ভালোবাসার ছায়া

ভালোবাসার ছায়া

আজকের ক্লাসগুলা আমার কাছে মোটেও ভালো লাগে নি। কেমন একটা ঘুম ঘুম ভাব বিরাজ করছিল। কিছুক্ষন পর পর হামি দিচ্ছিলাম। কয়েকটা ক্লাস করার পর যখন সুবনকে ক্লাস থেকে বের হতে দেখলাম আমিও ব্যাগ টা কাধে নিয়ে বের হয়ে গেলাম। তারপর ওকে ডাক দিলাম। ও একটু থেমে আমার দিকে তাকিয়ে আবার হাটা দিল। আমি খানিকটা অবাক হলাম।

আমি আবার ডাক দিলাম তারপরো ও হেটে যাচ্ছে। আমি একটু দ্রুত হেটে ওর সামনে গিয়ে বললাম„তুই এমন বেয়াদব কবে হলি? ও আমার দিকে কেমন করে যেন তাকালো তারপর বললো „কোন সমস্যা? „আমি তোকে ডাক দিলাম তুই শুনেও হাটা দিলি কেন? „আমার কাজ আছে। „কি কাজ?„সব কিছু সবাইকে বলতে আমি বাধ্য নই। এইটা বলেই ও আবার হাটা দিল। আমার কাছে ওর আচরণগুলা কেমন যেন লাগলো। সকালে ক্লাসে আমার সাথে একটুও কথা বলে নি। কেমন একটা দেখেও না দেখার ভান করেছিল। আমি আবার ওকে ডাক দিলাম„এই দাড়াঁ, দাড়াঁ বলছি। ও আমার দিকে ফিরে তাকাতেই আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম„শরীরে চর্বি বেশি বেড়ে গেছে না?

„তুই আমার সাথে এইভাবে কথা বলবি না।„তোর হয়েছে টা কিরে? ও চুপ করে নিচে তাকালো। আমিও একটু চুপ করে থেকে বললাম„তুই কি কোন কারনে আমার উপর রেগে আছিস? তোর এই রকম আচরণ আর কথা বার্তায় কিন্তু বেশ বুঝতে পারছি। তাকা আমার দিকে। ও নিচের দিকে তাকিয়েই বললো„তাকালে কি হবে? তাকাবো না আমি। না তাকালে কি করবি? আমি একটু হাসলাম। মাঝে মাঝে ওর আচরণ গুলা আমার কাছে কেমন যেন বাচ্চা টাইপের মত মনে হয়। হাসির শব্দ শুনে ও আমার দিকে তাকিয়ে বললো„আমার রুচি তো খারাপ। আমার চয়েস ঠিক নেই তাই না? আমার সাথে তোর মিশা ঠিক না। এতে তোর রুচির উপর ও ইফেক্ট পরবে।

আমি একটু অবাক হয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম। বলে কি এই ছেলে? এই ছেলের মাথা ঠিক আছে তো? ও আবার হাটা দিল। আমি চুপ করে দাড়িঁয়ে ওর চলার দিকে তাকিয়ে থাকলাম। চিন্তা করতে লাগলাম কেন বললো কথাটা? মুহুর্তের মধ্যে এর কারনটা মাথায় আসলো। মনে হচ্ছে আমার মাথাটা একটা কম্পিউটার। সার্চ দিলাম আর তেমনি পেয়ে গেলাম। আসলে গতকাল মেলায় গিয়েছিলাম। বিজয় মেলায়। ভার্সিটির শেষে রিয়াদ, আবির, অবন্তি, সুবন আর আমি হাটতে হাটতে মেলায় চলে আসি। ঘুরতে ঘুরতে একটা চাদরের দোকানে ঢুকলাম কয়েকটা চাদর বেশ ভালো লাগলো। রিয়াদকে বললাম „দেখতো কোনটা মানায়? রিয়াদ একটু দেখে চকলেট কালারের একটা চাদর সিলেক্ট করে বললো এইটা তোকে মানাবে। আমার ও বেশ ভালো লাগলো। যেই আমি চাদরটা গায়ে দিয়ে দেখছিলাম কেমন লাগে তখন সুবন বললো „সাদা কালারটাই তোর সাথে যায়। আই থিংক সাদা কালারটা তোর জন্য পারফেক্ট।

আমরা সবাই ওর দিকে তাকালাম। আবির বলে ওঠলো „তোর চয়েস কেমনরে? যে কোন সাদা পোশাক তাড়াতাড়ি ময়লা হয়ে যায়। তিয়ানাকে চকলেট কালাটাই মানাবে।„তাইলে স্কুল কলেজের ছাত্রদের জন্য সাদা পোশাকটা কেন বাছাই করলো? ওরাও তো জানে সাদা পোশাক তাড়াতাড়ি ময়লা হয়ে যায়। কই তুই কি কখনো দেখছিস ওরা সব সময় ময়লা পোশাক পড়ে আসে? ওর কথা শুনে আমরা সবাই একটু হেসে উঠলাম। যদিও ও কথা কম বলে কিন্তু মাঝে মাঝে উদ্ভট টাইপের কথা বলে। এরপর কেউ আর কিছু বললো না। আমি চাদরটা রেখে দিলাম। দোকান থেকে বের হয়ে সবাই ঝালমুড়ি খেলেও সুবন কেন জানি খায় নি। আমার কেন যেন মনে হয় এই ছেলেটার একটু অভিমান বেশি। কেউ মশকরা করে বা ফান করে কিছু বললে অভিমান দেখায়।

আরেকটা ব্যাপার আমি বেশ লক্ষ্য করেছি কেউ যখন আমার সাথে ফান করে বা হেসে হেসে কথা বলে ওর চেহারা কেমন করে যেন রাখে। এই তো গত মাসেই আমার জন্মদিন ছিল। সবার কাছ থেকে এমন কিছু সারপ্রাইজ পাব ভাবি নি। রায়হান হ্যাপি বার্থডে দোস্ত এইটা বলে আমার বাম গালটা আলতো করে টান দিয়েছিল। আর অনেকে হ্যান্ডশেক করেছিল। সবার কাছ থেকে চকলেট থেকে শুরু করে তুলনা মুলক অনেক কিছু পেয়েছি কিন্তু সুবনের কাছ থেকে কিছু পাই নি। পাই নি বললে ভুল হবে। ঐদিন অনেক মজা করার পর বাসায় যাওয়ার সময় সুবন এসে বললো… .

„একটা কথা বলি? „বল। ও একটু চুপ করে রইলো হাতে রঙ্গীন কাগজ দিয়ে মলাট বাধাঁনো কি যেন একটা। „কি হলো বল।„হ্যাপি বার্থডে বলতে কি গাল টানা লাগে? আমি কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না। আমার চুপ থাকা দেখে হাতের প্যাকেট টা বাড়িয়ে দিয়ে বললো„তুই গল্প পড়তে পছন্দ করিস তো এটা তোর জন্য। কেমন একটা অদ্ভুত ছেলে। আমি এখন বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি ওর এই আচরণ গুলার কারন। ও অনেকটা দুর চলে গেছে। আমি একটু দৌড়ে গিয়ে ওর সামনে দাড়াঁলাম। একটু হাপাতে হাপাতে বললাম.. .

„চল
„কোথায়?
„মেলায়
„ইচ্ছে নেই।
„তোর ইচ্ছের গুলি মার। আজকে থেকে আমি যা বলবো তা শুনবি।
„আমি বাধ্য নই।
„চুপ। ধমক টা একটু জোড়ে দিলাম। ধমক শুনেই ও চুপ হয়ে গেল। তারপর বোকার মত আমার পাশে হাটছে। আমি মনে মনে হাসছি আর ভাবছি এই ছেলেটা এমন কেন? .

„কিরে কোথায় যাচ্ছি জিজ্ঞেস করবি না?
„কোথায় যাচ্ছিস?  আমি হাসলাম। আর কিছু বললাম না। কিছুক্ষন পর মেলায় চলে আসি। সোজা সেই চাদরের দোকানটায় ঢুকলাম। দেখলাম গতকালকের সাদা চাদরটা এখনো আছে। চাদরটা নিয়ে গায়ে দিয়ে বললাম.. .
„খুশি তো এবার? ও খানিকটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকলো। আমি বললাম  „কিরে এইভাবে তাকিয়ে থাকবি? চাদরের টাকা টা দিবে কে?
„কেন তুই।
„জ্বি না। তুই দিবি। এখন থেকে দেওয়ার অভ্যাস করতে হবে বুঝছিস? .

ও মাথার চুল চুলকাতে লাগলো। তারপর একটা হাসি দিলো। গাধাটা নিশ্চয় বুঝতে পারছে আমার কথার ধরনটা এই যে ওকে এখন থেকে দেওয়ার অভ্যাস করতে হবে। আমি ওর দিকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত একটু ভালো করে দেখলাম। হুম চলবে। একটু গড়ে নিলেই পারফেক্ট। আমার কেন যেন মনে হচ্ছে সুবন আমার কাছে এখন একটা ছায়া যা কিনা সব সময় আমার আশে পাশেই বিরাজ করবে…

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত