ছোট্র একটু ভালোবাসা

ছোট্র একটু ভালোবাসা

— সত্যি কাল আসবে না?
—- নাহ্ রে পাগলী। আমার ওয়ার্ড আছে।
—- একটা দিনের তো ব্যাপার না হলে কিছু সময় এর জন্য…
—- সম্ভব নয়। তুমি তো জানো।
—- ধন্যবাদ।
—- মুন এমন করো না, প্লিজ শোন।
—- (চুপ)
—- প্লিজ পাগলী কান্না করে না। আগামী বছর অবশ্যই সাথে থাকবো। এক সাথে সেলিব্রেট করবো। প্রমিস….

খুব কান্না পাচ্ছে। বছরে তো এই একটা দিন উনার কাছে আবদার করি। অন্য কোন দিন উনি আমার সাথে না থাকলেও কিছু বলি না, ব্যস্ততা। যখন উনি ফ্রি থাকেন আমার এক্সাম থাকে কিন্তু তবুও এই দিন টা একান্ত ভাবে চাই। মনে মনে প্রচণ্ড রাগ হচ্ছে। চোখ দিয়েও টুপ টুপ করে ঝড়ছে পানি। বাংলাদেশের সমস্ত ডাক্তার দের বকা দেওয়া শেষ। এই বকা যদি কেউ শুনে সে আর ডাক্তারি করবে না। হে আল্লাহ্‌, অতি যে দুশমন তার ও যেনো জীবন সাথী ডক্টর না হয়। কারণ এরা হয় অনুভূতিহীন। আল্লাহ্‌ ক্যান তুমি আমার জীবনে এই মানুষের সাথে জুড়ে দিলা?? মেয়েটা আজ খুব কাদঁবে। হয়তো না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়বে। বোকা মেয়ে। প্রথমে মনে করেছে আমি এই দিন টা ভুলে গেছি। কিন্তু এটা বুঝে না যেদিন টা আমার পুরো জীবন পাল্টে দিয়েছে, গুছিয়ে নিয়েছে আমায় সেই দিন কিভাবে ভুলবো।

আজ রাত বারো টায় যে আমাদের সম্পর্ক তিন থেকে চার বছরে পা দিবে। এই দিন নিয়ে থাকে মেয়েটির অনেক ব্যস্ততা কিন্তু কাল মেয়েটিকে একাই কাটাতে হবে। এত গুলো মানুষের জীবন নিয়ে তো আর রিস্ক নেওয়া যাবে না। কর্তব্য তো পালন করতেই হবে। আপন মনেই কথা বলে ফোন হাতে নিলো সৌরভ। কল দিচ্ছে কিন্তু অপর পাশে কল রিসিভ করছে না। পাগলী, বালিশ টা কে এত সৌভাগ্যবান করে দিস না, হিংসে হয় তো। এত জোড়ে নিজের সাথে লেপ্টে নিস না, পরের বার যখন আমি সামনে থাকবো কান্না টা না হয় তখন করিস। তখন কি বালিশের জায়গায় আমায় নিবি?? এমন সময় ডাক আসে, অপারেশন থিয়েটার এ যাওয়ার সময় হয়ে গেছে। নিজের উপর হালকা রাগ হয়। চাইলেও মেয়েটির রাগ ভাংগাতে পারি না।

প্রায় পাঁচ ঘন্টা পর অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয় সৌরভ। বড্ড ক্লান্ত লাগছে। বাসায় ফেরার পথে কয়েকবার কল দিয়েছে কিন্তু সুবাসিনীর ফোন অফ। হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। চাবি দিয়ে দরজা খোলার পর চিরচেনা গন্ধ পাচ্ছে। হ্যাঁ,এই গন্ধ টা সুবাসিনীর গায়ের সেই গন্ধ। মনে হচ্ছে পুরো ঘরেই লেগে আছে তার স্পর্শ । আর মাত্র পনেরো মাস। ঠিক পনেরো মাস পর সুবাসিনী কে সে নিয়ে আসবে এই বাসায়। লাইট অন করার জন্য সুইচ দিচ্ছে কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না, বাহিরে তো কারেন্ট আছে। এদিকে ঘড়িতে ১১.৫৫ বাজে। মুনের ফোন এখনো অফ পুরুষ মানুষের কাদঁতে নেই কিন্তু এখন প্রচণ্ড কান্না পাচ্ছে। অন্ধকারে কেউ দেখার মতো নেই। হঠাৎ ড্রয়িংরুমে মোমবাতির আলো জ্বলে উঠে,

my dear mr…

তুমি কি জানো? তুমিই আমার শুরু। স্নিগ্ধ সকালে ছোটছোট মিষ্টি ভুল। তুমি আমার কি? জানতে চাও? আচ্ছা তবে শোন তুমি সেই হ্যাকার যে বিনা টেকনোলজি তে চুরি করেছো আমার এই মস্তিষ্ক। আমার জন্য তুমি কি? তবে বলবো অবশ্যই একটা বাচ্চা ছেলে কেনো? উত্তর টা নিজেই খুঁজে নিও।

সময়ে অসময়ে মন খারাপের কারণ তুমি তেমনি মন ভালো করার টনিক ও তুমি। তুমি আমার সফলতা বিফলতা ও তুমি। প্রতিশ্রুতি? সে আবার কি? যদি তুমি না থাকো পাশে। হারানোর ভয় তো সবাই পায় কিন্তু আমি মনে হয় একটু বেশি ভিতু। অভ্যেস,অবাধ্যতা, অভিমান আকাঙ্ক্ষা, ইচ্ছা,ক্লান্তি, বোকামো, খুশি, শক্তি সবই তো তুমি। গোধূলি বিকেলে সামান্য স্পর্শের অসামান্য প্রাপ্তির খুশি তুমি। তোমার স্পর্শে লজ্জা রাঙানো এই দুই চোখ ও তুমিই। তুমিই আমার সব কিছু। বলতে পারো আমার পুরো পৃথিবী। এমন কি তুমিই আমার শেষ। মোম হাতে কেউ এগিয়ে আসছে। এতে কোন সন্দেহ নেই মেয়ে টি কে। সামনাসামনি এসে দাঁড়ানোর সাথে সাথে আলো জ্বলে উঠে।

—- happy anniversary my dear……

সামনে দাঁড়িয়ে সুবাসিনীর দুটো হাত শক্ত করে ধরে, ঠোটের উষ্ণ ছোঁয়ায় হাত গুলো শিউরে উঠে, লজ্জায় রাঙা দুচোখ।

—- এই অভ্যেস কবে যাবে?
—- কোন অভ্যেস?
—- এই যে হাতে আপনার উষ্ণ স্পর্শ দেওয়ার পরেই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরার….
—- কোন দিন যাবে না। কারণ ভালোবাসি।
—- কচু, কচু বাসেন।
—- হিহিহি। আচ্ছা তুমি এখানে কিভাবে? একা এসেছো? তোমার মা তো ছাড়বে না… আর এত আয়োজন কখন করলে রুমের ভিতর সারপ্রাইজ বলে কিছু মানুষ বেলুন হাতে নিয়ে হাজির। এরা আর কেউ নয় বন্ধু।

—- আরে, তুই না হয় ওর কাছে যেতে পারিস নি কিন্তু ওকেই তোর কাছে নিয়ে এলাম।
—- মানে?
—- বিকেলবেলা মুন কে কল দিয়েছিলাম। বুঝতে বাকি রইলো না। তার পর প্ল্যান মোতাবেক সব তোর সামনে…..
—- তোরা আমার ফ্রেন্ড হয়ে আমার সাথে এমন করলি?
—- এই মেয়ে টা ভাই বলে ডাক দিছে, তো এর চোখের পানি কিভাবে সহ্য করবো? এমন সময় কেক নিয়ে সবাই হাজির।

—- আমি কেক কাটবো না। (মুন)
—- কেনো? সবাই মিলে জিজ্ঞেস করে.
—- আজ পর্যন্ত আমাকে প্রপোজ করে নি। অপশন দিয়েছিলো। সন্ধ্যায় তো এফ বি তে ওয়ার্নিং দিয়েছি যে আজ আমি অপশন দিবো হয় প্রপোজ করবে না হয় ব্রেকাপ।
—- আমি কোন টা তেই রাজি নই।
—- ওকে, আমিও কেক কাটবো না।

কিন্তু বন্ধু বলে কিছু মানুষ থাকে যারা জানে সব আবদার পালন করতে। অগ্যতা দশ মিনিটের মধ্যে সৌরভ কে হাটু গেড়ে বসতেই হলো সুবাসিনী কে প্রপোজ করার জন্য।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত