আছে এক রকম তোমার মত।
=(কথাটি শুনে বুকটা কেনো জানি না চিন চিন করছে) ওহ, ভালো। তার সাথে দেখা করাবে না??
: হুম করাবো? তবে আমায় সেদিন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে পালিয়ে গেলে কেনো??
= সেটা আর বলে কি হবে? তোমায় তো আর ফিরে পাবো না। এখন চাইলেই তোমায় আপন করতে পারব না। কারণ তুমি এখন অন্য কারো,, তখন যেমন ভালবাসতাম,, এখন তার থেকেও বেশি বাসি। বা বেসে যাবো।

: (মেয়েটি আমার কথা শুনে হাসছে) আরে পাগল আর কত কষ্ট পাবা, হুম। আমি তোমার ছিলাম, তোমার আছি। সেদিন তোমায় ভালবাসার কথাটি বলতাম কিন্তু পরে আর তোমার কোনো খোঁজ পায় নি। আর হুট করে লন্ডন চলে যায়। যে দিন লন্ডন যায়, যানো সেদিন খুব কেঁদে ছিলাম। সেদিন লন্ডন থেকে ফিরে যখন তোমার সাথে দেখা করলাম, যখন তুমি আমায় চিনতে পারলে, তখনও খুব কষ্ট পেয়েছি। (কাঁদতে শুরু করে দিলো)

= ওকে জরিয়ে ধরে বুকের কিছে টেনে আনলাম। আমার জন্যে আর কাঁদতে হবে নাা, প্রমিস।
: হুম, বুঝেছি।
= হুম, তুমি আমার সন্ধ্যা তারা,,,
: আর তুমি হলে সেই তারার আলো। খুনসুটি ভালবাসা দুরে থেকে আরো গভীর হয়,, যার গভীরতা মাপা যায় না।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত