আমার বউটা

আমার বউটা

:- এই যে, আপনি বলে দেন না, কোন ড্রেসটা পড়বো.! (আলমারি খুলে দিয়ে)
:- আমি কি করে বলবো। তোমার যেটা ভালো লাগে সেটাই পড়ো।
:- আচ্ছা,,,আধা ঘন্টা নিচ তলা থেকে আমার বউ জেনিকে ডাকছি।

:- এই জেনি, সবাই তো রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ছেন। তুমি তাড়াতাড়ি এসো। মেয়েরা বাবা সাঝতে এতো সময় লাগায়। আরো ১০মিনিট চলে গেলো জেনির কোনো সাড়া শব্দ নেই।

:- এই জেনি, এখনো হলো না তোমার.! তাড়াতাড়ি এসো, ২মিনিটের মধ্যে। আরো ৫মিনিট চলে যাওয়ার পরও কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে রুমে গেলাম।

:- এই, জেনি তোমার কি হয়েছে এতো কাঁদছো কেন.? সবাই তো রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লো, তুমি এখনো রেডিই হও নি যে।

:- আমি যাবো না।(কেঁদে কেঁদে)
:-যাবে না মানে তোমার জন্যই তো দাওয়াত খেতে যেতে হচ্ছে।
:- বললাম তো আমি যাবো না।
:- তাহলে বলো কেন যাবে না তোমার কি শরীর খারাপ করছে.! ডাক্তার ডাকবো.! মাথা ব্যথা করছে.! মাথা টিপে দেবো। কথা গুলো বলে মাথায় হাত দিতে যাবো তখন একটু ধমক দিয়ে,

:- খবরদার আমার মাথায় হাত দিবেন না। এমন সময় বড় ভাবী রুমে চলে আসলেন,

বড় ভাবী:- আরে জেনি তুমি এখনো শুয়ে আছো কেনো.? কি হয়েছে তোমার.?

জেনি:- কিছু হয় নি বড় ভাবী। আমি যাবো না।

বড় ভাবী:- যাবে না মানে.!

আমি:- এই দেখো তো বড় ভাবী। উনাকে উদ্দেশ্য করে দাওয়াত খেতে যাচ্ছি আর উনি নাকি যাবেন না। কেন যাবেন না সেটাও বলছেন না।

বড় ভাবী:- জেনি.! লক্ষ্মী বোন আমার- বলো না কেনো যাবে না.! শরীর খারাপ করছে নাকি.?

জেনি:- না, না বড় ভাবী এমনিতেই আমি যেতে চাচ্ছি না।

বড় ভাবী:- মোহন.! তুমি যাও তো। সবাইকে গিয়ে বলো দাওয়াত খেতে যাওয়া হবে না।

জেনি:- আরে না না, বড় ভাবী আপনারা যান না। (আমি নিচে যাচ্ছি দেখে, জেনি কথা গুলো বলতে আমি থেমে যাই)

বড় ভাবী:- মোহন.! তোমাকে কি বলছি শুনো নি।

আমি:- জ্বী যাচ্ছি বড় ভাবী।

জেনি:- না না আপনি যাইয়েন না। আমি যাবো।

বড়ভাবী:- তাহলে ৫মিনিটের ভিতরে রেডি হও।

জেনি:- কি আর রেডি হও বড় ভাবী.! আপনার আদরের দেবর সাহেবকে বলেছিলাম, কোন ড্রেস পড়বো সেটা চয়েজ করে দেওয়ার জন্য কিন্তু উনি আমার মুখের উপর না করে দিলেন।

আমি:- হ্যাঁ.! (অবাক হয়ে) আমি আবার না করলাম কখন.! আমি তো বললাম তোমার চয়েজে একটা পড়ে নিতে।

বড় ভাবী:- ওহ আচ্ছা। এখন বুঝেছি আসল কাহিনী। এই মোহন চুপচাপ বউকে ড্রেস চয়েজ করে দেও আর শাস্তি সরুপ বউকে ড্রেস পড়িয়ে দিও।হাহা

জেনি:- (খিলখিলিয়ে হাসছে)

আমি:- হেেেে,,, লা হাওলা ওয়ালা ইল্লাহ বিল্লাহ। (বলে বলে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলাম)

বড় ভাবী:- মোহহহহন.! চুপচাপ এখানে দাঁড়াও নয়লে কিন্তু আম্মুকে (শাশুড়ি) বিচার দেবো।

আমি:-(দাঁড়িয়ে আছি) বিচার দিলে দিয়েন বড় ভাবী। আম্মু বেশ হলে আমায় কান মলা দিবেন তবু ওতো এই অসাধ্য কাজ থেকে বাঁচবো।

জেনি:- থাক আর লাগবে না বড় ভাবী। আমি তো উনার কেউ নয়.!! (অভিমানী) বড় ভাবী:- মোহহন, তুমি আমার কথা শুনছো না তো.! আর জেনির কাছে আমায় লজ্জা দিচ্ছো তো.! আচ্ছা মনে রেখো। (ভাবীর রাগী স্বরের কথা)

:- এই তোমরা কখন যাবে.! একজন আরেকজনকে নিতে এসে গল্পে বসে গেলে.! (জেনির দিকে চেয়ে) আরে ছোটোমা (জেনি) তুমি এখোনো রেডি হও নি.!!(আম্মু) বড় ভাবী আম্মুকে সব কথা বলে ফেললেন সাথে এটাও বললেন যে আমি বড় ভাবীর কথা অমান্য করেছি।

আম্মু:- মোহন.! ৫মিনিট.! গুণে গুণে ৫মিনিটের মধ্যে ছোটোমাকে রেডি করিয়ে নিচে এসো। নইলে হাড্ডি গুড্ডি ভেঙে ফেলবো। আর শুনো ৫মিনিটের উপরে সময় লাগলেও কিন্তু খবর আছে।

আমি:-আম্মু.! বউয়ের সামনে আমাকে বকলে.!!

আম্মু:- চুপ.! আর একটা কথা বলবে না। সময় কিন্তু যাচ্ছি। আম্মু আর ভাবী চলে গেলেন। আমি এখন মহা বিপদে পড়লাম।

:- এইযে সুন্দরী মহাশয়া, এই ড্রেসটা পড়ে নিন। আর এখনও যে বিছানা থেকে উঠছেন না.! আমার হাড্ডি গুড্ডি ভাঙাবেন নাকি.?
:- হুহহ, আমি কেন বিছানা থেকে উঠতে যাবো.! আপনি আমাকে বিছানা থেকে উঠিয়ে নেন।

:- বলে কি মাইয়াডা.! এমনিতেই ১মিনিট চলে গেছে। (মনে মনে)
:- হাহা হাহা হাহা, এইযে এইযে এ কি করছেন।(জেনি)
:- হিহি কুতকুত দিয়ে আপনাকে বিছানা থেকে উঠাচ্ছি। হাসতে হাসতে বিছানা থেকে উঠলো জেনি। উঠে আমার একটু আগে বলে দেয়া ড্রেসটা নিয়ে বার্থরুমে ঢুকলো। যাহ…! ৪মিনিট শেষ। এখনো জেনি বার্থরুমে। আজকে আমার খবর আছে। কথা গুলো বলতে বলতেই বার্থরুম থেকে জেনি বেরিয়ে এলো।

:- ওমা,,, তুমি এখনো সাঝো নি.? এ ৪মিনিট বার্থরুমে কীই বা করলে.!
:- কেন, কেন.? আপনি আমাকে সাঝিয়ে দেয়ার কথা তাইলে আমি সাঝবো কেন.?(জেনি)
:- হুহহ, তোমাকে আর সাঝতে হবে না। ৫মিনিট হয়ে গেছে, চলো। নইলে আমার খবর হবে।
:- হে.! আপনার খবর হবে বলে কি আমি এইভাবে সাদামাটা বেরিয়ে যাবো.! চুপচাপ আমাকে সাঝিয়ে দেন।

:- ইস.! এ কেমন বউ রে বাবা.!! কথা না বাড়িয়ে কোনোমতে সাঝিয়ে দেয়াই ভালো।(মনে মনে)
:- হিজাবটা বেধে দেন.!
:- অসাধ্য কাজ.!! এটা আপনি করেন না গো।
:- চুপচাপ বেধে দেন।
:- দুর ভাল্লাগে না।
:- আউ.!!
:- কি হলো.!
:- ওই মিয়া.! আমার মাথায় আলপিন দিয়ে আঘাত করলেন কেন্.? (রাগত্ব স্বরে)
:- সরি গো সরি। আমি বললাম তো আমি হিজাব বাধতে পারি না। (তুলতুলা দু’গালে চিমটি কেটে)
:- হয়েছে হয়েছে.!! আচ্ছা হিজাবটা আমি বাধছি। জেনি হিজাব বাধছে আমি দাড়িয়ে দেখছি। কিন্তু আম্মুর দেখা ৫মিনিট সময় অতিক্রম করে এখন ৮মিনিট চলছে। আমার আজ জব্বর খবর আছে।

:- একটু তাড়াতাড়ি করেন না গো.!
:- হুমম,হিজাব বাধা শেষ। এখন আপনি আমার মুখ সাঝিয়ে দেন।(জেনি)
:- আমি! মুখ সাঝিয়ে দিমু.! দেখো জেনি তোমার বিড়ালনী হওয়ার স্বাদ কবে থেকে জাগলো.!
:- আপনি সাঝিয়ে দিবেন না আম্মুনীকে ডাকবো.!!
:- হুহহ, আম্মুকে ডাকতে হবে কেন.!! কাজলটা নিয়ে চোখের নিচে অনেক কষ্টে লাগিয়ে দিলাম।
:- মেকাপ, মাশকারা, লিপস্টিক এসব লাগিয়ে দেন।
:- দুর বাবা.! এগুলোর নামই আমি শুনি নি। প্লিজ জেনি এগুলো তুমি লাগিয়ে নাও, প্লিজ প্লিজ। এমনিতেই কত্ত দেরী হয়ে যাচ্ছে। (অসহায়ের মত কথা গুলো বললাম)

:- (জেনি আমার কথা গুলো শুনে হেসে হেসে বলছে) তখন যদি শুধু ড্রেসটা চয়েজ করে দিতেন তাহলে এখন এত্ত কষ্ট করতে হতো না মশাই। আচ্ছা ঠিক আছে আমিই এগুলো লাগিয়ে নিচ্ছি। কিন্তু আপনাকে এগুলো শিখতে হবে, আগামীতে আমাকে সাঝানোর জন্য। আলহামদুলিল্লাহ জেনির সাঝা শেষ। কিন্তু মোট ১৩মিনিট লেগেছে। আমার আজ খবর আছে। ভাবছি, এতক্ষণ আম্মু কিংবা বড় ভাবী কিংবা কেউই আমাদের ডাকতে আসলেন না যে ভয়ে ভয়ে আমি জেনিকে নিয়ে নিচ তলায় নামছি। আম্মু আর বড় ভাবী আমাদের দেখে হাসছেন। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। সেখানে ৫মিনিটের উপরে সময় যাওয়ায় আম্মু আমার অবস্থা বেহাল করার কথা সেখানে উনি হাসছেন। যাই হোক গাড়িতে উঠলাম।

:- আম্মুনী সম্ভবত ভুলে গেছেন, আপনাকে বকা কিংবা হাড্ডি গুড্ডি ভাঙার কথা। (কানে কানে কথাগুলো বলেই জেনি হাসছে)

:- হাহা, আল্লাহই আমাকে বাঁচিয়েন।
:-আল্লাহ আপনাকে আপনার বউকে দিয়ে বাঁচিয়েছেন।
:- মানে…!
:- মানে আমি বড় ভাবী আর আম্মুকে বলে সময় বাড়িয়েছি।
:- কখন.?
:- বার্থরুমে ছিলাম সময়।
:- মানে তুমি বার্থরুমে মোবাইল নিয়া গেছলা.!
:- হাহা, হুমম। আরে আমার লক্ষ্মী বউ গো বলে বলে তুলতুলা গালে চিমটি দেবো, তখনই জেনি আমার হাত সরিয়ে কানের কাছে বলে উঠলো,
:- দুর আপনি না.!!! গাড়িতে মানুষ দেখেন না.! আমার লজ্জা করে না বুঝি!

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত