তিন দিন হল রুম থেকে বের হইনা, মোবাইল, ফেসবুক সব কিছু অফ। মোটামুটি সবার সাথে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ। অবশ্য এর পিছনের কারণ টা খুব একটা সিম্পল না। মেঘা আমার স্কুল লাইফের বন্ধু, আর এখন আমরা ভার্সিটি ৩য় বর্ষে, স্কুল লাইফ থেকে এখন পর্যন্ত কেউ আমাদের আলাদা দেখেনি, সব সময় এক সাথেই থাকতাম। এই নিয়ে ওকে আমি ১০০ বার প্রপোজ করেছি কিন্তু প্রতিবারই “না “নামের এক মহান বাক্য উচ্চারণ করেছে ও। ওর মতে আমরা দুইজন ভাল বন্ধু এর বেশী আর কিছুই না, ওর কাছে নাকি বন্ধুত্বই সবচেয়ে দামি। কোন এক কবি বলেছিলেন “একবার না পারিলে দেখ শত বার” আর আমি ওনার কথায় শত পূরণ করলাম, ওনি যেহেতু শত বারের বেশী বলেনি তাই আমিও এর বেশী চেষ্টা করব না, গুরু জন বলে কথা অমান্য করি কি ভাবে।
নিরানববই তম প্রপোজ করার সময় মনে মনে ঠিক করেছিলাম এই বার যদি রাজি না হয় তো এর পর আর একবার চেষ্টা করব তারপর আর না, কপালে যা থাকে। ওই যে কথায় আছে, গোপালের কপাল কখনো চওড়া হয় না, আমার ও তাই হলো। কি আর করার মনের দুঃখে নিজের রুমে এসে একা একা শোক পালন করছি। তবে একটা ব্যাপার আমি শিওর, এই তিন দিনে মেঘা আমায় উকুন খোজা খুজেঁছে, যেই মেয়ে আমায় ছাড়া একদিন ক্যাম্পাসে যেতে পারেনা সেই মেয়ে আমার সাথে দেখা না করে তিন দিন থাকা মানে।
তবে একটা ব্যাপার আমার এই ছোট্ট মাথায় ঠেলে ও ঢুকাতে পারিনা, যেই মেয়ের আমাকে ছাড়া একদিনও চলেনা, একটা কাজ আমায় ছাড়া করতে পারেনা সে কিভাবে আমায় ভাল না বেসে থাকতে পারে। কে যেন বলেছিল, ভালবাসার জন্মই হয় অপাত্রে দান করার জন্য। তা নাহলে আমার মত এত বড় সুপাত্রকে মেঘা কিভাবে না বলে, মানলাম ফাইজলামির জন্য নিয়মিত আম্মুর কাছে ঝাড়ি খাই, তাই বলে এতটা ও অপাত্র নই। ইতি মধ্যে আমার”ঘর থেকে বের হইনা কর্ম সূচির সাত দিন পার হল। যদিও এই সাত দিন আমার লাইফে ইতিহাস লিখার মত কেটেছে। যাইহোক আট দিনের মাথায় একেবারে মান্জা মাইরা, চেহারায় একেবারে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়া ভার্সিটির দিকে হাটা দিলাম।
ক্যাম্পাসে ঢুকতেই দেখি সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে, ব্যাপার কি ! মনে মনে তো প্রচুর আনন্দ, আমি ত দেখি হেব্বি ফেমাস, সাত দিন না এসেই কি অবস্থা। মনে ফেমাস ফেমাস ভাব নিয়া সামনে আগালাম আমার টাউট মার্কা বন্ধু দের খুজতে। হঠাৎ দেওয়ালের দিকে চোখ গেল সব খানেই Sorry! লিখা পোষ্টার লাগানো। ভাবলাম হয়তো sorry দিবস হবে আজ কিন্তু সরির সাথে আমার নাম লিখা কেন? Sorry আশিক ঘটনা কঠিন ভাবে পেচ খেয়েছে, তাইত বলি আমি আবার এত ফেমাস কবে যে সবাই আমারে তাকাই তাকাই দেখবে। ঠাস, এটা কিসের শব্দ? গালে হাত দিয়ে বুঝলাম আমাকে থাপ্পড় দেওয়া হইছে, কিন্তু দিল টা কে? তাকাতেই দেখলাম মেঘা, মেঘা বলব না পেত্নী বলব বুঝতে পারছিনা। ঠাস, আরো একটা আমার গালে।
আমি : আরে আমায় এই ভাব চড় দিচ্ছিস কেন? আমি কি করলাম?
মেঘা: প্রবলেম কি তোর?
আমি : মানে? চড় দিচ্ছিস আমায় প্রবলেম কি আরেকজনের হবে?
মেঘা : আমি সেটা বলছিনা, এই সাত দিন কই ছিলি? আমারে একবার ও মনে পড়েনি তোর?
আমি : আমার ইচ্ছা আমি যে খানেই থাকি।
মেঘা : তোর ইচ্ছায় সব কিছু হবে?
আমি : অবশ্যই, তোর সব কিছু যদি তোর ইচ্ছায় হয়, তাইলে আমারটা কেন হবে না?
মেঘা : না হবে না, আমি যা বলব তাই হবে।
আমি : কেন তোর কথা হবে কেন? ঠাস, আবার,,
আমি : অসহায় ভঙ্গিতে, আরে বলবি তো সমস্যা কি? তখন থেকে চড় দিয়ে যাচ্ছিস? হঠাৎ করে মেঘা আমায় জড়িয়ে ধরে কাদতেঁ শুরু করল। আমি তো পুরোই থ “বুঝলাম না ঘটনা কি?
আমি : আরে ছাড় সবাই দেখতেছে তো? আর তুই আমায় জড়ায় ধরলি কেন?
মেঘা: দেখলে আমার কি, তুই বুঝিস না আমি তোকে ছাড়া এক দিন ও থাকতে পারিনা, একটা মহূর্ত ও ভাবতে পারিনা। ওটা না বুঝলেও এটা বুঝতে পারতেছি মাইয়ারে লাভেরিয়ায় পাইছে। কোন রকম ছাড়িয়ে নিয়ে ওকে দাড় করালাম।
আমি : তাহলে এত দিন না বললি কেন?
মেঘা: আমি কি জানতাম সত্যি সত্যি তুই আমার থেকে দূরে সরে যাবি?
আমি : যা ভাগ, আমি আর এখন তোকে ভালবাসি না। ঠাস,, আরো একটা,
মেঘা : তুই না তোর চোদ্দ গুষ্টি ভালবাসবে।
আমি : গাল ঢলতে ঢলতে, ওকে ওরা বাসলে বাসুক আমি বাসব না।
মেঘা : কেন?
আমি : বাসতে পারি এক শর্তে,
মেঘা : কি?
আমি : একশ বার প্রপোজ করতে পারবি?
মেঘা : কুত্তা, বিলাই, হনুমান, গন্ডার, ইদুর, আমি তোরে একশ বার কেন একবার ও প্রপোজ করতে পারবনা।
আমি : গেলাম তাইলে, বলেই হাটা দিলাম, পিছন থেকে মেঘা আমায় জড়িয়ে ধরল। আর কাদতেঁ কাদতেঁ বলল,
আমি রাজি একশ বার না এক হাজার বার করতে ও রাজি, তবু তুই আমারে ছেড়ে চলে যাস না। আমি মনে মনে খুশিতে সে কি লুঙ্গি ডান্স, উফ্ জীবনটা এত রোমান্টিক কেন! যাই হোক এই সুযোগ, এই বার ঠিক আমারে দিয়া একশ বার প্রপোজ করানোর প্রতিশোধ নিমু। “অতপর শুরু হল একটা প্রতিশোধ পরায়ন ভালবাসা,,,,,,,,
মেঘা “ঃ- I love u আশিক
আশিকঃ- হবে না এক বার বললে হবে না ” একশো বার বলতে হবে ”
মেঘাঃ- I love u বলতেই আছে ” আর কেঁদেই যাচ্ছে ”
আশিকঃ- আমি পাগলী টাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বললাম হইছে পাগলী এই বার থাম ” love u 2 ”
এভাবেই চলছে আমাদের দিন কাল ” কিছু দিন পর বিয়ে করবো পাগলী টাকে ” ধাওয়াত রইলো আপনাদের আসবেন কিন্তু” এই শুনেন আপনারা আমিতো ভুলেই গেছিলাম ” আমি যে কল্পনার জগতে এখন ” গল্প টা কাল্পনিক ” ইশ আপনাদের আর ধাওয়াত খাওয়া টা হলো না ” পরিশেষে একটা কথাই বলবো যাকে ভালোবাসেন তাকে জলদি প্রপোজ করে ফেলেন ” নয়তো অন্য কারো হয়ে যাবে ” শেষে কেঁদে বালিশ বিজানো ছাড়া কোন উপায় থাকবে না বুঝতে পারছেন “?