মনের শহরের গুন্ডি

মনের শহরের গুন্ডি

সবে মাত্র পড়াশুনা শেষ করে চাকরি তে ঢুকলাম। আম্মু তাতেই বিয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। বিয়ে কথাটা শুনলেই আমার জ্বর আসে। ভেবেছিলাম কখনো বিয়েই করবো না। কিন্তু আম্মুর বক্তব্য বাসায় একা থাকে, ভালো লাগে না, সব কাজ একা করতে হয়। আর সেই জন্য আমাকে বিয়ে নামক শূলে চড়ানোর ফন্দি এটেছে মনে মনে।
হঠাৎ আম্মু কোথা হতে এসে আমাকে একটা খাম দিল আর বলল,

-মেয়েটির নাম রূপা। ছবি দেখে নাও, ঈদের ৩য় দিন বিয়ে ঠিক করে আসলাম।
-কিন্তু, আম্মু…
-চুপ, একদম কথা বলবে না। বললে আমি বাসা ছেড়ে চলে যাবো।।যথা সময়ে বিয়ে টা হচ্ছে।আম্মু রান্নাঘরে গেল। এমন সময় হঠাৎ ফোনে একটি কল আসলো
-আসসালামুআলাইকুম
-অলাইকুমআসসালাম, আচ্ছা আপনি কি বলেন তো?আপনি আসেন নি কেন আজ?(মেয়ের কন্ঠ)
-মানে? আমি মানুষ। আর আপনি কাকে কল করেছেন? নাম্বার ঠিক আছে? কে আপনি?
-আমি আপনার হবু বউ, রূপা

কলিজাটা ছ্যাত করে উঠল। কল কেটে দিলাম। মনে মনে ভাবছি আমার সুখের সিঙ্গেল লাইফ আমার চোখের সামনে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। আর আটা, ময়দা, সবজির বস্তা মাথায় করে বাসায় নিয়ে আসার সময় ঘনিয়ে আসছে!! টেনশনে বাসার পাশের দোকান থেকে সিগারেট নিয়ে আরামে টানছি। হঠাৎ রূপা এস এম এস দিলো- ভদ্র ছেলের মত সিগারেট ফেলায় দেন, নইলে মাথার সবগুলো চুল ছিঁড়ে ফেলবো। হাই ভোল্টেজের শ্বক খেলাম। সিগারেট ফেলায় দিয়ে খুঁজছি, কেউ দেখছে নাতো? কিন্তু কেউ নেই। এই মেয়ে টাকে আমার বড্ড অসয্য লাগছে। বিয়ের আগেই আমার লাইফে ঢুকে যাচ্ছে। কিন্তু আমি তো নিরুপায়, চুপচাপ বাসায় আসলাম। পরদিন সকালে রেডি জয়ে অফিসে যাচ্ছি ৩ চাকা গাড়িতে। এমন সময় ৫/৬ জন ছেলে এসে আমাকে এক গাড়িতে করে চোখ বেঁধে তুলে নিয়ে যাচ্ছে । বুঝতে বাকি নেই আমি কিডন্যাপড!! গাড়ি থামল, চোখ খুলে দিয়ে সবাই চলে গেল। চোখ খুলতেই আমি তো অবাক! এত্ত সুন্দর মেয়ে আমি আজ পর্যন্ত দেখিনি । আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে

-কে আপনি? আমি কোথায়? (ভয়ে ভয়ে বললাম)
-আমি আপনার মনের শহরের গুন্ডি হতে চাই, দিবেন সুযোগ?
-আমি পুলিশে কল দিচ্ছি, আপনার গুন্ডিগিরি বার করছি দাড়ান
-খবরদার, ফোনে হাত দিলে মাথার সব চুল ছিড়ে নিবো কিন্তু!
-মানে? আপনি কি রূপা?
-বাহ, আমার বর এত্ত ভালবাসে আমাকে? কিভাবে চিনে নিলে গো?

-এগুলা কি রূপা? আমি অফিসে যাচ্ছিলাম, আপনার জন্য আফিস মিস হয়ে গেল আমার। আর এখনো আমাদের বিয়ে হয়নি। বর বলবেন না। আমাকে বললেই তো আসতাম, এভাবে নিয়ে আসার কি দরকার ছিল?
-হ্যাঁ, মহারাজ কে কাল থেকে ৩৩ বার কল দিয়েছি, ১২ টা টেক্সট করেছি, আমি জানি আসবেন না। তাই এই আয়োজন! মেজাজ একদম ৪২০। শুধু ভাবছি বাসায় গিয়েই বিয়ে ক্যান্সেল করে দিবো।

-আরে আসেন না, এদিকে একটু বসি বলতে বলতে আমার হাত টেনে নিয়ে গেল সে। জীবনে প্রথম কোন মেয়ে আমাকে স্পর্শ করলো
-আপনার কি আক্কেল ঞ্জান নেই?(আমি).
-কেন? শোনেন, বিয়ে টা আমাদের হুট করেই ঠিক হয়েছে, তাই একটু খুচিয়ে দেখতে ইচ্ছে হলো আমার হবু বর টা কেমন!
-কিন্তু কেউ তো কাউ কে চিনি না জানিও না
-আপনি রাকিব হাসান, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। মাষ্টার্স শেষ করে সবে একটা চাকুরি তে ঢুকেছেন।কখনো প্রেম করেন নি। মেয়েদের থেকে সব সময়। ৫০০কি.মি. দূরে থাকতেন

-থামেন থামেন, আপনি তো দেখছি আমার পুরো বায়োডাটা খুলে বসেছেন। এবার আপনার সম্পর্কে বলেন,
-আমি রূপা। বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। আপনার সাথে বিয়ে হবে। ব্যাস এইটাই আমার বায়ো!
-আপনার বায়ো দিয়ে আমার কোন কাজ নেই, আপনি বিয়ে বিয়ে করছেন কেন এত?
-সব মেয়েদের বিয়ের ইচ্ছা থাকে।

ইচ্ছা থাকে এমন একজনের ঘরে যেতে যে তার সব ভালবাসা উজার করে দিয়ে বুকে আগলে রাখবে! যখন প্রথম আপনাকে দেখি, সেদিন বুঝতে পেরেছিলাম আপনার যে বউ হবে তার মত ভাগ্যবতী আর কেউ হবে না। তাই সেই ভাগ্যবতী হওয়ার সুযোগ হাত ছাড়া করতে চাইনি?

-মানে? আপনি আগে থেকেই চিনেন আমাকে?
-হুম,এখন এগলান থাক। চলেন কিছু খেয়ে নেই

বলতেই আবার আমার হাত টেনে নিয়ে গেল। এমন গুন্ডি মেয়ে আমি বাপের জন্মেও দেখিনি। একটা জিনিষ বুঝলাম, ওর চোখের দিকে তাকালে আমি হারিয়ে যাচ্ছি, আবার ও যখন হাত টেনে নিয়ে যায়, প্রচুর সুখ লাগে, ইচ্ছে করে সারাজীবন যেন ও হাত ধরেই থাকে। না না, ছি ছি, কি ভাবছি আমি? নাহ এগলাম ভাবা যাবে না
যাই হোক বাসায় আসলাম। আম্মুকে কিছু বলিনি। বলা যাবে না। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গতর ছেড়ে দিলাম। এমন সময় গুন্ডি টা কল দিলো

-বাসায় গেছো
-হুম, ফ্রেশ হলাম
-শোনো, এখন থেকে আমি যখনা কল দিবো রিসিভ করবা। নইলে কিন্তু আবার উঠায় নিয়ে আসবো
-আমি যদি অফিসে বিজি থাকি তবুও?
-হ্যাঁ। আর একবার রিসিভ করতে দেরি করলে সোজা বাসায় যাবো, তারপর তোমার মাথার সবগুলো চুল ছিড়বো
-না না কে বললো আমি রিসিভ করবো না? আমি রিসিভ করবো তো ১০০ বার করবো
-এখন ভদ্র বরের মত আমাকে i love u বলো
-মানে?
-বলাবা না আমি তোমার মাথার…
-i love u, i love u বউ
-i love u too বর। আচ্ছা পরে কথা বলবো
-ওকে

যতক্ষণ কথা বলি কেন জানি মনের মধ্যে অন্যরকম কিছু একটা ফিল করি। খুব ভালো লাগে। ভাবলাম নিচে গিয়ে একটা সিগারেট খাই। কিন্তু গুন্ডি খবর পেয়ে গেলে মাথায় যে চুল থাকবে না! না সিগারোট প্লান বাদ। নিচে থেকে একটু আড্ডা দিয়ে আসি। রাস্তায় যেতে না যেতেই এক ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে এসে বলছে

-আপনি কি রাকিব ভাই?
-হুম। কেন?
-ভাই আপনি রূপা কে বিয়ে করিয়েন না প্লিজ। আমি ওকে খুব ভালবাসি। আমি একমাত্র ছেলে যার সাথে ওর সম্পর্ক ছিল।

কথা টা শেষ না হতেই আবার দৌড় দিল ছেলেটা মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পরলো। রূপা কে কল দিয়ে ডাকলাম দেখা করতে। আমি রওনা দিলাম। গিয়ে তো আমি অবাক! রূপা আমার আগেই এসে বসে আছে। ওর দিকে তাকাতেই আমার মনের মধ্যে শীতল হাওয়া বয়ে গেল। শাড়ি পরে এসেছিল। ঠিক বেহেশতের হুর দের মত লাগছিলো। আমাকে দেখে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে বললো, আসেন মহারাজ। আমি না একদম গলে গেলাম! কিন্তু না, আমার তো গলে যাওয়া যাবে না। ওকে সোজা গিয়ে পুরো ব্যাপারটা বললাম। ও বললো–

-আরে আমি যখন সবে মাত্র ফার্ষ্ট ইয়ারে পরি, তখন ওর সাথে কথা হয়। ১মাস না যেতেই বুঝতে পারি ও অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করে সর্বনাশ করেছে। আর কখনো কথা বলিনি ওর সাথে।

-চুপ, একদম চুপ। কোন কথা বলবা না তুমি। তোমার মত মেয়েকে বিয়ে করতে পাবো না আমি। যার কিনা অন্য কারো সাথে সম্পর্ক ছিল

-(কাঁদো কাঁদো গলায়) প্লিজ বর। এমন করো না। ওটা তো অনেক বছর আগের ঘটনা। তারপর আমি কোন ছেলের সাথে কথা বলিনি। আমার সব ভালবাসা আমি আমার বরের জন্য তুলে রেখেছিলাম। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝনা।
বলতে না বলতেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো। আমার মেজাজ আরো গরম হয়ে গেল। চটিয়ে একটা থাপ্পর দিয়ে চলে আসলাম।এসে আম্মু কে বললাম অন্য মেয়ে দেখতে।।আমার রাগ দেখে আম্মুও কিছু বলেনি তখন। কাল থেকে রোজা শুরু।

কেন জানি ক্ষুধা লাগছে না। কিছু খেতেই ইচ্ছা করছে না । এক কথায় ভাল লাগছিল না। যে মানুষ আমি এক বেলা না খেলে মরে যাই আজ ২দিন না খেয়ে রোজা। আফিসেও যাচ্ছি না । আম্মু সারাদিন বকাবকি করে কিন্তু কিছুই যেন কানে ঢোকে না । গুন্ডি টাকে খুব মিস করছিলাম। কিন্তু ২দিন ও কল দিলো না কেন? আমি নাহয় রাগ করছি তাই বলে কল দিবে না? ইফতারের পর নিচে দোকানে সিগারেট কিনলাম। রাস্তায় টানতে শুরু করলাম। কারন গুন্ডি টা সিগারেট সহ্য করতে পারে না! সিগারেট টানছি আর ফোনের দিকে দেখছি, কল বা এস এম এস আসছে কিনা। ১-২-৩ এভাবে ৫টা সিগারেট শেষ করলাম। কিন্তু কোন কিচ্ছু আসলো না। আমি আর সহ্য করতে পারছি না। বাসায় গিয়ে দরজা বন্ধ করে ঐযে রুমে ঢুকছি একবারে ৩দিন পর দরজা খুললাম। খুলতেই আম্মু কাঁদতে কাঁদতে দৌড় দিয়ে রুমে আসলো

-আব্বু, কি হইছে আব্বু তোমার? এই ৩দিন দরজা খোল নি কেন? তুমি জানো আমি কিভাবে ছিলাম এ কয়দিন। এত্ত ডেকেছি, দরজা ধাক্কা দিয়েছি শেষ না করতেই আম্মু কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম।

-আম্মু সরি আম্মু। আমি আর কখনো এমন করবো না
-তোমার আব্বু মারা যাওয়ার পর থেকে কত কষ্টে, কত যত্নে তোমাকে বড় করেছি। আর সেই তুমি এতো বড় কষ্ট দিলে?কি হয়েছে? অতঃপর সব কিছু আম্মু কে বললাম। আম্মু বললো

-দেখো, সব মানুষের জীবনে ভালো মন্দো সব থাকে। ওর অতীত দেখে এরকম না করলেও পারতে। আর ওর মতো করে কেউ তোমাকে ভালবাসতে পারবে না বাবা। তবে তুমি যদি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাও, আমার আপত্তি নেই। তোমার সুখই আমার সুখ।

আম্মুর কাছে রূপার বাসার ঠিকানা নিয়ে সোজা ওদের বাসায় গেলাম। বিশাল বড় দালান! এত্ত বড়ো বাড়ি ওর? আমার সব ধারনা পাল্টে গেল। বুঝলাম বড় লোকের মেয়ে তো, টাকার গরম প্রচুর, তাই একটা থাপ্পর খেয়ে সব প্রেম পালায় গোছে। তবুও ওর সামনে না গেলেই নয়। সব কিছুর জবাব আজ নিয়েই ছাড়বো। দরজা নক করতেই খুলে দিলো একজন তারপর আর একজন আমাকে স্যার স্যার বলে সোজা এক রুমে নিয়ে গেল। দেখি গুন্ডি টা বসে টম এ্যান্ড জেরী দেখছে আর হাসছে! আমি কষ্টে মারা যাচ্ছি আর ও কিনা আনন্দে আছে? সোজা আবারো একটা থাপ্পর দিলাম। ও একদম চুপ হয়ে বসে আছে।

-একয়দিন তো খুব বর বউ করছিলি এখন সেই ভালবাসা কৈ গেল হ্যাঁ? তোদের মত বড় লোকেরা কখনো কাউকে ভালবাসতে জানে না বুঝলি?

-মুখ সামলায় কথা বলবা। কি মনে করো নিজেকে? একটা মেয়ে তার সব কিছু উজার করে তোমাকে ভালবাসলো আর তার প্রতিদান দিলা অবিশ্বাস এ?
-ভালবাসা? ভালবাসিস তো কল দিসনি কেন হ্যাঁ? একবারো কি মনে পরে নি আমার কথা?
-পরেছিল। কিন্তু কল দেইনি। সব সময় আমি কেন আগে কল দিবো? বর হিসেবে তোমার কোন দ্বায়িত্ব নাই? তুমি জানো এই ৫ দিন আমি না খেয়ে আছি?

-বলো কি রূপা? এগুলা কি পাগলামি? আজান দিচ্ছে চলো ইফতার করবে।
-না, আগে আমার কিছু কথা মানতে হবে?
-ওকে বলো
-সিগারেট বাদ
-হুম বাদ
-বাইরে গেলে ৩০ মি. পর পর কল দিতে হবে
-পাগল নাকি?
-মাথার চুল কিন্তু থাকবে না
-হ্যাঁ হ্যাঁ দিবো তো। ২০মি. পর পর কল দিবো। ভালবাসি রূপা
-এটা সারাদিন বলবা

-তারপর?
-প্রতিদিন আমাকে ফুচকা, আইসক্রিম খাওয়াতে হবে?
-প্রতিদিন?এটা কিভাবে সম্ভব বলো
-চুল কিন্তু…
-আরে কে বলছে খাওয়াবো না? প্রতি ঘন্টায় খাওয়াবো তো।
-প্রতি সপ্তাহে ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে
-আচ্ছা যাবো। তোমার সব কথা রাখবো। শুধু একটা কথা রাখবে?
-কি?

-চুল ছেড়ার ভয় টা দেখিও না প্লিজ
-এই কথা আর কখনো বললে চুল তো থাকবে না, সাথে মাথাটা ও থাকবে না। আমার কিন্তু খুব খিদে লাগছে
-ওহ্, মনেই নেই। চলো তারাতারি
-হাঁটতে পারবো না, গায়ে জোড় নেই। কোলে নেও আমাকে
-কি? বাসায় সবাই আছে তোমার। এতগুলো কাজের লোক। সবাই কি ভাববে?

-যার যা ভাবার ভাবুক। নিবে কিনা বলো? আমি আমার বরের কোলে চরবো কি আর করার? গুন্ডি টাকে কোলে করে নিয়ে গেলাম ইফতার করতে তারপর আমাদের বিয়ে হলো কি না, কি ঘটেছিল তারপর জানতে বেশি করে লাইক, কমেন্ট আর শেয়ার করুন

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত