বউ

বউ

বাবা-মায়ের অনেক বলা-বলিতেই বিয়েটা করা।ভয়ে বিয়ে করতে চাইতাম না। ভয়টা পেতাম যে কারনে সেটা হলো সারাদিনই শুধু বউ বায়না ধরবে, এটা চাই, ঐটা চাই, এটা লাগবে, ঐটা লাগবে, ইত্যাদি আরো অনেক কিছু।এক বড় ভাই আমাকে বলে ছিলো শোন ভাই জীবনে যাই করিস বিয়ে করিস না। ভাইয়ের কথাটা শুনে একটু অবাক হয়ে যাই তখন।পরে শুনলাম তার বিবাহিত জীবনের গল্প। তার গল্পটা শুনার পর থেকেই বউ জিনিষটাকে ভয় পেতে লাগলাম।

বড় ভাই বিয়ে করেছেন চার বছর হয়েছে।কিন্তু এই চার বছরে একটা দিনও নাকি সে শান্তি মতো থাকতে পারেনি।প্রতিদিনই নাকি কিছু না কিছু নিয়ে ঝগড়া লেগেই থাকে।তার কথা শুনছিলাম আর নিজের কপাল মুছছিলাম। আমার আবার ভয়ংকর রকমের কিছু শুনলে কপাল ঘেমে যেতো। আমার অবস্থাটা বড় ভাই হয়তো বুঝতে পেরেছিলো। তাই আর কিছু বললো না তার বউ সম্পর্কে। আমি তার চুপ হয়ে থাকা দেখে জিজ্ঞাসা করলাম ভাই আপনি ২৪ ঘন্টায় কতক্ষন আপনার বাসায় থাকেন? তিনি একটু জোড়ে কাশি দিলেন। বুঝতে পারছিলাম তার কাশি দেওয়ার কারন।

ভাই তোকে তো সব কিছুই বললাম তাহলে শোন আরো বলি।সকাল ৭ টা বাজে অফিসের নাম করে বের হই বাসায় যেতে যেতে রাত ১১ টায়।এমনিতে অফিসের সময় ৯ টা থেকে। রাতে যখন বাসায় ফিরি দুই হাত বর্তি বাজার করে নিয়ে যাই।চুপ-চাপ খেয়ে শুয়ে পরি না ঘুমালেও চোখ বন্দ করে থাকি যাতে সে বুঝতে পারে ঘুমিয়ে আছি।আমার আর শুনতে ইচ্ছে করেছিলো না তার ভয়ংকর কথা গুলো। তাই ভাইকে বিদায় বলে বাড়িতে এসে পড়লাম।

রুমের মধ্যে পা রাখতে না রাখতেই আমার মায়ের কথা শুনতে পেলাম।কারো সাথে ফোনে কথা বলতেছিলো আমার বিয়ে নিয়ে।আমি চোরের মতো নিজের রুমে ঢুকি যাতে বুঝতে না পারে আমি এসেছি।দরজাটা বন্দ করে বিছানায় শুয়ে পড়ি এবং চোখ বুঝে ঐ ভাইয়ের কথা গুলো ভাবছিলাম আর কপাল মুছছিলাম টিস্যু দিয়ে।এমন সময় দরজায় একটা আওয়াজ শুনলাম।আমি সাথে সাথে লাভ দিয়ে উঠে বসে পড়লাম এত জোড়েই দরজা নক করছিলো যে ভয় পেয়ে গেলাম।আমি যানতাম মা ছাড়া আর কেউই এভাবে দরজা দাক্কা দিবে না।

ভয়ে ভয়ে দরজা খুললাম। খোলার সাথে সাথে মা বলে উঠলো,,, তুই বাসায় কখন আসিস কখন যাস কিছুই বুঝিনা।আর শোন আগামীকাল আমার সাথে যাবি। এবার আর কোনো মতেই তোর বাহানা শুনবো না এই বলে দিলাম।মায়ের শেষ কথা বলে দিল আমিও মাথা ঝুলিয়ে হুমম বলে দিলাম মাথাটা নিচু করে।ভাবতেছি মা-বাবা কেনো আমাকে এরকম দূর্ঘটনায় ফেলে দিতে চাচ্ছেন। তারা জেনে শুনে আমাকে বিপদের মুখে টেনে দিতে চাচ্ছেন কেনো?

পরেরদিন মায়ের সাথে গেলাম বাধ্য হয়ে সাথে ছিলো ছোট বোন। যাচ্ছিলাম আর ঐ বড় ভাইয়ের কথা গুলো মাথার মধ্যে ঘুরছিলো। গিয়ে পৌঁছালাম মেয়েদের বাসায়। বাসায় ঢুকতেই বাবাকে দেখতে পেলাম। পরে জানতে পারি বাবার বন্দুর বাড়িতে এসেছি। মায়ের বকা-বকিতে নীল রংয়ের টি সার্ট টা পড়তে হয়েছিলো। মা বলতো নীল রং টা নাকি আমাকে অনেক মানাতো।সাথে করে মিষ্টি নিয়ে যাই ১০ কেজি এক হাতে ৫ কেজি অন্য হাতে ৫ কেজি।

সোফায় বসলাম আমার ডান পাশে মা বাম পাশে বাবা আর আমি তাদের মাঝে। ৫ মিনিট পর বাবার বন্ধুর মেয়ে আসে কিন্তু আমি তার দিকে তাকাইনি। একটু পর মায়ের কথায় তাকালাম। পরে আমাদের দুজনকে কথা বলার সুযোগ করে দেয় একটা রুমের মধ্যে। আমিও চুপ-চাপ সেও চুপ-চাপ কেউই কিছু বলছিলাম না।আমি তো ভয়ই পাচ্ছিলাম কি বলবো আর তাকে।

পরে রুম থেকে এসে সবার সামনে বসি।পরে বিয়ের তারিখ ঠিক করে আর আমার কপাল ধুমছে ঘামছে। বাসায় চলে আসলাম ইচ্ছে করছিলো একটু কান্না করি কিন্তু আর করতে পারিনি। তারপরের দিন ঐ ভাইয়ের সাথে সব কিছু শেয়ার করলাম।ভাই আমাকে শান্তনা দিচ্ছিলো।আসলে তখন শান্তনা দেয়া ছাড়া কিছুই করার ছিলো না তার।কি আর করার মা-বাবার জন্যই এমনটা হতে যাচ্ছে। বিয়ে সম্পূন্য হলো বাসর ঘরে তিনি বসে আছে আর আমি রুমের বাহিরে দরজার পাশে দাঁড়িয়ে আছি।ভয়ে ঢুকতে ছিলাম না রুমের ভেতরে। একটু পর ঢুকলাম রুমের ভেতরে ভয়ে ভয়ে।যেয়ে দেখি সে বসে বিছানার উপর।আমাকে দেখার সাথে সাথে সে বলতে শুরু করলো,,,

_এই এতক্ষন কোথায় ছিলেন?? আমি একা একা ভয় পাচ্ছিলাম এখানে আর উনি এখন এসেছেন।
_আমি চুপ-চাপ দাঁড়িয়ে তার কথা শুনছিলাম। মুখ দিয়ে কথা বের হলো না আমার।
_আজিব মানুষ তো আপনি কিছু বলছেন না কেনো?
_নাহ এমনি। (তার ঝাড়ি শুনে মুখ দিয়ে কথা বের হলো)
_আচ্ছা আপনার কপাল এভাবে ঘামছে কেনো??কাছে আসুন তো।
_আমিও বাধ্য ছেলের মতো তার পাশে যেয়ে বসলাম।

পরে সে তার শাড়ির আঁচল দিয়ে আমার কপালটা মুছে দেয়।আমার কিছুটা ভয় দূর হলো। সে বলছিলো আচ্ছা আমি কি দেখতে এতটাই পচা যে আমার দিকে তাকাচ্ছেন না।একটু অভিমানী কন্ঠে কথা বলে। আসলে সে দেখতে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দরী। পরে সে আমার হাতটি ধরে বললো তার চোখের দিকে তাকাতে।আমিও তাকালাম পরে দুজন দুজনের সব কথা শেয়ার করি।সবশেষে আমার বুকের মধ্যে মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়।

সত্যি বলতে তখন মনে হয়েছিলো ঐ বড় ভাইয়ের কথা ভুল। আসলে সব বউ তার বউয়ের মতো নয়।আমার বউটা অনেক লক্ষী আমাকে অনেক ভালবাসে তা বুঝতেই পারছি।ভয় একেবারে নেই বললেই চলে। তখন ভয় পাচ্ছিলাম না কেনো জানি।সে ঘুমাচ্ছে আর আমি তার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম। কি অসম্ভব সুন্দরী দেখতে সে। সৃষ্টিকর্তা তার সকল বান্দাকেই তার নিজ হাতে তৈরী করেছেন।পরেও আমি ঘুমিয়ে পড়ি। সকাল বেলা বউয়ের ডাকে ঘুম ভেঙে যায়।একসাথে ফজরের সালাত আদায় করি।সত্যি অনেকদিন পর এত মিষ্টি একটা সকাল দেখতে পেলাম আমার বউটার জন্য।আমি আমার বউটা কে বুকে জড়িয়ে নিয়ে একটু আদর করলাম।সেও আমাকে ঝাপটে ধরে রেখেছিলো।একটু পর সে বলতে লাগলো..

__সবসময় ফজরের নামায পড়তে হবে কিন্ত।
__হুমমম পড়বো। তুমি উঠিয়ে দিবে সবসময় তাহলেই হবে।
__আচ্ছা উঠিয়ে দিবো। এখন তো আমাকে ছাড়ুন সবার জন্য নাস্তা বানাতে হবে তো।
__উঁহু। পরে যাবে। এখন যেতে হবে না।
__আচ্ছা।
__তোমায় অনেক ভালবাসি লক্ষী বউ আমার।
__আমিও তো। আচ্ছা হয়েছে এখন ছাড়ুন দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।

ঐদিন মা-বাবাকে ধন্যবাদ দিলাম। পরে একসাথে সবাই নাস্তা করি। সেইদিন থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের দুজনের মাঝে কখনো ঝগড়াও হয়নি। আমাদের বিবাহিত জীবনের দু বছর হয়েছে।ভালবাসার কোনো কমতি ছিলো না আমাদের প্রতি। তার কারনেই এখন পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়তে পারি যা আগে পারতাম না।ভালবাসলেই ভালবাসা পাওয়া যায়।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত