সুখের কাঁন্না

সুখের কাঁন্না

সিয়াম এবং রিয়ার সম্পর্ক প্রায় পাঁচ বছর হল। সিয়াম এবং রিয়ার বাবা একই সাথে চাকরি করতো সেনাবাহিনীতে। যখন ওরা একই কোয়াটারে থাকতো, তখন থেকে দুজনের মধ্যে সম্পর্ক। দুই বছর আগে রিয়ার বাবার ট্রান্সফার হওয়াতে এখন ওরা দুজন দুপ্রান্তে। তাতে কি! এই আধুনিক যুগে দুজনকে দুর থেকে কাছে এনে দিয়েছে মোবাইল। ঘন্টার পর ঘন্টা কথা, এসএমএস আদান প্রদান, ভিডিও চ্যাট। আর কি লাগে!!
.
রিয়া সিয়ামকে আজ যে কথা বলেছে, তাতে সিয়ামের ঘুম হারাম হয়ে গেছে। রাত প্রায় দুইটা বাজে, কিছুতেই ঘুম আসছেনা সিয়ামের। শুধু রিয়ার কথাই বার বার ঘুরপাক খাচ্ছে মাথার মধ্যে! রিয়ার মা বাবা রিয়ার জন্য যে ছেলে ঠিক করেছে, সে নাকি আমেরিকা থেকে দেশে আসছে আগামী মাসে। রিয়াকে বিয়ে করে সঙ্গে নিয়ে যাবে আমেরিকায়।
.
একথা আরো অনেক আগে থেকে সিয়ামকে বলে আসছে। কিন্তু সিয়াম কোনো সমাধান বের করতে পারেনি। বাবা মাকে কি করে বলবে যে, “আমি রিয়াকে ভালবাসি, রিয়াকে আমি বিয়ে করবো!” সিয়াম একথা ভাবতেই পারেনা, বলা তো দুরের কথা। সিয়াম বাবা মাকে এতটা ভালবাসে যে, তাদের অবাধ্য হতে পারবেনা কোনোদিন। আবার রিয়াকে ছাড়া সিয়ামের পক্ষে বেচেঁ থাকাও অসম্ভব।
রিয়ারও আজ ঘুম আসছেনা। শুধু একটু পরপর এসএমএস করছে সিয়ামকে…
-একটা কিছু করো! (রিয়া)
-কি করবো আমি, আমাকে বলে দাও.. (সিয়াম)
-তোমার কি কিচ্ছু করার নেই.?
-আল্লাহকে ডাকো, একটা ব্যাবস্থা হয়ে যাবে!
-শুধু আল্লাহকে ডাকলে হবে.? আমাদের কিছুই করতে হবেনা..!
-আচ্ছা, আমাকে বলে দাও আমি কি করবো!
-কি করতে হবে সেটাও তোমাকে বলে দিতে হবে..?!
-আচ্ছা আমাকে একটু ভাবতে দাও প্লিজ! তুমি আরো পাগল করে দিচ্ছ আমাকে।
-ওকে বাই। করো তোমার যা ইচ্ছা.. (একটা রাগের ইমো দিলো)
.
সিয়াম এরপর রিয়াকে খুঁজে পেলনা চ্যাটে! সিয়াম ফোনটা রেখে আবার ভাবতে লাগলো.. মা বাবাকে কি করে বলবো! যদি রিয়ার সত্যিই বিয়ে হয়ে যায়! কিন্তু ওকে ছাড়া তো আমার জীবনটা ভাবতে পারিনা।
এমন সময় রিয়ার কল আসলো। সিয়াম কলটা রিসিভ করলো। ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ পেলো! সিয়াম বললো..
-এখন রাত তিনটা বাজে, না ঘুমিয়ে কাঁন্নাকাটি করছো!!
-আমার ঘুম আসছেনা। কি করবো.? তুমিও তো ঘুমাওনি..!
-এত টেনশন কইরোনা তো, আল্লাহ্ যদি তোমার সাথে আমার বিয়ে লিখে রাখেন, তাহলে কেউ আমাদের আলাদা করতে পারবেনা। আর যদি না লিখে থাকেন, তাহলে কোনোদিনও তোমার আমার আশা পুরোন হবেনা।
-আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে করতে পারবোনা! (রিয়ার কাঁন্না আরো বেড়ে গেলো)
-শোনো, আমাদের যতটুকু করার আমরা করবো। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্তের উপর কারো হাত নেই। যত কষ্ট হোক, তার সিদ্ধান্ত মানতেই হবে।
-আমাদের এতদিনের ভালবাসা মিথ্যে হয়ে যাবে..!
-আল্লাহই ভাল জানেন..!
-আচ্ছা এখন রাখছি।
.
পরদিন সিয়াম সাহস করে ওর মাকে রিয়ার কথা বললো..
-আম্মু, তোমাকে একটা কথা বলা খুব জরুরী.!
-বলে ফেল।
-আমি একটা মেয়েকে ভালবাসি! মেয়েটিকে তোমরা চিনো।
-কোন মেয়ে..?
-আব্বুর কলিগের মেয়ে, রিয়া।
-ঐযে.. ঐ মেয়েটা.., আমরা একই কোয়াটারে থাকতাম!
-হুম..
-মেয়েটাতো খুব ভালই, আচ্ছা তোর আব্বু আজ বাসায় আসুক। বলবো আমার ছেলের জন্য ঐ মেয়েটাকে বউ করে এনে দাও।
-এখনি বউ করে আনতে হবেনা। আমি পড়ালেখা শেষ করি, একটা চাকরি পাই, তারপর। শুধু রিয়ার বাবা মাকে বলে রাখবে, রিয়াকে যেন এখনি বিয়ে না দেয়।
-আচ্ছা ঠিক আছে।
-থ্যাংক ইউ আম্মু! (মাকে জড়িয়ে ধরলো)
.
সিয়ামের বাবা বাসায় আসলে সিয়ামে মা বিষয়টা জানায়। তিনি শুনে খুশি হয়ে যায়, এবং বলে.. “আমার একমাত্র ছেলে জীবনে কিছু চায়নি, ওর চাওয়া আমি পুরোন করবো ইন-শা-আল্লাহ্! আগামীকালই প্রস্তাব নিয়ে যাব।”
একথা শুনে সিয়াম খুশি আটকে রাখতে পারেনা। সাথে সাথে খুশির খবরটা রিয়াকে ফোন করে জানায়। রিয়াও খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। কিন্তু এই খুশির স্থায়ীত্ব ছিল মাত্র একদিন।
পরেরদিন সিয়ামের মা বাবা প্রস্তাব নিয়ে গেলে, রিয়ার মা বাবা প্রস্তাবটা ফিরিয়ে দেয়। কারন, রিয়ার মা বাবা রিয়ার অজান্তেই আমেরিকার সেই ছেলের সাথে রিয়ার বিয়ের কথা বার্তা পাকা করে ফেলেছে। সিয়ামের মা বাবা মনের মধ্যে কষ্ট নিয়ে ফিরে আসে।
সিয়াম এবং রিয়া এই কথা শুনার পর দুজনেই দুই প্রান্তে বসে শুধু কাঁদতে থাকে।
.
রিয়ার বিয়ের ঠিক আগেরদিন সিয়াম রিয়াকে একটা এসএমএস করে..
“এরপর তোমার সাথে আর কখনো কথা হবেনা। কারন, কাল তুমি অন্য একজনের স্ত্রী হয়ে যাবে। এটা ভাবতেই আমার বুকের ভেতরটা ভেঙ্গেচুরে যাচ্ছে। কি করার বলো! উপরওয়ালার সিদ্ধান্তে কারো হাত নেই। আমার কপালে হয়তো তুমি ছিলেনা! সব সময় বিশ্বাস রাখবে আল্লাহ্ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। তোমাকে আমি সুখী দেখতে চাই। তুমি সুখে থাকলেই আমি ভাল থাকবো। আমি তোমার জন্য দোয়া করি তুমি স্বামির সংসারে সুখী হও।
আল্লাহ্ হাফেজ।”
.
এসএমএসটা সেন্ড করেই সিয়াম কাঁদতে থাকে। আর রিয়াও এসএমএসটা পড়ে কাঁদতে থাকে।
তারপর…
সম্ভবত সিয়াম এবং রিয়ার কাঁন্না স্বয়ং আল্লাহও সহ্য করতে পারেনি। রিয়ার বিয়েরদিন রিয়ার বিয়েটা ভেঙ্গে যায়! বিয়েরদিন বিয়ে বাড়িতে ছেলের একটা গোপন তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। ছেলে নাকি আমেরিকাতে সিটিজেনসীপ পাওয়ার জন্য আমেরিকার একটি মেয়েকে বিয়ে করেছিলো! একথা জানার পর রিয়ার মা বাবা বিয়েটা ভেঙ্গে দেয়। সেই সুবাদে রিয়ার সাথে সিয়ামের বিয়েটাও ফাইনাল হয়ে যায়।
.
দুই বছর পর…
আজ ওদের বাশর রাত। সিয়াম বাশর ঘরে ঢুকেই রিয়াকে বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে কাঁদতে থাকে। সাথে রিয়াও কাঁদছে। এই কাঁন্না যেন সুখের কাঁন্না! রিয়া কাঁদতে কাঁদতে বললো.. “আল্লাহ্ চাইলে কি না পারেন! চলো দুজনে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে আল্লাহর দরবারে শুকরিয়া আদায় করি।”
তারপর দুজনে নামাজ পড়ে নতুন জীবনের শুরু করলো।

……………………………………(সমাপ্ত)………………………………

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত