বৃষ্টিস্নাত ভালবাসা

বৃষ্টিস্নাত ভালবাসা

সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। থামার কোন নাম নেই। আজ নীলার সাথে দেখা করার কথা ছিল। আসলে গত কয়েকদিন ধরেই দেখা করার কথা ছিল কিন্তু প্রতিদিন যে সময় দেখা করার কথা থাকে বৃষ্টি ঠিক তার কিছুক্ষণ আগেই শুরু হয়। সেদিক থেকে আজকের অবহাওয়া একটু উন্নত সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। মেয়েটা বলেছে আজ বৃষ্টি হলেও বিকেলে সে পার্কে আসবেই। আমি অবশ্য তাকে আসতেও বলিনি আবার মানাও করিনি। আমি তার আসা না আসা নিয়ে চিন্তিত না আমি চিন্তিত আমার যাওয়া না যাওয়া নিয়ে।

কারন যদিও আমার বৃষ্টিতে ভিজতে ভাল লাগে, কিন্তু ডাক্তার আমাকে বৃষ্টিতে ভিজতে মানা করেছিল। বৃষ্টিতে ভিজলেই আমার জ্বর আসে নীলা সেটা জানে কিন্তু আজ বাধ্য হয়েই যেতে বলেছে। মাসখানেক হল দেখা হয় না আর প্রতিদিন এই বৃষ্টি তাই যেতেই হবে আজ। কপাল ভাল হলে অবশ্য নাও ভিজতে হতে পারে। যাই হোক সেটা বিকেলেই দেখা যাবে। এখন পিচ্চিটাকে একটা খবর দেওয়া দরকার কিন্তু ওই বেটার তো ফোন নাই, কি যে করি? এই বৃষ্টির মাঝে পিচ্চিটাকে খুজে পাওয়াটাও মুশকিল। তাহলে কি??? নাহ সেটা করা যাবে না। দেখি আজ নিজেই খুজে পাই কি না।

অনেকক্ষন হল বের হয়েছি কিন্তু এখনও কোন কিছুই করতে পারলাম না। অনেক ফুলের দোকান ঘুরলাম কিন্তু কদম ফুল আর খুজে পাচ্ছি না। শেষ পর্যন্ত কি খালি হাতেই যেতে হবে তাহলে। ইতিমধ্যে কাকাভেজা হয়ে গেছি কারন ছাতাটা দুদিন আগেই হারিয়েছি আর রেইন কোট কেনার সামর্থ এই বেকারের নেই। রিক্সা নিয়ে ঘুরব সেটাও এই বৃষ্টির দিনে সম্ভব না কারন আকাশচুম্বী ভাড়া দেবার সামর্থটাও আমার নেই। তাই বৃষ্টির পানিতে ডুবে থাকা রাজপথে পায়ে হেটেই ঘুরতে হচ্ছে। কিছুই করার নেই।

অনেক ঘোরার পর শেষ পর্যন্ত কদম ফুল পেলাম মাত্র দুইটা কিন্তু দামখানা একটু বেশি। আমার মত বেকারের জন্য একটু না ভালোই বেশি । তবুও এবার আর পকেট না খুলে থাকা যাবে না। এটা যে মেয়েটার মুখে হাসি ফোটাবে আর সেই হাসির জন্য আমি যে সবকিছুই করতে পারি। আমি যে তার অই হাসি মুখের টোল পড়া গালের প্রেমেই হাবুডুবু খাচ্ছি সেই প্রথম দিন থেকেই। সুতরাং ফুল কিনতেই হবে।. ফুল কেনা শেষ এবার পার্কে যেতে হবে। হাতের ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখি ৪টা বাজতে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকি কিন্তু এখান থেকে হেটে গেলে পার্কে যেতে সময় লাগবে আধা ঘন্টার মত তাই অগত্য রিক্সায় উটতে হল। রিক্সায় ওঠার কয়েক মিনিটের মাথায় নীলর ফোন –

-কই তুমি?
-এই তো রাস্তায়। আর ১০ মিনিটের মত লাগবে।
-আচ্ছা তাড়াতাড়ি আস আমি ওয়েট করতেছি।

বলেই ফোনটা রেখে দিল। আমিও খুশি মনে আবার ফোনটা পলিথিনের প্যাকেটের ভিতর ঢুকিয়ে রাখলাম। কারন এটা ভিজে নষ্ট হলে আবার ফোন কেনা অনেক কষ্টকর হবে। রিক্সা আপন গতিতে চলছে, প্রায় কাছাকাছি এসে পৌঁছেছি এমন সময় রিক্সার চাকাটা ঢাকনা বিহিন ম্যানহলের মুখে আটকে গেল সাথে সাথেই আমি আর রিক্সাওয়ালা দুজনেই কাদাপানিতে পড়ে গেলাম। এতক্ষন শুধু ভেজা ছিলাম এখন কাদা মেখে যেমন খুশি তেমন সাজো প্রতিযোগীতার প্রতিযোগী হয়ে গেলাম।

বুঝতেছিনা এভাবেই পার্কে যাব নাকি আগে বাসায় যাব। বাসায় গেলে আরও আধা ঘন্টা বসিয়ে রাখতে হবে নীলাকে তাই বাসায় না গিয়ে পার্কেই যাই। রিক্সাওয়ালাকে টাকা দিয়ে পার্কের দিকে হাটা দিলাম রাস্তার মানুষগুলো আমার পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে কিন্তু আমার দিকে তাকাচ্ছেও না কেউ। আসলে কার তাকাবার সময় নেই। পার্কে ঢুকেই আগে ট্যাপের পানি দিয়ে ফুলগুলো ধুয়ে ফেললাল তারপর নিজের শরীরের কাদাগুলো ধুয়ে নিলাম।তারপর পার্কের এক কোনায় বসে থাকা নীলার কাছে গেলাম। নীলা আমাকে দেখতেই বলে উঠল

-একি অবস্থা তোমার? তোমার ছাতা কই?
– ছাতা দুদিন আগে হারিয়ে ফেলেছি।
– তো আগে বলনি কেন? আজ দেখা করতাম না।
-আরে বাদ দাও এই নাও তোমার কদম ফুল।

নীলা ফুলগুলো নিয়ে একটু হাসতে যাবে ঠিক তখনই আমি ধপাস। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে আবিষ্কার করলাম হাসপাতালের বেডে। পাশে বসে থাকা নীলার চোখগুলো ফুলে আছে। মেয়েটা মনে হয় অনেক কেঁদেছে। নীলার দিকে তাকিয়ে একটু হাসির চেষ্টা করতেই ঠাস করে একটা চড় মেরে দিল মেয়েটা আর হাউমাউ করে কান্না শুরু। বুঝতে পারছিলাম না কি করব। আস্তে করে বুকে টেনে নিলাম আর বললাম আমি ভাল আছি তো।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত