ভুটকি ভোটকার প্রেম

ভুটকি ভোটকার প্রেম

দশম শ্রেণী তে পড়া অবস্থায় আশিক কে তার পরিবার থেকে এক কোচিং এ ভর্তি করে দেয়!! আশিক খুবই গরিব পরিবারের সন্তান। অবস্থা খুব একটা ভালো না। তাই সবার সাথে খুব একটা মিশে না। নিজের মতই থাকে। কিন্তু যারা আশিকের সাথে একবার মিশতে পারে তাদের জীবনে দুঃখ বলে কিছু থাকে না, কারন তাদের সব কষ্ট ভুলিয়ে দিত আশিক। ছেলেটা যখন চটপটে মেজাজে থাকে তখন যেন সবারই মন ভাল থাকে। আর ওর একটু মন খারাপ থাকলে তো কথাই নাই, সবাই তখন মন মড়া!!

তো কোচিংয়ে তার আম্মু অনেক জোড় করে ভর্তি করে দেয়। যেদিন প্রথম কোচিংয়ে পা দিলো ঢুকেই তো তা মাথাই খারাপ। সে ভাবছে এটা কোচিং না কোন একটা পার্ক যেখানে খোলামেলা ভাবে রোমাঞ্চ হচ্ছে? ওর খুব রাগ হয়েছিল সেদিনই। সেদিন ক্লাসে ঢুকেই সে একদম মাথা নিচু করে বসে ছিল। কারো সাথে কোন কথাই বলতো না!! এভাবে সে যাওয়া আসা করতো আর মাথা নিচু করে ক্লাস করতো। কথা বলতো শুধু স্যারদের সাথে আর সহপাঠি বন্ধুদের সাথে। মেয়েদের সাথে কথা বলার তো প্রশ্নই উঠে না । কারন মেয়েদের প্রতি তার কেমন যানি একটা রাগ ছিল। আর এই কোচিংয়ে সব থেকে বেশি অসহ্য লাগতো খাদিজাকে। পুরা ক্লাস তড়াং বড়াং করে বেরাইতো আর চিল্লায় চিল্লায় পুরা ক্লাস মাথায় তুলতো। আশিক শুধু এটাই ভাবে যে এত্ত এনার্জি ও পায় কৈ? তো এক সপ্তাহ পর মেয়ে গুলা কথা বলতে আসে আশিকের সাথে

-কেমন আছো
-হুম ভালো, আপনারা?
-এ মা, আপনি করে বলছো কেন? আমরা না সবাই বন্ধু?
-আচ্ছা ঠিক আছে, তুমি করে বলবো
-আমাদের সাথে কথা বলো না, আড্ডা দেও না, কারন কি?
-আসলে আমি আপনাদের আড্ডার মধ্যে বাঁধা দিতে চাইনা।

হঠাৎ স্যার ঢুকে পরে। ক্লাস শুরু। সবাই বই নেয়ার ছল এ, কলম নেয়ার ছল এ আশিক এর সাথে কথা বলতে চাইতো। কিন্তু ও যে দরকারি কথা ছাড়া বলত না। আশিকের বন্ধু নুরাগ তাদের কোচিংয়ে ভর্তি হয়ে যায়। বলতে গেলে আশিকের বেষ্টু। যেদিন নুরাগ প্রথম কোচিংয়ে আসলো আশিক তো অবাক, কারন নুরাগ সব মেয়েদের চিনে! মজার ব্যাপার হল ২/১ জন ছাড়া সবারই বাসা নুরাগদের বাসার প্রায় কাছাকাছি!! তো একদিন কোচিংয়ে নুরাগ সবার সাথে গল্প করছে এমন সময় খাদিজা বলছে…

-কিরে তোর বন্ধু বোবা নাকি? কথাই বলে না
-বোবা না রে। আর ও যদি কথা বলা শুরু করে আর কাউকে বলতেই হবে না কথা। কারন ও এত্ত মজার মানুষ যে সবার মন একাই ভাল করে দিতে পারে
-তো আমাদের সাথে কথা বলে না কেন?
-তোরা যে মেয়ে, তাই।

কিন্তু সবারই আশিকের সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করতো। আর ভাবতো কি করে বন্ধুত্ব করা যায়! পরদিন ক্লাসে এসেই খাদিজা আশিক কে বলছে,

-আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড হবা?(খাদিজা)
-কে আমি?(আশিক)
-হুম তুমি
-আচ্ছা ঠিক আছে, বেষ্ট ফ্রেন্ড আমরা।

খাদিজা তো মহা খুশি, কারন সে যা চেয়েছিল তাই হলো। আর আশিক পুরাই অবাক। কারন যাকে সব থেকে বেশি অপছন্দ করে সেই তার বেষ্টু হয়ে গেল। খাদিজা সম্ভ্রান্ত পরিবারের অনেক আদুরে মেয়ে। যা চায় তা না পেলে ওর মাথা ঠিক থাকে না!

পরদিন থেকে আশিক সবার সাথে মিশতে লাগলো। পুরো ক্লাস সে মাতিয়ে রাখল। সবাই তো বুঝতেই পারছিলো না যে তারা স্বপ্ন দেখছে না সত্যি? কারন এ কোন আশিক?? আস্তে আস্তে শারমিন, নুসরাত, মিষ্টি সবার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেল। কিন্তু খাদিজার সাথে বেশি। ২৬ এ মার্চ এ সবাই ষ্টেডিয়াম এ কুচকাওয়াজ দেখতে যায়। আশিক ও যায়। সবার সাথে গল্প করলো অনেক মজা করে বাসায় আসলে। দিন দিন যেন তারা বন্ধু থেকে ভাই বোন হয়ে গেল। আর সবাই কেন যানি আশিক কেই বেশি ভালবাসতো । দেখতে দেখতে রোজা চলে আসলো। আশিক তো রোজা রাখতেই পারে না, আর খাদিজা সব রোজা না করে ছাড়ে না। খাদিজা প্রতিদিন রোজা রাখতো আর আশিক রোজা তো রাখতোই না বরং খাদিজার সামনে বেশি করে খাইতো। আর খাদিজা তো রেগে গিয়ে ফুসফুস করতো। শেষে বলেই দিলো

-কাল থেকে রোজা না রাখলে তোর সাথে কখনো কথা বলবো না
-আচ্ছা

পরদিন তো আশিক ঠিক এ রোজা রেখে আসে কোচিংয়ে। খাদিজার খুশি কে দেখে? সেদিন আশিক একটা জিনিষ লক্ষ্য করলো যে খাদিজার চেহারায় একটা লাবণ্যময়ী, পরিপূর্ণ সৌন্দর্যে ভরা এক মায়াবী ভাব রয়েছে যা এতদিন ও খেয়াল করেই নাই। করবে বা কিভাবে, কারন ও তো তাকাইতোই না। যাই হোক পরদিন আবার আশিক রোজা রাখেনি। খাদিজা জানতো আজ ও রাখতে পারবে না কারন ও ক্ষুধা সহ্য করতে পারেনা একদম। খাদিজা আশিকের জন্য পেয়ারা নিয়ে আসে। পেয়ারা টা আশিক কে তখনি খেতে বলে। আশিক সরে গিয়ে খেতে চাইলো কিন্তু খাদিজা তার সামনেই খাওয়াবে। বাধ্য বেচারা আশিক ওর সামনেই খাওয়া শুরু করে দিল। যখন অর্ধেক খাওয়া শেষ খাদিজা এক টান দিয়ে পেয়ারা টা নিয়ে নিল আর বললো

-থাক আর খাইতে হবে না
-এটা কেমন কথা? আর ঐ অর্ধেক ব্যাগ এ রাখছিস ক্যান?
-আমি খাবো তাই
-তুই না রোজা?
-হুম, ইফতার এর সময় খাবো
-তাই বলে আমার খাওয়া বাকি অর্ধেক?
-চুপ কর তো? যা তুই।

এভাবেই পুরো সময় টা দুষ্টিমি করে ঝগড়া করে কাটায় দিতো ওরা। দেখতে দেখতে রোজা শেষ। যেদিন কোচিংয়ে শেষ দিন, কারন কাল থেকে কোচিং অফ। ঈদের ছুটি। সবাই মিলে ঠিক করলো ঈদের দিন সবাই ঘুরতে যাবে। ঈদের দিন খাদিজা নুসরাত সবাই মিষ্টির বাসায় আসবে। তারপর সবাই বের হবে।

আশিক নামাজ শেষ করে সব বন্ধুদের বললো নদীর পারে যেতে, আর আশিক একটু পর আসবে। মিষ্টিদের বাসায় গিয়ে তো আশিক পুরাই অবাক!! কারন আজ খাদিজা একটি লাল রঙের জামা পড়ে আসছে, আর সেই জামায় তাকে হূরের থেকে কম মনে হচ্ছে না। আশিক তো রীতিমত সহজ বাংলায় বলতে গেলে ক্রাশ খেয়ে গেল খাদিজাকে দেখে! মিষ্টি আশিকের জন্য নাস্তা নিয়ে আসল, আর খাদিজা তাকে খাওয়ায় দিচ্ছে! এই প্রথম আশিক কিছু একটা ফিল করল খাদিজার প্রতি!

ওরা ৩ জন বেরিয়ে পরল নদীর পারে ঘুরতে যাবে। সহযলভ্য যান অটো রিক্সা করে যাচ্ছে। আশিক ঠিক খাদিজার সামনে। সে তার নজর যেন সরাতেই পারছে না! খাদিজা যেন বুঝতেই পারছে না কি হলো আজ আশিকের, কিন্তু মিষ্টি অনেক কিছুই বুঝতে পেরেছিল। নদীর পারে গিয়ে তারা পাশাপাশি হাঁটছে। সবাই যখন জিজ্ঞেস করে আশিক কে কে রে মেয়েটা? আশিক সবাই কে সোজা বলছে আমার গার্ল ফ্রেন্ড!! কারন আজ কেন জানি ও কেমন হয়ে গেছে, হারাতে চাইছে না খাদিজা কে। তারপর সবাই অনেক ঘুরল, মজা করল। যখন খাদিজা চলে গেল মনের অজান্তেই আশিক কেঁদে দিল! আশিকের বন্ধু রাজু বলল-

-দেখ তুই কি জানিস যে ওকে তুই ভালবাসিস?
-আমারো তাই মনে হচ্ছে
-তো আজকেই সব বলবি ওকে
-ওর ফোন নেই রে। পরশু কোচিং খুলবে পরশু বলব
-হুম দেরি করিস না

রাতে আশিক নুরাগ কে ফোন করে সব বলে দিল। নুরাগ পুরো ব্যাপার টা হাতে নিল। কোচিংয়ে সেদিন সবার আগে গিয়ে বসে আছে কখন আসবে খাদিজা । কিছুক্ষণ পর সবাই আসলো একসাথে। নুরাগ খাদিজা কে বলল-

-খাদিজা, আশিক তোকে খুব ভালবাসে
-কোন আশিক?
-এখন আবার ঢং করিস?(নুসরাত, পাশ থেকে)
-তোরা কি আমাদের আশিকের কথা বলছিস?(খাদিজা)
-হুম

সবাই তো মহা খুশি। কারন সবাই আশিক কে খুবই পছন্দ করে। কিন্তু কথা টা শুনে খাদিজা একদম চুপ হয়ে আছে ওর মুখ থেকে কথাই বের হচ্ছে না! স্যার আসলো, কিন্তু আজ আশিক এখনো নাই একটু পর আশিক আসলো। রুমে যেতে ওর ভয় লাগছে কারন কি যে হবে।

-স্যার আসবো?
-বাইরে থাক হারামি, বাপে বাইরে থাকার জন্য টাকা দিচ্ছে না?
-স্যার আপনার জন্য পান আনছি!
-দে দে দে। আগে বলবি না রে হারামি।

এভাবে স্যার কে পান খাওয়ায় ভোলায় দেয় আশিক। একদম পিছনের সিটে গিয়ে বসল। দেখল সবাই হাসছে কিন্তু খাদিজা মন মড়া। সে বুঝে গেল যে হয়ত আজ ফ্রেন্ডশিপ টাই নষ্ট হয়ে যাবে! স্যার চলে গেল। সাথে সাথে খাদিজা পাকড়াও করল আশিক কে

-যা শুনলাম সত্যি?
-কি?
-এই যে, তুই আমাকে ভালবাসিস।
-(মাথা নামিয়ে) হুম বাসি। অনেক বাসি
-আমি তোকে অনেক বিশ্বাস করতাম।

তার মর্জাদা এভাবে দিলি? আমি আমার বাবা মা কে কষ্ট দিতে পারবো না।
পুরো ক্লাস স্তব্ধ। ৪ ঘন্টা নিস্তব্ধ কেটে গেল। তারপর যে যার বাসায়। আশিক বুঝলো সে অনেক বোকামি করছে। এত কষ্ট হচ্ছে আজ তার যা বলার মত না। সে বুঝতে পারছে না কি করবে। বাসায় এসে ঘুমের অসুধ খেয়ে ঘুমায়, একদম দুপুরে উঠে। তারপর ফ্রেশ হয়ে একটু বাইরে মাঠে যায়, আজ আর কোচিংয়ে যাবে না। কোন মুখে যাবে সে? কিন্তু সে যে থাকতে পারছে না।

খাদিজা কে এক নজর না দেখে সে যেন মরেই যাচ্ছিল। তাই সে পরের দিন কোচিংয়ে গেল। আশিক কে দেখে খাদিজার চেহারায় এক খুশির ঝলকানি দেখা গেল। কিন্তু সে কিছুই বললো না। আর আশিক বা কোন মুখে কথা বলবে? সে চলে গেল স্যার আসার আগেই। সবাই অবাক হয়ে গেল। যে আশিক চলে গেল? খাদিজা মুখ লুকায় কাঁদছে, কাউকে বুঝতে দিচ্ছে না । কিন্তু সবাই ঠিক এ বুঝতে পেরেছে। পরদিন আবার আশিক আসলো, বসলো আবার চলে যাওয়ার জন্যে বের হবে এমন সময় খাদিজা আশিকের কলার দরে টান মেরে থাপ্পর মেরে দিল কয়েকটা! আশিক তো বুঝতেই পারল না কিছু

-যাচ্ছিস কোথায়?
-বাসায়
-তো আসলি কেন?
-তোকে দেখতে
-তো এখন যাচ্ছিস কেন?
-দেখা শেষ তাই। আর তাছাড়া কোন মুখে কথা বলবো?
-যেই মুখ আছে সেই মুখ দিয়ে। জানিস আমার আজ রেজাল্ট দিছে!
-কৈ দেখি

-না , তুই প্রেম করতে বল আমি রাজি, কিন্তু রেজাল্ট দেখতে চাস না আশিক সব বুঝে গেল। স্যার আসল। ক্লাস শেষে চলে গেল। খাদিজা এসে বলছে
-দেখ আমিও তোকে ছাড়া থাকতে পারি না রে। কিন্তু আমাদের প্রেম হবে একদম আলাদা । আমরা কোথাও বাইরে দেখা করতে পাবো না। ফোনে কথা বলতে পাবো না কারন আমার ফোন নেই, আর কাউকে বলা যাবে না

-ওকে। লাভ ইউ খাদিজা
-লাভ ইউ ঠু

পরদিন আশিক চিঠি নিয়ে যায় খাদিজার জন্য। আবার খাদিজাও তাই। দুইজনে চিঠি খুললো অবাক করা ব্যাপার দুইজনে চিঠির শেষে গালি দিছে। আশিক লিখছে -“টাল, মোটি, ভুটকি, হারামি, পাশান, হারামজাদি, মুটকি” এরকম ৩৩ টা গালি! আবার খাদিজাও লিখে এনেছিলো- “কুত্তা, শয়তান, ভোটকা, তেড়িয়া, ঝগড়ু ” এমন ২৭ টা! তারা কেউ কিন্তু মোটা না। তবুই সব সময় শয়তানি করে ভোটকা ভুটকি বলতো। একদিন খাদিজা তার আম্মুর নাম্বার আশিক কে দেয়, আর বলে আমরা শুধু এস এম এস এ কথা বলবো, যখন এস এম এস দিবো রিপ্লেই দিবি , আগে থেকে কিছু দিবি না।

পরদিন যখন আশিক কোচিংয়ে গেল সবার শেষের সিট টাতে বসলো। আর খাদিজা ও সামনের সিট ছেড়ে শেষের সিটে চলে আসে! তারপর পুরো সময়টা দুষ্টামি করেই কাটিয়ে দিতো। খাদিজা দেয়ালের সিমেন্ট ভেঙে আশিকের গায়ে ঢিল দিতো । আর আশিক তো রাগে ফুস ফুস করতো। আশিক কে সারাদিন জালাইতো। এতে খাদিজা খুব মজা পেত!! এরপর থেকে সারা রাত ওদের কথা হতো এস এম এস এ। ধীরে ধীরে ওদের প্রেম গাঢ় হতে লাগলো! আশিক খুবই লাজুক ছিল। খাদিজার খুব ইচ্ছে করতো আশিক কে জরায় ধরতে কিন্তু আশিকের দাঁড়ায় হবে না! তাই পরদিন আশিক কে তারাতারি কোচিংয়ে ডাকলো । আশিক যাওয়ার সাথে সাথেই খাদিজা ওকে জড়ায় ধরলো!
রাত এ আশিক কে খাদিজা এস এম এস দিলো

-জানিস কি হইছে?
-কি!
-আমি প্রগনেন্ট!
-কি!!(চমকে গিয়ে) মানে কি?
-কিসের মানে! আমার বাচ্চার বাপ তুই
-কিভাবে? আমি কখন কি করলাম? কি বলছিস তুই?
-ঠিক এ বলছি। আজ করলি না? আমাকে প্রেগন্যান্ট করে দিলি তুই
-আমি তো শুধু জড়ায় ধরছি!

-হুম, ওই জন্যই তো। এখন আমাদের বাচ্চা আইস্ক্রিম খাবে!!
-বুঝতে পারছি। হারামী একটা। আইস্ক্রিম খাবি বললেই হইতো, ভয় পাইয়ে দিলি
-আমি কি আমার স্বামীর সাথে মজাও করবো না!
-হুম আমার কলিজা বের করে মজা কর। দাড়া আইস্ক্রিম নিয়ে যাচ্ছি
-এত রাতে? না থাক
-সমস্যা নেই, ২০ মি. এর মধ্যে আসছি
-সাথে কিন্তু চিপস
-ওক্কে ভুটকি

আশিক চিপস আর আইসক্রিম নিয়ে খাদিজার বাসার সামনে গিয়ে এস এম এস দিল। খাদিজা চুপি চুপি এসে নিয়ে গেল। লজ্জায় যেন লাল হয়ে গেছিলো সে। এভাবে দুষ্টামির মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল তাদের দিন শীতের সময় ৬টায় খাদিজার প্রাইভেট ছিল। আশিক তাই ৫.৩০ এ সেই ঠান্ডায় সাইকেল নিয়ে গিয়ে অপেক্ষা করতো সকাল টা খাদিজা কে দেখে শুরু করতে। তারপর তারা রিক্সা করে ঘুরে বেরাইতো। কখনো হেঁটে। এভাবে খুব রোমান্টিক ভাবে, সারাক্ষণ খুনসুটির মধ্যে ভোটকা ভুটকির প্রেম চলতে থাকে। এস এস সি পরীক্ষার পর আশিক শহরে চলে যায় পড়তে। আসার আগে খাদিজা বলল-

-ওখানে তো অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়ে পাবি, আমাকে ভুলবি না তো?।
-ধুর পাগলি,আমার ভুটকির থেকে কেউ সুন্দর আছে কি?
-মরে যাবো আমি

বলতেই জড়ায় ধরলো ২জনে। আর কি কান্না।কিছুক্ষণ পর চলে গেল আশিক। ২জন হয়তো খুব কেঁদেছিল তখন। কিন্তু কেঁদে আর কি হবে? যা হওয়ার তা তো হবেই। আশিক শহরে কলেজে ভর্তি হলো। আর খাদিজা গ্রামেই। সারাদিন ২জন এ এস এম এস এ কথা বলতো। একদিন আশিকের আম্মু আশিকের ব্যাগ গুছাতে গিয়ে তার ব্যাগ এ অনেক গুলো চিঠি আর ছবি দেখে ফেলে। আশিকের আম্মু চাইতো তার খালাতো বোন এর মেয়ের সাথে তার ছেলের বিয়ে দিবে। তাই ব্যাপার টা মেনে নিতে পারেনি। যখন আশিক বাসায় আসল

-চিঠি, ছবি গুলো কার? (দেখিয়ে দিয়ে)
-আম্মু ওর নাম রুশা
-পড়ালেখা করার জন্য এত কষ্ট করছি আমরা আর তুমি এগলান করে বেরাচ্ছো? আগে জানলে এগলান দেখার আগেই বিষ খেয়ে নিতাম
-আম্মু…
-চুপ, তোমার যাতে কষ্ট না হয় তার জন্য তোমার সাথে শহরে এসে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকছি। তোমার একটা বোন আছে, সব ভুলে এ কাজ টা করতে পারলা? যাও আমার সামন থেকে আশিক চলে গেল। খাদিজা কে সব বলল। অতঃপর-

-আশিক
-হুম
-আমাকে ভুলে যা
-থাপ্পর খাবি। এধরনের কথা কখনো বলবি না
-দেখ তোর আম্মু চায় না আশিক…
-আরে ভুটকি, আমার একটা চাকরি গেলে পাশাপাশি তুইও কিছু করতে পারলে আমাদের মেনে নিবে
-তাই
-হুম পাগলি
-লাভ ইউ
-লাভ ইউ ঠু

ভালবাসা কে কি আটকে রাখা যায়? এখন পর্যন্ত সব ঠিক এ ছিল। কে জানত যে তাদের সম্পর্কে বাধা আরো হাজারটা এসে দাঁড়া হবে? খাদিজার এলাকার ছেলেরা ভালো ছিল না। তারা কেউ চাইতো না যে খাদিজা ভাল থাকুক কখনো। খাদিজা কারো সাথে কথা বললে বা দেখা করলে সব কথা বলে দিত আশিকের কাছে। খাদিজা খুব সাদাসিধা মেয়ে। কেউ বন্ধু হতে চাইলে না করতো না। খুব ঘুরতে পছন্দ করতো তাই কেউ ঘুরতে চাইলে না করতো না। কিন্তু কখনো এটা ভাবতো না যে কার সাথে কথা বলা যাবে বা কার সাথে ঘুরতে যাবে এগলান নিয়া ভাবতো না।

বয়সে বড় হয়ে গেলেও মনের দিক থেকে সে ছোট্ট একটা মেয়ে হয়েই থাকতো!!আশিক যখন শুনতো তখন খুব রাগ করতো। আশিক অনেক বকা দিতো কিন্তু তবুও খাদিজার ভিতর সেন্স আনতে পারেনি । ভাবতো সব হয়তো ঠিক হয়ে যাবে! কিন্তু কিচ্ছু ঠিক হয়নি। খাদিজা যেমন ছিল অমন এ থেকে গেল। আর সবাই আশিকের মনে বিষ ঢুকায় দিতো, সাথে তার আম্মু তো আছেই। আশিকের সব কিছু কেন যানি অসহ্য লাগতে শুরু হলো। আর সহ্য করতে না পেরে একদিন আশিক খাদিজার ফোনে কল দিলো…

-খাদিজা
-বল
-আমি ভেবে দেখলাম, আমাদের আর সম্ভব না এভাবে
-মানে কি আশিক
-আজকের পর থেকে তুই তোর মত আর আমি আমার মত। ভাল থাকিস
-কি বলছিস আশিক? কারন টা কি? তোর আম্মু আবার কিছু বলছে? দেখ আমি অপেক্ষায় থাকব, আর তো কয়টি দিন

-তার আর দরকার নেই। আমি তোর সাথে থাকতে চাই না।
-(কেঁদে কেঁদে) কেন? আমি দেখতে খারাপ জন্য? ভাল কাউকে পাইছিস না?
-ভাল কাউকে তো পাইছিস তুই, এত বলার পরেও যখন তোকে ঠিক করতে পারলাম না, তো বাদ দে। আমি ফোন রাখলাম

-শোন শোন
-বল

-আমি কথা বলি, ঘুরতে যাই তাই বলে এটা নয় যে আমি তোকে ভালবাসি না, এটাও নয় যে অন্য কারো কাছে গেছি আমি। আমি তোকেই ভালবাসি আশিক। আমি কারো সাথে কথা বলবো না আজ থেকে। প্লিজ একটা সুযোগ দে, ছেড়ে যাসনা প্লিজ। আমি থাকতে পারবো না রে । কে তোকে ভোটকা বলে ডাকবে বল?

-হুহ
-লাউ ইউ আশিক। যাসনা প্লিজ(কেঁদে কেঁদে)
-লাভ ইউ ঠু রে পাগলি। একটু বড় হ না । আমার বউ কে নিয়ে কেউ বাজে কথা বলবো আমি কিভাবে সহ্য করবো বল?

-আর হবেনা , এইযে কান ধরলাম
-হইছে কান ছাড়, অনেক রাত হইলো যা ঘুমা।
-ঘুমাবো, কিন্তু আমার ডিনার টা দিবি না?
-ভুটকি টা। উমমমমমমমমমমমমমমমমম্মাহ্
-লাভ ইউ ভোটকা
-লাভ ইউ ভুটকি

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত