-তুমি আমাকে বিয়ে করবা না, তাই না? ৩ বছর ধরে বলছি তোমার গায়ে লাগে না? আমি মেয়ে হয়ে বিয়ের জন্য এত ঘেন ঘেন করছি বলে তুমি মাথায় উঠে গেছ। ঠিক আছে। আমি আর তোমার সাথে রিলেশান রাখবোনা। আমাকে আর কল দেয়ার সাহস ও করবা না।
-দেখ রুপন্তি, আমি একবারও বলিনি যে বিয়ে করবোনা। তুমি ছাড়া আমি কাকে বিয়ে করবো বল? আমি শুধু বলছি যে সবাই অনেক কষ্ট পাবে, যদি শোনে যে তারা রাজি থাকার পরও আমরা লুকিয়ে বিয়ে করছি।
-আমি কি একবারও বলেছি যে বাসায় জানাতে? দেখ এত কথার দরকার নাই।
তুমি ফাইনাল কথা বল নেক্সট মাসে আমাকে বিয়ে করবা কিনা? যদি করতে চাও তাহলে রিলেশান থাকবে নাহলে আল্লাহ হাফেয কথাগুলো মনে পড়ে যায় রুপন্তির। মুখে মিষ্টি লাজুক একটা হাসি নিয়ে সে ভাবে, অবশেষে সেই দিনটা চলেই আসল।
রায়ানের সাথে পরিচয়টা খুব অদ্ভুতভাবে হয়েছিল। ৩ বছর আগে। 1st prof এর ১০দিন আগে নতুন মোবাইল কেনে রুপন্তি। তারপর সারাদিন পড়া বাদ দিয়ে মিগে পরে থাকতো। সেইখানে একদিন পরিচয় রায়ানের সাথে। ও বুয়েটে পড়ে। রুপন্তির ২ বছরের সিনিয়র। প্রথম প্রথম এটুকুই জানতে পারে রুপন্তি ওর ব্যাপারে। তারপর অনেকদিন পর আবার অনলাইনে দেখা হয়। ততদিনে রায়ানের ব্যাপারে সব ভুলে বসে আছে রুপন্তি। আবার নতুন করে পরিচয় হয়। রায়ানের গ্রামের বাড়ি নাটোরে, এটা শুনে রুপন্তি বলে, কাঁচাগোল্লা আমার অনেক পছন্দের। ভাবছি নাটোরে একটা পার্মানেন্ট বাড়ি, মানে শ্বশুরবাড়ি বানালে কেমন হয়! এটা শুনে রায়ান ধুম করে বলে বসল, তুমি কি আমাকে বিয়ে করতে চাইছ? রুপন্তি দুষ্টুমি করে বলে, হা… রায়ান ব্যাপারটা সিরিয়াসলি নেয়।
তার দুইদিন পরেই রায়ান প্রোপোজ করে রুপন্তিকে, কিন্তু রুপন্তি ব্যাপারটা ঐভাবে ভাবেনি। মানা করে দেয় রায়ানকে। চ্যাট করা বন্ধ হয়ে যায় দুজনের। ১ মাস পর রায়ান আবার নক করে রুপন্তিকে। আবার কথা শুরু হয়। কিন্তু দুদিন পর সেই একি কাহিনী! রায়ান আবারো প্রোপোজ করে রুপন্তিকে। যথারীতি রুপন্তি না করে।
এরপর রুপন্তি স্টাডি নিয়ে বিজি হয়ে পরে। লিখিত পরীক্ষা শেষ হয়, ভাইভার ডেট ও দিয়ে দেয়।১৪ই ফেব্রুয়ারি,২০০৮। রুপন্তির biochemistry ভাইভা।
১৩ই ফেব্রুয়ারি, মানে আগের দিন পড়তে বসে হঠাত কি মনে করে মিগে ঢুকে রুপন্তি। এক চ্যাট রুমে রায়ানের আইডি টা দেখে। দেখেই রুম থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু ততক্ষনে রুপন্তিকে নক করে রায়ান। পড়া বাদ দিয়ে সারারাত চ্যাট করে রুপন্তি, রায়ানের সাথে। ঠিক হয় ১৯শে ফেব্রুয়ারি তারা ফোনে কথা বলবে।১৯শে ফেব্রুয়ারি প্রথম কথা হয় ওদের। কিন্তু পুরনো সেই স্বভাব যায়নি রায়ানের আবারো ঠিক দুইদিন পর সেই প্রোপোজ! এবারো রুপন্তি না। আবার কথা বন্ধ।
কিন্তু এরপর সব বদলে যায়। তিন তিনবার না বলার পর থেকেই রুপন্তি কেন যেন রায়ান কে মিস করা শুরু করে। কিন্তু তখন আর কিছু করার ছিলোনা। রায়ানের নাম্বার ডিলিট করে দিয়েছে রুপন্তি। ইচ্ছে থাকলেও ফোন দিতে পারেনা। কি করা যায় ভাবতে থাকে। অবশেষে মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। নতুন একটা আইডি খুলে মিগে। তারপর ঐ আইডি দিয়ে রায়ানকে এড করে। তারপর ওর সাথে চ্যাট করা শুরু করে। রুপন্তির পছন্দের সব কথা বলতে থাকে রায়ানকে। তারপর রায়ানকে আগ্রহী করে তোলে রুপন্তিকে ফোন দেয়ার জন্য। ঐদিন রাত ৩টা ৫৭ মিনিটে রায়ান কল দেয় রুপন্তিকে। জাস্ট এক মিনিট কথা হয়। পরদিন রায়ান ফোন দিয়ে বলে, দেখ আমি তোমার সাথে কথা না বলে থাকতে পারছিনা।
তারপর চলতে থাকে দুজনের রাত জেগে কথা বলা। এরপর রায়ান একদিন রুপন্তিকে বলে, দেখ আমার সাথে এফেয়ার না কর ওকে, কিন্তু তুমি পাস করে বের হওয়ার পর আমাদের ফ্যামিলি রাজি থাকলে তুমি আমাকে বিয়ে করবে প্লিজ। এবার রুপন্তি আর পারেনা রায়ান কে ফিরিয়ে দিতে। কি বলে ফিরাবে?ওর মন ততদিনে বাধা পরে গেছে রায়ানের কাছে। হা বলে দেয় ও রায়ানকে। এর দুমাস পর প্রথম দেখা হয় রায়ানের সাথে। দিন চলে যায়…
ওদের রিলেশান গভীর হতে থাকে। রোমান্স এর চেয়ে ঝগড়াই বেশি হয় দুজনের, কিন্তু যখনি ঠিক হয় রিলেশান টা আর রাখা যাবেনা, চিন্তা করেই দুজনের মাথা খারাপ হয়ে যায়। ঝগড়া করুক আর যাই করুক, কেও কাওকে ছাড়া কিছু ভাবতে পারেনা। রুপন্তি, এই রুপন্তি। কোথায় তুই?????? আর কতক্ষন লাগবে? টাইম হয়ে যাচ্ছে তো বন্ধুর ডাকে বাস্তবে ফিরে আসে রুপন্তি। মনে পরে যায় আজ তার বিয়ে। তাকে রেডিন।রায়ান ওয়েট করছে ওর জন্য শুধুই ওর জন্য….