রাফিজ ও হীরা দুজনই ক্লাসমেট। ওরা পাশা পাশি বাসায় থাকেযার ফলে ছোট থেকে একসাথেই বড় হয়েছে। হীরা রাফিজ কে খুব ভালবাসতো। রাফিজ দেখতেততোটা সুন্দর না হলেও হীরার কাছে রাফিজই ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর পুরুষ। হীরা রাফিজ কে ভালবাসে এইব্যাপারটা হীরা ছাড়া আর কেউ জনতো না। রাফিজ কে সে বলে নি কারন মেয়েরা কখনো আগে বলে না। তাই রাফিজের প্রতি হীরার গভীর ভালবাসা তার মনের মধ্যেই লুকিয়ে রাখলো। এই ভাবেই চলতে থাকে ওদের জীবন।
স্কুল থেকে একবার শিক্ষা সফরে বেড়াতে যায়। সেখানে রাফিজের একটা মেয়ের সাথে পরিচয় হয়। মেয়েটার নাম বর্ষা, সে দেখতে অনেক সুন্দর পরীর মতো হয়তো বা পরীর থেকেও সুন্দর। আর সে কথাও বলে অনেক সুন্দর করে। প্রথম দেখার পরেই রাফিজ সেই মেয়েটার প্রেমে পরে যায়। কিন্তু রাফিজ তার তার ভালবাসার বিষয়টা কারও সাথে শেয়ার করেনি নিজের মধ্যেই লুকিয়ে রাখে। এমন কি তার সব চাইতে কাছের বন্ধু হীরা কেউ না। একদিন রাফিজ বর্ষা কে নিয়ে ডায়রি লেখছিল, তখন হীরা তা দেখে ফেলে। বর্ষা নামটা দেখে হীরা খুব কষ্ট পায়।
তবুও সে কিছু বলে নি, কষ্ট গুলো নিজের মনে চেপে একটা মলিন হাঁসি দিয়ে রাফিজ কে বললো “তুই শিক্ষাসফরের সেই মেয়েটার প্রেমে পড়েছিস”? রাফিজ হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। কথাটা শুনে হীরার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। তবুও রাফিজকে হীরা বললো “যদি কোন সাহায্য লাগে তো আমাকে বলিস আমি সব সময় তোর পাশে আছি “। কিছুদিন পর রাফিজ একটা মেয়ের সাথে ফোনে কথা বলছিল। কথা শেষ করার পর হীরা তাকে জিজ্ঞেস করলো “কিরে কার সাথে এতো কথা বলিস?” রাফিজ একটা মুচকি হাঁসি দিয়ে বললো “বর্ষা”। রাফিজ কার কাছ থেকে যেন বর্ষার ফোন নাম্বারটা জোগাড় করেছে।
তখন থেকেই বর্ষার সাথে রাফিজের নিয়মিত ফোনে কথা হতো আর ফেইসবুক তো আছেই। রাফিজ আর বর্ষার প্রেমের ব্যাপার একমাত্র হীরাই জানতো। তাই রাফিজ হীরাকে রিকোয়েস্ট করলো যাতে তাদের প্রেমের ব্যাপার টা কাউকে না বলতে। হীরা রাফিজ কে কথা দিয়ে মনে মনে বললো ” তোকে ভালবেসে আমি না হয় কষ্টের সাগরে ডুবে গেলাম, তবুও আমি চাই তুই ভাল থাক তোর ভালবাসার মানুষটার সাথে “। এই ভাবে কেটে গেল অনেক গুলো দিন। একদিন রাফিজ আনমরাভাবে বসেছিল।
হীরাঃ (অবাক হয়ে) কিরে রাফিজ , কি হয়েছে তোর?
রাফিজঃ বর্ষা আমার যাথে ব্রেকআপ করেছে।
হীরাঃ কিন্তু কেন?
রাফিজঃ ওর আগে আর একটা ছেলের সাথে রিলেশন ছিল। মেয়েটা ভাল না। (বলেই রাফিজ আবার আনমরাভাবে বসে থাকল) তখন কাঁদতে কাঁদতে রাফিজের চোখ গেল হীরার দিকে। দেখলো হীরা কাদঁছে। হীরার চোখে পানি দেখে রাফিজ অবাক হয়ে বললো “কিরে হীরা তুই কাঁদছিস কেন?”
হীরাঃ যাকে সব চাইতে বেশি ভালবাসি সে যখন চোখের সামনে এই ভাবে কষ্ট পায় তবে আমি কি কাঁদবো না?
রাফিজঃ (অবাক হয়ে) ভালবাসিস মানে?কাকে ভালবাসিস???
হীরাঃ (একটু লজ্জা আর একটু রাগ মেশানো কন্ঠে) তোকে ভালবাসি রে গাঁধা!! কোনদিন ও তো বোঝার চেষ্টা করিস নি।
রাফিজঃ তুই আগে বলিস নি কেন? আগে বললে আমি কি জীবনে বর্ষা নামের ভুলে পা দিতাম?
হীরাঃ গাঁধা!! মেয়েরা কি কোন দিন আগে বলে শুনেছিস?
রাফিজঃ তা শুনিনি।
হীরাঃ তো????
বলার সাথে সাথেই হীরা নিচে তাকিয়ে দেখে রাফিজ হাঁটু ঘেরে বসে হীরার দিকে তাকিয়ে বলছে “হীরা আমি তোমায় অনেক ভালবাসি” রাফিজের মুখে তুমি শব্দটি শুনে হীরার চোখ থেকে অশ্রু ঝরতে থাকে। এই অশ্রু যেন তার প্রথম প্রেম ফিরে পাবার অশ্রু।
