প্রপোজ

প্রপোজ

-তুইতো গল্প লিখিস।
-হুম
-গল্প গুলো অনেক রোমান্টিক হয়।
-হুম।
-সেটা পড়ে তোর জন্য অনেক মেয়ে পাগল।
-হুম।
-এখন পর্যন্ত অনেকগুলা প্রপোজও পেয়েছিস।
-হুম।
-তাহলে প্রেম করিস না কেনো?
-সেটাও হুম।

-একদম ফাজলামি করবিনা,আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
-আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দে।
-বল।
-তুইতো অনেক সুন্দরী।
-জানিনা।
-তোর চুল গুলো অনেক লম্বা।
-মেবি।
-তোর চোখ দুটো মায়াবী।
-হতেপারে।

-তুই ঠোঁটে লাকমি ব্রান্ডের লিপস্টিক ইউজ করিস।
-হুহ্।
-তাহলে সেটা আমায় টেস্ট করতে দিসনা কেনো?
-তুই একটা ফাজিল।
-সেম টু ইউ।
-ওই যতো..রাস্তা মাপ।
-চলে যেতে বলছিস!
-হুম।
-একা বসে থাকবি!
-তাতে কমপক্ষে তোর ফাজলামি সহ্য করতে হবেনা।
-ওকে তাড়িয়েই যখন দিচ্ছিস তবে যাওয়ার আগে তোকে একটা খুশির খবর দিয়ে যাই।

-বলে ফেল।
-কাল একটা মেয়ে প্রপোজ করলো।
-তুই নিশ্চই রিজেক্ট করে দিলি।
-নাহ্,ভেবে দেখতে চেয়েছি।
-ওহ্,তো ভেবে কোনো ডিসিশন নিয়েছিস।
-ডিসিশন নিইনি,তবে এখন মনেহয় সময় নষ্ট না করে accept করে ফেলাটাই বেটার হবে।
-বলা শেষ!
-হুম।
-এখন প্লিজ যা।
-টাটা…

তারপর সেখান থেকে সোজা বাসায় চলে আসলাম। বাসায় এসে দুপুরের খাওয়া সন্ধ্যায় খেয়ে লম্বা একটা ঘুম দিলাম। ঘুম ভাংলো রুহির কলে।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলাম মাত্র ১১.৩৯ বাজে,তবে ইহা রাত না দিন তাহা অজানা। আর কিছু না ভেবে কল ধরতেই….

-রফি একটু বাসার সামনে আসতে পারবি?
-কার?
-অবশ্যই আমার।
-এখন?
-হুম।
-কেনো?
-দরকার আছে,আসার সময় মোবাইলটা নিয়ে আসবি।

টুট…টুট বাইরে বেড়িয়ে খেয়াল করলাম পৃথিবী এখন চাঁদের দখলে। শীতের রাতে বাহিরের পরিবেশ কিছুটা অন্যই থাকে। চারিপাশ কেমন হাহাকার,সবাই এসময় লেপ গায়ে দিয়ে ঘুমোনোয় ব্যস্ত। আরা আমি একলা পথিক হেঁটে চলেছি রুহির বাড়ির উদ্দেশ্যে। ভয়ংকর অনেকটা পথ অতিক্রমের পর অবশেষে বালিকার বাড়ির সামনে এসে পৌছালাম। জানালা থেকে বালিকা আমায় দেখতে পেয়ে দৌড়ে কেক হাতে বেড়িয়ে এলো।

-কেক দিয়ে কি করবি!
-তোর চল্লিশা।
-কিইইইই।[জোড় গলায়]
-আস্তে কথাবল,ভেতরে আব্বু-আম্মু ঘুমাচ্ছে।
-ওকে ওকে।
-তোর মোবাইলটা দেতো।
-কেনো!
-দরকার আছে।
-কি করবি।
-ধ্যাত।

বলেই বালিকা কেকটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে পকেট থেকে মোবাইলটা বেড় করে নিলো। তারপর পাঁচ মিনিট টিপাটিপি করে মোবাইলটা আবার সুন্দর ভাবে পকেটে ঢুকিয়ে দিলো।

-কি করলি?
-কয়েকটা মেয়েকে ব্লোক দিয়ে পাসওয়ার্ড আমার নামে সেট করে দিলাম।
-ব্লোক দিছিস মানে!যে কাল প্রপোজ করছে ওরেও দিছিস নাকি![চোখ বড় বড় করে]

-হিহিহি,হুম।এবার আয় কেক কাটবো।
-মেয়ে গুলারে ব্লোক দেওয়ার খুশিতে!
-Happy New Years.
-ওহ্ মাই গড।
-হুহ্।
-কি হলো আবার!
-দাঁড়া ছুরিটা আনতে ভুলে গেছি। বলেই দৌড়ে ঘরে গেলো আর এলো। তারপর ছুরি এনে ডাইরেক্ট গলায় ঠেকিয়ে…

-আর কোনো মেয়ের সাথে চ্যাট করবি?
-হুম…..এই না না না।
-আর কোনো মেয়ের দিকে তাকাবি?
-বেঁচে থাকলে ভুলেও তাকাবোনা।
-এবার বল I love you.
-কারে!
-তবেরে…
-I love you,I love you.
-I love you too,এবার গল্পের মতন প্রপোজ কর।
-কোন গল্পের মতন?
-যে কোনো।
-নিজের প্রেমের জন্য একটা প্রপোজ বাঁচিয়ে রাখছিলাম,ওইটা চলবে?
-আগে কর।

তখন বালিকার হাতটা টেনে বুকে জড়িয়ে নিয়ে চোখে চোখ রেখে বললাম “যখন হাসবি,আমি আরো হাসাবো। যখন রাগবি,আমি আরো রাগাবো। কিন্তু যখন কান্না করবি,তখন ভালবেসে চোখের পানি মুছে দিয়ে অনেকটা আদর করে দিবো।

I LOVE YOU”

-I love you too.
-এইভাবে কেউ ভালবাসা আদায় করে!
-রুহি করে।
-এবার কেক খাওয়া।
-কেনো!তোরতো আমার লাকমি ব্রান্ডের লিপস্টিক টেস্ট কড়ার খুব ইচ্ছা,টেস্ট করে দেখবিনা।
-তুই টেস্ট করতে দিলেতো।
-একটা মাত্র হবু জামাই আমার,এইটুকু আবদার রাখাই যায়।
-সত্যি বলছিসতো!
-হুম।

আদেশ পাওয়ার সাথে সাথে কোমড়টা আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। তারপর চোখ বুজে আস্তে আস্তে বালিকার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে আলতো করে কিস দিয়ে দিলাম। আরো একটা দিতে যাবো….

-ওই দাঁড়া।
-বল।
-আজ আর দেওয়া যাবেনা,আবার কাল।
-আর মাত্র একটা।
-ওকে,কিন্তু আগে চল কেক কাটি। তারপর একসাথে কেক কেটে রুহি আমায় খাইয়ে দিলো আমি রুহিকে খাইয়ে দিলাম।

-কেকটা কেমন হয়েছে?
-অনেক টেস্টি।
-আমি নিজের হাতে বানিয়েছি।
-ওয়াও,তবে কেকটা আরো টেস্টি হতে পারতো যদি….
-যদি কি!
-তোর ঠোঁটে রেখে পারতাম।
-উম্মম্মম্ম,আইডিয়াটা খারাপ না। তারপর বালিকার ঠোঁটে কেক রেখে এক ভিন্ন সাদ গ্রহণ করলাম। কিছুক্ষণ নীরবতা,রুহির মুখ কিছুটা মলিনতা রূপ ধারণ করলো।

-রফি।
-হুম।
-তোরে খুব ভালবাসি।[নরম শুরে]
-আগেই জানতাম।
-প্রপোজ করলিনা কেনো?
-কনফার্ম ছিলাম না।
-তারমানে তুইও আমায় আগে থেকে ভালবাসতি।
-প্রথম দিন থেকেই।
-তবে মেয়েদের সাথে চ্যাটিং করতি কেনো!
-ওইটাতো মজা করতে।
-নেক্সটা চ্যাটিং করলে তোর মজা ছুটাবো।[চোখ বড় বড় করে]
-ওরে বাবা,আচ্ছা। হঠাৎ এক ভদ্রলোকের কণ্ঠ “রুহি।”
-ওই আব্বু ডাকছে।আজ যে কি হবে,তুই তাড়াতাড়ি বাসা চলেযা।

এই বলেই বালিকা ভেতরে চলে গেলো। আমিও টিপটিপ পায়ে বাসায় চলে এলাম। সকালে খুশি মনে ঘুমিয়ে স্বপ্নের দেশে মেয়েদের সাথে ডেটিং মারছি,তখনি ফোনটা বেজে উঠলো।রিসিভ করতেই…

-তাড়াতাড়ি আমার বাসার সামনে আয়।
-কেনো?
-ঘুরতে যাবো।
-আজ।
-এখনি।
-ওকে আসছি। কলটা কেটে ফ্রেস হয়ে রুহির পছন্দের ব্লাক কালারের শার্টটা পড়ে রেডি হলাম। বেড় হতে যাবো,আম্মু পথ আটকালো…

-কই যাস?
-ঘুরতে।
-রাতে কইছিলি!
-ওই একটু।
-সত্যি করে বল,আমার জন্য বউমা পছন্দ করছিস তাইনা।
-পাঁচশ টাকা দিলে বলতাম।

আম্মু তখন একহাজার টাকার নোট দিয়ে বললো এবার ছবি দেখা। আম্মুর ভালবাসা আর বিশ্বাসের কাছে পরাজিত হয়ে তাকে তাঁর হবু বৌউ মায়ের দর্শন করিয়ে বেড়িয়ে পরলাম। পৌছে কল দিতেই বালিকা বেড়িয়ে এলো। সবকিছু ঠিক চলছিলো,হঠাৎ এক মায়ার জগতে ডুবে গেলাম। হলুদ শাড়ী,ঠোঁটে হালকা লিপ গ্লোজের ছোঁয়া,চোখে মাশকারা,হাতে চুড়ি আর ছেড়ে mদেওয়া লম্বা চুলে রুহি যেনো ভয়ংকর সুন্দরী রূপ ধারণ করছে। যেটে শুধু আমার নয় রাস্তায় হেঁটে যাওয়া প্রতিটি মানুষের নজর কেড়েছে।

-ওই কি দেখছিস।
-না কিছুনা।
-হুহ্।
-তুইতো হলুদ কিছুই পছন্দ করতিনা,তাইনা!
-হুম,তো।
-আজ হলুদ শাড়ী পড়লি যে।
-স্পেশাল কারো ভালবাসা পেতে মাঝে মাঝে নিজের পছন্দ অপছন্দকে বিসর্জন দিতে হয়।
-(হা করে তাকিয়ে)
-কিহলো,এভাবে দেখতেই থাকবি।
-হুম না চল।[ভ্যাবাচেকা খেয়ে]

রুহির হাত ধরে বছরের প্রথম দিনটা শুরু করলাম। এখন একটাই কামনা জিবনের শেষ দিনটাতেও জেনো এভাবে রুহির হাতটা ধরে রাখতে পারি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত