শিরোনামহীন

শিরোনামহীন

কোথায় তুমি? (জান্নাত)

-অফিসে আছি।কেন কিছু বলবে? (আবির)
-না,কিছুনা।আজকে তাড়াতাড়ি বাসায় আসবে তো।
-কেন?
-আমি বলছি তাই।দরকার আছে।
-আচ্ছা দেখছি।
-দেখছি বললে হবেনা।তাড়াতাড়ি আসবা তাই জানি।

কথাটা বলেই আবির কে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই জান্নাত ফোনটা কেটে দিলো। আবির এবং জান্নাত দু’জন স্বামী-স্ত্রী।দুই বছর প্রেম করার পর ছয় মাস পুর্বে তাদের বিয়ে হয়েছে।প্রথম দিকে মেনে না নিলেও পরবর্তীতে উভয়ের পরিবার বিষয়টা মেনে নেই।আবিরের সাথে জান্নাতের সম্পর্ক হয়েছিল অদ্ভূত ভাবে। চার বছর আগের কথা জান্নাত ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে সবে ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।যথেষ্ট মেধাবী ছাত্রী।নিয়মিত ক্লাস করে।জান্নাতের একটা অদ্ভূত মন-বাসনা ছিলো।সেটা হচ্ছে, তার জীবনসঙ্গীর নাম হবে আবির।’আবির’ নামটা জান্নাতের অসম্ভব পছন্দ।জান্নাত এই নামটা নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেছে। স্কুল-কলেজে থাকতে অনেক অফার পেয়েও সেগুলোতে কোনো পাত্তা দেয়নি জান্নাত।

কারন যারা তাকে অফার দিয়েছে তাদের মাঝে কারো নামই ‘আবির’ ছিলোনা।আর জান্নাতও সিদ্ধান্তে অটল ছিল।যেদিন আবির নামের কেউ তাকে ভালোবাসার কথা বলবে সেদিন তাকে মেনে নিবে।তার আগে সে কোনো সম্পর্কে জড়াবেনা। তো নতুন ভার্সিটিতে ক্লাসগুলো অনেক উপভোগ করে জান্নাত।ইতিমধ্যে অনেক বন্ধু-বান্ধব হয়ে গেছে তার।তবে জান্নাত একটা বিষয় খেয়াল করে।ভার্সিটির সব ছেলে জান্নাতের সাথে গায়ে পড়ে কথা বলে। কিন্তু একটা ছেলে তার সাথে কথা বলেনা। শুধু ক্লাসে একপাশে বসে একা একা বই পড়ে।কারো সাথেই তেমন কথা বলেনা। কিন্তু বিষয়টা জান্নাতের একদম পছন্দ হয়না।একদিন জান্নাত তার এক বন্ধু কে ডেকে বললো:

-এই সাকিব,ঐ যে কোনাই বসে আছে ঐ ছেলেটাকে চিনিস?
-হুম।ওর নাম আবির।নাইমুর দের বাসাই ভাড়া থাকে।
-কি নাম বললি??!!!
-আবির।কিন্তু কেন?
-না,এমনি।তুই যা।

আবির’ নামটা শুনলেই জান্নাতের একটা অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে।আজও তার ব্যতিক্রম হলোনা।জান্নাত আবিরের সামনে গিয়ে বললো:

-তোমার নাম আবির?
-হুম।
-ও।আমি জান্নাত।
-ও আচ্ছা।
-তুমি কোথায় থাকো?
-এক ক্লাসমেটের বাসায় ভাড়া থাকি।
-ওহ্।আচ্ছা তুমি এই যে সবসময় বই পড়ো,এটা কি খুব ভালো লাগে?
-হ্যাঁ।
-আচ্ছা তুমি এমন কেন?
-কেমন?

-একটু অন্য টাইপের।
-হুম।
-আমরা কি ফ্রেন্ড হতে পারি?
-আমি তো অন্য টাইপের তুমি জানোই।তাও ফ্রেন্ডশিপ করতে চাইছো?
-অন্য টাইপের বলেই ফ্রেন্ডশিপ করতেচাইছি।
-ওকে ফ্রেন্ড হয়েই গেলাম।

আবির জান্নাতের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলে। জান্নাত শুধু মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে।চোখ সরাতে পারছেনা। এভাবেই চলতে থাকে আবির আর জান্নাতের বন্ধুত্ব।তবে জান্নাত আবিরকে শুধু বন্ধুর চোখে দেখেনা।কারন,জান্নাত আবিরকে ভালোবাসে। আজ জান্নাত ও আবিরের বন্ধুত্ব ২ বছর পূর্ণ হলো।কিন্তু আজ জান্নাত সম্পর্কটাকে আরো পূর্ণতা দিতে চাই। হ্যাঁ,আজ জান্নাত আবিরকে তার মনের কথা বলে দিতে চাই।এতদিন জান্নাত সাহসের অভাবে বলতে পারিনি।কিন্তু যে করেই হোক জান্নাত আবিরকে তার মনের কথা বলবেই। নদীর পাড়ে বসে আছে জান্নাত আর আবির। হঠাত্ করেই জান্নাত আবিরকে বলে উঠলো:

-আচ্ছা আবির তুই কেমন মেয়েকে বিয়ে করবি?
-কেন রে? তুই আজকাল ঘটকালি করছিস নাকি?
-বলবি তো।
-আমার সব মেয়ে পছন্দ।
-ফাজলামি বাদ দিয়ে যেটা প্রশ্ন করেছি সেটার উত্তর দে।(রেগে গিয়ে)
-আহা রাগ করছিস কেন? আচ্ছা বলছি।
-হুম বল।
-যে মেয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়বে,পর্দার সাথে থাকবে,সবার সাথে ভাল ব্যবহার করবে আর আমাকে অনেক ভালোবাসবে।

-আমি তো বললামই।তাও তুই রাগ করে আছিস?
-আচ্ছা আবির একটা কথা বলি?
-পারমিশন নেয়ার কি আছে?বলে ফেল।
-আমি যদি সবগুলো মেনে চলি তাহলে তুই আমাকে বিয়ে করবি?
-হোয়াট! নো ওয়ে। তোর মতন পেত্নী কে আমি কোন দুঃখে বিয়ে করতে যাব?
-আমি সিরিয়াসলি।আবির আমি তোকে ভালবাসি।
-কিন্তু আমি তো তোকে বললামই।আমিও সিরিয়াসলিই বললাম।
-ও,আচ্ছা ঠিক আছে।আমি বুঝতে পারিনি। কথাটা বলেই জান্নাত চলে যেতে চাইলো। কিন্তু আবির হাত চেপে ধরলো।

-তুই কি মনে করিস,ভালবাসতে তুই একাই পারিস? আমি পারিনা?
-আমি তো পেত্নী।তুই কেন আমাকে ভালবাসবি?(কাঁদছে)
-হ্যাঁ।ঠিকই তো বলেছি।তুই পেত্নী।কিন্তু আমার পেত্নী। (কাঁদছে)
-হ্যাঁ, আমিও তোকে ভালবাসি।অনেক ভালবাসি।
-তাহলে এতদিন বলিসনি কেন?
-তুই কেন বলিসনি?
-যদি তুই না করিস।আর আমাদের বন্ধুত্বও ভেঙ্গে যায়।তাই বলিনি।
-আমিও এই কারনেই বলিনি।
-খুব কথা কাটানো শিখেছিস।এখন প্রোপোজ করবি নাকি দাঁড়িয়ে থাকবি?
-দাঁড়িয়েই থাকবো।কোনো প্রোপোজ হবেনা।

আমাদের ভালবাসা হবে অন্যরকম। অতঃপর শুরু হলো জান্নাত ও আবিরের পথচলা।দীর্ঘ দুই বছর প্রেম করার পর আজ তারা বিবাহিত। আবির অফিস থেকে ফিরে এসেই কলিং বেল বাজালো।সাথে সাথেই দরজা খুলে দিলো জান্নাত।

-দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলে নাকি? (আবির)
-হুম তোমার জন্যই অপেক্ষা করছিলাম। (জান্নাত)
-হঠাত্ এত জরুরী তলব করা হলো যে?
-আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।
-হুম।

আসলে আজ জান্নাত আবিরের জন্য বিরিয়ানী রান্না করেছে।বিরিয়ানী আবিরের খুব পছন্দ।তাই আজ জান্নাত আবিরকে তাড়াতাড়ি আসতে বলেছিল। আবির ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার টেবিলে বিরিয়ানী দেখে বললো:

-ওয়াও! তুমি বিরিয়ানী রান্না করেছো?
-দেখতেই তো পাচ্ছো।
-হুম।এজন্যই তুমি আমাকে আজ অফিস থেকে আগে আসতে বললে।
-এইতো, বুঝেছো।এইবার খেতে বসো।
-না তুমি খাইয়ে দাও।
-ঢং করোনা।চুপচাপ খেতে বসো।
-তুমি না খাইয়ে দিলে খাবোনা।
-উফফ্।তুমি আসলেই একটা পাগল।হা করো।
-হাআআআ।

জান্নাত খাইয়ে দিচ্ছে আর ভাবছে,এই পাগল টাকে নিয়ে সে তার সারাটা জীবন অনায়াসে পার করে দিতে পারবে।এইতো সেই আবির। তার স্বপ্নের আবির।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত