-বিয়ে করছেন না কেন তবে ?(নিতু) উত্তরের আশায় নিতু গভীর ভাবে তাকিয়ে থাকে।আমি চা খাওয়ায় মনোযোগ দেই।ঐ চোখ জোড়া আমায় খুব ভয় পাইয়ে দেয়।আমি তাকাতে পারিনা সেদিকে।তাকালেই মনে হয় আবার কি যেন হারিয়ে ফেলবো আমি। খুব পছন্দের কিছু। জানিনা কেনো এরকমটা অনুভব হয়।এর একটা সম্ভাব্য কারন আমি আবিষ্কার করেছি।
-সময় হোক ঠিক করে ফেলব। উত্তরটা হয়তো ঠিক পছন্দ হয়নি নিতুর।চায়ে চুমুক দিয়েই আবার আমার দিকে তাকায়। আমি চোখ নামিয়ে নেই।এইভাবেই তাকিয়েছিল সেই দিন। আমায় বলেছিল সেই বিসন্ন মাখা কথা গুলো। বলেছিল ওর মনের শহর থেকে অনেক দুরে চলে যেতে।সেই দিনি শেষ আমি তাকিয়েছিলাম ঐ চোখের দিকে।তার পুরো চোখে আমি আমার প্রতি এক বিন্দূও ভালোবাসা খুজে পাইনি।
সেদিন ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আমার কেবল মনে হচ্ছিল নিতু হারিয়ে যাচ্ছে। মেঘেরা যেমন আস্তে আস্তে হারিয়ে যায় এক আকাশ থেকে আরেক আকাশে নিতুও তেমনি হারিয়ে যাচ্ছে আস্তে আস্তে করে।মিলিয়ে যাচ্ছে অন্য এক নতুন আকাশে। আমি উঠে যাচ্ছি দেখে নিতু আমার হাতটা খপ করে ধরে ফেললো।আমি দাড়িয়ে থাকি অন্য দিক মুখ করে।কি করা উচিত আমি বুঝতে পারিনা।আবার বসে পড়ি চুপ করে।আমার মুখ দিয়ে কথারা ঝড়তে থাকে।
-নিতু তুমি বিশ্বাস করো আমি খুব ভালো থাকি তুমি আমার সামনে না আসলে।বিশ্বাস করো আমার একটুও মনে হয় না তোমার কথা।কিংবা সেই দিন গুলোর কথা। এমনকি আমি এখন স্রেপএকা থাকতে পছন্দ করি।কারো রঙে আর মিশতে ইচ্ছা করে না।তুমি চলে যাওয়ার পর আমি কেনযেন আগের বাচাঁল আমিটাকে আর খুজে পাই না।আমার ভুবন ভোলানো সেসব কথা গুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
তুমি আমার একটু নিঃশ্বাস নিতে দাও আমায় বাচতে দাও নিতু। প্লিজ আর এসো না আমার সামনে আমাকে ক্ষমা করো। নিতু মাথা নিচু করে থাকে।চোখ থেকে ফোটা ফোটা জল যেন বাধ না মেনে গড়িয়ে পরে।আমি তাকিয়ে থাকি সেদিকে।নিতু হাতের উপরের অংশ দিয়ে জল মুছে হঠাৎ দাড়িয়ে পরে।তার বা হাতে থাকা একটা নীল খাম আমার হাতে গুজে দিয়ে এক দৌড়ে চলে যায় শপ থেকে।আমি আর কিছু সময় বসে থেকে চলে আসি। “আমি তোমায় ভালোবাসি নিরব।
তোমার শত অপমান সহ্য করে ছুটে যাই শুধু একটা সুযোগের জন্য।আমি জানি আমি আমি অনেক বড় একটা ভুল করে ফেলছি। তুমি বিশ্বাস করো তোমাকে হারানোর সাস্তিটা অনেক বড় ছিল অনেক বড়।আমাকে একটা সুযোগ দাও না নিরব! আমি তোমাকে আরেকবার গুছিয়ে নিব দেখো।” চিঠিটা কেন যেন অনেকবার পড়তে ইচ্ছা হলো।সেই গোটা গোটা অক্ষর গুলো আমাকে বারবার আঘাত করতে লাগলো। ঐ ঘটনার পর নিতুকে আর দেখতে পাইনি অফিসে। নিজের অজান্তেই কেন যেন সব কিছু ফাকা ফাকা লাগতে শুরু করলো।
আমার টিফিন ক্যারিয়ারটায় রোজ নিতুর হাতে রান্না করা তরকারি আর দেখতে পারছিলাম না।মেয়েটা কোন ফাকে ঢুকিয়ে দিত আমি বুঝতেই পারতাম না।ওর হাতের রান্নায় একটা আলাদা ঘ্রান পেতাম সবসময়। সবার রান্নার এই আলাদা আলাদা ঘ্রান নিয়েই আমি বুঝতে পারতাম এটা কার রান্না। নিতুই আমার প্রথম আর শেষ প্রেম ছিল।আর কাউকেই আমি ভালোবাসতে পারিনি সত্যি বলতে নিতুর সাথে ব্রেকাপের পর থেকে ভালোবাসতে ইচ্ছা হয়নি কখনো। সম্পর্কের ৩ মাসের মাথায় হঠাৎ এক বিকালে নিতু বেশ করা করে বলেছিল তার জিবন থেকে সরে যেতে।আমি রোজ বিকালে দেখতাম নিতু পার্কে আসত তবে আমার জায়গায় থাকতো অন্য একটা ছেলে।
প্রথম প্রথম আমি দূর থেকে তাকিয়ে দেখতাম।কিন্তু কিছু অশ্লিলতা আমাকে হার মানায়।আর কখনো যাইনি ঐ পার্কটাতে। পুরোপুরি গুটিয়ে নিয়েছিলাম নিজেকে। চাকরিটা পাওয়ার পর চলে আসি অন্য শহরে। একা একটা ফ্ল্যাটে ছিলামও বেশ। কিন্তু গত মাসে হঠাৎ নিতু আমাদের অফিসে জয়েন করে।প্রথম থেকেই আমার সাথে কথা বলার চেস্টা করে।কিন্তু একদমি এরিয়ে চলতে শুরু করি।প্রতিদিন আমার টিফিন ক্যারিয়ারে নিতু ওর রান্না করা খাবার রেখে যায়।সেটা একরকম নেশা হয়ে দারিয়েছে। এখনো টিফিন বক্স খুলে অজান্তেই ওর রান্নার ঘ্রান পেতে চাই।
সাত দিন পর হঠাৎ আমি জানতে পারি নিতুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমি যেন দিশেহারা হয়ে পরি কি করবো কি না করবো আমি ঠিক বুঝতে পারছিলাম না। আমার হৃদয়ের একপাশ বলছে নিতুকে আমার খুব দরকার আমার এলোমেলো জিবনটাকে ওই পারবে গুছিয়ে দিতে।ওকে একটা সুযোগ দিতেই হবে।আর অন্য পাশ বলছে এসব মেয়েদের একদম বিশ্বাস করা যায় না একদম না! অফিস শেষে যখন নিতুর বাসার সামনে আসলাম তখন বেশ অন্ধকার হয়ে গেছে।আমার কলিগ স্নেহাই ঠিকানাটা দিয়েছিল।দোতলার বা দিকের তিন নম্বর বারান্দাটার দিকে তাকিয়ে রইলাম বেশ কিছুক্ষন কিন্তু কিছুতেই নিতুকে দেখতে পেলাম না।
-এখানে কেন এসেছেন আপনি ? নিতুর কন্ঠ শুনে চমকে উঠে পিছনে তাকালাম। দেখলাম নিতু দারিয়ে আছে।ওর হাত ভর্তি এক গুচ্ছ শিউলি ফুলের মালা।শিউলি ফুল নিতু আমার দুজনেরি প্রিয়। আমি আস্তে আস্তে ওর দিকে আগানো শুরু করলাম।
-আরেকটা নতুন সকাল যে তোমার সাথে কাটানো বাকি আছে।
-আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।আপনি এখন চলে যেতে পারেন।
-তোমাকে নিয়ে তবেই যাব।
-আমি সামনে থাকলে তো আপনি ভালো থাকেন না।তো কেন এসেছেন আমার সামনে?
-সেই দিনের জন্য আমি দূঃখিত।
-আপনি চলে যান।
-আচ্ছা যাব।
তার আগে আমি ওর হাত থেকে মালা গুলো নিয়ে আলতো হাতে ওর খোপায় গুজে দিলাম। মেয়েটা কাদঁছে খুব কাদছে। আমি ওর চোখের দিকে তাকালাম কিন্তু এবার এক আকাশ ভালোবাসা আর বিন্দু বিন্দু পানি ছারা কিছুই দেখতে পেলাম না।