ওয়ান সাইডেড লাভ

ওয়ান সাইডেড লাভ

– একটা কথা ছিলো।
– হ্যাঁ। বলো।কি কথা?
– তুমি তো আমার বন্ধু আসিফ কে চিনো?
– কে?
– আরে চার বছর আগে আমাদের তন্বির বিয়েতে যে এসেছিলো।খুব মজা করেছিলো।তোমার বুঝি মনে নেই?
– ও আচ্ছা।
– কি ও আচ্ছা। এমন ভাবে আচ্ছা বলছো কেন?
– তো কি বলবো?এখন কি হয়েছে সেটা বলো?
– কিছু হয়নি।ও দেশে আসতেছে।আর আমাদের বাসায় উঠবে।আগামী সপ্তাহে আসবে।দেশে তো ওর তেমন কেউ নেই।সবাই ইউ কে তে থাকে।

তাই দেশে এলে আমার কাছেই উঠে।তুমি তো সবই জানো।এবার কিন্তু অনেকবছর পর দেশে আসছে।
– হুম।
– কি ব্যপার? অন্যমনস্ক হয়ে গেলে কেন?
– কই না তো।আমি ঠিক আছি।কি করতে হবে বলো।
– আরে তেমন কিছু না।ওর দেশী খাবার পছন্দ। তোমার হাতের রান্না তো বেশ মজা।আমি তো পুরাই ফ্যান তোমার রান্নার।
– আচ্ছা ঠিক আছে।আমি চেষ্টা করবো ওনার পছন্দ মত সব রান্না করার।
– ঠিক আছে আমার ভালো বউ।তাহলে এবার আমি অফিস গেলাম।
– আচ্ছা।

আসিফ?এতবছর পর আবার আসবে।কি করে ওনার সামনে দাঁড়াবো?আমার কিসের ভয়।শুধু একটা কথা জানতে চাইবো।

যে কথা জানার জন্য এতবছর অপেক্ষা করেছিলাম।

চার বছর আগের কথা,

– মেঘলা তুই তো জানিস আজকে আমার গায়ে হলুদ।একটু আগে আসলে কি এমন ক্ষতি হতো।
– সরি রে তন্বি
– আরে শুন না।ভাইয়া সেই কখন থেকে তোর কথা জিজ্ঞেস করছে।কখন আসবি?
– আমার কথা জিজ্ঞেস করার কি আছে?
– তাই বুঝি?ন্যাকা…! কিছু বুঝিস না কি।
– না।বুঝি না।আপনি বুঝায় বলেন।
– সময় হলেই সব বুঝে যাবি।

ঠিক চার বছর আগে আমার ছোট বেলার বান্ধুবি তন্বির বিয়েতে আসিফের সাথে পরিচয়।ওনি তন্বির বড় ভাই আবিরের বন্ধু ছিলেন।

ইউ কে থেকে দেশে বেড়াতে এসেছিলেন।পুরো বিয়েতে সবাইকে মাতিয়ে রাখলেন।ওনার ব্যক্তিত্ব, ওনার কথাবার্তা, ওনার চালচলন

যেকোনো মানুষকে আকৃষ্ট করার মত।ওনি একজন মানুষের খারাপ মুডকে এক মুহূর্তে ভালো করে দিতো।আমিও অন্যদের মত

ব্যতিক্রম না।ওনার প্রতি এক ধরণের ভালো লাগা নিজের মনের মধ্যে কাজ করা শুরু করেছিলো।পুরো বিয়েতে আমার নজর শুধু

ওনার উপরে ছিলো।নিজের অজান্তে ওনাকে পছন্দ করে ফেললাম।এতকিছু ভাবনায় আসেনি।ওনার কি অন্য জায়গায় রিলেশন

আছে কি না?কিংবা আমাকে পছন্দ করবেন কি না?সবকিছু।

বিয়ের কয়েকদিন হয়ে গেছে।আগে তন্বি ছিলো।তাই যখন তখন ওর বাসায় চলে যেতাম।ও শ্বশুরবাড়ী যাওয়ার পর আমি খুব একটা

ওদের বাড়ী যেতে পারি না।আর আসিফকেও দেখতে পাচ্ছিলাম না।হুটহাট করে যাওয়াটা অশোভনীয়।কিন্তু নিজের মনকে কিছুতেই

বেধে রাখতে পাচ্ছিলাম না।তাও দু’ একবার দেখা হয়েছিলো।তাছাড়া তন্বি আর বর সহ সবাইকে আমি আমার বাসায় দাওয়াত দিয়েছিলাম।

সেই সময়ে আসিফের সাথে অনেকটা সময় কাটালাম।বারবার বলতে চেয়েছিলাম ভালোবাসি কথাটা। কিন্তু পারেনি।কয়েকদিন পর শুনতে

পেলাম, ওনি ইউ কে ফিরে যাচ্ছেন। আমি পাগলের মত হয়ে গেলাম।ভালোবাসি কথাটা যদি না বলতে পারি, তাহলে তো আর কোনদিন বলা

হবে না।আমি ছুটে গেলাম ওনার কাছে।

– আপনি নাকি চলে যাচ্ছেন?
– কালকেই চলে যাবো।তুমি কিছু বলবে?
– হ্যাঁ।
– বলো তাহলে।
– আমি ওতো ভনিতা জানি না।আমার মধ্যে কোন ন্যাকামোও নেই।খুব সহজ ভাবে আপনাকে বলছি।আমি আপনাকে ভালোবাসি।

প্রথম দেখা থেকে ভালোবেসে ফেলেছি।আমার ভালোবাসা গ্রহন করা আর ফিরিয়ে দেওয়া সবই আপনার উপরে।
– কি বলছো এসব?
– সহজ ভাবেই বলেছি।
– আমি তো এতকিছু ভাবিনি।তাছাড়া আমার এখনো গ্র্যাজুয়েশনও কমপ্লিট হয়নি।তবে আমার তোমাকে ফিরিয়ে দিতে খারাপ লাগছে।

কিন্তু আমার কিছু করার নাই।আমি খুব দুঃখিত।
– আমি অপেক্ষা করবো আপনার জন্য।তবুও ফিরিয়ে দিবেন না আমাকে।কষ্ট হবে খুব।মানতে পারবো না।
– আমার আসলেই কিছু করার নেই।

তারপর ওনি ফিরে গেলেন।আমি পাগলের মত হয়ে গেছিলাম।খাওয়া দাওয়া ঘুমানো সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেছিলো।আমি তন্বিকে সব

খুলে বলেছিলাম।ও ওনার নাম্বার টা দিয়েছিলো।আমি অনেক ম্যাসেজ করতাম।ফোন করতাম।কিন্তু কখনো রেসপন্স পেতাম না।তখন

আরও পাগল হয়ে গেছিলাম।এভাবে প্রায় দু’বছর অপেক্ষা করি।তারপর পারিবারিক ভাবে তন্বির ভাই আবিরের সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়।

আমি আর না করতে পারিনি। আবির আমাকে অনেক ভালোবাসতো।আমি ফিরাতে পারিনি।তবে আসিফকেও ভুলতে পারচ্ছিলাম না।

ওর প্রত্যাখান আমাকে ক্ষত বিক্ষত করে দিয়েছিলো।বিয়ে হয়ে যায়।আবিরকে ভালোবাসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম।ওর ভালোবাসা

আমাকে দূরে রাখতে পারেনি।সব ভুলে সংসারে মনযোগী হলাম।

আজ হঠাৎ আসিফের আসার কথা শুনে বুকের ভিতর মুচড় দিয়ে উঠলো।আবির কিছুই জানে না।আর কি বা জানবে।আমাদের তো আর

ভালোবাসা ছিলো না।এটা ছিলো ওয়ান সাইডেড লাভ।এসব ভালোবাসা কখনো কেউ মনে রাখে না।শুধু স্মৃতির পাতায় ধুলো জমে যায়।

কয়েকদিন পর,

– মেঘলা কোথায় তুমি?আমি বন্ধু কিন্তু চলে এসেছে।
– এই তো।
– আসিফ আমার বউ মেঘলা।তোকে তো ফোনে সব বলেছি।তুই আমার বিয়েতে আসতে পারলি না।
– হ্যাঁ চিনি তো।বন্ধু রাগ করিস না।তো আপনি কেমন আছেন?
– ভালো। আপনি?( খেয়াল করলাম ওনি খুব অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।)আচ্ছা আবির তোমরা ফ্রেশ হয়ে নাও।আমি খাবার দিচ্ছি।

এই বলে আমি সামনে থেকে চলে গেলাম।বেশীক্ষণ ওনার সামনে থাকতে পারচ্ছিলাম না।বেশ কয়েকদিন ওনি ছিলেন।কিন্তু আমাদের

কথা তেমন হত না।আমি ইচ্ছে করেই ওনার সামনে যেতাম না।তবে কিছু প্রশ্নের উত্তর জানার খুব ইচ্ছে ছিলো।দেখতে দেখতে ওনার চলে

যাওয়ার সময় হয়ে গেলো।ফিরে যাবেন ইউ কে তে।ভালোই হলো আমার এভাবে থাকতে ভালোও লাগছিলো না।

– মেঘলা আমার কিছু বলার নেই।শুধু একটা কথা বলবো।তোমাকে প্রত্যাখান করা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো।ক্ষমা করে দিও।
– ছিঃ! এসব কি বলছেন? আপনার নিজস্ব একটা ভালো লাগা আছে।আমাকে যে ভালোবাসতে হবে এমন কোন কথা না।আপনি ভালো থাকবেন।

আমার কোন অভিযোগ নেই।
– বিশ্বাস করো।আমি তোমার ভালোবাসা বুঝতে পারেনি।তোমার দেওয়া সব ম্যাসেজ আমি অনেক পরে দেখেছিলাম।তখন আমার আর

কিছু করার ছিলো না।আবির তখন জানালো তোমার সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো।আমি আর কিছু বলিনি।
– হুম পারিবারিক ভাবে বিয়ে ঠিক হলো।আমি অনেক অপেক্ষা করেছিলাম আপনার জন্য। আপনার একটা ম্যাসেজের জন্য।এখন এসব

ভাবলে কেমন যেন লাগে।আমি কত পাগল ছিলাম আর বোকাও ছিলাম।আপনি আপনার জায়গায় ঠিক ছিলেন।
– এভাবে বলো না প্লিজ।
– দোয়া করি নিজের জীবনটাকে সাজাবেন।
– তুমি সুখে থেকো আবিরের সাথে।ছেলেটা খুব ভালো।খুব সহজ সরল।
– হ্যাঁ।ও আমাকে খুব সুখে রেখেছে।
– জানি।এসব কথা কোনোদিন কেউ জানবে না।ভেবে না।
– আরে ভাববো কেন?আমার একতরফা ভালোবাসার কোন মূল্য ছিলো না।এসব ভালোবাসা ঝরে যায়।
– গেলাম।ভালো থেকো।
– আপনিও ভালো থাকবেন।

আমি সুখেই আছি।বাস্তবতা খুব কঠিন।এক জীবনের পাগলামো কোথায় হারিয়ে যায় সময়ের সাথে।এখন এসব ভাবলে হাসি পায়।

তবে এটা সত্যি যে ওনি ছিলেন আমার প্রথম ভালোবাসা ভালোলাগা।আবির আমাকে অনেক ভালেবাসে।আমিও।জীবনের স্রোতে

সময়ের সাথে এগিয়ে যেতে হয় মানুষ কে।কারো জন্য জীবন বসে থাকে না।হয়ত সাময়িক থমকে যায়।আবার সেই থমকে যাওয়া

জীবনকে নিয়ে চলতে হয়।আমার ওয়ান সাইডেড লাভ ফেলনার মত সারাজীবন পড়ে থাকবে।কেউ কখনো জানবে না।মাঝেমাঝে হয়ত দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলবো।

সেটা না পাওয়ার নাকি অন্যকিছু?

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত