– হ্যালো
– উমমমম, হ্যালো
– তুমি এখনও পরে পরে ঘুমাচ্ছো?
– উমমমম ”
– উঠো না বাবু প্লিজ, তাড়াতাড়ি আসো আমার এখানে একা একা ভয় করছে।
– (ঘুমের ঘোরে) উমমমম,
– আবার উমমমম, এবার কিন্তু আমি চলে যাব বলে দিলাম। আমি আর একা একা পার্কে কতখন থাকবো? ছেলে গুলো আমার দিকে কিভাবে যেন তাকিয়ে আছে? প্লিজ তাড়াতাড়ি আসো। ( এই বলে কাদতেঁ শুরু করল)
– কিইইই আমার কলিজার দিকে চেয়ে থাকে দাড়া আমি আসছি আজকে। আর পাগলী তুমি প্লিজ কেঁদো না আমি এখনই আসছি। আর এরকম হবে না। এই বলে ফোন টা রেখে ফ্রেস হয়ে দিলাম এক দৌড় পার্কের দিকে। দেখি আজকে কোন শয়তান আমার জানের দিকে চেয়ে থাকে? আজকে সব হাড্ডি গুড়ো করে দিমু।
এতখন আমি ঘুমের ঘোরে কথা বললাম আমার পাগলীটার সাথে। আমি নুর। এবার ইন্টার ফাস্ট ইয়ার আর আমার জানটা হলো জান্নাত।জান্নাত আমার সাথে একই ক্লাসে পড়ে। আমার বাড়ি আর জারার বাড়ি শুধু একটু দূরে। আবার একেবারে কাছেও না। অনেক দিন থেকে দুজনের ভালো লাগা আর দুজনের দূর্বলতা প্রকাশ আর কলেজে এসে ভালবাসায় রুপান্তর। আমাদের দুজনের ব্যপারটা আমাদের দু পরিবার জানে।
যখন আমরা ক্লাস টেনে পড়ি আর দুজনে ফ্রি ভাবে চলাফেরা করি তখনই আমাদের পরিবার বুঝতে পারে আমাদের দুজনের মাঝে কিছু একটা আছে আর তখনই আমার মা বাবা আর ওর মা বাবা দু পরিবার কথা বলে ” আমাদের পড়াশোনা শেষে দুজনের এক করে দেওয়ার কথা ভাবে। আর আমি সেদিন খুশিতে সবার সামনে জান্নাতকে জড়িয়ে ধরছিলাম। তারপর জড়িয়ে ধরে চোখ খোলা মাএই লজ্জায় দুজনে এমন একটা দৌড় দিছিলাম এক দৌড়ে তিন কিলোমিটার পথ পাড়ি দিছিলাম হয়তো। আর আজকের ব্যপারটা হলো : আজকে শুক্রবার আর আমি গতকাল ওকে বলছিলাম যে, কালকে আমরা ঘুরতে যাব, ৮ টার সময় পার্কে চলে এসো। কিন্তু এখন ১০টা বাজে আর আমি কেবল জান্নাতের কলে জেগে উঠলাম। কে জানে আজ কপালে কি আছে? পার্কে গিয়ে দূর থেকে দেখলাম আশেপাশে তো কেউ নেই তাহলে আমার জানটা কাঁদছে কেন? কাছে যেতেই আমাকে দেখা মাএ দৌড়ে আমার বুকে এসে কাদতেঁ লাগল।
– উফফফ, বাবা. আবার কাঁদছো কেন? আমি তো এখন এসে গেছি।
– (চুপচাপ, কান্না করছে)
– জান্নাত পাগলী আমার ভালো হচ্ছে না কিন্তু!
– এতখন কেউ ঘুমায়?
– সরি সোনা প্লিজ, আর এমন হবে না।
– (বুকের উপর কয়েক টা কিল ঘুসি পড়ল)
– হি হি হি।
– তুমি হাসছো (কান্না সুরে)
– একটু হাসছি।
– তুমি জানো এতখন আমি কিভাবে ছিলাম? তুমি জানো না, তোমাকে ছাড়া আমার চেনা জায়গা গুলোও অচেনা হয়ে যায়।
– জানি তো, আর বললাম তো সরি আর এমন করব না।
– আর একবার যদি এমন হয় তাহলে কিন্তু আমি তখন ভয়ে মরেই যাব।
– (কথাটা শুনেই কেমন যেন নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, কিছু বলতে পারলাম না। জান্নাতকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম যাতে দূরে যেতে না পারে)
– কি হলো বাবু কথা বলছো না কেন?
– তুমি একটু আগে কি বললে ওটা।
– (চমকে গেল) সরি বাবু প্লিজ। আর এমন হবে না আর এমন বলব না।
(এই বলে জান্নাত আমাকে আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরল) তারপর আমরা দুজন সেদিন পার্কে ঘুরে আরও বিভিন্ন জায়গায় রিকশা নিয়ে ঘুরতে যাই। তারপর আমরা সারাদিন অনেক হাসি খুনসুটি দিয়ে কাটিয়ে বিকেলের দিকে বাড়ি যাই। আর জান্নাতকেও আমার বাড়িতে নিয়ে যাই। বাড়ির সামনে যেতেই ভয়ে আমার পা কাপতে লাগল, দেখি মা গেটের সামনে দাড়িয়ে আছে। আর তখনই জান্নাত গিয়ে মা কে পা ছুয়ে সালাম করল। আর মা ওর মাথায় একটু হাত বুলিয়ে দিয়ে আমার দিকে একটা রাগি লুক নিয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে জান্নাত কে নিয়ে ঘরে চলে গেল।
-আকাশ এদিকে আয় তো একটু(মা)
-আচ্ছা আসছি।(আমি)
-রাতে ডিনারের পর জারাকে ওর বাড়িতে দিয়ে আসিস। (মা)
-অক্কে(আমি)
-আর জান্নাত মা শুনো রাতের ডিনার কিন্তু আজকে তুমি এখানে করবা(মা)
– আচ্ছা আম্মু।(জান্নাত)
-ওই কি বললা তুমি?(আমি)
-আমি আবার কি বললাম?(জান্নাত)
-আম্মু বললা কাকে(আমি)
-আম্মু তো আম্মুকেই বলছি(জান্নাত)
-এখানে তোমার আম্মু আসলো কোথা থেকে?(আমি)
-থাপ্পড় দিয়া দাত ছিঁড়া ফালামু। তোমার আম্মুই তো আমার আম্মু(জান্নাত)
-এয়্য্য্য, বিয়ের আগেই ভাগ বসাইতে আসছে। আর যখন আমার সাথে থাকে তখন ভালবাসা উতলে পরে আর এখন আমাকে ভয় দেখানো হচ্ছে?(আমি)
-হুম, তাই।(জান্নাত)
-ওই থামবি তোরা? এইবার কিন্তু আমি মাইর দিমু রে!(মা)
মার ধমক খেয়ে দিলাম দৌড়। এক দৌড়ে একেবারে বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। বিছানায় যেতেই চোখটা ঘুমের জন্য টেনে আসলো। আর তখনই মা খেতে বলল আর আমি বললাম বাইরে থেকে খেয়ে আসছি, তারপরেই আমি ঘুমের রাজ্যে ডুব দিলাম। বোধ হয় তখন সন্ধ্যা হবে ঘুম ভাঙলো কারও হাতের ছোঁয়ায় আর হাতটা আমার নাকের উপর ছিলো আর নাকটা বোধ হয় চেপেই ধরেছিল যার জন্য আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিলাম না।
-(ধরফর করে ওঠে) ওই কে কে?(আমি)
– ওই আমি(জান্নাত)
-কি হইছে?(আমি)
-কিছু না, ডিনার দেওয়া আছে টেবিলে খেয়ে নিয়ে আমাকে দিয়ে আসো।(জান্নাত)
-আইচ্ছা(আমি)
তারপর খেয়ে নিয়ে পাগলীটাকে দিয়ে আসতে গেলাম। এরপর সকালে আমার প্রতিদিনের এলার্ম ঘড়ি হলো জান্নাত। ও প্রতিদিন আমার ঘুম ভাঙিয়ে দেয় ফোন করে, বাসা বেশী দূরে না হলেও আমাকে ফোন করে জাগিয়ে দেয়। তারপর আমরা দুজনে মিলে একসাথে কলেজে যাই। কলেজে গিয়ে ও কোনো দিন কোনো ছেলের সাথে কথা বলতো না আর আমি কোনো দিন কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতাম না। শুধু দুজন দুজনের সাথে সবসময় আড্ডা দিতাম আর একটু একটু প্রেম করতাম। এভাবে ভালই চলছিল আমাদের দিন গুলো। দেখতে দেখতে চলে গেল অনেক দিন ইন্টার ফাস্ট ইয়ারের পরীক্ষা দিয়ে দুজনেই ভালো রেসাল্ট নিয়ে সেকেন্ড ইয়ারে উঠলাম। সেকেন্ড ইয়ারের দুমাস পর— একদিন ক্রিকেট খেলছিলাম। খেলার পর কোথা থেকে যেন একটা মেয়ে এসে বলল-
– ও ভাইয়য়য়য়া আপনি এত সুন্দর খেলেন, আমি না আপনার খেলা দেখে একদম ফিট হয়ে গেছি।
– তো আমি কি করব?
– ভাইয়য়য়া আমার সাথে প্রেম করবেন?
– কিইইইইইই? সরি সরি আমাকে দিয়ে হবে না? ঠাস ঠাস পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার জানটা কেমন যেন করতেছি আর ঐ আমাকে পেছন থেকেই চড় দিছে।
– কি হলো এটা? ( করুণ কন্ঠে)
– কি হলো বুঝতে পারছিস না? আমাকে রেখে আরেক মেয়ের সাথে লুতুপুতু।(জান্নাত)
– আরে না তুমি ভুল বুঝছো। (তখনই ওই বজ্জাত মেয়েটা দৌড়ে পালালো)
– ভুল মানে এতখন যা দেখলাম আর শুনলাম সব ভুল?
– হ্যাঁ, ও আমাকে অফার দিছিলো কিন্তু আমি রিজেক্ট করে দিছি।
– ওহ্, সরি, আরেক বার যদি কথা বলতে দেখি না তাহলে কিন্তু আমি
– না আর বলো না প্লিজ আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবো না।
– আরে ধুর পাগল আমি ওই কথা বলব নাকি? আমি তো বলতে চাইছিলাম আম্মুর কাছে বিচার দিব।
– তুমি কিন্তু কথা ঘুরাতে চাইছো।
– আরে না চল তো এখন। সেদিন বাড়ি এসে খাওয়া দাওয়া করে ওর সাথে দেখা করার জন্য জান্নাতের বাড়ি গেলাম। গিয়ে দেখি জান্নাত কাপড় চোপড় গুছাচ্ছে।
-ওই পাগলী কি হইছে আবার কাপড় গুছাচ্ছো কেন?
-এমা তুমি জানো না পরশু পিকনিক, কলেজ থেকে। আমিও যাব সাথে তুমিও।
-ওহ্ গড, আমি তো জানিই না আর কেউ আমাকে বলেই নাই। এখন টিকিট আনব কোথা থেকে?
– হি হি হি। আরে ধুর পাগল তোমাকে আনতে হবে না। আমি আমার পাগল টার জন্য অনেক আগে থেকেই টিকিট কেটে রেখেছি।
-তুমি যে কি করো না?
– কি আর করব, ভালবাসি যে খুব তাই একা রেখে কোথাও যেতে ইচ্ছে করে না।
– তাই। উম্মা ( এই বলে আমি আমার জানটার কপালে একটা ছোট্ট করে ভালবাসার পরশ বুলিয়ে দিলাম আর আমার জানটাও আমার বুকে মাথা রাখলো।)
-কোনো দিন ছেড়ে যাবে না তো?
-এ জীবন থাকতে নয়।
-হুম। বেঁচে থাকুক ভালোবাসা।কোনো দিন এই হাত ছারবো না।