জানেন আপনাকে না অনেকটা দেখতে বেশ বাচ্চা বাচ্চা টাইপের মনে হয়” আমি কথাটা শুনে বেশ ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলাম।তারপর নিজের দিকে একবার তাকিয়ে বেশ লজ্জা মিশ্রিত চেহারা নিয়ে ওর দিকে তাকালাম।।আমার এভাবে লজ্জা পাওয়া চেহেরা দেখে রাইসা ফিক করে হেসে দিল।আমি নিশ্চল চোখে হাসিটার দিকে তাকিয়ে আছি।ইস কত’ই সুন্দর করে’ই না মেয়েটা হাসতে পারে।ইচ্ছে করছে এখনি গিয়ে গালটা টেনে লাল করে দিতে।আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে ও মুখ টিপে হাসতে লাগল।এত হাসি কোথা থেকে যে আসে।আমি এসব ভাবতে ভাবতে আর ও বেশি লজ্জা পেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে থাকলাম।বেশ কিছুক্ষন পর ও হাসি থামিয়ে আমাকে বলল।
-এই যে মি. আর লজ্জা পেতে হবে না এবার এই ব্যাগ ধরেন আর রিক্সায় উঠে বসেন।
আমি কিছু না বলে এক হাতে ব্যাগ গুলো নিয়ে রিক্সায় উঠে অন্য হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দিলাম।ও সামান্য একটু হেসে আমার হাত ধরে রিক্সায় উঠে বসল। ব্যাগে কি আছে জানি না আর কোথা যাচ্ছি সেটা ও জানি না।তবুও কিছু না বলে চুপ করে থাকলাম।আর আশপাশ দেখতে লাগলাম।খানিক পর পর ওর দিকে আড় চোখে তাকাতে লাগলাম।দেখলাম রাইসা ও বেশ আমার দিকে আড় চোখে দেখছে।আর চোখে চোখ পড়তেই ও লজ্জা পেয়ে অন্য দিকে তাকাচ্ছে।এভাবে বেশ কিছুক্ষন যাওয়ার পর আমি সাহস করে ওর হাতটা আস্তে করে ধরলাম।দেখলাম ও কেমন যেন করে থাকাল।তারপর হাতটা ছাড়িয়ে আমার হাতে চিমটি দিয়ে বলল।
-নামেন চলে এসেছি।
ধুর এখনি চলে আসতে হল আর কিছুক্ষন পর আসলে’ই ত হত।এসব ভাবতে ভাবতে রিক্সা থেকে নেমে ওর পিছুপিছু হাটতে লাগলাম।খানিক্ষন হাটার পর দেখলাম একটা এতিমখানা বেশ মাঝারি ধরনের।ওর মুখে কয়েকবার শুনলে ও কোনদিন আসা হয় নি।আসলে ব্যস্ততার কারণে ওর সাথে এখানে আসার কথা থাকলে ও আসা হয় না।ও যে আজ আমাকে নিয়ে আসবে আমি ভাবতে’ই পারিনি।আর আমাকে ও বলে ও নি। “আজ বিকালে ফ্রী থাকলে চার’টায় আমার বাড়ির সামনে চলে আসিয়েন।একটা জায়গায় নিয়ে যাব আপনাকে।আর আমি ঠীক সময়ে আপনার জন্য অপেক্ষায় থাকব”
আজ অফিস বন্ধ থাকায় ঘরে বসে বোরিং সময় কাটাচ্ছিলাম।হঠাৎ ফোনের মেসেজ টোং বেজে উঠলে মোবাইল নিয়ে দেখি রাইসার মেসেজ।আমার বেশ ভাল লাগে ওর এরকম হুটহাট করে আমার সাথে দেখা করার চাওয়ার বিষয়টা।যেহেতু অফিস বন্ধ বিকালে ফ্রী সেহেতু যাওয়া’ই যায়।বিকালে ঠীক সময়ে ওর বাড়ির সামনে পৌছে দেখি ওর সামনে একটা রিক্সা আর হাতে কিছু ব্যাগ নিয়ে দাড়িয়ে আছে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।আমাকে হয়ত দেখতে পায়নি।আমি কিছুটা অবাক হয়ে সামান্য হেটে ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম।আমাকে প্রথমে দেখে ও কেমন জানি করে থাকাল। আমি ও কিছু না বলে ওর দিকে তাকিয়ে থাকলাম।কারণ আজ ওকে আজ অন্যরকম লাগছে।বলতে গেলে প্রচন্ড রকমের ‘রুপবতীর’ মত।আমার এভাবে তাকিয়ে থাকা দেখে আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল। “জানেন আপনাকে না অনেকটা দেখতে বেশ বাচ্চা বাচ্চা টাইপের মনে হয়”
গেট দিয়ে এতিমখানার ভেতরে প্রবেশ করত’ই আমাকে বেশ অবাক করে দিয়ে কিছু ছোট্টছোট্ট ছেলেমেয়ে এসে ওকে আপু আপু বলে জড়িয়ে ধরল।ও ব্যাগ গুলো পাশে রেখে ঠীক পরম আদরে ওদেরকে জড়িয়ে ধরে বিভিন্ন বিষয়ে ওদের খোঁজখবর নিল। তারপর বাগ থেকে কিছু খাবার খেলনার জিনিসপত্র নিয়ে একেক জনকে দিতে লাগল।এই গুলো পেয়ে যে ছোট্টছোট্ট ছেলেমেয়ের মুখে পরম তৃপ্তির হাসি।সেই হাসি যেন পৃথিবীর সবকিছুকে’ই হার মানায়।আর আমি অবাক হয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছি।হঠাৎ এক ছোট বাচ্চা এসে আমার হাত ধরে ওর সামনে নিয়ে গিয়ে বলল।
-আপু আপু ওনি কে?
ও কথাটা শুনে আমার দিকে কীভাবে যেন থাকাল।হয়ত ভাবছে কি উওর দিবে।আমি কিছুক্ষন চুপ থেকে বাচ্চাটাকে আদর করতে বললাম।
-তোমাদের দুলাভাই
কথাটা শুনে বাচ্চারা বেশ হেসে হেসে দুলাভাই দুলাভাই বলে আমার দিকে এগিয়ে আসল।আমি ওর মুখের অবস্থা দেখে বুঝলাম বেশ লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে আছে।তারপর ব্যাগ গুলো ওদের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বাইরে চলে গেল।
-আচ্ছা ঠীক আছে তোমরা সবাই ভাল থাকিও তোমাদের আপু হয়ত লজ্জা পেয়েছে।আগামীকাল আবার ও তোমাদের সাথে দেখা হবে বাই। আমি কথাটা বলে হেটে গেটের পাশে এসে দাড়ালাম।দেখলাম সবাই এক সাথে বলে উঠল।
-টাটা দুলাভাই।
আমি কথাটা শুনে একটু হাসলাম।তারপর গেট দিয়ে বের হতে’ই দেখি রাইসা সামনে অন্যদিকে তাকিয়ে দাড়িয়ে আছে।আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম।ও আমাকে দেখে খানিক লজ্জা পেয়ে আবার অন্যদিকে তাকিয়ে থাকল।এভাবে কিছুক্ষন চুপ থাকার পর আমি ওকে বললাম।
-চলেন সামনে হাটা যাক।
দেখলাম ও কিছু না বলে আমার সাথে হাটতে লাগল।আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে শুরু করেছে।ঠান্ডা হাওয়া ও বয়ে যাচ্ছে।ঠান্ডায় পকেটে হাত ডুকিয়ে কিছু না বলে চুপচাপ হাটতে লাগলাম।এভাবে কিছুক্ষন হাটার পর ও আমার দিকে তাকিয়ে বলল।
-আচ্ছা আপনি তখন আমার দিকে এভাবে তাকিয়ে ছিলেন কেন?
আমি কথাটা শুনে চুপ থেকে কিছু না বলে হাটতে লাগলাম।কিছুক্ষন চুপ থেকে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম।
-সুন্দর
-কি সুন্দর?
-আপনার হাসি।
আমার কথাটা শুনে ও হাসতে লাগল।এই আলো আধারীর মাঝে হাসিটা যেন বিশাল এক সৌন্দর্যের মহিমায় পরিণত হয়েছে। ইচ্ছে করছে সেই হাসির প্রেমে ডুব মারি।কিন্তু আমি সাঁতার জানি না বলে আর মারলাম নাপকেট থেকে হাতটা বের করে ওর হাতটা শক্ত করে ধরে ওর দিকে বেশ কিছুক্ষন এভাবে তাকিয়ে থেকে আবার ও বললাম।
-আর আপনিও।
আমার কথাটি শুনে ও আমার হাতটা আর ও শক্ত করে ধরে আমার দিকে তাকিয়ে একটা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিল।হাসির সাথে সাথে সন্ধ্যার আলো আধারীর খেলায় মেয়েটাকে ও ধারুন লাগছে।