আধুনিকা

আধুনিকা

সময়ের সাথে সাথে মানুষের পোশাক -আশাকের পরিবর্তন হচ্ছে। নব্বই দশকের পোশাক আর এখনের পোশাকের মধ্যে রয়েছে দারুণ তফাৎ। তখনকার মেয়েরা পরত শাড়ি, আর ছেলেরা ঢোলা প্যান্টের সাথে শার্ট। আগে প্যান্ট ছিড়ে গেলে মানুষ লজ্জা পেত,আর এখন প্যান্ট ছিড়ে তাকে ফ্যাশন বানিয়েছে।আর তার নাম হল আধুনিকতা,স্মার্টনেস।কিন্তু এতে আমার ঘোর আপত্তি। মানুষ আধুনিক আর স্মার্টনেস বলতে আসলে কি বোঝে জানিনা। এটা নিয়ে আমার গার্লফ্রেন্ডের সাথে শ’খানেকবার ঝগড়া হওয়ার পরে ক্ষ্যান্ত দিয়েছি।কারন সে পুরোপুরি তথাকথিত আধুনিকা এবং স্মার্ট মেয়ে।এসব কথা বলে বরাবরই শুনতে হয়েছে”নিজেকে আপডেট করো শাওন! “।তাই ভাবলাম নিজেকেই আপডেট করবো। রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে নিলুকে কল করলাম- ” হ্যালো,,,,,আমার নিলু পাখিটা কি করে?? ” “বাব্বাঃ এত্ত রোমান্টিক কেন মশাই?”

“আরে কিছুনা,,,শোনো না,, বলছিলাম কি,,,,কালকে তুমি কোন ড্রেস টা পরবে?আমাকে সেটার একটা পিক দিতে পারবে?” “কেন? এটা দিয়ে তুমি কি করবে?” “না, মানে,, দেখতাম আর কি!আর তোমার ড্রেসের সাথে ম্যাচিং করে পরতাম। তুমিই তো বলো আমাকে আপডেট হতে,তাই আর কি!” “আচ্ছা, ওয়েট করো,আমি পাঠাচ্ছি! ” মিনিট পাঁচেক পরে দেখলাম নিলু একটা জামার পিক পাঠিয়েছে। পিংক কালার, কিন্তু এটা তো বাচ্চাদের ফ্রক-ট্রক হবে মনে হয়।আমি আবার সিউর হওয়ার জন্য নিলু কে কল করলাম।নাহ্,এটা ওর ই ড্রেস।তার মানে কালকে আবারও হাতা কাটা হাফ ড্রেস পরবে ও!নাহ্,,,বকে আর কাজ নেই!যা করার বুদ্ধি দিয়ে করতে হবে। সোজা আঙুলে আর ঘী উঠছে না।

সকাল বেলা আমিও সুন্দর একটা পিংক কালারের জামা পরে বের হলাম।মহারানী শপিংয়ে যাবে আজকে। কিন্তু রাস্তা দিয়ে হাটার সময় টের পাচ্ছিলাম লোকে আমার দিকে কেমন করে তাকাচ্ছে। কিন্তু এতে আমার চোখ দিলে চলবেনা এখন। তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তা না হলে খবর আছে আমার। পনেরো মিনিট পর আমি নিলুর কাছে পৌছাুলাম।কিন্তু নিলু আমার দিকে চোখ গরম করে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,”এটা কি পরেছো শাওন? এসবের মানে কি?” “কেন? আমাকে ভালোলাগছে না দেখতে?ভ্রু নাচিয়ে নাচিয়ে জামাটা আরেকটু টেনে টুনে সোজা দাড়িয়ে বললাম, এবার বলো কেমন লাগছে দেখতে?”

“আস্ত রাম ছাগলের মতো লাগছে দেখতে? হাফ লেডিস কোথাকার!! কি পরেছো তুমি এটা? এটা না শার্ট, না টিশার্ট? কোন তরো জামা এটা? জামার কলার আছে হাতা নেই,আবার নিচের দিক থেকে পেট বের হয়ে আছে।”
আমি কিছুটা বিরহী ভঙ্গিতে বললাম,তুমি আমাকে রাম ছাগল বললে বললে,,,কিন্তু হাফ লেডিস কি করে বললে? আমার জেন্ডার নিয়ে টানাটানি করলে? ছিঃ নিলু,,ছিঃ!! আমি আপডেট হতে চেয়েছিলাম। তোমাকে ভালোবাসি বলে আমি আমাকে পরিবর্তন করতে চেয়েছি। তাই এই জামা পরেছি।ভেবেছি তুমি খুশি হবে, কিন্তু তুমি কিনা শেষে আমাকে হাফ লেডিস বললে?? দেখলাম নিলু রাগ টা হালকা কমিয়ে শপিংমলের এক কোনায় একটা আয়নার সামনে টেনে নিয়ে বলল,”তা কি বলব তোমাকে? তুমি একটু আয়নায় নিজেকে দেখো?? পেট বের করা, হাতা নেই,,, লোকে তোমাকে দেখে হাসাহাসি করছে।”

“কিন্তু, তাই বলে কি তুমি আমাকে হাফ লেডিস বলবে? তুমিও তো পেট বের করে জামা পরে আছো, আমার জামার তো তাও গলা টা ঢাকা আছে, তোমার তো পুরা উদাম গলা। আর তার উপরে হাতা ও নেই,,, মনে হচ্ছে কিছু একটায় টান লাগলেই খুলে যাবে যাবে ভাব!! লোকে তোমার দিকে তাকিয়ে হাসছে না,বরং তৃপ্তি নিচ্ছে। কই, আমি কি তোমাকে হিজরা…. সরি,,,মানে মাল জিনিস মেয়েদের কিন্তু সাজিয়েছো ছেলেদের মতো করে। এর জন্য হাফ জেন্টেলম্যান বলেছি? ” শা-ও-ন!!!,মুখ সামলে কথা বলো। এটা ফ্যাশন,আর এখনকার ট্রেন্ড ই এটা। সময়ের সাথে খাপ খাইয়ে নেওয়া টা স্মার্টনেস। ”

“স্মার্টনেস? স্মার্টনেসের সংজ্ঞা টা তুমি ঠিকই দিয়েছ।তবে নিজের শালিনতা বিসর্জন দেয়াকে স্মার্টনেস বলেনা। শালিনতা বজায় রেখে পরিবেশের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারাটা স্মার্টনেস।স্মা র্টনেস শুধু পোশাক আশাকে না,কথা বর্তায়, চাল চলনে পরিবর্তন আনা।ছোট ছোট পোশাক পরাটা স্মার্টনেস বা আধুনিকতা না। আর ট্রেন্ড বলছো? এটা আমরা ই বানিয়েছি। ভুল পথ টা প্রশস্ত আর পিচ্ছিল।আর হ্যা,ছেলে মানুষ উদাম হয়ে ঘুরলেও তাতে কেউ তৃপ্তি খোঁজে না। কিন্তু মেয়েরা সামান্য হাতা কাটা পোশাক পরলেই মানুষ তাতে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে।কেন তুমি এরকম নিজেকে সস্তা করছো নিলু? মালালা ইউসুফ ও কিন্তু একজন স্মার্ট এবং আধুনিক মহিলা।সেও কিন্তু তোমার বয়সী। কই? তাকে কি কখনো দেখেছো ছোট ছোট জামা পরে কোনো পার্টিতে যেতে? তাকে তো কেউ বড় বড় জামা পরাতে ব্যাকডেটেড বলেনি। আমি তোমাকে ভালোবাসি নিলু। ভালোবাসি বোলেই তোমাকে পরিবর্তন করতে চেয়েছি।তুমি যখন রাস্তা দিয়ে এসব কাপড় পরে হাটো,তখন তোমাকে দেখে আমার নিজের ই লজ্জা করে। কিন্তু তুমি বুঝতে চাইতে না। আজকে আমাকে যেমন বিশ্রি দেখাচ্ছে, তোমাকেও এরকম লাগে। তুমি অনেক বুদ্ধিমতি।প্লিজ এভাবে আর নিজেকে সস্তা কোরোনা নিলু!!”

নিলু মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে, চোখে পানি টলটল করছে।পলক পড়লেই টুপ করে পানিটা গড়িয়ে পড়বে। হঠাৎ নিলু কিছু না বলেই ও হনহন করে চলে গেল। আমি পুরো ভ্যাবলাকান্তের মতো দাড়িয়ে রইলাম৷ বুঝলাম না,ও ঠিক কিভাবে নিলো কথা গুলো। আজকে পুরো ফুল ডোজ দেওয়া হয়ে গেছে। কিন্তু তাতে ও ভালো হয়েছে। প্রতিদিন ঘ্যান ঘ্যান করার চেয়ে একদিন কান ফাটানো ভালো। বুঝলে ভালো,না বুঝলে তো!!

হঠাৎ টুং করে একটা মেসেজ আসলো। নিলু পাঠিয়েছে৷ড্রেস চেঞ্জ করে ঠিক এই যায়গাতেই আসতে বলেছে।আমি আর দেরি করলাম না।দ্রুত বাসায় গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করেই চলে এলাম।এবার আমি আগে এসেছি। দুর থেকে দেখতে পাচ্ছি নিলু রিকশা থেকে নামছে। চুল আর আগের মতো করে মটকার উপরে নেই, পরনে বেগুনী আর নেভি-ব্লু’র কম্বিনেশনের একটা শাড়ি। কি অপুর্ব ই না লাগছে দেখতে।এখন আর চোখে উচ্ছলতা নেই। শান্ত নদীর মতো লজুক চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। এখন একদম বাঙালি আধুনিকা মেয়ের মতো লাগছে। আধুনিক মানে জামা কাপড়ের সাইজ কমানো নয়, মানুষের স্বাস্থ্য সম্মত মননশীলতার পরিবর্তনই হল আধুনিকতা !!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত