প্রতিদিনের মত আজও মিঠু মামার চায়ের টংয়ে বসে আছি! আপন মনে চা খাচ্ছি! হঠাৎ”ওমা গো ” শব্দ কানে আসলো। আওয়াজটা পাশের বাসা থেকে আসলো। পাশের বাসা থেকে এই শব্দ আশা করা যায় না। কারন কণ্ঠটা একটা মেয়ের আর এই বাসাতে কোন মেয়ের বাস নয়।
এটা এলাকার প্রভাব শালী এক লোকের বাসা!স্ত্রী সন্তান আলাদা থাকে! স্বাভাবিক ভাবেই বোঝা যাচ্ছে কোন মেয়ে থাকতেই পারে না। কৌতূহল হলো। অনেক ক্ষন পর লক্ষ করলাম একটা মেয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে। হাটতে খুব কষ্ট হচ্ছে সেটা তার হাটা দেখেই বোঝা যাচ্ছে। গালে একটা দাতের দাগও লক্ষ করলাম। সাদা পায়জামাতে লাল দাগটা খুব ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে। চোখের কোনে একবিন্দু জলও। বোঝলাম মেয়েটা এই লাইনে নতুন। মেয়েটা রেল লাইনের রাস্তা ধরে হাটছে। মেয়েটার দিকে তাকাই আছে। কি করবে মেয়েটা? যা করে করুন তাতে আমার কি? তবে মেয়েটা যে এই কাজ করে তাকে দেখে এটা মনে হচ্ছে না। এখন কাউকেই বোঝা যায় না। তাই এই বিষয়ে মাথা ঘামিয়ে লাভ নেই। কানে ট্রেনের হুইলসেল। তার মানে ট্রেন খুব কাছেই?
মেয়েটা কোন দিকে না তাকিয়ে লাইনের উপর দিয়ে হাটছে। তার মানে কোন দিক চিন্তা না করেই মেয়েটার দিকে দৌড়ালাম। ট্রেন খুব কাছেই তবুও মেয়েটা নামছে না! আরে আরে মেয়েটা কি পাগল হয়ে গেছে নাকি? অনেক ডাকলাম শুনলো না তার কাজ সে করছে। মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে লাইন থেকে ফেলে দিলাম। মেয়েটার কাছে যেতেই দেখি কপাল দিয়ে রক্ত ঝরছে। রেল লাইনের পাশে পড়ে থাকা পাথরের জন্যই। “আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন নাকি? ” হাফাতে হাফাতে বললাম। মেয়েটা কোন কথার উওর না দিয়ে চুপ করে আছে। কপালের কাটা থেকে রক্ত বেয়েই পড়ছে। পকেটের রুমাল দিয়ে কপালটা বেধে দিলাম।
-সমস্যা কি হুমম? এই মাএ তো ট্রেনের নিচে কাটা পড়তেন। এখনো মেয়েটা চুপ করে আছে! চোখের পানি গাল বেয়ে বেয়ে পড়ছে।
-আরে বাবা কিছু তো বলেন।
মেয়েটা কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেমন টা নীলু তাকিয়ে থাকতো। নাকের ডগায় বিন্দু বিন্দু ঘাম জমা হয়েছে, নীলুরও হতো এমনটা। না না আমি তো নীলুর কথা মনে করতে চাই না! সেটা আমার জীবনে এক কালো অধ্যায়। আরে পিছনে কাকে খুজছে এখানে তো কেউ নেই।
-কাকে খুজছেন?
-রকি শন্ত কণ্ঠে বললো।
-রকি? এটা আবার কে?
-রকি!
-আরে বোঝলাম রকি কিন্তু তাকে চিনেন?
-না তো!
-তাইলে খুজছেন কেন?
-ওই তো বললো লোকটা বাসা থেকে বের হয়ে এর উপর দিয়ে হাটলেই আমাকে খেতে দিবে। ছোট বাচ্চার মত ঠোট বাকিয়েই কথা গুলো বললো। সামান্য খাবারের জন্য?
-আচ্ছা আপনার নাম কি?
-তন্নি।
-তাই না? মেয়েটার আচরন একদম বাচ্চাদের মত! মনে হয়ে গ্রামের মেয়ে। কোন এক ধোকায় পড়ে এসেছে শহরে।
-আচ্ছা ওই লোকটার সাথে কি আমার বিয়ে হয়েছে? আমার দিকে তাকিয়ে কথাটা বললো তন্নি।
-কই না তো কেন?
-তাইলে আমার সাথে ঐটা কে করলো? মেয়েটার কথা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি! এর উওর আমি জানি না আচ্চা আপনি কি তন্নির উওরটা দিতে পারবেন?
-আপনি এখানে কেন?
-আমি না তিন দিন কিছু খাই নি! ও তো বললো চলো খেতে দিবো! কি নিঃস্বপাপ চাহনি। যেমন টা ছিলো নীলুর।
-আমার না সারা শরীর ব্যথা করছে।
-আচ্ছা চলেন আমার বাসায় আমার মায়ের কাছে।
-ওখানে গেলে কি খেতে দিবে?
-হুমমমম দিবে আমার মা অনেক ভালো।
-জানেন আমার না মা বাবা কেউ নেই! দুই তিন দিন না খেয়ে থাকি। একটা ছেলের কাছে টাকা চাইলাম ও বললো আমার সাথে চলো টাকা দিবো খেতেও দিবো। তাই তো এখানে আসলাম।
-আপনি কি তাকে চিনেন?
-না তো!
-তাইলে আসলেন কেন?
-খেতে দিবে বলে।
-কিন্তু ওই লোকটা খেতে দিলো না!
খুব খিদা পাইছে কিছু খেতে দিবেন? আমি ওর মুখেন দিকে তাকিয়ে আছি! নিবার্ক আমি ওর কথায়। ওকে একটা হোটেলে নিয়ে গেলাম। গ্রামের মেয়ে শহরের কিছুই চিনে না। আমি ওকে পেট পুরে খেতে বললাম। কোন কথা না বলেই খেতে লাগলো। হঠাৎ খাওয়া বন্ধ করে দিলো।
-কি হলো খাচ্ছেন না কেন?
-কোন কথা বলেই পায়জামার পকেটে হাত দিলো।
আমার দিকে ৭০ টাকা এগিয়ে দিলো। আমার কাছে এর থেকে বেশি নেই। ওই বাসা থেকে বের হতে লোকটা আমাকে দিয়ে বললো কিছু খেয়ে নিস! আমার কাছে এর থেকে বেশি নেই। চলেন আর খাবো না! এই টাকা দিয়ে অনেক দিন চলতে হবে!
-আরে তুমি খাও যত ইচ্চা খাও।
আমিই দিবো টাকা। বোঝলাম খুব খুশি হলো আবার খাওয়া শুরু করলো। মাএ ৭০ টাকা? ভাবতেই অবাক লাগছে! কত টা নিচে নামতে পেড়েছি নিজের যৌবনের আগুন নিভাতে। প্লেটের খাবার শেষ! আমার দিকে মায়াবী নজরে তাকিয়ে আছে। বোঝলাম আরও খাবে। ওয়েটারকে বললাম দিতে। মেয়েটা তৃপ্তি সহকারে খাচ্ছে। খাওয়া শেষে আমাকে বললো,তিন দিন পর খেলাম। আপনিও কি ওইটা করবেন?
-কোন টা?
-ওই যে লোকটা করলো!
-না তো তোমার এটা কেন মনে হলো?
-আপনি তো আমাকে খেতে দিলেন তাই ভাবলাম!
-আচ্চা তুমি কি এই কাজ সব সময় করো?
– না তো!
-আপনি কি করবেন? মেয়েটার দিকে তাকিয়ে আছি! কি উওর দিবো আমি?
-ভয় নেই, তুমি এখন কোথায় যাবে?
-জানি না তো
-মানে?তোমান বাসা কই?
-নওগা তে
-\-\কিন্তু এটা তো ঢাকা থাকবে কই?
-আমি তো জানি না, খেতে দিবে বলে নিয়ে আসলো আমাকে।
-আমার সাথে যাবে?
-খেতে দিলে যাবো।
নিয়ে আসলাম। একদাম বাচ্চাদের মত! নানান আবদারে মাতিয়ে রাখে আমাকে। মা দেশের বাড়িতে থাকে! আমি আর মা সহ পুরো পরিবার একটা বাসা ভাড়া নিয়েই থাকি সামান্য চাকরি করি! সারাদিন সবাইকে মাতিয়ে রাখে। যতই দিন যাচ্ছে ততই পাগলি বাড়ছে। ভুলে গেছে তার অতিত! বিয়েটাও দিলো পারিবারিক ভাবে। একদিন শুনলাম আমি নাকি বাবা হবো! খুশিতে মন নেচে উঠলো, তন্নিকে কোলে করে নিয়ে পুরো বাসা ঘুড়েছিলাম! লজ্জায় মুখ লুকিয়ে ছিলো আমার বুকে। ভালোবেসে ফেলেছি অনেক। সময়ের সাথে সাথে ওর পুরো ১৮ বছর ভুলিয়ে দিয়েছি। আমার মনের বিয়োগ ব্যথাটা দুর করে দিয়েছে তন্নি! নীলু মারা যাওয়ার পর বুকের বাম পাশটা শূন্য হয়ে পড়ে ছিলো। তন্নিকে পাওয়ার পর বুকের শূন্যতা পুরোন হয়ে গেছে।