—-ওই রিকসার ভাড়াটা দে।(তানুসা)
>এইটাও আমি দেব।(আমি)
-দিতে বলছি দিবি। বড়রা যা বলে তা শুনতে হয়।(তানুসা)
>এই একটা জিনিসইতো পাইছেন।বড় বলে সব কাজ চালিয়ে নেন। (আমি)
-ওই কি বললি। (তানুসা)
>না না কিছু না ।আমি দিতেছি। (আমি)
ওহ আমাদের কথা বলা হয়নি। আমি তাসকিন আর তানুসা আমার কি হয় তা আমি আদৌও নিজে জানি না। তানুসা আমার আব্বুর কলিগের মেয়ে। আর সেই ক্লাস থ্রি থেকে একসাথে পড়ছি একই স্কুলে, একই কলেজ, দুর্ভাগ্য না সুভাগ্য জানি না একই ভার্সিটিতে পড়েছি। ছোটবেলায় বয়সের হিসাব করতে গিয়ে জানতে পেরেছিলাম তানুসা আমার ২ ঘন্টা ১৬ মিনিটের বড়। আর এইটাই আমার বড় ভুল। উঠতে বসতে ওর সব কিছু সহ্য করা লাগে। সেই ছোটবেলা থেকেই ও যা বলে তাই করতে হয়। কারন একটাই ও আমার বড়। আর এখন খারাপ ও লাগে না ছোট বেলা থেকে সহ্য হয়ে গেছে সবার সামনে তানুসা তুই বললে ও যখন ও আর আমি তখন ওকে আপনি করে বলা লাগে। জীবনে কোনদিন একটা প্রেম করতে পারি নাই ওর জন্য। আর প্রেম তো দুরেই থাক কখনও কোন মেয়ের সাথে ভাল করে কথা বলতে পারি নাই।বুঝি না ও এমন করে কেন।
ক্লাস সিক্সের কাহিনী তখন সবে মাত্র সিক্সে উঠেছি নতুন ক্লাস আর বেশীর ভাগই নতুন মুখ।বেশ ভাল করে আমার মনে আছে এক চশমা পড়া মেয়ের সাথে কথা বলছিলাম ঠিক তখনই দর্জাল মাইয়াটার আবির্ভূত ।এসে মেয়েটার সাথে ঝগড়া বাধিয়ে দিল।অব্শ্য দোষটা আমার। আগ বাড়িয়ে আমি মেয়েটার সাথে কথা বলেছিলাম। মেয়েটা অনেক কিউট ছিল। তারপর থেকে আর কারো সাথে কথা বলতে যাই না। কারন ওই চশমা পড়া মেয়েটা। ওর সাথে কথা বলছিলাম তাই তানুসা আমার সাথে তিন দিন কথা বলে নাই। তাই আর কখনও ভুলেও কথা বলি নাই। কারন ও কথা না বললে আমার খুব কষ্ট হয়। আমরা দুইজন এখন একটা রেস্টুরেন্ট এ বসা। তানুসা কি গুরত্বপূর্ন কথা বলবে নাকি।
>খাবারের অর্ডার দেন(আমি)
-তুই দে (তানুসা) (কিছু খাবারের ওডার করলাম যা তানুসার ফেবারিট)
>তো আপনার গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন।(আমি)
-কেন এখন ই বলা লাগবে। ও আমার সাথে তো বসে থাকা তোর ভাল লাগে না।অন্য কোন মেয়ে হলে ঠিক এ বসে থাকতে পারতা।(তানুসা)
>এইসব কি,,,আমি কি তাই বলেছি। (আমি)
-বলবি কেন,,,,, বুঝা যায়।(তানুসা)
>হ্যা আপনি তো সব কিছু অল্পতেই বুজেন।(আমি)
-দেখ আমি ঘুরায় পেচায় বলতে পারব না ডিরেকলি বলতেছি।(তানুসা)
> জি বলেন।(আমি)
-বাসা থেকে আমার বিয়ে ঠিক করেছে।(তানুসা)
> omg!! এ তো খুশির সংবাদ। তাই বুঝি আজ আপনি অগ্রিম ট্রিট দিলেন।(আমি) (আমার কথা টা শুনে মাথা টা বেক্রে গেল।কি বলবো বুঝতে পারছিলাম না।)
-কি???তোর খুশি লাগতেছে।ওকে তুই তোর খুশি নিয়া থাক।(তানুসা)
রাগ কইরা রেস্টুরেন্ট থেকে চলে গেলো।ওর ব্যাবহার দেইখা রেস্টুরেন্টের সবাই আমার দিক তাকাই রইল তারাতারি বিল দিয়া ওর পিছন পিছন গেলাম। আমি যাইয়া দেখি ও রিকশা নিয়া চলে গেছে।আর কি করার আমি ও বাসার দিক হাটা দিলাম।ভাবতেছি ও এমন কি বলতে চাইলো।তাহলে ও কি এই বিয়েতে রাজি না নাকি অন্য কিছু। কিছু ই ভাবতে পারছিলাম।মাথা কেমন জানি বিগ্রে জাইতেছে।কিছু ভাবতে না পাইরে ফোন দিলাম।কয় এক বার ফোন দেওয়ার পর ফোন রিসিভ করল। সচরাচর ফোন দেওয়ার পর ই রিসিভ করে।
>হ্যালো।(আমি)
– (তানুসা)
>কি হলো।
>কথা কি বলবেন???
-কি বলব।(কান্নার সুরে)
> আপনি কান্না করতেছেন কেন।
-কই।
>মিথ্যা বলেন কেন।
-কি বলবি বল।কি কারনে ফোন দিছিস।
>কেন ফোন দিতে কি কারন লাগে।
-হুমম লাগে।
>আপনি রেস্টুরেন্ট থেকে চলিয়া গেলেন কেনো।
-তো কি করবো।আমার সিরিয়াস বিয়ে ঠিক হইছে। আগামি শুক্রবার আমার বিয়া।আর তুই এই বেপারে একদম সিরিয়াস না।আমি কিভাবে বলবো তোকে কিভাবে বুজাবো।এমন একজন কে ভালবাসি যে আমার ভালবাসাটাই বুজলো না।আমি এই বিয়েতে রাজি না।(কান্না করতেছে উচ্চস্বরে)
>হ্যালো হ্যালো হ্যালো ফোন টা কাইটা দিলো। আমার কিছু ভাল লাগছে না ওর কথা শুইনা।মাথায় কিছু কাজ করছে না।আমি ওকে ভিশন ভালবাসি।কিন্তু কখনও বলি নাই।যদি ও ফিরিয়ে দেয়।কিন্তু আজ আমি জানতে পারলাম শুধু আমি না ও আমকে ভালবাসে।ওকে ছাড়া আমার জীবন ভাবতে পারি না। কি করবো বুজতে পারতেছি না।একটা সিগারেট ধরাইলাম।কি করবো ভাবতেছি।আম্মুকে সব বলবো কি না। বাসায় গেলাম।দরজা নক দিলাম।আম্মু দরজা খুললো।ভিতরে ঢুকলাম তানুসার আব্বু আম্মু বসিয়া আছে। আমি সালাম দিলাম।আমাকে বসতে বললো।আমি বসলাম,তানুসার বিয়ে নিয়ে কথা হইছে। আঙ্কেল আমাকে তানুসার বিয়ের সব দায়িত্ব দিলেন। কি করবো কিছু বুজতেছি না।
আমি আঙ্কেলের কথায় সম্মতি দিলাম। তানুসার বাবা মা যাওয়ার পর আমি আম্মুর সাথে কথা বললাম,,,জানতে পারলাম তানুসার হবু বর খুব বড় ব্যবসায়ী। এখন আমি স্থির হয়ে গেলাম মনে হচ্ছিলো শরীরের রক্ত চলাচল এখন ই বন্ধ হয়ে যাবে।আমি এসবকিছু সহ্য করতে পারবো না।তাই কাওকে না জানিয়ে চট্টগ্রাম এক বন্ধুর বাসায় চলে যাই। আর ফোন টাও সুইস অফ রাখি।শুধু চট্টগ্রাম এসে আম্মুকে একটা ফোন দিয়া বলি আমি জরুরি কাজে চট্টগ্রাম আসছি।তারপর ফোন আবার অফ করে রাখি। আজ শুক্রবার আজ তানুসার বিয়ে। সামনে থেকে ওকে অন্যের ঘরের বউ হয়ে যেতে দেখতে পারবো না বিধায় চট্টগ্রাম চলে আসছি।মন কে অনেক বোঝানোর চেস্টা করছি কিন্তু কিছু এ ভাল লাগছে না।ভাবতে ভাবতে দিন পেরিয়ে রাত হয়ে গেলো।ঘুম আসবে না তাই কয় একটা ঘুমের ঔষধ ও খেয়েছি।
সকাল বেলা ঘুম থেকে ওঠে ভাল ই লাগছে।এখন খারাপ লাগার পরিমান টা কম।কারন এখন তানুসা অন্য কারো বউ।আমি একটা অপদার্থ ছাড়া আর কিছু না।নিজের ভালবাসা নিজে টিকিয়ে রাখতে পারলাম না।এখন আর টা ভেবে লাভ কি।ফোন টা অন করতেই দেখি তানুসার নাম্বার থেকে ১০৩টা মিসকলড।মিস কল এলার্ট চালু করা।আম্মুর আছে গাদাখানিক।আঙ্কেলের আছে কিছু। কিছুক্ষনের মধ্যে এ আম্মুর ফোন।আমি কোথায় এখন ই যেন ফরিদপুর ব্যাক করি। তাই করলাম।একটু ঝারি ও খেলাম। কি আর করবো বাসায় আসলাম।কিন্তু আসার খানিক বাদে যা শুনলাম তা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। আম্মু বলল তানুসার বিয়ে হয় নাই।কথাতা শুনে খুব আনন্দ লাগতেছে।কিন্তু মাথায় একটা খটকা বাজলো না হওয়ার কাহিনি কি। কিছু না বুঝে ফ্রেশ হয়ে আম্মুকে বললাম খুব ক্ষুধা লাগছে।
খাবার দিতে,,খাইতে বসলাম ।খাবার মুখে দিতে যাবো তখন কলিং বেল টা বাজলো।আম্মু দরজা খোলার সাথে জা দেখলাম আমি পুরাই শক। তানুসা আমার বাসায় আসছে। আর সব থেকে বড়ো কথা তানুসা কে দেখে আমি চোখ ফেরাতে পারলাম না। কারন বেসম্ভব সুন্দর লাগছিল।কমলা রং এর একটা থ্রি পিছ ,হাল্কা কমলা রং এর লিপিস্টিক ঠোটে, ছোট হালকা একাটা কমলা রং টিপ আর চুল গুলো ছাড়া।আমি খাওয়া বাদ দিয়ে তাকিয়ে আছি।কিন্তু ও আমার দিকে মাত্র একবার এ তাকাইছে। তাও আবার রাগি লুক নিয়া মনে আমকে খেয়ে ই ফেলবে।আম্মুর পিছন পিছন চলে গেল। মনে হয় আমকে চিনেই না। খুব ক্ষুধা লাগছে তাই হাল্কা খেয়ে রুমে গেলাম। অনেক ক্লান্ত। হঠাৎ মহারাণী দেখি আমার রুমে আগমন। রুমে ঢুকে দরজা নক করে দিলো।আমি তো ভয় এ পাইয়া গেলাম।
>এই এই কি করছেন।দরজা কেন নক করলেন। (আমি)
-(তানুসা)।
কোন উত্তর নাই আমার বিছানায় আসলো।আমি তো অবাক। একটা বালিস নিলো। আর আমাকে ইচ্ছা মতো মারলো। এবার দেখলাম কান্না ও করতেছে।বাহ বাহ কি সুন্দর মাইরা ও জিতে কাইন্দাও। মনে মনে বললাম। আমাকে একটু উত্তম মধ্যম দিয়া রুম থেকে বের হইয়া গেলো। কিন্তু আমার সাথে একটা কথা ও বলল ও না। আমি শুয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম শরীর খুব ক্লান্ত থাকার কারনে। ঘুম থেকে কেন জানি এমনিতেই খুব ভাল লাগছে।আম্মু আম্মু বলে ডাকলাম কিন্তু কোন সাড়া পেলাম না।ড্রইং রুমে টিভির আওয়ায পেয়ে গেলাম দেখলাম তানুসা সিরিয়াল দেখছে। আমি নিজে থেকেই বললাম আম্মু কোথায়।কিন্তু কোন উওর নেই।আবার ও বললাম আম্মু কোথায়।কোন উওর নেই। তারপর রুমে সব জায়গায় খুজলাম কিন্তু কোথাও পেলাম না।অবশেষে এ টিভির সামনে বসলাম। সিরিয়াল চলতেছে তাই ই দেখতেছি। গাঁ জ্বলতেছে তবুও দেখতেছি।এবার তানুসাকে বললাম,,,,,
> আমার সাথে কথা বলতে কি সমস্যা??
-.(কোন উওর নাই)।
>কি হলো।
>কথা বলিস না কেন।(একটু ঝারি দিয়ে। আগে কখনও এভাবে ঝারি দেই নাই আর তুই করেও বলে ফেললাম।)
আমার দিক কেমনভাবে তাকালো তারপর উঠে এসে আমার টিশার্ট এর কলার টান দিয়ে বলল
-যখন আমাকে একা রেখে চলে গেছিলি তখন আমার কথা মনে ছিলো। (মেয়ে মানুষ কিছু পারুক আর না পারুক চোখের পানি অটোমেটিক ছাইরা দিতে একটুও লেট হয় না।) কাইন্দা কাইন্দা আরও অনেক কিছু বলল। তারপর বেলকোনিতে চইলা গেলো। একটু পর আমিও গেলাম দেখলাম চোখের জলে বন্যা বানিয়া ফেলছে।পিছন থেকে যেয়ে জরিয়ে ধরলাম। কিছু বল্ল না।শুধু কান্না করতেছে। আমি সরি বললাম কিন্তু হচ্ছে না। আমি সামনে থেকে আপানার বিয়ে সহ্য করতে পারবো না তাই চট্টগ্রাম চলে গেছিলাম। কিন্তু চুপ,,,এইবার কান ধইরা সরি বললাম। কিছুক্ষন পর তানুসা আমকে জরিয়ে ধরলো।
-অনেক ভালবাসি তোকে।(তানুসা)
>আমিও।(একটা জিনিস দেখছেন মাইয়া মানুষ কান্না দ্বারা সব কিছু সমাধান করতে পারে)।
-এখন থেকে তুমি করে বলবা।
>না। আপনি করে বলবো।
-কিহহহ??
>না কিছু না।
-কি বল্লা??
>তুমি করে বলবো।আচ্ছা আগে বলো তোমার বিয়ে ভাঙ্গল কেমনে।
-ভাঙ্গে নাই। ভাঙ্গাইয়া দিছে।
>মানে কি??
-যেই ছেলের সাথে বিয়ের কথা সেই ছেলে তার গার্লফ্রেন্ড নিয়া পালাইছে।
>হা হা হা হা হা হা হা।
-(ধাপ করে একটা হাপ্পর দিল মুখে।)
>(গালে হাত চুপ)
-যদি বিয়ে হয়ে যেতো তাহলে এতক্ষনে আমার লাশ পাইতা। (তানুসার মুখ চাপ দিয়ে ধরলাম।)
>এরকম কথা আর কখনও বলবা না। (এরপর জরিয়ে ধরে আলতো করে একটা কপালে চুমু দিলাম।)
>আচ্ছা চলো অনেক কাজ।
-কি কাজ???
>তোমার বাবাকে আমাদের বিষয়ে বলতে হবে।
-তা আর বলতে হবে না।তা অনেক আগেই হয়ে গেছে।
>কেমনে কি???
-আমার শাশুড়ি মা আব্বুর সাথে সব কথা পাঁকা কর ফেলেছে।
>(আকাশ থেকে পরলাম)
আমার আম্মু তো থ্রিজি আর বউ তো ফোরজি, আমিই টুজি রইয়া গেলাম। “অবশেষে বয়সের বড় মাইয়া আমার বউ। শাসন একটু বেশী করলেও ভালোবাসা কিন্তু দ্বিগুণ।