গতকাল ছোট বোন ফোন দিয়ে গাল ফুলিয়ে বলেছে; ভাইয়া তোমার সাথে আরি আর কখনো কথা বলবোনা। ছোট্র বোনটির অভিমান মূখর কন্ঠ শুনে বললাম; কেন আমার মিষ্টি আপুটা, কি করেছি আমি?
– কি করেছো তুমি জানো না?
– নাতো আপুটা, তুমিই বলো! আমি তো জানিনা।
– হু তা জানবে কিভাবে তুমি তো আমাকে ভুলেই গেলো।
– হায় হায় কি বলো আপুটা! তোমাকে কি ভুলতে পারি বলো?
– হইছে ডং দেখাতে হবেনা।
ভুলছো না তো কি করছো? তুমি আমার সাথে আগের মত কথা বলো? একটু খোজও নাও? যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই ই হল। জানতাম এটাই বলবে! আর সত্যিই অনেকদিন যাবোৎ ছোট্র বোনটার সাথে কথা বলা হয়নি। বলবোই কিভাবে? সামনে পরীক্ষা, লেখাপড়া নিয়ে একটু চাপে আছি, যার কারনে খোজ খবর তেমন নিতে পারিনি। এখন অভিমান যে করেই হোক ভাঙাতে হবে, না হয় আবার সারাদিন গাল ফুলিয়ে এভাবেই বসে থাকবে। তাই বললাম; আপু, ভাইয়াতো লেখাপড়া নিয়ে একটু ব্যস্ত ছিলো তাই তোমার সাথে কথা বলতে পারেনি।
– হ্যাঁ,হইছে তুমি কি পড়া পড়ে তা আমার জানা আছে হু।
এত পড়েও তো সবগুলা ডিম পাও। এই রে, মানসম্মান দিলো একেবারে ধূলয় মিশিয়ে। এই কথার মোড় না ঘুরালে যতটুকু আছে তাও পাম্চার করে দিবে। তাই ছোট একটা ঢোক গিলে বললাম; আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে বলো, তুমি কেমন আছো আপুটা? পাগলীটা মুখ ভেঙ্গিয়ে বললো; হ্যা এখন আমি ফোন দিছি আর এখন ডং দেখিয়ে বলছে” কেমন আছো আপুটা হি” আমি হেঁসে বললাম; আচ্ছা সরি সরি। এখন থেকে যতই কাজ থাকুক তোমার সাথে প্রতিদিন কথা বলবো ঠিক আছে? পাগলীটা অভিমানী কন্ঠে বললো; না বলা লাগবে না আমার সাথে কথা ! তুমি ব্যস্তইথাকো। আমি তোমার কে যে আমার সাথে কথা বলবে?
– আচ্ছা বাবা সরি বললাম তো, ভুল হয়ে গেছে আর হবেনা প্রমিজ।
– হু হইছে একটু পরই তো ভুলে যাবা।
– না না আর কখনো ভুলবো না।
– মনে থাকবে তো?
– মনে থাকবে মানি মাথায়ও থাকবে। এই যে নাক ধরে প্রমিজ করছি।
– হিহিহিহি নাক ধরে কেউ প্রমিজ করে?
– হ্যাঁ তাই তো নাক ধরে তো কেউ প্রমিজ না। কিন্তু আমি ধরেছি কেনন? ওহ আচ্ছা কান ধরতে গিয়ে নাক ধরে ফেলেছি হা হা হা।
– হিহিহি আসলেই তুমি একটা জুকার ভাইয়া।
যাক বাবা অবশেষে ছোট বোনটার মুখে হাসি ফুটানো গেছে। তারমানে পরিস্থিতী এখন অনুকূলে। তো আবার বললাম; তো আপুটা এখন বলো তুমি কেমন আছো?
– এতক্ষন ভালো ছিলাম না। এখন অনেক ভালো আছি। তুমি কেমন আছো ভাইয়া?
– আমিও ভালো আছি।
– ওহ ভাইয়া! তোমাকে যা জানানো জন্য ফোন দিছি তা তো বলাই হয় নাই।
– কি বলার জন্য?
– তার আগে বলো কথাটা শুনার পর আমায় কি দিবে?
– তুমি আগে বলো কি কথা, সেই অনুসারে দিবো।
– দিবে তো?
– হ্যা বাবা দিবো।
– আমি না ক্লাসে এইবার প্রথম হইছি।
– বাহ এতো খুব খুশির খবর।
– এইবার বলো আমায় কি দিবে? একটু ভেবে বললাম; কি দিবো, কি দিবো! আচ্ছা তুমিই বলো তুমি কি চাও।
– না তুমি যা দাও তাই নিবো।
ছোট বোনটাও খুব বেশি চালাক হয়ে গেছে। জানে ভাইয়া যা দিবে তা চাওয়ার চেয়ে অনেক ভালো কিছুই হবে তাই আমার উপর চাপিয়ে দেয়া আরকি। আমিও দুষ্টমি করে বললাম; আচ্ছা আপুটা ঠিক আছে। তুমি ভালোভাবে লেখাপড়া করে বড় হও। তারপর তোমাকে দেখে শুনে সুন্দর একটা জামাই উপহার দিবো হিহিহি। পাগলীটা রেগে গিয়ে বললো; ঐ ভাইয়া ভালো হচ্ছে না কিন্তু।
– কেন কেন। জামাই লাগবে না বুঝি?
– না লাগবেনা। তোমার লাগলে তুমি করো।
– ইস! তাহলে কি সারাজীবন ঘরে খুটি দিবো নাকি তোমাকে দিয়ে?
– জ্বী খুটি হয়েই থাকবো। এবং তুমিই রাখবা।
– এহ আমার বয়েই গেছে তোমাকে খুটি করে মাথায় বসিয়ে রাখতে হু।
– তাহলে তোমাকে রাখতে হবেনা। তোমাকে আর তোমার বউকে ঘর থেকে বের করে দিয়ে আমি আম্মু আর আব্বু থাকবো।
– যাক বাবা। আমার বাড়ি আমার ঘর, আমারেই mদাও গোয়াল ঘর?
– হ্যা তোমার মত গোল্লা পাওয়া ছাত্রের গোয়াল ঘরেই মানায়। কথাটা পুরো প্রাকটিস পাম্চার করে দিলো অতঃপপর বললাম; ৭ম শ্রেনীতে না আমারো রোল ৩ ছিল বুচ্ছো।
– তাও তো আমায় পিছনে আবার বড় বড় কথা হু।
শুরু হয়ে গেলো দুজনের মধ্যে তুমুল ঝগড়া। এভাবে দশ মিনিট ঝগড়া শেষে বললাম; দাড়াও এইবার বাড়িতে আসি। এবারই ঘার ধরে বিয়ে দিয়ে শ্বশুর বাড়ি যদি না পাঠাইছি তখন বলিও। পাগলীটা মুখ ভেঙিয়ে বললো; কোন বাড়ি আসবা? এই বাড়ি? আসো দেখি কত্ত সাহস। রাস্তার ঐখান থেকেই ঠ্যাং ভেঙে রেখে দিবো। পরে রাস্তায় বসে ভিক্ষা করবা। উপহারের কথা ভুলে গিয়ে এটা বলেই শুরু করলো চেচানো; ওহ আম্মু, ওহ আম্মু! ঐ.. তোমার ছেলেরে থামতে বলবা? আমি কিন্তু ওর ঠ্যাং ভেঙে দিবো বাড়ি আসলে তখন কিন্তু আমায় কিছু বলতে পারবা না বলে দিলাম। টু টু টু ফোন কেটে দিলো।
হা হা হা আমার এই ছোট্র পাগলী বোনটাকে রাগাতে আসলে খুবই ভালো। যখন খুব রাগ করে মুখটা তখন হুট করেই লাল হয়ে যায়। কি রেখে কি বলবে দিশে পায়। সবচেয়ে বড় একটা বদঅভ্যাস হচ্ছে রাগ হলেই আমার শার্টের উপর হামলা করা। কতগুলো শার্ট যে আমার ছিড়েছে তার কোন ইয়েত্তা নেই। আবার আমাকে ছাড়াও এক মুহূর্ত কিছু বুঝেনা। অনেক ভালোবাসে আমায়। বাসবেই না কেন? জন্মের পর থেকেই যে আমার বুকের উপর মাথা দিয়ে বড় হয়েছে।
ছোট্র একটা কাহিনি বলিঃ গত দু বছর তুমুল বৃষ্টিতে ভিজার ফলে আমার খুব জ্বর হয়েছিলো। ভাগ্গিস তখন বাড়িতে ছিলাম। না হয় অযত্নে মরে যাওয়ার সম্ভাবনাটাই অনেক বেশি ছিলো। কেননা শরীরের অবস্থা ছিলো খুবই খারাপ। ছোট বোনটা তখন পঞ্চম শ্রেনীতে পড়তো। খুব ভালো ভাবে মনে আছে, তখন ছোট্র এই বোনটা সারাদিন সারারাত আমার পাশে বসেই কপালে হাত বুলিয়ে ঘুম পারিয়ে দিতো এবং বুকের উপরেই শুয়ে থাকতো।
সকাল হলে যদি জিজ্ঞেস করতাম; তুমি ঘুমাওনি রাতে আপু? তখন বুড়ির মত বলতো; ঘুমাইছি তো। সবসময় তো এখান থেকেই ঘুম থেকে উঠেছি। আর আজো উঠলাম। অসুধ থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছু নিজ হাতে খাইয়ে দিতো। ছোট্র এই বোনটার সেবাযত্নেই খুব অল্প দিনে সেরে উঠেছিলাম। সত্যিকার অর্থে আসলে ভাই-বোনের সম্পর্কগুলো অন্যরকম হয়! যে সম্পর্কের মধ্যে মিশে থাকে, ছোট ছোট মান অভিমান, দুষ্টমি, সামান্য বিষয় নিয়ে ঝগড়া এবং থাকে একে অপরের প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা!!