রাশেদ ড্রাইভার করিমকে বলল, গাড়ি সাইডে রাখো। ড্রাইভার গাড়ি সাইড করতেই নেমে গেল রাশেদ। তারপর বলল, তুমি অফিসে চলে যাও। করিমের মনে একটা প্রশ্ন এলো, স্যার, মিটিংয়ে যাবেন না? কিন্তু প্রশ্ন করল না। সে জানে রাশেদ স্যার তার এসব প্রশ্নের জবাব দিবে না বরং মিষ্টি করে একটা হাসি দিবে। ড্রাইভার গাড়ি নিয়ে চোখের আড়াল হতেই রাস্তার পাশে দোকান থেকে সিগারেট ধরিয়ে টানতে শুরু করল রাশেদ। সে তাকিয়ে আছে রাস্তার ওপাশে একটা সাইনবোর্ডের দিকে। সেখানে সুন্দর করে লেখা ‘ডা. মারজিয়া মৌরী, এমবিবিএস, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ। রোগী দেখার সময় সোম থেকে বুধ, বিকাল চারটা থেকে রাত নয়টা’।
এই নামটা দেখেই গাড়ি থেকে নেমেছিল রাশেদ। এই নামের সাথে অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। এখনো এই নাম কোথাও লেখা দেখলে বুকের মধ্যে মৃদু একটা ব্যথা অনুভূত হয়। রাশেদ আধখাওয়া সিগারেট ফেলে দিয়ে রাস্তা পার হয়ে ওপাশে চলে গেল। রিসিপশনে গিয়ে সানগ্লাসটা খুলতে খুলতে বলল, ডা. মারজিয়া আছেন? রিসিপশনের ছেলেটা বলল, জ্বি স্যার, আছেন। আপনি কি ভিজিট করতে এসেছেন?
-হ্যাঁ।
-তাহলে ওখানে বসুন স্যার। আপনার সিরিয়াল এলে আপনাকে বলব।
স্টিলের বেঞ্চের উপর বসে বাম পায়ের উপর ডান পা রেখে পা নাচাতে থাকল রাশেদ। প্রায় পনেরো মিনিট ধরে বসে আছে সে। এখনো তার ডাক আসেনি। রাশেদের ঠোঁটের কোণে হাসি। তার মতো একজন গুরুত্বপূর্ণ লোকের এতো সময় থাকে না যে ডাক্তারের সিরিয়াল নিয়ে বসে থাকবে। সে সাধারণত তার পিএসকে দিয়ে সিরিয়াল রাখে। রাশেদ সেখানে গিয়েই ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকে যায়। আর সে যেসব ডাক্তারদের দেখায়, তারা রাশেদকে ততটা গুরুত্বই দেয়। আর এখানে সে বসেবসে পা নাচাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর রাশেদের ডাক এলো। রাশেদ উঠে গিয়ে ডাক্তারের চেম্বারের দিকে গেল। এয়ার কন্ডিশনড রুম। একজন দরজা খুলে দিল। রাশেদ দরজার কাছ থেকেই জিজ্ঞেস করল, ভিতরে আসব? রোগীরা সাধারণত এই ভদ্রতাটুকু দেখায় না। তারা থাকে রোগে শোকে কাতর। ভদ্রতা দেখানোর সময় নেই। ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকেই বলে, ডাক্তার, আমার কী হয়েছে, তাড়াতাড়ি বলেন। রাশেদের প্রশ্ন শুনে ডা. মারজিয়া মৌরী না তাকিয়ে বলল, আসুন। টেবিলের কাছাকাছি আসতেই বলল, বসুন। রাশেদ বসল না। সে তাকিয়ে আছে মৌরীর দিকে। আগের থেকে সামান্য মোটা হয়েছে। গায়ের রঙ কিছুটা উজ্জ্বল হয়েছে। আর চোখে উঠেছে মোটা ফ্রেমের চশমা।
মৌরী বলল, কী ব্যাপার দাঁড়িয়ে আছেন কেন? ব কথাটা শেষ করার আগে তাকালো রাশেদের দিকে। মাথায় কাঁচাপাকা চুল। পুরুষ্টু গোঁফ, মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়ি। কিন্তু চেহারাটা আগের মতো না থাকলেও চিনতে কষ্ট হয়নি। আচ্ছা, ওর কণ্ঠটা কি আগের মতোই আছে? বসতে বসতে রাশেদ জিজ্ঞেস করল, কেমন আছো মৌরী? মৌরী উত্তর দিল না। আগের মতোই মোটা কণ্ঠ। কী সুন্দর স্পষ্ট উচ্চারণ! মৌরী চোখমুখ থেকে বিস্ময় ভাব দূর করে বলল, ভালো। পরক্ষণেই সে বলল, কী সমস্যা আপনার বলুন। বলেই প্রেসক্রিপশনের প্যাড আর কলম নিয়ে রেডি হল ওষুধ লেখার জন্য। রাশেদ হেসে বলল, রাখো তো ওসব।
-দেখুন, আপনার সাথে বসে গল্প করার সময় নেই আমার। বাইরে আরও পেশেন্ট বসে আছে। তাদের দেখতে হবে।
-সাধারণত মেডিসিন স্পেশালিস্টের কাছে ইমার্জেন্সি পেশেন্ট আসে না। আজকের জন্য নাহয় এই পেশেন্টটাকেই দেখ।
-আপনার ন্যাকামি বন্ধ করুন এবং আপনি চলে যান।
-প্রায় বিশ বছর পরে দেখা। কিছু কথা না বলে কিভাবে যায়?
-আপনি কি যাবেন নাকি আমি দারোয়ান ডেকে বের করে দিব?
-বাংলা সিনেমা বেশি বেশি দেখছ নাকি? যাও, ডেকে নিয়ে এসো।
তোমার দারোয়ান দেখুক যে তোমার বিশ বছর পুরনো প্রাক্তন প্রেমিক তোমার চেম্বারে বসে আছে। বলেই পকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরালো রাশেদ। মৌরী দ্রুত গতিতে বের হয়ে গেল চেম্বার থেকে। তার ডাক্তারি পেশার এই দীর্ঘ সময়ে এতটা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েনি কখনো। প্রায় দুই মিনিট পর ফিরে এলো সে। ড্রয়ার থেকে একটা সুদর্শন এশট্রে বের করে দিয়ে বলল, এটাতে ছাই ফেলুন। বলেই মৌরী ওয়াশরুমে ঢুকল। ট্যাপ ছাড়ার শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। সিগারেট টানতে থাকল রাশেদ। ঠোঁটের কোণে অস্ফুট হাসি। মুখে পানি দিয়েছে মৌরী। মুখ মুছতে মুছতে বলল সে, এতদিন পর কী মনে করে?
-মনে তো করি সবসময়। কিন্তু খুঁজে পাইনি কখনো।
-আপনি কি এখনো হেঁয়ালি করে কথা বলেন?
-না। শুধু তোমার সাথে বলছি। তাই হেঁয়ালিপনাটা পরিপক্ক হচ্ছে না।
-তাহলে দয়া করে হেঁয়ালি করা বন্ধ করুন।
-বন্ধ করছি। তার আগে দয়া করে তুমি ‘আপনি আপনি’ করে কথা বলাটা বন্ধ কর।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মৌরী। চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে পড়ল সে। ইজিচেয়ারটায় দোল খেতে খেতে তাকিয়ে আছে রাশেদের দিকে। চুলদাড়ি পাকা হলেও চেহারার মধ্যে আগের সেই কোমলতা আছে। আগে ঠোঁট ছিল লাল আর এখন হয়েছে কালো। সিগারেটটা কি খুব বেশি খায়? সিগারেট শেষ করে রাশেদ বলল, ভাবতেই পারিনি তোমাকে সত্যিই আবার পেয়ে যাব।
-খুঁজেছ কখনো?
-হয়তো পাগল প্রেমিকের মতো তোমার বাড়ির সামনে বা কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে থাকিনি। কিন্তু তোমার পরিচিত বন্ধুবান্ধবদের তো জ্বালিয়েছি তোমার কথা জিজ্ঞেস করে।
-তাতে আমার ক্ষতিই হয়েছে। যে বা যারা আমাকে নিয়ে উল্টাপাল্টা কিছু বলার সাহস পেতো না, তারাও আমার দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বলেছে শুধুমাত্র তোমার জন্য। তুমি আমার মায়ের কাছেও ফোন করেছিলে। উল্টাপাল্টা কথা বলেছিলে।
-উল্টাপাল্টা বলিনি। তিনি যা জিজ্ঞেস করেছেন তার উত্তর দিয়েছিলাম।
-তার উত্তর ভদ্রভাবেও দেওয়া যায়।
-মেকি ভদ্রতা দেখানো আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আর তোমাকে হারানোর পর আমি প্রায় পাগল হয়ে গেছিলাম।
-কিন্তু তোমার পাগলামিতে একটা মেয়ের ক্ষতি হতে পারে, সেটা কি ভাবোনি?
-আমি তোমার কোন ক্ষতি করিনি।
-যাক, ও তর্কে যেতে চাই না। চা খাবে?
-হুম। খাওয়া যেতে পারে। তোমার পেশেন্টরা কোথায়?
-বিদায় করে দিয়েছি। কারণ তুমি আগে যেমন পাগল ছিলে, এখনো সেরকমই আছ।
রাশেদ হাসল। বেল টিপে পিয়নকে ডেকে বলল, দুইটা চিনি ছাড়া চা দাও। রাশেদ চোখ বড় করে তাকাল মৌরীর দিকে। জিজ্ঞেস করল, তুমি চিনি ছাড়া চা খাওয়া ধরলে কবে?
-তোমার সাথে রিলেশন থাকাকালীন সময়ে মাঝেমধ্যে খেতাম তা তো জানই।
-হ্যাঁ। তুমি কত সুন্দর করেই না বলতে ‘এই জঘন্য জিনিস তুমি খাও কী করে?’
-আর সেই জঘন্য জিনিসটা আমার অভ্যেস হয়ে গেছে। তুমি কি সিগারেট খাওয়া ছাড়তে চেষ্টা করনি?
-নাহ। তুমি থাকতে আমাকে বুঝিয়ে বলতে। একটা কথা বলেছিলে মনে আছে?
-কী কথা?
-একবার বললাম যে সিগারেট ছেড়ে দিব। তখন তুমি বললে, ‘তুমি যদি আমার জন্য সিগারেট ছাড়তে পারো, তাহলে আমি তোমার জন্য সিগারেটের দুর্গন্ধ সহ্য করতে পারব না কেন? একটা প্রশ্ন মনে পড়ল। তুমি এশট্রে রাখো কেন?
-তোমার জন্য। উত্তর শুনে হা করে আছে রাশেদ। প্রশ্ন করল মৌরী, বিশ্বাস করলে না?
-বিশ্বাস করা বা না করার চেয়ে অবাক হচ্ছি বেশি। তুমি জানতে যে আমি কোনদিন আসব?
-জানতাম না। আমার বিশ্বাস ছিল, কোন একদিন তোমার সাথে দেখা হবে। তোমাকে অনুভব করার জন্য একটা পাগলামি করতাম।
-কী পাগলামি?
-মাঝেমধ্যে সিগারেট ধরিয়ে এশট্রেতে রাখতাম। মনে করতাম তুমি আমার সামনে বসে সিগারেট টানছ।
রাশেদ কিছু বলতে যাচ্ছিল। তার আগে পিয়ন চা নিয়ে উপস্থিত। চায়ের কাপে একসাথে চুমুক দিল দুজনেই। সাথেসাথে দুজনে হেসে উঠল। হাসার পিছনের কারণটা বেশ রোমাঞ্চকর। রাশেদ আর মৌরীর যখন সম্পর্ক ছিল, তখন দুজনে রাত জেগে ফোনে কথা বলত। হঠাৎ দুজনে একসাথে চুপ হয়ে যাওয়া, একসাথে কথা বলে ওঠা একসাথে দীর্ঘশ্বাস ছাড়া কিংবা একসাথে চুমু খাওয়া- ব্যাপারগুলো দুএকবার হলে তাকে কাকতালীয় বলে চালিয়ে দেওয়া যেত কিন্তু হামেশাই এরকম হতো। তখন রাশেদ এবং মৌরী দুজনেই একসাথে অবাক এবং আনন্দিত হতো। আজ সেরকম একটা ঘটনা ঘটল। দুজনে একসাথে চায়ের কাপে শব্দ করে চুমুক দিল। হাসি থামিয়ে রাশেদ বলল, সেই আগের মতো। খুব নমনীয় গলায় মৌরী বলল, কী?
-তোমার হাসি, তোমার অভিমান, তোমার গলার স্বর, তোমার চোখ। সবকিছু; সবকিছু ঠিক আগের মতো।
-আগের মতো নেই। অনেককিছু পাল্টে গেছে। এখন হয়তো রাত জেগে ফোনে কথা হয় না। কারও দীর্ঘশ্বাস শুনি না বা কারও মোটা স্বরে গল্প বা কবিতা শুনি না। কিংবা তুমিও হয়তো কারও কণ্ঠে রবীন্দ্রসংগীত শুনতে পাও না।
-আমি এখনো তোমার গান শুনি। রাত হলেই বেলকনিতে বসে তোমার কথা ভাবি। চোখ বন্ধ করে তোমার গলায় শুনি ‘ফুলে ফুলে ঢলে ঢলে বহে কীইবা মৃদু বায়’ রাশেদের কাছ থেকে কথা কেড়ে নিয়ে মৌরী গুণগুণ করে গানের একাংশ গাইতে শুরু করল, পিক কিবা কুঞ্জে কুঞ্জে কুহু কুহু কুহু গায়, কী জানি কিসেরও লাগি প্রাণ করে হায়-হায়। তখন রাশেদ বলল, সেই স্বর, সেই সুর। তুমি জানো মৌরী? আমি এখনো তোমার স্পর্শ অনুভব করি। একটা দিন, মাত্র একটা দিন তোমার সাথে আমার দেখা হয়েছিল। তুমি আমার হাত ধরেছিলে। তোমার কোমল হাতের স্পর্শ আমি কখনো ভুলতে পারিনি। সেই অনুভূতি আমি এখনো পাই। কিভাবে পাই তা জানি না। কিন্তু মাঝেমধ্যে মনে হয় তুমি আমাকে ছুঁয়ে যাও। তোমার কি এমন হয় না? একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল মৌরী। হয়তো হয়, হয়তো না। তুমি আমার জীবন থেকে যে সময়টা চলে গেছিলে…..
-ভুল বললে। আমি যাইনি, তুমি গিয়েছিলে।
-আঘাতটা তো তুমিই দিয়েছিলে। যাইহোক, ওই সময়ে ওই আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা ছিল না। আমি পাগলের মতো হয়ে যাচ্ছিলাম। আমার মেডিকেলে ভর্তি পরীক্ষা, ডাক্তারি হওয়াটা বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থায় ছিল।
-তার জন্য সরি বলে ক্ষমা আশা করছি না। আমি জানি, আমার একটা ভুল তোমার জীবনে অনেক বড় ক্ষতি করেছে। আর শুধুমাত্র একটা শব্দ ‘সরি’ সেই ভুলের মাশুল হতে পারে না। ওই ভুলের জন্য অনেক বড় মূল্য দিতে হয়।
-বাদ দাও ওসব। বর্তমানের কথা বল। বিয়ে করেছ?
শব্দ করে হাসল রাশেদ। কোনরকম হাসি থামিয়ে বলল, তোমার কী ধারণা আমি দেবদাসের মতো বিয়েশাদি না করে পাগল হয়ে ঘুরে বেড়াব? হ্যাঁ, এটা ঠিক যে তোমার চলে যাওয়ার পর অনেক পাগলামি করেছিলাম। শেষপর্যন্ত আশা রেখেছিলাম যে তোমার সাথে একবার হলেও যোগাযোগ করতে পারব কিন্তু যখন তোমার সাথে যোগাযোগের সব পথ বন্ধ হয়ে গেল, তখন আর উপায় ছিল না। এদিকে তখন বাড়ি থেকেও বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছিল। সবকিছু মিলিয়ে দেখলাম যে, তোমাকে আর পাওয়া হবে না। তাই বিয়েশাদি করে পুরোদস্তুর সংসারী হয়ে গেলাম।
-কিন্তু তোমাকে দেখে আগের মতো সেই বোহেমিয়ান মনে হচ্ছে, সংসারী মনে হচ্ছে না। চুলটুল তো পাকিয়ে ফেলেছ। চুলে কালি কর না কেন?
-তুমি তো জান, আমি যা নই তা দেখানোতে আমার তৎপরতা নেই। চুল পেকেছে, থাকুক পাকা চুল।
-অবশ্য দেখতে ভালই লাগছে। চাকরিবাকরি কর কিছু?
-করতাম একটা। বারো বছর পর ছেড়ে দিয়েছি। এখন ব্যবসাবাণিজ্য করছি।
পকেট থেকে একটা কার্ড বের করে মৌরীকে দিল রাশেদ। কার্ডটা নিয়ে মৌরী দেখল তাতে লেখা ‘মৌরী গ্রুপ অফ কোম্পানি’। কার্ডের দিকে চোখ বড় করে তাকিয়ে আছে মৌরী। তারপর জিজ্ঞেস করল, আমার নামে তোমার কোম্পানি? রাশেদ হেসে বলল, না। আমার মেয়েটার নামে। আর তার নাম রেখেছিলাম তোমার নামে।
-তোমার বউ এ ব্যাপারে কিছু বলে না?
-প্রথম প্রথম খোঁচাতো। কিন্তু এখন আর বলে না।
-সে কী করে?
-সংসার করে। পুরোদস্তুর সংসারী মেয়ে সে।
-আমার চেয়েও ভালো?
প্রশ্নটায় এক প্রকার অনুযোগ ছিল। রাশেদ তা বুঝতে পেরে বলল, দেখ, তোমাকে তো প্রেমিকা হিসেবে পেয়েছিলাম কিন্তু তাকে পাইনি। আবার তাকে স্ত্রী হিসেবে পেয়েছি, তোমাকে পাইনি। তাই তুলনাটা করা যাচ্ছে না। তবে বললে বিশ্বাস করবে?
-কী?
জীবনে অনেক মেয়ের সাথে পরিচয় হয়েছে, হয়তো অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্কেও জড়িয়েছি। কিন্তু তোমাকে ছাড়া আর কাউকে ভালবাসতে পারিনি। আর তুমি শুধু আমাকে ভালই বাসোনি, তুমি আমাকে শিখিয়েছ কিভাবে ভালবাসতে হয়। আর সেই ভালবাসাটা আমি কাউকে দিতে পারিনি মৌরী।
রাশেদের গলা ধরে এসেছে। টেবিলের উপর রাখা প্যাকেট থেকে সিগারেট বের করে ধরাতে চেষ্টা করছে সে, কিন্তু পারছে না। তার হাত কাঁপছে। মৌরী এসে রাশেদের সামনে টেবিলে বসে লাইটারটা নিয়ে সিগারেট ধরিয়ে দিল। সিগারেটে ঘনঘন টান দিচ্ছে রাশেদ। মৌরী রাশেদের ডান হাতটা তার দুহাতের মধ্যে নিয়ে নিল। কেউ কোন কথা বলছে না। কিন্তু দুজনের নীরবতাও অনেক কথার ঊর্ধ্বে। মৌরী আর রাশেদ চেম্বার থেকে বের হয়েছে। চেম্বারের বাইরে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে আছে দুজন। রাশেদ বলল, তোমার হাজবেন্ড কী করে? প্রশ্নটা শুনে মৌরী অপ্রস্তুত হয়ে গেল। আমতাআমতা করে বলল, তুমি কিভাবে বুঝলে যে আমি বিয়ে করেছি?
-না বোঝার কোন কারণ নেই। আর তোমার মোবাইলের স্ক্রিনে তোমার আর তোমার হাজবেন্ডের ছবি।
-ওহ। ও ইঞ্জিনিয়ার।
-বাহ। স্বামী ইঞ্জিনিয়ার, স্ত্রী ডাক্তার। তো, সুখেই আছো, না? বাচ্চাকাচ্চা?
-একটা ছেলে। চার বছর বয়স। তখনি মৌরীর গাড়ি চলে এলো। সে জিজ্ঞেস করল রাশেদকে, তুমি কোথায় যাবে?
-আমার অফিসে যাব। মিরপুরে।
-তোমার গাড়ি নেই?
-গাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। সমস্যা নেই, আমি ক্যাব নিয়ে চলে যাব।
-চল, তোমাকে সামনে ড্রপ করে দেই।
-না, থাকুক। সারাজীবন একসাথে চলার ইচ্ছা ছিল। এখন এতটুকু পথ নাহয় নাই গেলাম।
-রাখ তো তোমার নাটকীয় কথাবার্তা। গাড়িতে ওঠ।
-তোমার এই ভদ্রতার জন্য ধন্যবাদ। কিন্তু আমি গাড়িতে উঠব না। যাও, আর হ্যাঁ, ভালো থেকো।
মৌরী গাড়িতে উঠে বসল। রাশেদ নির্লিপ্তভাবে হেঁটে চলছে। মৌরী ধারণা করেছিল রাশেদ একবার ফিরে তাকাবে কিন্তু রাশেদ তাকায়নি। সে তাকালে মৌরী দেখতে পেতো রাশেদের চোখদুটো ভেজা। বেশ কয়েকদিন পরের কথা। রাশেদের অফিসের কর্ম ব্যস্ততায় সময় চলে যায়। তার মধ্যেও প্রায়ই একটু সময় বের করে। সোম থেকে বুধ- এই তিনটা দিন সময় বের করে মৌরীর চেম্বারে যায়। রিসিপশনের ছেলেটা আড়চোখে দুএকবার তাকায় রাশেদের দিকে। আজ রোগীর ভিড় কম। রাশেদ বসে আছে ওয়েটিং রুমে। সে বেশ আগে এলেও তার সিরিয়াল আসছে না অর্থাৎ তাকে ডাকা হচ্ছে না। সে বাদে বাকি সবার ডাক পড়ছে। সব রোগী দেখা শেষ হলে মৌরী বেরিয়ে এল। রাশেদকে বলল, তুমি গাড়ি এনেছ?
-হ্যাঁ।
-চল।
-কোথায়?
-আমি যেখানে বলি।
ড্রাইভিং সিটে রাশেদ, পাশের সিটে মৌরী। ঢাকা শহরের যানজট পার করে তারা চলে এসেছে কেরানীগঞ্জ পার হয়ে আরও সামনে। অনেক প্রশস্ত রাস্তার পাশে ছোটছোট ক্যাফেটেরিয়া। রাস্তার দুপাশে কাশবন। এখনো কাশফুল ফোটেনি। সবুজের সাগর মনে হচ্ছে। এই সবুজের মধ্যে মৌরীর মুখে জমে আছে কালো মেঘ।
রাশেদ পকেট থেকে প্যাকেট বের করে সিগারেট ধরাল। একটা ক্যাফেটেরিয়ার সামনে দুজনে বসেছে। মৌরী সময় নিচ্ছে কথাগুলো গুছিয়ে নেওয়ার জন্য। রাশেদ বুঝতে পারছে কোন কারণে মৌরী তার উপর রাগ বা বিরক্ত। কিন্তু কারণটা সে বুঝতে পারছে না। ওয়েটার দুই মগ কফি দিয়ে গেছে। ধোঁয়া উড়ছে সেখান থেকে। কফির ঘ্রাণটাও নাকে আসছে, বেশ মিষ্টি ঘ্রাণ। সিগারেট শেষ হতে মৌরী বলল, আরেকটা সিগারেট ধরাও। সিগারেটের ধোঁয়া একটা আড়াল তৈরি করবে। তোমার সাথে যে কথাগুলো বলব তা আমি তোমার চোখের দিকে তাকিয়ে বলতে পারব না৷ আবার অন্যদিকে তাকিয়েও বলতে পারব না। তোমার দিকে তাকিয়ে কথা বলতে হবে।
রাশেদ ফের সিগারেট ধরাল। মৌরী কথাগুলো গুছিয়ে বলতে পারেনি। বাকি কথাগুলো যদি এলোমেলো করে বলে তাহলে সমস্যা হতে পারে। তবুও সে শুরু করল, দেখ রাশেদ, তোমার সম্পর্কটা শেষ হয়েছে একুশ বছর আগে। তার আগে মাত্র একটা বছর সম্পর্ক ছিল এবং সেই এক বছরে মাত্র একটা দিনের একটা ঘণ্টা আমরা একসাথে ছিলাম। তাও যে নির্জন স্থানে বা বদ্ধ রুমে ছিলাম তা কিন্তু না। ভিড়ের মধ্যে দুজনে হাত ধরে হেঁটেছিলাম। সেই অনুভূতি, সেই স্মৃতি আমি বেশকিছু দিন বয়ে বেড়ালেও সময় এবং পরিস্থিতি আমাকে তা ভুলতে সাহায্য করেছে। এই একুশ বছরে প্রথম দিকে দু-চারবার মনে পড়লেও আমি তোমাকে সেরকম মনে করিনি বা তোমার কথা খুব একটা মনে পড়েনি। তোমাকে ভুলে আমার লাভই হয়েছে। আমার ডাক্তারি পড়া শেষ হয়েছে, আমি ডাক্তার হয়েছি, আমার ফ্যামিলির দায়িত্ব নিয়েছি, বিয়ে করে সংসার করছি। আমি কিন্তু খারাপ নেই। কিন্তু একটু দম নেওয়ার জন্য থামল মৌরী। রাশেদ নিথর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মৌরীর ঠোঁটের দিকে। কত সুন্দর করেই না সে কথা বলছে।
দম নিয়ে মৌরী বলল, কিন্তু তুমি এতদিন পরে সামনে এসে আমার সুন্দর গোছানো জীবনটা এলোমেলো করে দিয়েছ। আমি তো এমনটা চাইনি। তুমি যেদিন প্রথম এসেছিলে, তখন প্রথমেই তোমার সাথে যেরকম আচরণটা করেছিলাম, ওইটা ধরে রাখলে এতকিছু হতো না৷ তোমার সাথে একটু ভালো করে কথা বললাম, আর তুমি সুযোগটা নিয়ে নিলে। অবশ্য আমারও পুরনো দিনগুলোর কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু রাশেদ, তোমার সংসার আছে, স্ত্রী আছে, সন্তান আছে। আমারও স্বামী-সন্তান, সুন্দর একটা সংসার হয়েছে। কেন আমরা এগুলোকে নষ্ট করছি? চুপ করে থেকো না, কথা বল। রাশেদ নমনীয় গলায় বলল, বলতে থাকো।
আবারও দম নিয়ে বলা শুরু করল মৌরী, তুমি যা করছ তা একটা টিনেজার ছেলেকে মানায়, একটা মধ্যবয়সী আধবুড়োকে মানায় না। আর তুমি তো ব্যক্তিত্বহীন নও, আমি তোমাকে ভালবেসেছিলাম তোমার ব্যক্তিত্বকে, তোমার ইগোকে। সেই তুমি ব্যক্তিত্বহীনের মতো আমার পিছু নাও। আমার গাড়ি ফলো করে আমার বাসা পর্যন্ত গিয়েছ। একদিন দুইদিন হলে একটা কথা ছিল। কিন্তু তুমি প্রায় প্রতিটা দিনই এই কাজ করছ। লোকে এসব দেখে, রাশেদ। আর তারা এসব ভাল চোখে দেখে না।
আর আমার হাজবেন্ড সেও এটা লক্ষ্য করেছে এবং তার কাছে এই খবরটা গেছে যে তার স্ত্রীর অনেক পুরনো বন্ধু বা হয়তো প্রেমিক তার সাথে দেখা করতে চেম্বারে আসে। সেও যথেষ্ট ব্যক্তিত্ববান বলে আমাকে সরাসরি এই কথাগুলো বলেনি কিন্তু তার আচরণ, কথা বলার ভঙ্গি দেখে এটুকু বুঝতে পেরেছি যে ব্যাপারটা তার ভালো লাগছে না। সে আমাকে অনেক ভালবাসে এবং আমার খেয়াল রাখে। আমি চাই না, তার সেই ভালবাসাটা কমে যাক। আর আমাদের মধ্যে একটু দূরত্ব তৈরি হলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে আমাদের ছেলেটা। আর একজন মা হয়ে সন্তানের এমন ক্ষতি চাইব না। তাই তোমার কাছে অনুরোধ, তুমি প্লিজ আমার কাছে এসো না, আমাকে ফলো কর না। তোমারও তো স্ত্রী আছে, একটা মেয়ে আছে। তাদের কথা ভাবো, তুমি তো তোমার স্ত্রীকে ঠকাচ্ছ, তাই নয় কী?
-হয়তো।
-হয়তো আবার কী? তোমার স্ত্রীর কথা বাদ দিলাম, তোমার মেয়েটার কথা তো ভাবো।
যদি তুমি এরকম উল্টাপাল্টা কর, তাহলে তোমার সংসারে সমস্যা হবে, আর তার ফলটা ভোগ করবে তোমার নিষ্পাপ মেয়েটা। তুমি নিশ্চয় তা চাও না, এই বুড়ো বয়সে কেলেঙ্কারি হোক। থামল মৌরী। শুধুমাত্র বাতাসের শব্দ ছাড়া আর কোন শব্দ নেই। রাস্তা দিয়ে শোঁ শোঁ শব্দ করে দু’একটা গাড়ি ছুটে চলছে। মৌরী দেখল রাশেদ যে দ্বিতীয় সিগারেটটা ধরিয়েছিল ওটা হাতেই শেষ হয়েছে। ছাইটা এখনো পড়ে যায়নি তবে যেকোনো মুহূর্তে পড়ে যাবে। মৌরী বলল, একটা কথা বল তো, তুমি এখনো আমাকে আমাকে ভালবাসো? রাশেদ বলল, হ্যাঁ। কিন্তু তার গলার স্বরটা পাল্টে গেছে। কেমনযেন ধরে আসছে গলাটা। মৌরী বলল, কতটুকু ভালবাসো? আগের মতো?
-হ্যাঁ।
-যাকে ভালবাসো, তার ক্ষতি চাও তুমি?
-না।
-যাকে তুমি ভালবাসো, তার কথাটা শুনবে না?
-হুম।
-তাহলে প্লিজ, এসব বাদ দাও। কী হবে রাশেদ? এসব করে কী হবে? আমার জীবনে তোমার ফিরে আসার চান্স নেই, এবং সত্যি বলতে দরকারও নেই। আর আমি মনে করি, তোমার জীবনেও আমার দরকার নেই।
প্রায় নিঃশব্দে রাশেদ বলল, দরকার আছে। কিন্তু মৌরী সেই কথাটা শুনতে পাইনি। রাশেদ বলল, দেখো মৌরী, তোমাকে আমি এক ঘণ্টার জন্য, এক দিনের জন্য বা এক বছরের জন্য ভালবাসিনি। তোমাকে ভালবেসেছি সারা জীবনের জন্য। তাই এখনো বাসি। ভবিষ্যতেও বাসব। কিন্তু তোমাকে পাবো না-এটা জানি। তবুও ভালবেসে যাব। আমার জন্য তোমার যা ক্ষতি হয়েছে তা পূরণ করতে পারব না। কিন্তু আমি কথা দিচ্ছি, তোমাকে আর কখনো কোনদিন বিরক্ত করব না। একটু প্রশ্ন করি, উত্তর দিবে? মৌরী বলল, হ্যাঁ। বল। রাশেদ মৌরীর চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, তুমি কি এখনো আমাকে ভালবাস না?
মৌরী উত্তর দিচ্ছে না। সেও তাকিয়ে আছে রাশেদের চোখের দিকে। চোখের পাতা কাঁপছে তার। ঠোঁটদুটোতে ঢেউ বয়ে যাচ্ছে। উত্তরটা দিতে পারছে না। ভাইভা বোর্ডে যখন কোন চাকরি প্রার্থী প্রশ্নকর্তার প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে না, তখন তার যেমন অবস্থা হয়, মৌরীরও একই অবস্থা। হঠাৎ রাশেদের দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে মৌরী আস্তে করে বলল, নাহ। বাসি না। রাশেদ হাসছে। নিঃশব্দে হাসি। মৌরী রাশেদের চোখের দিকে তাকাতে পারছে না। তার ব্যাগটা নিয়ে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, এখন ওঠা যাক। রাশেদ একটা গানের একটা লাইন গাইল, আরও কিছুক্ষণ কি রবে বন্ধু? আরও কিছু কথা কি হবে? গানের প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসল। রাশেদও গাড়িতে উঠে পড়ল। এই ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল দু’মগ কফি। রাশেদ গাড়িতে উঠে রেডিও ছাড়ল। কী কাকতালীয় ব্যাপার! রাশেদের সবচেয়ে প্রিয় গানটাই বাজছে,
O light the candle, John
The daylight has almost gone
The birds have sung their last
The bells call all to mass.
সারাটা পথ দুজনের কেউ কোন কথা বলল না। এমনকি মৌরী গাড়ি থেকে নামার সময় মৌরী বা রাশেদ কেউই বলেনি ‘ভালো থেকো’। মাসখানেক পরের কথা। সেদিনের পর থেকে রাশেদ কখনো মৌরীর চেম্বারে আসেনি। বরং রাশেদ না আসাতে মৌরীর খারাপ লেগেছে। তবে ধীরেধীরে সে রাশেদের ব্যাপারটা মাথা থেকে বাদ দিতে সক্ষম হয়েছে। ঠিক তখনি এক রোগী এলো মৌরীর কাছে। রোগীকে দেখা শেষ হওয়ার পর সাধারণত উঠে চলে যায়। কিন্তু এই রোগী চলে না গিয়ে বসে রইল। তারপর বলল, আমি সম্ভবত আপনাকে চিনি। মৌরী অবাক হয়ে বলল, চেনেন মানে? আমাকে আগে কোথাও দেখেছেন? যেহেতু ডাক্তারি করি, হাসপাতালে চাকরি করি, দেখে থাকতে পারেন।
-না। হাসপাতালে না। আপনাকে দেখেছি একজনের অতীতে। তার গল্পে, তার স্মৃতিতে। সেখানে আপনি ডাক্তার না, একজন প্রেমিকা।
-কী বলতে চাচ্ছেন?
-আমি যদি ভুল না করি, আপনি মৌরী। রাশেদ নামে কাউকে চেনেন বা চিনতেন? মৌরী যা এতদিন ধরে ভোলার চেষ্টা করছে, এই লোকটা তা মনে করিয়ে দিচ্ছে৷ মৌরী বলল, হ্যাঁ। চিনি।
-রাশেদ আপনার কথা এতই বলে যে মাঝেমধ্যে রাগ হত, বিরক্ত হয়ে যেতাম। এক পর্যায়ে ভাবলাম, যদি কোনদিন মৌরীর দেখা পায় একটা কথা বলব।
-কী কথা?
-আপনি একটা কোহিনূর হীরা হারিয়েছেন।
কেউ যে একটা মেয়েকে বিশ-একুশ বছর ধরে কিভাবে ভালবেসে যায়। যার জন্য বিয়েটা পর্যন্ত করেনি। অনেক টাকাপয়সা পয়সা জমিয়েছে। কিন্তু ওসব কে খাবে? ওকে কত বোঝালাম যে, বিয়েটা করে সংসারী হ। কিন্তু কে শোনে কার কথা? করলই না। মৌরীর মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়েছে। সে ড্রয়ার থেকে রাশেদের দেওয়া কার্ডটা বের করতে করতে বলল, ও তো বলেছে ও বিয়ে করেছে। কার্ডটা এগিয়ে দিয়ে বলল, ওর মেয়ের নামে কোম্পানি দিয়েছে। লোকটা হেসে বলল, কোম্পানিটা ওর মেয়ের নামে না, আপনার নামে। আর ও মেয়ে পাবে কোথায়? বিয়েই তো করেনি। আপনার সাথে ওর দেখা হয়েছিল?
-হ্যাঁ। কিছুদিন আগে হঠাৎ আমার চেম্বারে এসেছিল। বেশকিছু দিন দেখা হল। পরে ওকে বুঝিয়ে বললাম যে দেখা করাটা আমার জন্য ক্ষতিকর হয়ে যাচ্ছে। তখন ও বলেছিল যে বিয়ে করেছে। একটা মেয়ে আছে। আমার নামেই মেয়েটার নাম রেখেছে।
-আপনাকে মিথ্যা বলেছে সে। আমি গত দুই মাস ব্যবসায়ের কাজে সিঙ্গাপুর গেছিলাম। ও হ্যাঁ, আমার পরিচয়টাই তো দেওয়া হয়নি। আমি সুলতান মাহমুদ। মৌরী আবার চমকালো। ওদের সম্পর্কের সময় রাশেদের মুখে একটা ছেলের নাম বেশি শুনত। আর সে হচ্ছে ‘সুলতান মাহমুদ’। মৌরী বলল, আপনার কথা ওর মুখে অনেক শুনতাম।
-আর আমরা এখন একসাথে ব্যবসা করি। যাইহোক, ভালো লাগল আপনাকে দেখে। ভালো থাকবেন। আমার একটা মিটিংয়ে জয়েন করা লাগবে। তাই উঠছি। সুলতান মাহমুদ চলে গেল। মৌরী জানালার দিকে তাকিয়ে আছে নিশ্চুপ হয়ে। এতটাও ভালবাসা যায়? সিনেমায় দেখেছে এরকম। আর তাকেই কেউ সেই সিনেমার নায়কের মতো ভালবাসে?