জোড় করে সজীবকে ঘরে ঢুকালো ওর বন্ধুরা। সজীবের আজ বিয়ে হয়েছে, হ্যা আজ তার বাসর রাত। সজীব ভীতু নয়। কিন্তু প্রথম বিয়ে করায় নাকি সে খুবই চিন্তায় আছে। যদিও বাবা মায়ের পছন্দের মেয়ে ঘরে ঢুকেই খাটের পাশে দাড়িয়ে আছে। একটু কাশি দিলো। সজীবের বউ মানে ফারিয়া ঘুরে তাকালো। সজীব বলল….
-আমি কি বসতে পারি?
– না, দাড়িয়ে থাকেন।
-এই টা আবার কেমন কথা!!!!! (মনে মনে) আচ্ছা ঠিক আছে, দাড়িয়েই থাকলাম।
-শুনুন….
-জ্বি বলুন.
-একটা গ্লাস নিয়ে আসেন তো….
-এতো রাতে গ্লাস কই পাবো? কেন? পানি খাবেন?
– জ্বি না। ড্রিংকস করবো আপনার সাথে…
-মানে কি!!!!!
-কেনো বাবু???? ড্রিংকস কারে বলে জানেন না?
-ইয়ে মানে। না জানি না। তবে একটু একটু জানি আর কি।
-জান বলছি।
-আচ্ছা আচ্ছা যাচ্ছি।
বের হয়ে গেলো সজীব।ঘরে গ্লাস ছিল। কিন্তু ফারিয়া ইচ্ছে করেই সরিয়ে রেখেছিল।বক বক করতে করতে সজীব গেল গ্লাস নিয়ে আসতে। কোনো রকম খুঁজে একটি গ্লাস নিয়ে আসলো।
-এই যে নিন ধরুন।
-একটি গ্লাস!!!! আপনি কিসে খাবেন?
-আমি ওই সব খাই না।
-কিহ! খান না? কয় নাম্বার চাপা?
-দেখুন আমি ভদ্র ছেলে।
-তাহলে আমি কি অভদ্র???
-না না। আপনি তা হতেই পারেন না। কি দজ্জাল মার্কা বউ রে বাবা। বাসর রাতে ড্রিংকস নিয়ে ব্যস্ত।
-ওই কি বললেন আপনি? আবার শুনি তো।
-আমার ঘাড়ে কয়টা মাথা???আপনাকে কিছু বলতে যাবো!!!!
-গুড বয়। নিন এই টা খান।
-বললাম তো এই সব খাই না আমি।
-বলছি না খেতে???? না হলে সারারাত দাড় করিয়ে রাখবো।
-আচ্ছা দিন।
-হুম।
-এই টা তো সেভেন আপ
-তো? আপনি কি ভেবেছেন মদ খাওয়াবো???
-না না।
-আরে হ্যা হ্যা। ড্রিংকস মানে তো ওই টাই তাই না বাবু।
-আরে কি যে বলেন।
-খেয়েছেন। এখন গল্প বলেন।
-আবার গল্প!!!! কিসের গল্প?
-কিসের আবার, আপনার গার্ল ফ্রেন্ড এর।
-আমি এই কারে বিয়ে করলাম। বাসর রাতে বউ আমার গার্ল ফ্রেন্ড এর কথা শুনতে চায় (মনে মনে)। আমার ওই সব নেই।
– আল্লাহ তাই? খুব ভাল ছেলে আপনি।
-আপনিও খুব খুব খুব ভাল একখানা মেয়ে।
এই খুনসুটি করতে করতে কেটে যায় রাত। কিছু দিন পর সজীব তার অফিসে আবার যাওয়া শুরু করলো। ফারিয়ে নিজ থেকে ফোন দিয়ে অনেক কিছুই বাহানা করতো। এটা সেটা অসময়ে নিয়ে আসার জন্য। সজীব একটুও বিরক্ত বোধ করতো না। কিন্তু মাঝে মাঝে খুব রেগে যেত।
একদিন…
-হ্যালো…
-হুম। আবার কি লাগবে শুনি?
-এক তোরা গোলাপফুল।
-রাত ১০ টা বাজে। আমি এখন গোলাপফুল পাবো কই রে বাবা।
-আমি কি জানি? যেখান থেকে পারেননিয়ে আসবেন।
-এতো রাতে গোলাপ দিয়ে কি করা হবে?
-আমার বয় ফ্রেন্ড কে দিবো। সে আজ আসবে।
– আসলে ভাল। তার হাতে তোমায় তুলে দিয়ে আমি একটু রেহাই পাই।
-হ্যা, আপনি তো তাই চান।
-ঠিক আছে। নিয়ে আসবো।
সজীব একটু চিন্তায় পড়ে গেলো। সত্যিই কি এই পাগলী টার বয় ফ্রেন্ড আছে। আচ্ছা থাকলেই বা কি। আমি কেন ভাবছি। সেতো আমায় ভালই বাসে না। এই সব ভেবে অনেক খুঁজে এক তোরা গোলাপফুল নিয়ে যায় সে। দরজা খুলতেই,,,,,,মনে হয় এক পরী দাড়িয়ে আছে। পরনে নীল শাড়ি, হাতে রেশমি চুড়ি। খোলা চুল। অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকলো সজীব। কেন জানি আজ তাকে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে। ইচ্ছে হচ্ছে প্রেমে পড়ে যাই।
-এই যে মিস্টার….
-হ্যা শুনছি…
-আমার সাথে চলুন।
-কোথায়?
-কোথায় মানে? আমার বয় ফ্রেন্ড আসবে না? সেখানে আমার সাথেযাবেন।
-তাই বলে আমি কেনো যাবো?
-আপনি আমার স্বামী বলে তাই!
-মহা মুশকিল তো। আচ্ছা চলো। তাকোন জায়গায় আপনার হবু বড়আসবে শুনি।
-সামনে যেতে লেক আছে, সেখানেআসবে।
-আচ্ছা।
সজীব তার বাইক নিয়ে বের হয়ে গেলো। পিছনে ফারিয়া। এই প্রথম ফারিয়াকে নিয়ে বের হওয়া। তাও নাকি তার বয়ফ্রেন্ড এর জন্য।হায় আল্লাহ। কারো ঘরে যেন এমনবউ না পরে।
-থামুন থামুন।
-এখানেই?
-হ্যা।
-কই সে?
-গোলাপফুল গুলো ধরুন তো।
-আমি কেনো ধরবো?
-ধরতে বলেছি না?
-উফফ। ধরলাম।
-এবার হাটু গেড়ে বসুন।
-ক্যান!!!!!
-আহা! বসুন না।
-আচ্ছা বসছি।
-এবার বলুন। আই লাভ ইউ ফারিয়া।
খুব অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে সজীব। কি বলছে ফারিয়া। কোথায় যেন এক মূহুর্তে হারিয়ে গেল সে। সজীব সত্যিই অনুভব করতে পারছে, সে ফারিয়েকে ভালবাসে। আর ফারিয়াও সজীব কে।
-কি হলো??????
-আমি সত্যি তোমায় ভালবাসি ফারিয়া আই লাভ ইউ…..
-আই লাভ ইউ টু….
এই বলে হাত থেকে গোলাপফুল গুলো ফারিয়া নিল। তারপর আবার সেই রাত জাগা। তবে ড্রিংকস দিয়ে নয়। ভালবাসা দিয়ে,,,,,,,,,,