কথা দিলাম ছাড়বো না এ হাত

কথা দিলাম ছাড়বো না এ হাত

কয়েকদিন যাবৎ খেয়াল করছে জীবন বাসার ছাদে মেয়েটা রোজ একা একা দাঁড়িয়ে আনমনে কি যেন ভাবে। মেয়েটার সাথে কথা হয়নি কখনো জীবনের কারণ মেয়েটা হয়তো নতুন এসেছে এ বাসায়। আজও মেয়েটা একা দাঁড়িয়ে আছে ছাদের এক কোণে। জীবন এক পা দু পা করে মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মেয়েটা একবার জীবনের দিকে তাকিয়ে মুখটা ফিরিয়ে ছাদের অন্য কিনারে চলে যায়। জীবনও আস্তে আস্তে করে আবার মেয়েটার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়।মেয়েটা এবার আর সরে যায় না।জীবন ও মেয়েটা পাশাপাশি চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর জীবন বলে উঠে আমার নাম জীবন, আমি দ্বিতীয় তলায় থাকি।আপনার নামটা কি জানতে পারি?

মেয়েটা নামটা না বলেই চলে যায়। জীবন অবাক হয় কেমন মেয়েরা বাবা, নামটা জানতে চাইলাম না বলেই চলে গেলো। পরদিন আবার বিকেলে মেয়েটার সাথে ছাদের উপর দেখা হয়। জীবন আবার নামটা জানতে চায়। মেয়েটা নামটা না বলে চলে যেতে চায় কিন্তু জীবন এবার সামনে দাঁড়িয়ে যায়।উপায় না পেয়ে মেয়েটা নামটা বলে দেয়।মেয়েটার নাম জেরিন। নামটা বলেই মেয়েটা ছাদ থেকে নেমে যায়।সেদিন আর কথা হয় না।মেয়েটার এরকম আচরণ দেখে জীবনের একটু রাগ হয়।মনের ভিতর একটু জিদ চলে আসে।

আবারো পরদিন মেয়েটার সাথে দেখা হলে জীবন কাছে গিয়ে বলতে থাকে আপনার নামটা তো অনেক সুন্দর কিন্তু মনটা এত বিশ্রী কেন।একজন মানুষ আপনাকে কিছু জিঙ্গেস করছে আর আপনি কিছু না বলেই এড়িয়ে যাচ্ছেন। এটা কি ঠিক বলেন। মেয়েটা কোন কথা না বলে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে। ঐ নীল আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেন একটা ভাবতে থাকে। কিছুক্ষণ পর মেয়েটা অর্থাৎ জেরিন আস্তে করে বলতে থাকে দেখেন আমার মনটা ভালো নেই।আপনার কথার জবাব আমি দিতে পারতাম কিন্তু জবাব দেয়ার মতো মন মানসিকতা এখন কোনটাই আমার নেই। দয়া করে আমাকে একটু একা থাকতে দিন।

জেরিন যখন কথা গুলো বলতেছিলো সে মুহূর্ত জীবন মেয়েটা চোখের দিকে তাকিয়ে কিছু একটা উপলদ্বি করতে পারে।জীবন বুঝতে পারে মেয়েটার হয়তো কোথাও একটা লুকোনো দুঃখ আছে।সেদিন আর কিছু না বলেই জীবন ছাদ থেকে নেমে যায়। পরদিন বিকেল বেলা জেরিনের পাশে গিয়ে জীবন আবার বলে উঠে জেরিন আপনার কাছে একটা কথা জানতে চাইবো বলবেন কি?কথা দিচ্ছি দ্বিতীয় প্রশ্ন করবো না। জেরিন বলে উঠে আচ্ছা বলেন? জেরিন আপনি এভাবে একা একা মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন,বলবেন কি? জীবন সাহেব সব কথা কি সবাইকে বলা যায়।কিছু কিছু কথা থাকে না বলাই ভালো।দয়া করে আর কিছু জানতে চাইবেন না।

এভাবে প্রতিদিন একটু একটু করে কথা হয় দুজনের।একটু একটু কথা বলতে বলতে তাদের দুজনের মাঝে বেশ বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠে।প্রতিদিন ছাদের উপর বসে দুজনের আড্ডা, মন খুলে গল্প হতে থাকে।মন মরা মেয়েটা জীবনের সাথে মিশতে মিশতে অনেক হাসিখুশি হয়ে উঠে। জীবনও জেরিনের হাসিমুখ দেখে অনেক আনন্দিত হয়। দুজনের বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্কটা অনেকটা গভীর হয়।যে মেয়েটা আগে বাসার বাহির হতো না,প্রাণ খুলে হাসতে পারতোনা, মনমরা হয়ে থাকতো ঠিক সেই মেয়েটাই জীবনের সংস্পর্শ পেয়ে নতুন জীবন ফিরে পায়।জীবনেরো বিষয়টা ভালো লাগে। এভাবে তাদের বন্ধুত্ব টা অনেক দিন পার হয়ে যায়। এই মনমরা মেয়ে জেরিন যে কখন জীবনের মনে যায়গা করে নেয় জীবন বুঝে উঠতে পারে না। মেয়েটার জন্য মনটা কেমন জানি করে উঠে।জেরিনের হাসি ,কথাবার্তা, চালচলন সব কিছুই কেন জানি অন্যরকম ভালো লাগে জীবনের।

ঔ দিকে জেরিনও কেমন করে জানি জীবনকে ভালোবাসতে শুরু করে। জীবনকে সবসময় কেন জানি কাছে পাওয়ার ইচ্ছা হয় জেরিনের। কিন্তু দুজনের কেউ কাউকে বলতে পারেনা।দুজনে ভয় পায়,ভালোবাসি বলার পর যদি কিছু হয়ে যায়,কথা যদি না বলে। এভাবে দিনের পর দিন পার হতে থাকে কিন্তু বলা হয় না। কোন এক ছেলেপক্ষ হঠাৎ করে জেরিনেকে একদিন দেখতে আসে। জেরিনকে দেখে তাদের পছন্দ হয়ে যায়। জেরিনের বাবা মাও চায় জেরিনকে তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে।কারণ জেরিনের যে একটা সমস্যা আছে।যা কেউ জানেনা। তাই তারা জেরিনকে যত তাড়াতাড়ি পারে বিয়ে দিতে চায়।

জেরিনকে দেখতে আসার খবর শুনে জীবন অবাক হয়ে যায়।জীবনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ার মতে অবস্থা হয়। জীবন দেখতে আসার কথাশুনে সোজা জেরিনদের বাসায় যায়।জেরিনকে বাসার ভিতর না পেয়ে সোজা ছাদের উপর চলে আসে জীবন।জেরিন সেই আগের মতো মনমরা হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। জীবন কোন কথা না বলে জেরিন কে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে আমি ছাড়া কেউ তোমাকে বিয়ে করতে পারবে না।আমি তোমাকে ভালোবাসি। জেরিন বলতে থাকে তাড়াতাড়ি ছেড়ে দাও কেউ দেখতে পেলে সমস্যা হবে।জীবন আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বলতে থাকে, ছাড়বো না।এই যে ধরছি আর কখনো ছাড়বো না।

মৃত্যুর এক সেকেন্ড আগেও তোমাকে ছাড়বো না।জেরিন তাড়াতাড়ি করে ছাড়িয়ে নেয় নিজেকে। আর বলতে থাকে আমাকে ভালোবাস? আমার সম্পর্কে কি জানো তুমি? জীবন বলতে থাকে কিছুই জানার প্রয়োজন নাই আমার। যতটুকু জানি তাতেই হবে।তোমার অতীত জানার কোন ইচ্ছে আমার নেই।আমি তোমাকে ভালোবাসি এতটুকু জানলেই হবে আমার। জেরিন বলতে থাকে এতদিন কেন বলো নাই তাহলে? আজকে যখন আমাকে কেউ দেখতে আসছে তখন কথাটা বলার সাহষ হলো।

ভয় পেয়েছিলাম এতদিন। ভালোবাসি বলার পর তুমি যদি রাগ হয়ে কথা না বলো।আমার কাছ থেকে নিজেকে আড়াল করো তখন আমি কি করতাম। অনেক ভয় পেতাম তোমাকে। জীবন আমিও তোমাকে ভালোবাসি। কিন্তু তার আগে আমার একটা সত্য তোমাকে জানতে হবে। কি সত্য? জীবন আমার আগেও একটা বিয়ে হয়েছিলো।বিয়ের একমাস পর আমার স্বামী আমার যায়। তুমি কি এটা মানতে পারবে? তোমার পরিবার কি আমাকে মানতে পারবে এ কথা শোনার পর?

জীবন চুপ করে কিছুক্ষণ থাকার পর বলে উঠে পাগলি আমার যদি তোমার মতো হতো তাহলে কি করতাম আমি। তুমি কোন চিন্তা করোনা, ভালো যখন বাসছি আজীবন তোমার সাথেই পার করবো। আমার পরিবারকে সামলানোর দায়িত্ব আমার। তুমি এ ব্যাপার নিয়ে আর কোন কথা বলবা না।জীবন জেরিন কে জড়িয়ে ধরে বলে আজীবনের জন্য ধরলাম।কথা দিচ্ছি কখনো ছাড়বো না। জেরিনও বলে উঠে আমিও ছাড়বো না। ভালোবাসি অনেক…..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত