—–অাজ নিলার বিয়ে। রাফি নিজ হাতে নিলাকে সাজিয়ে দিচ্ছে। 1টু পর ই নিলার বরযাত্রী অাসবে।নিলা চলে যাবে রাফিকে একা করে। এসব ভেবে রাফি অার সেখানে থাকতে পারল না,চলে গেল ।
রাফি নিলার চাচাতো বোন। রাফি নিলার থেকে 2বছরের বড়। ছোটবেলা থেকেই তারা একসাথে বড় হইছে। রাফি 2বছরের বড় হলেও তারা একি ক্লাসে পড়ত। একসাথে স্কুলে যেত,খেলত,ঘুরত তাই তাদের মাঝে,সবসময় খুনসুটি লেগেই থাকত। রাফি অনেক ভালো ছাত্র। সবসময় নিলাকে পড়া নিয়ে সাহায্য করত। অার তাদের মাঝে ঝগড়া হলেও তারা সিরিয়াসলি কখনো ঝগড়া করত না। এক জন ছাড়া যেন অারেকজন অচল। এভাবেই চলছিল তাদের দিন গুলো। দেখতে দেখতে দু-জনেই এসএসসি পাস করল। 2জনেই ভালো রেজাল্ট করছে। তাদের বাবা-মা খুব খুশি তাদের রেজাল্ট দেখে । কলেজে উঠার পরও তারা অাগের মতই একসাথে কলেজে যায়। তাদের বাবা-মা তাদের এত মেলেমেশার জন্য কখনো কিছু বলত না।
অার রাফি তার বাবা-মার একমাত্র সন্তান। নিলাও তারা-বাবা মার একটি মাত্র মেয়ে। তাই রাফির বাবা-মা নিলাকে তাদের মেয়ের মত দেখত। অার নিলার বাবা-মা রাফিকে ছেলের মত দেখত। অাসলে রাফি নিলাকে খুব ভালবাসত । নিলাও রাফিকে খুব ভালবাসত,কিন্তু কেউ কাওকে বুঝতে দিত না।কখনো কেউ বলতও না ভয়ে। তারপরও সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে চলছিল। কিন্তু একদিন রাতে নিলা ফোন দিয়ে রাফিকে বলল:- রাফি কালকে অামাকে ছেলেপক্ষ দেখার জন্য অাসছে। তুই কিন্তু থাকবি। না হলে অামি ওদের সামনেই যাব না। এই বলে ফোন কেটে দিল।
কথা গুলো শোনার পর, রাফি মনেহয়,নি:শ্বাস নিতে পারছে না। খুব কান্না পাচ্ছে,কিন্তু কাদতেও পারছে না। কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।সবকিছু মুহুর্তেই কেমন জানি এলোমেলে হয়ে গেল। রাতে অার ঘুমাতে পারল না। পরদিন ছেলেপক্ষ নিলাকে দেখতে অাসল, নিলাকে তাদের খুব পছন্দ হল। সামনের মাসের 5তারিখেই বিয়ের তারিখ দিয়ে চলে গেল! এত তারাতারি নিলার বিয়ে ঠিক হবে। এটা রাফি-নিলা কেউ ভাবতে পারেনি।
এখন অার কিছু করার নেই,নিলার বিয়ের সব দায়িত্ব পড়ল রাফির উপর। রাফি ভাবতে লাগল,হায়রে যাকে বিয়ে করে বৌ বানানোর স্বপ্ন দেখলাম এতদিন,অার অাজ তাকেই অন্যর হাতে তুলে দেয়ার জন্য বিয়ের মার্কেট করছি। পরদিন রাফি নিলাকে অনুরোধ করল: নিলা তুই ত চলেই যাবি,যাওয়ার অাগে অামার সাথে শেষ একদিন ঘুরতে যাবি?? নিলাও রাজি হল। নিলা অার রাফি পরদিন ঘুরতে গেল।সারাদিনই ঘুরল,শেষে নদির পরে এসে বসল, এখানে তারা অাগে প্রায়ই বসে সময় কাটাতো। দু-জন বসে রইছে কিন্তু কেউ কাউকে কিছু বলতে পারছে না।
নিলাই শুরু করল:কিরে কিছু বলছিছ না কেন??
রাফি: নিলা অামি ভালবাসি.. নিলা:কি!! কাকে ভালবাসিস??
রাফি অার কিছু বলতে পারল না। ইচ্ছে করছিল,নিলাকে জড়িয়ে ধরে বলতে,কাকে ভালবাসি মানে তোকে ভালবাসি। কিন্তু রাফি কিছু করতেও পারছিল না কিছু বলতেও পারছিল না। অবশেষে মাগরিবের অাযান দিয়ে দিল। তারাও বাড়ির পথে রওনা দিল। নিলা ভাবছিল: অাজ হয়তো রাফি তাকে ভালবাসার কথা বলবে,কিন্তু রাফি অাজও বলতে পারল না!!
দেখতে দেখতে 5তারিখ এসে গেল,অাজ নিলার বিয়ে। এতক্ষন নিলার সাথেই ছিল রাফি,কিন্তু এখন অার পারছিল না। চলে গেল নিলার সামনে থেকে। অার ভাবতে লাগল কেন যে অাগে বললাম না অামার ভালবাসার কথা। .
“ভালোবাসি”কথাটি না বলার চেয়ে কি পরিমাণ যন্ত্রণা সেটা মনেহয় তাদের দু-জনের চেয়ে ভালো কেউ জানেনা।যাইহোক,বিয়ের সব কাজ শেষ এখন বৌ কে নিয়ে বাড়ি ফেরার পালা। রাফি এতক্ষন অার নিলার সামনে যায়নি। শেষে অাবার অাসল,তার চাচাতো বোনকে (নিলাকে) বরের হাতে তুলে, দেওয়ার জন্য।
নিলার জামাইকে শুধু একটা কথা বলল: অামার বোনকে দয়া করে কখনো কষ্ট দিয় না। এটা বলেই কেন জানি কাদতে লাগল,নিলাও সাথে ছিল..সেও রাফিকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মত কাদতে লাগল। জড়িয়ে ধরাতে অবশ্য কেউ কিছু মনে করে নি। কারণ বরপক্ষ রাও জানত। তারা ছোট থেকে একসাথে বড় হইছে,তাদের বন্ধুত্বের কথা।সবাই ভাবল,নিলা জামাই বাড়ি চলে যাচ্ছে, তাই হয়তো দু-জনেই কাদছে। কিন্তু তারা কেন কাদছে এটা শুধু তারা’ই জানে । না পাওয়ার বেদনা যে কতটা কষ্টেল,ভালো করেই বুঝতে পারছে দু-জন।
অবশেষে চলে গেল নিলা তার বর এর সাথে। নিলাদের গাড়িটা একটু একটু করে এগোচ্ছিল,অার রাফির মনে হতে লাগল গাড়িটা যেন তার বুকের উপর দিয়ে যাচ্ছে..জীবনে এত কষ্ট কখনো পায়নি সে অাজ কেন জানি রাফির খুব চিতকার করে বলতে ইচ্ছে করছে “অামি নিলা তোকে খুব ভালোবাসি অামাকে একা রেখে কোথায় চলে গেলি,তোকে ছাড়া কিভাবে থাকব রে এর পর কয়েক বছর চলে গেল. মাঝখানে তার একটা বেবি হয়েছে। এখন রাফি একজন উচ্ছপদস্ত কর্মকর্তা। বাড়ি থেকে বিয়ে করার জন্য বউ খুঁজছে। আজকে ভোরে হঠাৎ একটা আননোন নাম্বার থেকে কল এল। ওপাশ থেকে একজন ভয়ার্ত কন্ঠে বলছে
-“ সাহেদ আর নেই” (রাফি কন্ঠ শুনেই বুঝতে পারল এটি নীলা. সাহেদ তার স্বামী)
রফি- কী হইছে তার??
নীলা – গাড়ি একসিডেন্ট।
সাহেদ এর মৃত্যুর কয়েক সাপ্তাহ পর নীলা নিজের বাড়িতে চলে আসে। সে অনেকটা ভেঙ্গে পড়ে। তাকে দেখে রাফির কেমন জানি খারাপ লাগতে লাগল। এ অবস্তা দেখে এবং পূর্বের কথা চিন্তা করে রাফি নিজের পরিবারে তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিল। কিন্তু প্রথমে তার পরিবার রাজী হতে না চাইলেও পরবর্তীতে রাজী হয়।
এর কয়েক সাপ্তাহ পর তাদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর নাতুন একটা পরিবার পেল নীলা। এখনও নীলার মেয়ে বুঝতে শেখনি। রাফি এবং নীলা মিলে তার নাম রাখল মিলি। মিলি আস্তে বড় হতে লাগল। এখন সে পুরো ঘর মাতিয়ে রাখে। মিলির দাদ-দাদিও খুব আদর করে তাকে। এখন স্বামী সন্তান নিয়ে নীলা ভালো একটি সময় কাঠায়। আর রাফি তার ভালোবাসার মনুষটিকে পেয়ে খুশি! তারা