ভাইয়ের পিঠে বোন

ভাইয়ের পিঠে বোন

মনমরা হয়ে বসে আছে বোনটি আমার। এ সময় সব ভাইদের ই আরো জ্বালাইতে মন চায়। বরাবরের মতো শুরু করলাম জ্বালানো।

— তোর বিয়ে হবে, চলে যাবি, শ্বশুর বাড়ির ঠ্যালা বুঝবি হুহ। এসব শুনে বোনটি আমার আজ রাগ করছে না। আরেকটু জ্বালানোর চেষ্টা করলাম,

— এখন আমি বাসায় একা রাজত্ব করব। শান্তিতে খেলা দেখতে পারব। উফ কি মজা যে লাগছে। এবারো বোনটি আমার রাগ করলো না। আমার দিকে তাকালো, অন্যদিনের মত অগ্নিদৃষ্টিতে নয়, আমাকে আক্রমন করার কোন উদ্যোগ নেই। অসহায় ভাবে তাকালো। ওর কাছে গিয়ে বসলাম। ওর চোখের দিকে তাকাতেই মনে হলো, আাকশে মেঘ জমেছে, এই বুঝি বৃষ্টি হবে। এর আগেও মনে হয় নীরবে কান্না করেছে। আবার নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।

–কি হইছে তোর? ও আবার আমার দিকে তাকালো।অসহায় চাহনি, আচমকা ঝাপটে ধরে কান্না করতে শুরু করলো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে বললাম,

–আরে কি হইছে বলনা। খুব কষ্টেভরা মন নিয়ে, কান্নাভেজা কন্ঠে উত্তর দিলো,

— ভাই আমি তোদের ছেড়ে যেতে চাইনা। আব্বুকে একটু বুঝা না ভাই। আমি মরে যাব তোদের ছাড়া। আমাকে কি তোদের এখন সহ্য হয়না? আমি আরো অনেক দিন তোদের সাথে থাকতে চাই। ঢোকরে ঢোকরে কান্না করছে বোনটা। কেনো জানি বুকের ভেতরটা কেঁপে উঠলো। একটু আগেই ত নাচছিলাম চলে যাবে বলে। চোখের কোনায় এখন জল অনুভব করছি। এর আগে ফাজিলটার জন্য কান্না তো দুরের কথা, ও কান্না করলে বিনোদন নিতাম। আজ কেনো জানি ওর কথাগুলা বুকে সুচের মত বিধলো। ও যদি চলে যায়, আমিই বা কার সাথে ঝগড়া করব। কাকে সবকিছু শেয়ার করব। বোনের মত বেস্টফ্রেন্ড পৃথিবীতে ২য় কেউ আছে কিনা জানিনা, তবে আমার ক্ষেত্রে বোনটই সব ছিলো। বাস্তবতা মনে করে ওকে একটু সান্ত্বনা দিবার চেষ্টা করলাম,

— আরে গাধি। একেবারে চলে যাচ্ছিস নাকি। দুদিন পর পরই চলে আসবি। নিয়ে আসব তোকে। কথাটা বলার পরেই ভীষন অভিমানী কন্ঠে উত্তরটা এলে,

— যা কুত্তা, সর এখান থেকে। তুইও আমাকে ভালবাসিস না,তোরা সব এক। বলেই আমাকে ধাক্কা মেরে বালিশে মুখ বুজে কান্না শুরু করলো। আমার সাথে এমন অভিমান বোনটি কখনো করেনি। ওর গালিগুলার মাঝে কত শত ভালবাসা লুকিয়ে আছে, তা লিখবার সাধ্য কোন কবির নেই।

আমি আরেকবার কাছে যাবার চেষ্টা করলাম, আমার দিকে সাথে সাথে কিছু বালিশ ছুটে এলো। বুঝতে পারলাম ও আক্রমন করবে এখন। তাই আর কাছে যাবার চেষ্টা করিনি। আরো ভারি বস্তু ছুটে আসতে পারে আমার দিকে। পুর্ব অভিজ্ঞতা থেকে বুঝলাম আরকি। তার মাঝে আবার এখন বিয়ে ইস্যু, পক্ষে যাইনি বলে আক্রমনের মাত্রা বড় হবে বলে চলে আসলাম। বরপক্ষ অনুকে দেখতে এসেছে। ও নামটাই তো এতক্ষন বলা হয়নি। অনু নিজের মনের বিরুদ্ধে সেজেছে। কোন মেয়েকে বরপক্ষ দেখতে আসার কথা বললে, মনের বিরুদ্ধেই সাজে। অনুও তার ব্যতিক্রম নয়। অনুকে এই প্রথম সাজের প্রশংসা করলাম। এর আগে বোনটিকে আমার যতই সুন্দর লাগুক সাজলে, পচাইতাম, যা সব ভাইদের দ্বায়িত্ব। বান্দরনি, পেঁচি এসব উপাধি দেয়া। কিন্তু আজ ওকে আমার সবচেয়ে কিউট বোন উপাধি দিলাম।

–যা সর, তোর প্রশংসা করতে হবেনা।

সে বায়না ধরল বরপক্ষের সামনে আমাকে তার সাথে সব সময় থাকতে হবে, কতবার বললাম আমি মেয়ে নাকি, তোর বান্ধবী লিরা, মিষ্টি এদের সাথে রাখ। তাছাড়া সবাই ই তো আছে। না আমাকে থাকতেই হবে। ভাই সাথে থাকলে নাকি তার কোন ভয় লাগবে না। ওকে সবার সামনে দিয়ে এসে চলে আসলাম। এর জন্য আমার সাথে ২ দিন কথা বলেনি। ভাই যে কতটা ভরসার হাত, কতটা বেস্ট ফ্রেন্ড হতে পারে সেদিন আরো ভাল করে অনুভব করেছি। কোন মেয়েকে ভাল লাগলে ওর কাছে বলতাম। তারপর তো শুরু হতো আমাকে পচানি। আংটি পড়িয়ে বরপক্ষ চলে গেলো। ওর খুনসুটি গুলি দিন দিন কেমন যেনো মলিন হয়ে যাচ্ছে। বার বার বলতো আমি বিয়ে করব না, এখানেই থেকে যাব। বাসাটাকে মাতিয়ে রাখা মেয়েটিকে আজ বাসার সবাই হাসাতে পারেনা। বিয়েতে অনেক মজা করলাম। যাবার পালা এসে গেছে। আমার রুমে দরজা বন্ধ করে বসে আছি। কেনো জানি ভেতরটা এক মধুর ভালবাসা হারাবার ভয়ে কাঁপছে।

বাবাকে জরিয়ে যখন অনু কান্না করেছিলো, তা দেখে তখন নিজেকে লুকিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা করলাম। বাবার চোখে এর আগে জল দেখিনি, বাবা তার মেয়েকে কতটা ভালবাসে, তার ঢোকরে কান্নার শব্দটা আমার হৃদয়ে না বিধলে হয়তো এতটা জানা হতোনা। তখন মনে উদ্ভট প্রশ্ন জাগছিলো, কেন বিয়ে, বিয়ে না হলে তো এত সুন্দর বন্ধন ছিন্ন হতনা। আজব কথা ভাবছি। বাসার জিনিষপত্রগুলাকেও অসহায় লাগছে। টিভির রিমোটার দিকে তাকিয়ে ভাবলাম, কেনো যে ওর সাথে রিমোট নিয়া ঝগড়া করতাম। বুকের ব্যাথাটা বেড়েই চলছে। আপু তার ভাইটাকে কতটা আদর করতো তা মনে পড়ছে তীব্র গতিতে। আমার এক্সিডেন্টের খবর শুনে ও জ্ঞান হারিয়ে ফেলছিলো। নাহ আজ ওকে আমি বিদায় দিতে পারব না। রুমের দরজা খুলছি না শুনে আমার বোন ই এসে বলল,

— কিরে দরজা খুলবি না? এই যে আমি চলে যাচ্ছি। বোনের সামনে আসবি না? ওর কথাগুলি এতটা মায়াভরা লাগছিলো, আমি আর পারলাম না থাকতে। দরজাটা খুললাম, চোখ দিয়ে জল ততক্ষনে গড়িয়ে পড়ছে। আপুকে বিয়ের শাড়িতে দেখে আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না, ওকে জড়িয়ে হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দিলাম।বিশ্বাস করুন জীবনে এত শুন্যতা কোনদিন অনুভব করিনি।আপু নিজেকে অনেক সংযত রাখার চেষ্টা করছিলো। পারেনি। পারবে কি করে? ভাইয়ের ভালবাসা, ভাইয়ের কান্নায় কোন বোনের চোখের জল গড়িয়ে পড়বে না , তা কি করে হয়! মুহুর্তটা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়।

–খুব মিস করবো তোরে ভাই। শয়তানি করবি না একদম, মা-বাবাকে দেখে রাখবি।`কান্নাভেজা কন্ঠে কথাগুলি আমাকে আরো শুন্যতায় ভরে দিয়েছিলো। যে শুন্যতা আজো আমি অনুভব করি।ঘরের প্রতিটা জায়গায় অসহায়ত্ব খুজে পাই, মিস করি মিষ্টি ঝগড়াগুলি। ঘরটা ভীষন ফাঁকা থাকে এখন। বোনের ভালবাসা কতটা স্পেশাল তা প্রতিটা দিন অনুভব করি। খুব ভালবাসি, খুব মিস করি। ভাল থাকিস বোন আমার।বেঁচে থাকুক তর ভালবাসা। বেঁচে থাকুক হাজারো ভাই বোনের পবিত্র ভালবাসার সম্পর্ক।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত