দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা

দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসা

–এতটা ভালবাসি
–কাকে?
–আপনাকে
–কি করতে পারবেন আমার জন্য
–যা বলবেন
–সত্যি তো
–হ্যা,সত্যি
–তাহলে আমাকে দুইবছর না দেখে থাকতে পারবেন।
–কি?(একে তো এক মুহূর্ত না দেখে থাকতে পারি না, আর দুইবছর,, সেটাত অসম্ভব)
–হ্যা,মাত্র দুইবছর
–দুইবছর তা আবার মাত্র
–পারবেন কি না?
–ঠিক আছে, আজকের তারিখটা মনে রেখ, আমি ঠিক দুইবছর পর এই তারিখে একি জায়গায় তোমার সামনে আসব।

–হুম মনে আছে, আজ ৫ই অক্টোবর ২০১৫ সাল
–তবে আমার একটা শেষ ইচ্ছে আছে?
–কি?
–একবার হাতটা ধরতে দেবে,শেষবারের মত!!!!
–ঠিক আছে!!

আমি শেখ ফারহান, ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের ছাত্র। আমি আমার বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান।আর এ হচ্ছে আনিকা, আমার সাথেই পড়ে। আনিকার সাথে শর্তে রাজি হওয়ার দুদিনের মাথায় কলেজ বদলে ফেলেছিলাম, কেননা একই কলেজে থাকলে ঠিক ওর সামনে পরতে হবে। তবে মা বাবা না করে ছিল,, কিন্তু আমার জেদের কাছে আমার মা বাবা ছিল নিরুপায়,।

আনিকা আমার প্রথম ভালবাসা ছিল।যার কারণে অদ্ভুত একটা শর্তে রাজি হয়েছিলাম। তবে আমার দিক থেকে আমি সিরিয়াস ছিলাম, তবে আনিকা কি সিরিয়াস ছিল, না ফাজলামি করছিল। যার উত্তর আজও আমার অজানা,,,, আজ ৫ই ফেব্রুয়ারি ২০১৭ সাল দেড় বছর হয়ে গেছে, আমি আনিকাকে দেখতে পাইনি। তবে খোঁজখবর নিয়েছি ভালই আছে, শুনেছিলাম কয়েকটা প্রপোজাল ও পেয়েছে,, অবাক করা বিষয় হল সব কয়টা প্রপোজ না করে দিয়েছে।এটা অবাক করা বিষয় হলেও আমি অনেক খুশি হয়েছি।

কিন্তু একটা চিন্তা, দুইবছর পর যদি ওর সামনে যাই, তাহলে আমাকে ফিরিয়ে দিবে না তো, সে যাই হউক আমি যদি ভালবাসার প্রমাণ দিতে পারি তাতেই খুশি। তবে মা বাবা আজও আমার কলেজ বদল করার কোনো ইস্যু পাননি। জানতে চেয়েছেন অনেকবার, কিন্তু আমার একটাই উত্তর দুইবছর পর বলব। কোন একটা রাত বাদ যায়নি যে আমি আনিকাকে নিয়ে ভাবিনী, সব রাতেই ভেবেছি। আমার এখনও মনে পড়ে তার হাতের প্রথম স্পর্শ। যা আজও মনে হলে আমার শরিরটা উস্নতায় ভরে যায়। বিকেলের ধমকা বাতাসে মগ ভরা কফি নিয়ে বারান্দায় এসে বসেছি, তখনই মোবাইলটা বেজে উঠল

–হ্যালো (অপরিচিত নাম্বার)
–আমি আপনাকে ভালবাসি(একটা মেয়েলী কন্ঠ)
–সেটা অন্য কাউকে বলেন গিয়ে কলটা কেটে দিয়েছি,, এ মেয়ের নির্ঘাত মাথায় সমস্যা,,, তখনই বাবা এসে হাজির,,,

–পরিক্ষা কবে?
–সামনে, ১০দিন আছে
–ওহ, পড়াশুনা কেমন চলছে
–ভাল
–ভাল হলেই ভাল!!

দুইমাস পরের কথা পরিক্ষাটা ভালই হয়েছে।আশা করছি রিজাল্টা ও ভালই হবে। তবে এর মাঝে যে আনিকাকে আমি মনে করেনি তা কিন্তু নয়, অনেকটা সময় ধরেই আমার মাথায় চেপে থাকে।ভুলতে পারিনা কখনও সকাল সকাল মোবাইলের গর্জনে ঘুম থেকে উঠতে হল,

–হ্যালো
–কি রে ভুলে গেলি!
–কে, নুহাস,কতদিন পর (আমার কলেজ ফ্রেন্ড)
–আমাকে তো প্রায় ভুলেই গেলি
–না রে ভুলিনি।
–সেই যে গেলি, আর একদিনের জন্য কলেজ আসলি না
–কাউকে যে কথা দিয়েছি
–হুম,জানি
–তবে আর বেশি দিন নয়
–হ্যা, কয়েকটা মাস
–হুম,রাখি রে!
–ভাল থাকিস
–তুইও! কলটা কাটার সাথে সাথে আবার মোবাইলের গর্জন

–হ্যালো
–ভালবাসি(মেয়ে)
–আমাকে বলছেন কেন
–কারণ আপনাকে ভালবাসি
–পাবনা যান!
–কেন?
–মেন্টাল হাস্পাতালে, পাগলী একটা
–কি আমি পাগলী, তুই পাগল তার আগেই কলটা কেটে দিয়েছি।

কি এক মেয়ে আমার মাথাটা পুরাই হ্যাক করে দিল। প্রতিদিন কল করেই এক কথা ভালবাসি ভালবাসি।এর নাম্বারে পাগলী লিখে সেইভ দিলাম। কি যে দিনকাল এল। এর মাঝে কয়েকটা মাস চলে গেছে,,,, আজ ৫ই অক্টোবর ২০১৭ সাল—- সকাল সকাল মা বাবার গর্জনে ঘুম ভেঙ্গে গেল,,,

বাবা — ঘুম থেকে উঠ
— উঠছি
মা –তারাতারি উঠ
–আজ কি হয়েছে বল তো
বাবা– আজ তারিখটা মনে আছে
–না
মা– ৫ই অক্টোবর
–কি??

বাবা — হ্যা, উঠ
–আমি তো ভুলেই গেছি
মা — তা এবার বল, তর কলেজ বদলানোর কারণ
বাবা –হ্যা, যা শুনতে দুইবছর অপেক্ষা করতে হল

–একটা মেয়ের জন্য
— কি??(দুজনে এক সাথে বলল)
–হ্যা, একটা মেয়ে, যাকে আমি ভালবাসি। আর ভালবাসার প্রমাণ দিতে গিয়ে দুইবছর থাকে না দেখে থাকতে হল, বাবা — তা রোমিও এখন কি করবে
–কি আর করব, শর্ত শেষ, আজ দেখা করব
–শুভেচ্ছা রইল বাবা, তবে মেয়েকে নিয়ে কিন্তু বাসায় আসবি, আমরাও দেখব
–অব্যশই বাবা,পারলে আজ বিয়ে করে নিয়ে আসব (ইসস মুখ ফসকে কি যে বললাম)

মা — শরম লজ্জা কিছু নেই তর?? তার আগেই পালিয়েছি,,, উদ্দেশ্য কলেজ কলেজে চলে এসেছি, কিন্তু কোথাও তো আনিকা নেই, তবে কি ভুলে গেল সব।যার জন্য দুইবছর অপেক্ষা করলাম, সে ধোঁকা দিল একটা বেঞ্চিতে অপ্রত্যাশিত ভাবে বসে আছি। চোখ দিয়ে অনবরত জল বেয়ে পড়ছে, হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম। পিছে ফিরে চেয়ে দেখি আনিকা দাড়িয়ে আছে,

–কাঁদ ভাল করে কাঁদ
–কেন
–এতদিন তো আমি কেদেছি, আজ তুমি কাঁদ আমি দেখি
–আমি তো মনে করেছি তুমি সত্যি আসবে না
–না এসে পারি, ফাজলামি করে একটা কথা বললাম।তার জন্য সত্যি চলে যেতে হবে
–কি করব, তুমি প্রমাণ চাইলে আর আমি দিলাম
–এতটা ভালবাসি
–কাকে?
–তোমাকে
–আমিও। আচ্ছা তোমার নাম্বার দাও তো
–আমি বলছি, তুমি সেইভ কর নাম্বারটা সেইভ করতে যাব, কিন্তু নাম্বার তো সেইভ করা পাগলী নামে, হুম এবার সব কিছু পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন।

–তাহলে প্রতিদিন তুমি আমাকে কল করে ভালবাসি বলতে
–হ্যা, কিন্তু তুমি জানলে কি করে?
–আমি তো নাম্বারটা পাগলী লেখে সেইভ করেছি।
–কি??আমি পাগলী,দাড়া দেখাচ্ছি মজা মজা দেখানোর আগেই আমি পলাতক,, আমাকে আর কই পায়…..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত