-এত সিগারেট খাও কেন তুমি!!
-তুমি কিভাবে জানলে!!!(আমি)
-জানতে হয়… দেখতে পাই…
-তুমি কে… একটু তো বল…
-এত তাড়া কিসের!!! তোমার কলেজেই তো পড়ি,, খুঁজে নাও… কোনো তাড়া নেই..
আমি সাধারণত খুব বেছে বেছে, ভেবে চিন্তে, বন্ধু করি ফেসবুকে.. কিন্তু এই একটা মেয়ের বেলায়, সব ভাবনা চিন্তা কোথায় যেন হারিয়ে গেল.. তার পাঠানো ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট, একসেপ্ট করে নিলাম…আর তার জন্য আমার চোখের ঘুম এখন ওঠার অবস্থা..এটা যে একটা মেয়ে, তা তার প্রোফাইলের ডিটেলসে আছে,,আরো একটা তথ্য পাওয়া যায় সে আমারই কলেজে পড়ে… ব্যস,,, এটুকুই….আর কোনো তথ্য পাওয়া যায় না তার প্রোফাইল থেকে.. না আছে তার কোন ছবি,, না দেওয়া তার নাম… তার প্রোফাইল খোলা, রবীন্দ্রনাথের লেখা একটা সুন্দর গান দিয়ে, “ওগো দুঃখ-জাগানিয়া , তোমায় গান শোনাবো” আর এই লাইনটাই যেন, আমাকে বেশি আকৃষ্ট করে.. অনেক রকম profile দেখেছি,, কিন্তু রবীন্দ্রনাথের গানের লাইন এর প্রোফাইল,, প্রথম দেখেছি, এই মেয়েটার.. কি হলো তারপর জানিনা,, একসেপ্ট করে নিলাম.. মেয়েটার পেছনে পড়ে থাকার কোনো কারণ নেই.. তবুও যেন মেয়েটা, ধীরে ধীরে আমার চোখের সামনে রহস্যময়ী হয়ে উঠছে.. যত দিন যাচ্ছে,
তার রহস্য যেন আরও বেশি ঘনীভূত হচ্ছে.. আর সেই রহস্য, সমাধান করার ভূত যেন আমার মাথায় চেপে বসেছে.. সে আমার সম্পর্কে, খুঁটিনাটি বিবরণ দিতে পারে.. কিন্তু মেয়েটাকে চিনে উঠতে পারছিনা… কে এই মেয়ে…. তাকে খোঁজার জন্য ক্লাসের প্রত্যেকটা মেয়ের পেছনে আমি পড়ে থাকি… সব সময় মনে হয় এই সেই মেয়ে,, পরক্ষণেই আবার মনে হয়, না এটা না, এটা ঐ মেয়ে… আসলে এই মেয়ে, যে কে,, বুঝতে পারি না… সর্বদা দোটানায় থাকি.. কবে যে এই রহস্যময়ী রহস্য উদ্ঘাটন হবে, কে জানে!! আমি যে আর ধৈর্য ধরতে পারছি না.. এই রহস্যময়ীকে দেখার জন্য.. প্রথম প্রথম রাগ হত,, কি এই মেয়েদের পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছি!! এই একটা মেয়েকে খোঁজার জন্য.. একসময় মেয়েটাকে ব্লক করে দিতে চেয়েছিলাম… কিন্তু আজকাল, মেয়েটার এই যত্ন, হাসি-ঠাট্টা, ইয়ার্কি, সবকিছুকে, কেমন যেন একটা ভালো লাগে… মেয়েটা সম্পর্কে কৌতূহলী হয়ে পড়ি.. স্বপ্নে, যেন মেয়েটাকে দেখতে পাই.. নিজের মতো করেই গড়ে নিয়েছি আমার রহস্যময়ীকে…
-কি ব্যাপার!!! (রহস্যময়ী)
-কিসের কি ব্যাপার!!!(আমি)
-মেয়েদের পেছনে পেছনে ঘুরঘুর করছ যে…
-(মনে মনে হাসি ও পেয়ে যায়,, মেয়েটা সেটাও খেয়াল করেছে) কি করবো!!!
তোমার জন্যই তো সব… দিনের পর দিন, রহস্য খালি তৈরিই করে যাচ্ছ.. রহস্য সমাধান করার কোনো নামগন্ধ নেই.. কিছু তো বল, নিজের সম্পর্কে.. যাতে তোমাকে খুঁজতে পারি…
-বুঝতে পারছি, তোমার দ্বারা আর আমাকে খোঁজা হবে না…
-তুমি আমাকে যে কাজ দিয়েছো,, সেটা মরুভূমিতে জল খোঁজার ন্যয়…
- খুব হাসি পাচ্ছে, না!!!
-আচ্ছা,, বেশ ঠিক আছে… একটা hint আমি দিতে পারি..
-আচ্ছা, বেশ তাই দাও…
-আমি তোমার ডিপার্টমেন্টের নই…
-কোন ডিপার্টমেন্টের তাহলে!!!
-আর না,, আজকের মত এখানেই সমাপ্ত…
এই মেয়েটাকে নিয়ে, তো সত্যিই পারা যায় না… নিজের ডিপার্টমেন্টের মেয়েদের মধ্যে, একজনকে খুঁজে বার করা যদিও বা সহজ.. কিন্তু এখনতো অতল সমুদ্রে পতিত হলাম… পুরো কলেজের, এতগুলো মেয়ের মধ্যে, আমি ওই একজনকে খুঁজে বার করব কিভাবে!!! ভগবান,, আমাকে রক্ষা করো.. আর ওই মেয়েটার মাথায় একটু সুমতি দাও..
এখন অবস্থা আমার আরো খারাপ.. কলেজের সব মেয়েকেই সন্দেহজনক মনে হয়.. তার সাথে কথা বললেও তাকে চেনা যায় না.. কি যে করি… মেয়েটা আমাকে পাগল করে ছাড়বে…এমন শয়তানের হাড্ডি,, যে, আজ হাসতে হাসতে মেসেজ করেছে আমাকে,, দেখে মাথা গরম হয়ে যায়,, পুরো ইঁদুর নাচান, নাচানো করাচ্ছে আমাকে দিয়ে!! আবার বলে,
-রাগ করেছো নাকি!!!(রহস্যময়ী)
- আরে এভাবে শুধু তাকালেই হয়!! কিছু তো বলো..
-কি বলবো!!! আমাকে পাগল করার মতলবেই তো তুমি আছো… তাহলে যা করতে ইচ্ছে হয় কর… আমার তো আর কিছু বলার থাকতে পারে না…
-হুমম..খুব রাগ হয়েছে,, মনে হচ্ছে….
-না… আমার রাগ হতে পারে নাকি!!! আমার রাগ হয় নাকি!!! আমার রাগ হয়নি… একটুও হয়নি…
-বেশ… আমি যতদূর বুঝতে পাচ্ছি,, তোমার দ্বারা আমাকে আর জীবনে কখনো খুঁজে বার করা হবে না.. আমার সাথে এতক্ষণ কথা বললে, তবুও আমাকে চিনতে পারলে না!! কি আর চিনলে আমাকে!!! আর হবেনা,, তোমার দ্বারা আমাকে খুঁজে বার করা…
-আমি তোমাকে কথা দিলাম,, তোমাকে আমি খুঁজে বার করবই…
-বেশ.. চেষ্টা কর.. যদি পারো…
-আচ্ছা,, তোমার নামের প্রথম অক্ষরটা বল…নাম বলতে হবে না,, না হয়…
-আচ্ছা,, তাহলে আর একটা হিন্ট চাই!!! ঠিক আছে,,এতো চেষ্টা করে যাচ্ছো.. একটা হিন্ট দেওয়াই যায়… আমার নামের প্রথম অক্ষর ‘প’…
-অনেক ধন্যবাদ তোমাকে….
যাইহোক,, এতদিন পর, মেয়েটার সম্বন্ধে আরও কিছু তথ্য পাওয়া গেল… কমপক্ষে,ওর নামের প্রথম অক্ষর তো, ওকে খুঁজতে অনেকটাই সাহায্য করবে.. অজানা, অচেনা কাউকে গিয়ে জিজ্ঞেস করা যায় নাকি!! যে তার, পছন্দের রং, তুমি কি খেতে ভালবাসো, তোমার প্রিয় ফুল ,, আর তারাই বা বলবে কেন,, এত কিছু… আর রহস্যময়ীর সম্বন্ধে,, আমি শুধু এটুকুই জানি যে, তার প্রিয় রং গোলাপি আর সাদা,, খেতে ভালবাসি চকলেট,, আর প্রিয় ফুল গোলাপ, সাদা গোলাপ… এখন এই ‘প’ অক্ষর দিয়ে কিছুমাত্র তো তার সামনে পৌঁছানো যাবে,, এই অনেক… অল্প কয়েকজনের মধ্যে, একজনকে চিনতে পারা তবুও সোজা,, অনেকের মধ্যে একজনকে খোঁজা, পাগল হয়ে যাবার সমান…
কলেজে এসে, বন্ধু-বান্ধব, মোটামুটি সবাইকে কাজে লাগিয়ে, এই ‘প’ অক্ষর দিয়ে কত জন মেয়ে আছে,, তা জানার জন্য উঠে পড়ে লাগলাম.. আর তাতে, আমাদের হাতে যে তালিকা আসলো,, তা দেখে,, আমার মাথায় যেন বজ্রাঘাত হল.. “পর্ণা, পরী, পুনম, পামেলা, পাওলি, প্রযুক্তা, পাপরি, প্রতীক্ষা, পারমিতা, পল্লবী, প্রীতি, প্রণতী” ‘প’ অক্ষরের এতগুলো নামের মেয়ে,, হিসাব করে 500 জন.. এই 500 জনের মাঝখান থেকে, আমি ঐ এক রহস্যময়ীকে, কিভাবে খুঁজে বার করব,, কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা… এই অবস্থা দেখে, আমি যখন চুপ চাপ বসে আছি.. তখনই আমার মোবাইল, বিপ করে উঠলো.. ফেসবুকের নোটিফিকেশন, রহস্যময়ী মেসেজ করেছে,
-(রহস্যময়ী)
-কি হলো.. হাসছো কেন!!!
-তো কি!!!হাল ছেড়ে দিলে নাকি!!!
-কিভাবে খুজবো তোমায়!!! একটি ‘প’ অক্ষর দিয়ে 500 জন মেয়ে এই কলেজে পড়ে… আমার এখন যা অবস্থা দেখছো না,, সবটাই তোমার জন্য.. তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে, পাগল হয়ে গেছি আমি…
-হা হা হা…. খোঁজ… খোঁজ… খুঁজতে থাকো…. এখন বাই… ক্লাস আছে… গেলাম…
এই মেয়েটাকে খুঁজতে খুঁজতে আমার পাগল হওয়ার জোগাড়… কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছি না,, যে কিভাবে এই মেয়েটার হাদিস পাব… যত কাছে যেতে চাইছি, ততই যেন দূরে সরে যাচ্ছি… hint পেয়ে ভাবছি, হয়ত অনেক কাছে এগিয়ে গেলাম,, কিন্তু যখনই সেই হিন্ট থেকে, একটু তথ্য সংগ্রহ করছি,, বুঝতে পারছি,, আমি যেখানে ছিলাম, সেখানেই আছি,, বা হয়তো, আরো দূরে সরে যাচ্ছি,, ওই মেয়েটার থেকে.. আমি ঠিক কতোটা দূরে, ওই মেয়েটার থেকে,, নিজের অবস্থান সম্পর্কে কিছুই আন্দাজ করতে পারছি না.. নাহহ.. একটু কথা বলেই দেখি, মেয়েটা সাথে, যদি আরো কোন hint পাওয়া যায়…
-হাই…
-হ্যালো…(রহস্যময়ী)
-কি কর!!!
-কিছু না..
-কি হল!!
-কিছু না.. ভাবছি..
-কি!!
-কিছু না.. তুমি বল.. হঠাৎ মেসেজ করলে,,তো এখন কি hint লাগবে না কি আবার..
-তুমি না!!! আমার তোমার কথা মনে পড়ছিল তাই মেসেজ করলাম,,আর তুমি ভুল ভাবছ.. এগুলো কিন্তু ঠিক না..
-তাই বুঝি!!! আচ্ছা বেশ…বল..
-কাল তুমি কি রংয়ের dress পরে আসবে কলেজে!!!
-এইতো,, এস বাছা,, পথে এসো….
-না… না… আসলে,, আমি সাদা রংয়ের জামা পরে যাবো তো… তাই ভাবছি, তুমি কি রঙের পরে আসবে…
- বেশ.. আমি হলুদ রংয়ের পড়ে যাব…
-আচ্ছা…
পরের দিন কলেজে এসে, আমার তো মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার অবস্থা..’প’ অক্ষর দিয়ে নামের, কুড়িটা মেয়ে, হলুদ রঙের জামা পরে এসেছে.. এদের মধ্যে থেকে, সেই রহস্যময়ীকে খুঁজে বার করতে গেলে তো আমার হয়ে গেল.. কিভাবে খুজবো!!! মেসেজ করলাম তাকে…
-কুড়ি জন হলুদ পড়ে এসেছে…
- হ্যা তো….(রহস্যময়ী)
-তোমাকে কি করে খুজে পাব!! এত জনের মধ্যে…
-একটু আগেই তো, দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আমার সাথে এত কথা বললে তবুও চিনতে পারলে না আমাকে!! বুঝতেই পারছি,
তুমি আমাকে কি চিনেছ… আর কখনো আমাকে চিনতে পারবে কিনা ও,মা… এ বলে কি.. আমি এর সাথে কথা বলেছি.. কিন্তু এখনও পর্যন্ত, আমি পাঁচটা হলুদ রংয়ের জামা পড়া মেয়ের সাথে কথা বলেছি.. এখন পাঁচ জনের মধ্যে তিনি কে!! কি জানি,, বুঝতে পারছি না…. একটা বন্ধু বুদ্ধি দিল, পরের দিনের তার জামার রং জেনে নিতে,, তাহলে ওই পাঁচ জনের মধ্যে, যে ওই রংয়ের জামা পরে আসবে,, সেই আমার রহস্যময়ী.. তার বুদ্ধি মত, জানলাম,,
পরেরদিন সে লাল রংয়ের জামা পরে আসবে… কলেজে এসে দেখি,, সেই পাঁচজনের মধ্যে, তিনজন লাল রংয়ের জামা পরে এসেছে… পরপর কয়েক দিন, তাদের জামার রং জেনেও দেখি,, তারা তিনজন একই রংয়ের জামা পরে আসে… তাদের তিনজনের মধ্যে গলায় গলায় ভাব.. বোঝাই যায় যে, তারা 3 জন খুব ভাল বন্ধু…. তিনজনের নাম হলো পরী, পর্ণা, পুনম… এর মধ্যে থেকে, আমার কোনও ভাবেই পুনমকে সন্দেহ হয় না… কারন মেয়েটা খুব সাদাসিধে, সরল, নমনীয়…ওর দ্বারা এরকম কাজ হবে বলে আমার মনে হয় না..কারণ ওকে আমার খুব শান্ত-শিষ্ট, গুণবিশিষ্ট স্বভাবের মেয়ে বলেই মনে হয়.. ওর দ্বারা, এই ধরনের ফাজলামো হবে বলে আমার মনে হয় না… তাহলে পুনম বাদ.. বাকি থেকে যায়, পর্ণা আর পরী… এরমধ্যে আমার কোথাও যেন মনে হয় মেয়েটা পর্না,, কারণ আমার সাথে কথা বলতে ও বেশ স্বচ্ছন্দ বোধ করে.. এতটা স্বচ্ছন্দ বোধে কথা,,
আমার রহস্যময়ীও তো বলে আমার সাথে… আমি রহস্যময়ীকে জানতে চাইলাম, তার নাম কি পর্না!! মেয়েটা আমাকে বলে, তোমার কি তাই মনে হয়!! তোমার যদি তাই মনে হয়, তাহলে আমি পর্না… অদ্ভুত এই মেয়েটা,, হেঁয়ালি তার লাইফে যেন, আর শেষ হয় না রহস্যময়ীকে আমি পর্না হিসেবেই মেনে নি… কিন্তু যত দিন যেতে থাকে, আমি তার সাথে যত কথা বলতে থাকি,, আমার যেন কেমন একটা লাগে.. কোথাও যেন আমি আমার চেনা রহস্যময়ীকে খুঁজে পাচ্ছিনা.. কেন জানিনা,, মনে হচ্ছে,,এ আমার রহস্যময়ী নয়… খুব অচেনা লাগছে পর্নাকে,, জানিনা.. বুঝতে পারছি না… রহস্যময়ীকে মেসেজ করি,,বলি…
-সত্যি করে বলনা… তোমার নাম কি পর্না!!
-কেন… কি হয়েছে আবার… (রহস্যময়ী)
-কিছুনা.. কিন্তু আমার কেন জানি না মনে হচ্ছে,, তুমি পর্না নও…
-ও এই ব্যাপার!!!
-বলনা তুমি কে.. তাহলে তুমি কী পর্না নও,, সত্যিই!!
-তোমার যদি তাই মনে হয়,, তাহলে তাই…
তার কথা শুনে আমার কেন জানি না মনে হলো,, সে পর্না নয় আমার মনে হলো, হয়তো সে পরী,, কথা বলতে গিয়ে, নিজেকে অনেক স্বচ্ছন্দ লাগে,, ভালো লাগে,, তার সাথে সময় কাটাতে.. কথা বলতে যে রকম ভালো লাগতো, রহস্যময়ীর সাথে কথা বলতে,, ঠিক সেরকম.. মনে হয়,, এই হয়ত আমার রহস্যময়ী যত দিন যেতে যায়,, আমার ধারণা বদ্ধমূল হয়, পরীই আমার রহস্যময়ী মেয়েটাকে খুঁজে পেতে পেতে, কলেজ জীবন প্রায় শেষ হয়ে এসেছে এরমধ্যে আমার রহস্যময়ীকে, আমি ভালবেসেও ফেলেছি সে যে, রোজ আমার স্বপ্নে এসে,, আমাকে জালায় নাহহ,, আজ পরীকে সব কথা বলতেই হবে,, এরপর হয়তো আর কখনো আমাদের দেখা হবে না.. তাই যা বলার,, যা করার,, আজি করতে হবে.. এরপর যদি আর কোন সুযোগ না পাই… কলেজে আসলাম,, কলেজ শেষে,, আমি আর পরী দেখা করি… পরীকে বলি,,
-তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে…
-হ্যাঁ,, অবশ্যই বলো না(পরী)
-হ্যাঁ মানে,, বলছিলাম যে,,,
-হ্যাঁ,, বল
-হ্যাঁ,, চলো হাটতে হাটতে বলি,,
-বেশ
( সম্মতি পেয়ে হাঁটছি… বলতে চাইছি তো অনেক কথা,, কিন্তু বলতে পারছি না কিছুই.. কিভাবে বলবো.. কিছুই বুঝে উঠতে পারছিনা… যদি না করে দেয়,, বললে.. না..না..কি সব ভাবছি.. না কেন করবে!! কিন্তু বলতেও তো পারছি না.. সব কথা যেন মুখে আটকে যাচ্ছে.. জিভটা সরছে না যেন)
-এবার তো বলো কিছু… হাঁটতে হাঁটতে আমরা কলেজ থেকে বেরিয়ে,, একটা পার্কে এসে গেছি.. পার্কে হাঁটতে হাঁটতে, আপাতত পার্কের শেষে এসে দাঁড়িয়েছি,, আর হাঁটার জায়গা আছে বলে, তো আমার মনে হয় না.. এবার তো বল, কি বলবে (পরী)
-( আমি আবারও কিছু বলতে পারছিনা… কি হচ্ছে কে জানে) তোমার হাতটা একটু দেবে,, আমার হাতের ওপর!!!
-(পরী, নিজের হাত, আমার হাতের ওপর দিয়ে বলে)কি হলো,, মাথা নিচু করলে কেন!!!(পরী)
-আমাদের কলেজ জীবনের প্রায় শেষ,,
তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে তুমি আমার জীবনে এমন এক রহস্যময়ী,, যাকে খুঁজতে খুঁজতে, আমি তার সম্বন্ধে একটা ছবি, নিজের মনে মনে তৈরি করে ফেলেছি যে প্রত্যেক দিন, আমার স্বপ্নে এসে, আমাকে জ্বালায়.. যার সাথে কথা না বলে, আমি থাকতে পারি না যার সাথে, আমার কথা বলতে, সময় কাটাতে, ভীষণ রকমের ভালো লাগে.. তুমি জানতে চাইলে না!! মাথাটা কেন নীচু করলাম তুমি জানো!! ছেলেরা কখন মাথা নিচু করে,, কার সামনে মাথা নিচু করে!!
-কার সামনে!!!
-ছেলেরা শুধু মাত্র তিনটে মহিলার সামনে মাথা নিচু করে,, এক মা,, এক দেবী মা,,
আর আরেক আশা করি বুঝতে পারছ মাথা নিচু করেই ছিলাম,, হঠাৎ করে আমার হাতের মধ্যে এক ফোঁটা জল পড়ে.. উপরে তাকিয়ে দেখি পরীর চোখে জল… পরী কিছু জিজ্ঞেস করতে যাবো,, কিন্তু তার আগেই, সে আমার হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পালিয়ে যায় পরি, সেই যে গেল,, আর ফিরল না… আমাকে সব জায়গায় ব্লক করে দেয়.. phone, message, facebook, কোনভাবে যোগাযোগ করার, কোন ক্ষমতাই রইল না আমার… খুব কষ্ট হয়েছিল,, কেন এরকম করেছিল ও,, কে জানে… সেদিনের পর থেকে আজ 5 বছর হয়ে গেছে.. আজ আমি প্রতিষ্ঠিত,, ভালোই চাকরি করি…যখন আমি নিজেকে, সামলে নিয়ে, স্বাভাবিক জীবনযাপন করছি..তখন আবার পরী, আমাকে ফোন করছে কেন!!! তার ফোন দেখে আমার বুকের ভেতরে এখনো ঝড় বয়ে যাচ্ছে.. যাই হোক,, ফোন তুলি,,সব ভাবনা ঝেড়ে ফেলে…
-hello (আমি)
-কেমন আছো!! (পরী)
-ভালো…
-আমি কেমন আছি, জানতে চাইবে না!!
-প্রয়োজন নেই… তো হঠাৎ এতদিন পর মনে পড়ল.. কি কারন!!!
-মনে পরে… রোজ পরে।।।
পাঁচ বছর আগে, যে ভুল করে ফেলেছি.. সেই ভুলের গ্লানি, আমাকে রোজ তাড়া করে,, থাকতে পারি না.. রোজ ভাবি, ফোন করবো,, কিন্তু করতে ভয় পাই.. কিভাবে তোমার সাথে কথা বলব,,এই ভেবে.. অনেক ভেবে, আর না ফোন করে পারলাম না.. আজ করেই ফেললাম phone..
-পাঁচ বছর আগে তো চলে গিয়েছিল.. হঠাৎ এখন ভুল মনে হচ্ছে কেন!! ঠিক কোনটাকে,, ভুল মনে হচ্ছে তোমার!!!
-পাঁচ বছর আগে, ছেড়ে চলে গিয়েছিলাম,, কারণ না চলে গেলে, হয়তো আমি আটকে যেতাম.. আর ভুল সেটাই হতো.. তোমার জীবনের রহস্যময়ী আমি নই…
-তাহলে কে!!!!
-কে সেটা,, তা আর, তোমার কাছে, বুঝতে বাকি থাকার কথা না…
-তার মানে, পুনম!!!
-এতদিন বলোনি কেনো!!
-কারন হয়ত জানি না থাক কি হবে আর কারণ জেনে!!!
-তাহলে, এখন বলছ কেন!!!
-কারণ তোমার জন্য, কেউ হয়ত এখনো অপেক্ষারত
আর কথা বলার ক্ষমতা নেই আমার… কি বলব,, রহস্যময়ীর রহস্য সমাধান হলো,, কিন্তু তার খোজ পাব কি করে!! যাকে কোনদিনও খুঁজতে চাইনি,, চোখের সামনে ছিল.. কিন্তু অজানাই রয়ে গেল… অথচ তাকেই সব থেকে বেশি জানি… কিন্তু এখন তার খোজ পাব কি করে!!! কোথায় আছে,, কেমন আছে,, কিছুই তো জানিনা.. কতদুরে আছে,, তাও জানিনা.. দীর্ঘ 5 বছর কোন কথা হয়না.. সেই দিনের পর থেকে, “ওগো দুঃখ জাগানিয়া, তোমায় গান শোনাবো” profile টাও ডিলিট হয়ে যায়.. সেই প্রোফাইলও নেই আজ.. ফেসবুকের কথাই মাথায় আসলো তাকে খুঁজে পেতে… পুনম নামে সার্চ করলাম… পুনমকে পেলাম.. আগের মতোই দেখতে আছে,, বলতে গেলে আগের থেকে,, দেখতে, সে অনেক সুন্দর হয়ে উঠেছে.. মেসেজ করলাম তাকে,,
-চিনতে পারছ পুনম!!! কেমন আছো!!!
-হ্যাঁ,, অবশ্যই.. তোমাকে আবার চিনতে পারব না!! ভাল আছি.. তুমি কেমন আছ!!!(পুনম)
-জানো পুনম… তখন কলেজে পড়ি.. “ওগো দুঃখ জাগানিয়া তোমায় গান শোনাবো” বলে একটা প্রোফাইল থেকে, আমার ফোনে, ফেসবুকে, ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট আসে.. আমি তাকে accept করে নিই.. মজার ব্যাপার কি জানো!! সে আমার কলেজেই পড়তো.. সে নিজের নাম আমাকে বলেনি.. আমাকে তাকে খুঁজে বার করবার জন্য বলেছিল… হ্যাঁ, ঠিক খুঁজে বার করতে, আমার অনেকটা বেশি সময় লেগে গেল.. যখন খুঁজে বার করলাম,, সে আমার থেকে বহুদূরে.. ফিরবে কিনা জানিনা… তোমার কি মনে হয়,, সে কি ফিরবে!!!
-তোমার কি মনে হয়!! তার ফেরার ব্যাপারে…
-বুঝতে পারছি না সে যে, আমার ওপর অভিমান করে ওই profile ডিলিট করে দিয়েছে.. তার অভিমান হয়ত, অনেকটা দূরে সরিয়ে দিয়েছে আমাকে
- তোমার যদি মনে হয়,, সে ফিরবে,, সে ঠিক ফিরবে
-তোমার সাথে দেখা করতে চাই
-কেন… কি হয়েছে!!!
-আমি কালই তোমার সাথে দেখা করতে চাই
-বেশ..
-সকাল সাড়ে দশটা কলেজের পাশের পার্ক…
সকালে গিয়ে কিভাবে পুনমের সাথে কথা বলবো,, সেটা ভাবতে ভাবতেই রাতটা কিভাবে কেটে গেল, বুঝতে পারলাম না.. সকাল সকাল, চটপট রেডী হয়ে, সাদা রঙের গোলাপের তোড়া আর চকলেট নিয়ে, পার্কে চলে আসলাম আমি.. সবাই সাধারনত লাল গোলাপ নেয়,, কিন্তু আমার কেন জানি না, মনে হলো, সাদা গোলাপ নেওয়ার কথা,, তাই সাদা গোলাপই নিলাম.. পুনম এখনো এসে পৌঁছায়নি.. পুনম আসছে বুঝতে পারছি… আসমানী রংয়ের একটা চুরিদার পরে… ওর মনে আছে এখনো,, আমার পছন্দের রং আসমানী…ওর রূপ, ওর সামনে আমাকে মাথা নত করাতে বাধ্য করায়…
-তোমাকে দেখতে খুব সুন্দর লাগছে(আমি)
-ধন্যবাদ তোমাকেও হালকা গোলাপি শার্টে খুব সুন্দর লাগছে(পুনম)
-ভালো..
-কি হয়েছে,, বল
-এত ছোটালে কেন,, ঘোড়ালে কেন আমাকে!!!
-মানে!!!
-আমার দুঃখ জাগানিয়া আমার দুঃখ কবে হরণ করবে!!! আমাকে দুঃখ থেকে কবে জাগাবে!!!
-মানে!!!
-আর কত লোকাতে চাইবে!!
-(মাথা নিচু করে)
পুনম মুখ নীচু করে সামনের বেঞ্চে বসে আছে… খুব সুন্দর, মোহময়ী লাগছে আমার রহস্যময়ীকে,, আমি যে আর অপেক্ষা করতে পারছি না অনেক অপেক্ষা করেছি,,এই মেয়েটা আমাকে শুধুই অপেক্ষা করায়..ধুরর..আর না,,আর ভালো লাগছে না বলেই দেই, যা হবার হবে..আর ভাবতে পারছি না আমি মেয়েটার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে, ফুলটা বার করে বললাম,, “””ওগো দুঃখ-জাগানিয়া,, আমি তোমার সাথে বাকিটা জীবন কাটাতে চাই,, তোমার হাতটা ধরার অধিকার পেতে চাই..তুমি কি দেবে আমায় সেই অধিকার!!”””চোখ বন্ধ করে,এক শ্বাসে, বলে তো দিলাম সব এখন তো চোখ খুলতে আর সাহস হচ্ছে না,, মেয়েটা যদি না বলে,, দেয় সেই ভয় যেন এখন পেয়ে বসেছে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্নার আওয়াজ,,চোখ খুলে দেখি, পুনম কাঁদছে কি করব বুঝতে না পেরে,, তার পাশে বসে,, তাকে জড়িয়ে নিলাম নিজের বুকে..
-কাঁদছো কেন পাগলি!!(আমি)
-(বাচ্চার মতো আমার বুকের মধ্যে ঢুকে গিয়ে, ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে,, কিছু বলে না)
-কেন নিজের পরিচয় দিলে না!!! একবার বললে কি অসুবিধা হতো!!! একবার বললে তো, তোমাকে এতটা কষ্ট সহ্য করতে হত না আমাকেও এতটা কষ্ট পেতে হত না,,এত অপেক্ষা করতে হত না..
-তুমি তো আমাকে ভালোবাসো নি কখনও…
-কে বলেছে পাগলি!! আমি শুধু তোমাকেই খুঁজে বেরিয়েছি কি করব,, বুঝতে অনেক সময় লেগে গেল পুনম আমাকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে,, কাঁদতে থাকে.. আমিও তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে, কপালে আলতো করে কিসি দিলাম…বাচ্চার মত জড়িয়ে ধরে রেখেছে মেয়েটা আমাকে…