পাগলি টার সাথে কথা না বলে থাকতে পারছি না। ঝগড়া করে ফেসবুক আইডি ডিএক্টিভ করছি ২ দিন হয়। ২দিন হল কথা হচ্ছে না, আর পাগলি টা একটি বার ও খোঁজ নিতে আসলো না?? আমি রাতুল, পড়াশুনা করছি এখনো! বলতে গেলে এখনো বাপের হোটেলে খাই আর ফেবু চালাই। লতা আমার দূরসম্পর্কের এক আত্মীয়। ছোট থেকেই ওকে খুব ভাল লাগে আমার। সেই অনেক আগে ৫/৬ বছর আগে আসছিল আমাদের বাসায় বেড়াতে। তখন ভাল লেগেছিল কিনা জানিনা, বয়স নিত্তান্তই কম ছিল অনেক। তখন পাগলামু করে বলতাম লতাকে বিয়ে করবো। হয়ত এভাবে বলতে বলতেই আজ ওর প্রতি এত্ত ফিলিংস!!
অনেক কষ্টে ওর আইডি টা জোগার করি। তারপর কথা বলা শুরু করি। যদিও বলতে ভীষণ লজ্জা লাগত! কথা বলতে বলতে এমন এক অবস্থা হয়ে গেছে ওর সাথে কথা না বলে থাকতে পারছি না! ২টা দিন হয়ে গেল আর ও এগলান ভাবছি আর ওর ছবি গুলো দেখছি। ভাবলাম রাগ করে থাকলে আমারই ক্ষতি! তাই কল দেই একটা! কল দিলাম, কিন্তু নাম্বার বিজি! হয়তো কারো সাথে কথা বলছে? তাই ৩০ মি. পর আবার কল দিলাম, তখন ও বিজি। খুব রাগ উঠছে, এতক্ষণ কেউ কথা বলে? আরো ৩০ মি. পর কল দিলাম, তখন ও বিজি। ওর ফোনে টেক্সট করলাম- “নাম্বার কি ব্লকলিষ্টে??” সাথে সাথে ওর রিপ্লেই- “হুম”
-“আনব্লক করো, কল দিবো”
-“কেন? কি দরকার? তুমি তোমার রাগ নিয়া থাকো। আমার কি দরকার?”
-“উফফ্, করো না প্লিজ”
-!আরে ঢেপো কখন এ করছি দেখ” কল দিলাম, ও রিসিভ করেই বলতেছে
– কি বলবে বলো তো তারাতারি, আমার অনেক কাজ!
– ঠিক আছে যাও কাজ করো। বাই।
– এই শুনো
– বলো
– মজা করলাম তোমার সাথে
– এত্ত মজা কই পাও লতা? আমার অবস্থা কি তুমি কি জানো?
-হুম জানি তো! তুমি পুরোটাই কঠিন অবস্থা!
– ইচ্ছা করছে তোমাকে খুব জোড়ে চিপে ধরে শুটকি বানায় দেই
– তাই? আমি তো তোমাকেই খুঁজছি, আব্বু মাছ নিয়ে আসছে শুঁটকি বানাবে। রোদে বানাইতে অনেকদিন লাগবে, তুমি এসে চিপা দিয়ে দিয়ে শুঁটকি বানায় দেও প্লিজ!!
– ধুর, পরে কথা হবে
– রাতে যেন আইডি অ্যাকটিভ পাই
কিছু না বলেই কেটে দিলাম। ও সব সময় আমার সাথে এরকম করে, কিসের নাকি এগুলা কে ফান বলে ও! আচ্ছা মানুষের মন নিয়ে কি ফান হয়? বলেন তো??অবশ্য ওকে এখনো বলাই হয়নি যে ওকে কতদিন ধরে কতটা চাই আমি! বলবো বলবো করে আর বলাই হচ্ছে না। কিন্তু ও তো বুঝতে পেরেছে মনে হয়। আর ও যেভাবে কথা বলে তাতেও এটাই পরিষ্কার যে আমার প্রতি ও দূর্বল! রাতে খাওয়ার পর একটু শুইলাম। এমন সময় মনে হল, আইডি টা অ্যাকটিভ করতে হবে!যেই ভাবা সেই কাজ আইডি কে যাওয়ার সাথে সাথে লতা মেসেজ দিল
– কি করো, মহারাজ?
– ফুটবল খেলি মহারাণী!
– তো হাতে ব্যাট কই তোমার??
– ব্যাট নাই, রামদা আছে, আর একবার উল্টা পাল্টা কথা বললে সোজা কোপাবো তোমাকে
– তাহলে তোমার কি হবে?
– মানে (খুশি হয়ে)
– তোমাকে যে পুলিশ নিয়ে গিয়ে গরুর দড়ি গলায় দিয়ে দিবে
– হুম(!!!!!!!!)
-মন খারাপ?
– কিছু বলতে চাই
– বলো? আমি কি মানা করছি?
– সবসময় এরকম করো কেন?
– আমি কি করলাম?
– তুমি কি কিছু বোঝ না?
– জানো গণিত স্যার ও এভাবে বলে, আমি গণিতের কিচ্ছু পারিনা!
– বাই, ভাল থাকো
– আরে রাগ করো কেন?
– রাগ করিনি
– হইছে আর ঢং করা লাগবে না, কি বলবা বলো?
– এভাবে বলতে পাবো না, কারণ তুমি কেমন আমার বোঝা হয়ে গেছে। পরশু দেখা করি চল?
– পাগল হইসো?
– কেন? তোমার বাসা থেকে আমাদের বাসায় আসতেই তো একদিন লাগে!
– সকালের টিকেট কিনে নিয়েছি। সকালে বাসে করে চলে যাবো ঢাকায়। এক বন্ধুর মেস এ উঠবো। পরদিন দেখা করে চলে আসবো বাসায়।
– মানে কি? আমাদের বাসায় আসবে না?আম্মু শুনলে মন খারাপ করবে
– আন্টি কে বলিও না। খুব ঘুম ধরছে, কাল যার্নি করবো, এখন ঘুমাই
– ওকে টাটা।
ঘুমিয়ে পরলাম। ঘুম থেকে উঠে তারাতারি রেডি হয়ে রওনা দিলাম! খুব ভালো লাগছে যাকে এতটা ভালবাসি তার কাছে যাচ্ছি সব কথা বলবো বলে! মনে আমার খুশি যেন ধরে না! চোখে হাজারো স্বপ্ন আর অনেক কিছু ভাবছি। কিভাবে ওকে মনের কথা বলবো। ওর কথা ভাবতে ভাবতে কখন যে চলে এসেছি বুঝতেই পারিনি। বাস থেকে নেমে বন্ধুর মেস এ গেলাম। এমন সময় পাগলির কল আসলো
– কোথায় তুমি?
– এইতো সবে মাত্র আসলাম
-খাইসো কিছু?
– আরে মাত্রই তো আসলাম।
– ওহ তাইতো
– আজ মেডামের কি হইছে? এত্ত কেয়ার আজ ব্যপার কি?
– হাজার হলেও স্যার আজ আমাদের শহরে এই প্রথম এসেছে কেয়ার তো করতেই হবে নাকি?
– হুম করো বেশি করে করো
– বলতে হবে না। এখন যান ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নেন, তারপর ফেবু তে আসেন
– ওক্কে মহারাণী
গোসল করে ফেবুতে গেলাম। ওর সাথে অনেক কথা বললাম।। তারপর বন্ধুটির সাথে ওকে নিয়ে অনেক গল্প করলাম। বন্ধুটিও অবাক, আমাদের গল্পটা নাকি অনেক ভাল লেগেছে ওর কাছে! ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম তাই ঘুমাতে গেলাম! কাল সকালে তো আবার মহারাণী কে নিয়ে ঘুরতে যাবো। বিছানায় শুইতেই আজ কেন জানি ঘুমিয়ে গেলাম। একটু পর ফোনে কল আসলো। মহারাণী কল দিছে
– উফ, কি? একটু আগেই না কথা বললাম? এখন একটু ঘুমাই?
– ওই মেন্টাল। কথা বলছি কাল রাত ১০ টায়। এখন সকাল ৮টা বাজে!
– কি! এত ঘুমাইলাম? কিভাবে?
– এগলান পরে ভাবিয়েন ৯টার মধ্যে চলে আসেন। আমি এস এম ওস করে ঠিকানা দিচ্ছি
– ওক্কে
তারাতারি করে ফ্রেশ হয়ে কোনরকম নাস্তা করে বের হইলাম। ভাবতেও অবাক লাগছে ৫/৬ বছর পর ওকে দেখবো! না বলা কথা গান টা মনের মধ্যে বেঁজে উঠছে । ইচ্ছে করছে ইলিয়াসের মত আমিও চিৎকার করে বলি, “শোন বলি তোমায়, না বলা কথা গুলো আজ বলে দিতে চাই” জায়গা মত চলে গেলাম। একটা পার্কের ঠিকানা ছিল! গেলাম। অপেক্ষা করছি, কিন্তু ও নেই। একটি ঘন্টা পার হয়ে গেল। ওর ফোন টাও অফ হয়ে আছে। খুব কষ্ট হচ্ছে, মনে হচ্ছে ও কেন আমাকে ধোঁকা দিল? নিজের অগোচরে কখন কেঁদে দিলাম বুঝতেই পারিনি। ২ ঘন্টা হয়ে গেল ও নেই। নাহ্ চলে যাব। সোজা বাসায় যাব আর কখনো ওর সাথে কথা বলবো না। এই অপমানের কথা মনে থাকবে আমার সারাজীবন, এই ভেবে উঠে যাবো এমন সময় শাড়ি পড়া পরীর মত সুন্দরী একটা মেয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো। আমিতো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি, এত সুন্দর মেয়ে? আমার চোখ যেন জুড়িয়ে গেল! কিছু বলার আগেই ও বলতে লাগল,,
– আর বলিও না রে, এসেই গেছিলাম এমন সময় কয়েকটা বেয়াদব ছেলে এসে টাকা মোবাইল সব নিয়ে যায়! তাই রিক্সা ঘুরিয়ে আবার বাসায় যাই, টাকা নিয়ে আবার আসলাম। কিছু মনে করিও না বাবু! আমি ভাবিওনাই তুমি অপেক্ষা করবে!!
– তো তোমাকে যেতে বলছে কে? আমার কাছে ছিল তো টাকা। আমার কাছে নেয়া যেত না?
– জ্বি না, মহারাজ আমাদের কুটুম। তার কাছে কিভাবে নেই?
– হইছে আর বলা লাগবে না। তুমি ছবির থেকেও অনেক সুন্দর লতা। আমি ভাবতেও পারিনি তুমি এত সুন্দর
– থাক বস্ আর পাম দিতে হবে না। আমি না এখন যাবো
– যাবে মানে?
– কাজ আছে। আর তোমার কথাগুলো কাল শুনবো
– কাল আবার আসতে হবে?
– হুম, কাল সেম টাইম সেম জায়গায় চলে আসবা, আমারো কিছু বলার আছে
– তো আজ বললে কি হবে? আবার কাল আসবো?
– কেন, মহারাজ কি আর একটা দিন কষ্ট করতে পারবে না?
– হুম, কেন পারবে না?
– আচ্ছা যাই?
– চলো এগিয়ে দেই?
– না না তুমি তোমার বন্ধুর মেস এ যাও আমি তোমার পরে আসছি!
– ওকে!
চলে আসলাম। পাগলি টার সাথে আর কথা হচ্ছেনা আজ। কারন ফোন নেই ওর এখন। আর আমারো যে অবস্থা! নিজের জামা কেনার টাকা নেই ওর জন্য ফোন কিনবো কিভাবে?? অবশেষে বন্ধুটির কাছে ৭হাজার টাকা ধার নিলাম! কোনরকম একটা ফোন কিনে সুন্দর একটা মোড়কে মুড়িয়ে নিলাম। আর অস্থির হয়ে আছি কখন এই সুন্দরি টার কাছে যাবো, আর সব কথা বলবো? বলবো কিভাবে এই ৬ বছর ওর জন্য আমার সমস্ত ভালবাসা জমিয়ে রেখেছি ওর বুকে। এই বুকে যেন শুধুই ওর অধিকার আর কারো না! আচ্ছা ও কি আমাকে ভালবাসে? বাসবে না কেন? এভাবে আর কে ওকে ভালবাসবে নিঃস্বার্থভাবে? খুব ইচ্ছে করছে পাগলি টাকে জড়িয়ে ধরে আমার ভালবাসার গভিরতা বুঝিয়ে দেই!
আর ঘুম হল না রাতে। যত সব উল্টাপাল্টা ভাবনা মাথায়। এখনো সম্পর্ক শুরুই হয়নি তাতেই বাচ্চার নাম দিয়ে ফেলেছি! ছেলের নাম হবে “লাবিব” লতার নাম এর সাথে মিল রেখে, আর মেয়ের নাম হবে “রুমা” আমার নামের সাথে মিল রেখে!! খুব লজ্জাও লাগছে। কিন্তু ফিউচার প্লান তো করতেই হবে নাকি? যাই হোক সকাল সকাল চলে গেলাম ঠিক টাইমে। হাতে মোবাইল আর এক গুচ্ছ গোলাপ। আর ওরে ফিল্মিষ্টাইলে প্রোপজ করবো! কিন্তু এত বড় পার্কে কোথায় খুঁজবো ওকে? ভাবতেই পিছন থেকে ডাক পড়ল
– এই রাতুল ঘুরে দেখি আমার মহারাণী হাসতেছে। ওর হাসি দেখে আমার মন টা যেন প্রাণ ফিরে পেল। এখন মারা গেলেও আমার কোন আক্ষেপ নেই। ওর সাথে কে ওটা? কিছু বলার আগেই……
– রাতুল, ওর নাম সাগর, & সাগর ওর নাম রাতুল। এই সেই রাতুল যার কথা বলছি
– ওহ, হাই ব্রো! তোমার কথা অনেক শুনেছি ওর মুখে(সাগর)
– হাই(আমি)
– রাতুল তোমাকে বললাম না যে তোমাকে কিছু বলবো? এই রাতুলের কথাই বলতে চেয়েছি! আমাদের গত ২ মাসের সম্পর্ক! ওর অনেক বড় ব্যাবসা। অনেক বড় ফ্যামিলির ছেলে। আমরা বিয়ে করতে যাচ্ছি। কেমন হবে বলো তো?
– হুম, দুজনকে বেশ মানিয়েছে(এ আমি কি শুনলাম? যার জন্য এতবছর ধরে ভালবাসা জমে রেখেছি সে কিনা? অনেক কষ্টে চোখ দুটো কে আটকে রাখলাম! যাতে বৃষ্টি না ঝড়ায়)
-যানো রাতুল কাল ও আমাকে iphone x গিফট করছে আমার ফোন নেই জন্য!
– তাই? তুমি খুব ভাগ্যবতী লতা।
– থ্যাংকস, আচ্ছা তুমি কি জানি বলতে চেয়েছিলে? আর এগলান ফুল আর গিফট কার জন্য?
– ওর এগুলে? আমার পাগলির জন্য!
– তোমার পাগলি? কে সে?
– ওর কথাই তো বলতে এসেছি। কিন্তু আজ শুনি ও আর নেই
– হোয়াট? (লতা আর সাগর)
– হুম। ৬ বছর ধরে ওর জন্য ভালবাসা এই বুকে ধরে রেখেছিলাম।
বুকে রেখেছিলাম হাজারো স্বপ্ন! ওকে নিয়ে ঘুরবো। এই বুকে যে শুধু পাগলি টার জায়গা ছিল। আমি যে ওকে খুব ভালবেসেছিলাম। জান লতা, বাচ্চার নাম ও দিয়েছিলাম “লাবিব আর রুমা” ওর জন্য এই গিফট গুলো এনেছিলাম! কিন্তু কথা গুলো বলতে বলতে আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না, ডুকরে কেঁদে উঠলাম। শুধু বলতে পারছি না আমি অনেক ভালবাসি তোমায় লতা। আমি বাঁচবো না তোমাকে ছাড়া। তুমি আমার সব লতা। এভাবে বলতে খুব ইচ্ছে করছিল। কেন জানি আমার কান্না বেড়েই যাচ্ছে!
– এত্ত ভালবাসো ওকে? কেউ এত্ত ভালবাসতে পারে?(লতা)
– কিন্তু এত ভালবেসে কি লাভ হলো বলো যদি সেই না থাকে? সাগর ব্রো
– হুম ব্রো বলো,
– লতা খুব ভালো মেয়ে ওকে কষ্ট দিও না কখনো
– তা কি বলতে হয়? ও তো আমার কলিজা ( বলতে বলতে লতা কে জড়িয়ে ধরল)
কেন যানি ডুকরে কেঁদে উঠলাম। আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারলাম না। হাঁটা শুরু করলাম। পেছন থেকে হয়তো ডাকতেছিল, কিন্তু আমি যাচ্ছি চোখ মুছতে মুছতে আসলে এগলান ভালবাসার কোন মুল্য নেই। এতদিন ধরে কথা বলি আর ও বুঝতেই পারলো না?ভাল যদি না বাসে তাহলে এতদিন এভাবে কথা বললো কেন? আসলে দোষ টা আমার এ ছিল। কারন ওর হবু স্বামী বিরাট বড় ব্যাবসায়ি, দামি মোবাইল গিফট করে, আর কোথায় আমি? যার একটা শার্ট এক বছরের আগে নষ্ট হলে চিন্তা ধরে যায়!!হয়তো এটাই আমার জীবনের শেষ কান্না।
আমি চাই পাগলি টা যেখানে থাকুক, যার সাথেই থাকুক, যেন ভাল থাকে!! এই শহর আমার জন্য বিষাক্ত। এই শহরে আর কখনো আমার আগমন যাতে না হয় এই প্রার্থনা করে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম, আমি ওর জন্য আজ কাঁদছিনা। কাঁদছি নিজের জন্য। কারন আমি ভুল করেছি। আর কিছু বলার নেই, ভাল খাকবেন!!?