সকল ধরনের ঝামেলা শেষ করে বউ নিয়ে বাড়িতে হাজির হয় রাজু। এখন সে বাসর ঘরের সামনে দাড়িয়ে আছে। মনে মনে সাহস সঞ্চার করে ভেতরে ডুকলো রাজু। রাজুকে ভেতরে ডুকতে দেখে,রাজুর নববিবাহিত বউ খাট থেকে নেমে এসে রাজুর পা ধরে সালাম করে আবার খাটের উপর ঘোমটা দিয়ে বসে রইলো। রাজু কি থেকে কি বলবে,কিছুই বুঝতেছে না। রাজু আসলে মেয়েটার নামও জানে না এবং কখনো দেখেও নাই। তাই,,,,,,
:-আপনার নামটা কি জানতে পারি,,,,?(খাটে বসতে বসতে বলল রাজু)
:-আমার নাম হলো ইসমত আরা রিয়া।(রাজুর বউ মানে রিয়া)
:-ও,আসলে আপনি কিছু মনে করবেন না।আমি আপনার সম্পর্কে কিছুই জানি না এবং আপনাকে কখনো দেখিও নাই,,,,,যদি একটু আপনার সম্পর্কে কিছু বলতেন,,,,,(রাজু)
:-আশ্চার্য ব্যাপারতো।আপনি আমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই এবং আমাকে না দেখেই বিয়ে করে ফেললেন,,,,,?(রিয়া)
:-হুমম,,,,,
:-মানে,,,,,?
:-মানে জানতে চাও,,,,,,,তাহলে শুনো,,,,,,
আমি আমার মা-বাবাকে আমার জীবনের থেকে বেশী ভালোবাসি।উনারা আমাকে অনেক কষ্টে মানুষ করেছেন।উনারা চাইলেও আমাকে কষ্ট করে মানুষ না করে অমানুষ করতে পারতো।তাই আমি নির্দিদ্বায় বলতে পারি আমার জীবনের সবকিছুতে আমার মা-বাবার অবদান অপরিসীম।উনারা আমার সকল ধরনের চাওয়া-পাওয়া পুরন করেছে। এককথায় বলতে পারো,উনারা আমার সুখের জন্য নিজেরা কষ্টটা বেছে নিয়েছে। উনারা আমায় এতকষ্ট করে প্রতিষ্টিত করেছেন।এখন উনাদেরও একটু সুখে-শান্তিতে থাকা দরকার।আর উনাদের সুখে-শান্তিতে রাখার জন্য আমি বিয়ে করেছি। আপনি হয়তো আমার এসব কথার কোন ধরনের মানে বুঝতেছেন না,,,,তাই না?
:-হুমম যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন,,,,,!!!
:-হুমম,শুনুন,,,,,,,আমি কোনভাবেই বিয়ে করতে চাইছিলাম না।কেন বিয়ে করতে চাইছিলাম না,,,?তার কারণটা হলো,এখনকার মেয়েরা শশুড়-শাশুড়ির খেদমত তো দুরের কথা উল্টো শশুড়-শাশুড়িকে তাদের ছেলের কাছে খারাপ করে তুলে।পরে ছেলেটাও তার বউয়ের কথায় বিশ্বাস করে,মা-বাবাকে ভুল বুঝে দুর দুর করে তাড়িয়ে দেয়।
আমি চাইছিলাম না আমার মা-বাবার সাথে এমন কিছু হোক।তাই বিয়ে করতে চাইছিলাম না। কিন্তু না করেও পারলাম না উনাদের কথা বিবেচনা করে। তাই মত না থাকা সত্বেও মা-বাবার পছন্দে মানে আপনাকে বিয়ে করি। আর তাই আমি আপনার সম্পর্কে কিছু না জেনেই আপনাকে বিয়ে করি। আপনি হয়তো বলতে পারেন,আমি কি করে মা-বাবার উপর বিশ্বাস করে আপনাকে না দেখে বিয়ে করেছি,,,? তাহলে আমি বলবো,আমার মা-বাবার উপর আমার সম্পুর্ণ আস্থা আছে।কারণ,উনার আমার সারা জীবনে আমার ভালোটাই করে এবং চেয়ে এসেছে।আশা করি আপনাকে এসব বলার কারণটা বুঝাতে পেরেছি।(রাজু)
:-হুমম,,,,আমি আপনার কথাগুলোর মানে বুঝলাম।আর আপনি ঐধরনের মেয়ে ভাববেন না।আপনার আর কিছু বলার আছে,,,,?(রিয়া)
:-হুমম,,,সেটা হলো আমি আপনাকে স্ত্রীরির মর্যাদা দিতে পারি এবং তার জন্য আপনাকে আমার কিছু শর্ত মানতে হবে,,,তা হলো,,,,,
–আপনি আমার মা-বাবাকে নিজের মা-বাবা মনে করবেন।কারণ,আপনার মা-বাবা আপনার কাছে যেমন তেমনি আমার মা-বাবা আমার কাছে তেমন।
–উনাদের সর্বদা হাসিখুশি রাখার চেষ্টা করবেন।কারণ,উনারা যদি খুশি থাকেন,তাহলে আমিও খুশি।
–সর্বদা উনাদের খেদমত করবেন।উনারা অসন্তোষ হবে,এমন কোন কাজ করবেন না।
–যদি কখনো কোন ভুলের জন্য উনারা আপনাকে বকাঝকা করে,আপনি কিছু না বলে দোষটা স্বীকার নিবেন।যদিও আপনি দোষটা করেন নাই,তারপরেও।
–আপনি যদি আমার মা-বাবাকে ভালোবাসেন,আমিও আপনাকে ভালবাসব।আর উনারা যদি আপনার উপর খুশি থাকে তাহলে উনারাও আপনাকে উনাদের জীবনের থেকে বেশী ভালোবাসবে। আশা করি এই কথাগুলো বলার পর,আপনার বাকিটা বুঝতে অসুবিধা হবে না যে,আমি আসলে কি বলতে চাইছি।
:-ইনশাল্লাহ, আমি আপনার কাছ থেকে স্ত্রীর মর্যাদা পেতে সব ধরনের শর্ত মানতে রাজি যদি আপনিও আমার দেওয়া শর্ত মানেন,,,,,
:-হুমম বলেন,,,,,,,
:-তাহলে শুনুন,,,
–আপনাকে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ,জামাতের সহিত আদায় করতে হবে আর প্রত্যেকদিন সকালে করআন তিলওয়াত করতে হবে,,,যতটুকু আপনার পক্ষে সম্ভব হবে,,,,,
–প্রত্যকদিন তাহাজ্জুদ নামাজের জন্য উঠতে হবে।
–আপনাকে সৎপথে উপার্জন করতে হবে।যদিও তা সামান্য হয়,,,,,
–কুরআন-হাদিসের তরীকা মত চলতে হবে।
–হযরত মুহাম্মদ (সঃ) যেমন তার স্ত্রীদের ভালোবাসতেন,ঠিক তেমন করেই আমায় ভালোবাসতে হবে,,,,, আমি মনে হয় আপনাকে আমার শর্তগুলো বুঝাতে পেরেছি। রাজু মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিয়ে বলল,,,,,
:-আলহামদুলিল্লাহ।আমি আপনার সব শর্ত মানবো।আর যদি কখনো ভুলে যাই,তাহলে সেটা মনে করে দিবেন।
:-ইনশাল্লাহ,,,,এখন চলুন আল্লাহ আমাদের এমন এজটি রাত উপহার দিয়েছে তার সন্তুষ্টিতে দুইরাকাত নামাজ আদায় করি,,,,,
:-হুম চলুন,,
অতঃপর নামাজ আদায় করে রিয়া আবার খাটের উপর গিয়ে বসলে রাজুও তার পাশে বসলো। যেহেতু রাজু এখনও রিয়ার চেহারা দেখে নাই।তাই,,,,
:-আপনি যদি অনুমতি দেন,আমি তাহলে আপনার চেহারাটা দেখতে চাই,,,,,(রাজু)
:-আমি এখন আপনার স্ত্রী।আপনি আমাকে দেখবেন এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে,,,,, একথা বলে রিয়া নিজেই তার ঘুমটা সরিয়ে দিলো। রিয়ার দিকে তাকিয়ে রাজু বললো,,,,
:-আলহামদুলিল্লাহ,,,,আল্লাহপাকের সব সৃষ্টিই সুন্দর।আর আপনি হচ্ছেন আমার কাছে পৃথীবির সবচাইতে সুন্দরি। একথার জবাবে রিয়া কিছুই বলল না।
:-আচ্ছা,আমরা এখন ঘুমিয়ে পড়ি।এমনিতে সারাদিন অনেক ধকল গেছে,,,,,(রিয়ার কপালে আলতো করে একটা চুমু একে দিয়ে বলল রাজু)
:-হুমম,,,,,
এখন রাজুর বুকের উপর শুয়ে রইল রিয়া।আর রাজু রিয়ার চুল থেকে আসা মনমাতানো ঘ্রানটা উপভোগ করতেছে। চলতে থাকুক এমনও হাজার দম্পত্তির ভালোবাসা।