গার্লফ্রেন্ড

গার্লফ্রেন্ড

এবার নিয়ে তৃতীয় বারের মতন ধরা খেলো রুদ্র। নারী ঘটিত ব্যাপার। রুদ্র আবার নারীদের ব্যাপারে বেশ স্পর্শকাতর। মানে নারীদের গন্ধ পেলেই তার সাথে ভাব জমানোর জন্য কাতর হয়ে পরে। বর্তমানে তিনি চার-চারটি গার্লফ্রেন্ড এর সহিত বর্তমান। প্রথম বার ধরা খায় স্কুলে ও দ্বিতীয় বার কলেজে থাকতে। ডেটিং এর সময়। বলা বাহুল্য যে দু বার দু মেয়ের সাথে।

প্রথমবার ড্রাইভার এবং পরেরবার পাশের বাসার আন্টি কিভাবে যেন দেখে ফেলে। মা কে বলে দেয়। মা হাতে নাতে ধরতে পারেন নি বলে কোনো action নেন নি। এরপর থেকে অবশ্য মা সন্দেহে চোখ-নাক কুঁচকে রাখতেন কিন্তু এবার তো পুরাই কট। কোন অলুকক্ষনে সময়ে যে বন্ধুর বাসায় দাওয়াত ছিল তাড়াহুড়ো করে বেরতে গিয়ে মোবাইলটা ডাইনিং টেবিলে ফেলে এসেছিল ব্যস! হাটে হাড়ি ভেঙ্গে চুরমার! এক এর পর “মেয়ে বন্ধুদের’’call আসা শুরু হয়। মা ফোন ধরেনরিসিভের সাথে সাথেই কেউ বলে, “জান কি কর?”কেউ বলে, “কেমন আছে আমার দুস্টুটা?। এক জন তো ফোন করেই, “উমমমমমাহ!”

নারীমহলে ছেলের বিরাট জনপ্রিয়তা দেখে মা তো রীতিমত শিউরে উঠেন। “নাহ, ছেলে তো control এর বাইরে চলে যাচ্ছে এখুনি কিছু একটা করা লাগবে নাহলে তো ছেলে না জানি কবে বংশের মুখে “ঢাকা ওয়াসার পানি” ছিটিয়ে দিয়ে যায়। পরদিন বাসায় জরুরী meeting। আপু-দুলাভাই এসেছেন। দুলাভাই রুদ্রকে বলে, “তুমি তো মিয়া বিরাট চালু দেখে তো মনে হয় ভাজা মাছটা উল্টায়া খাইতে পার না আর এক সাথে চার-চারটা!! manage কর কেমনে? আমি তো life এ সর্বসাকুল্যে দুইটা প্রেম করসি।’’ রুদ্র বুঝে না যে এতে দোষের কি আছে। তবুও নিরব শ্রোতার মত শুনে যায়। ফাইনাল verdict এর অপেক্ষায় থাকে।

সারাদিন রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর স্বিদ্ধান্ত হল যে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ওর বিয়ে দেয়া হবে। যেন ও tight হয়।
“ওমা!!! কি বলে এসব!! কেবল মাত্র অনার্স ফাইনাল ইয়ারে এ পড়ে আর এখনি বিয়ে!!! কি মুশকিল!!” -ভাবে রুদ্র। বিপাকে পরে গেল বেচারা। এমন বিচার আশা করে নি ও। এই স্বিদ্ধান্তের জনক রুদ্রের বাবা তাই রুদ্র প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না। উনি চরম বদরাগী ও ঘাড়ত্যাড়া পাবলিক। রুদ্র যমের মত ভয় পায় লোকটাকে। চিন্তা করে মানে মানে তার কথা মেনে নেয়াই ভাল। দুদিন পর পাত্রীর নাম ঘোষনা করা হল। তানিয়া । মা’র বান্ধবীর ফুপাতো বোনের মেয়ে। ইডেনে পড়ে। বিরাট বেজার রুদ্র। কোথাকার কোন মেয়ের সাথে সারাজীবন থাকা লাগবে। অন্তত মেয়েটার সাথে কয়েকদিন ঘোরাফেরার সুযোগ দিত। তা না, ধুম করে বিয়ে।

অবশেষে বিয়ে হল। বাসর রাত। বন্ধুরা বলেছে বেড়াল মারতে। ওমা! ও কি বেড়াল মাড়বে! ঘরে ঢুকে ওই বেড়াল হয়ে যায়। ঘরে ঢুকে দেখে যে নতুন বউ ঘরের মাঝখানে কোমরে দুই হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। একেবারে যাকে বলে রুদ্রমূর্তি। রুদ্র কিছু বলার আগেই তানিয়া বলে, “দেখো আমি তোমার সম্পর্কে সব শুনসি তুমি খুবই লুইচ্চা একটা ছেলে আমার বাপটা যদি হঠাৎ করে মরে না যেতো তাহলে তোমার মত বড়লোকের লুইচ্চা ছেলেরে জীবনেও বিয়ে করতাম না। যতদিন না এইসব লুইচ্চামি ছাড়বা ততদিন আমার সাথে স্বামীগিরি ফলাইতে আসবা না।’’ হতবম্ব হয়ে কথাগুলো শোনে রুদ্র। কি বলে এই মেয়ে! ও লুইচ্চা তাও আবার ওর ঘরে দাড়িয়ে! ঘটনার আকস্মিকতায় আর কিছু বলতে পারেনা ও। বিছানা থেকে একটা বালিশ নিয়ে রুদ্রের হাতে ধরিয়ে দিয়ে তানিয়া বলে- ‘নিচে শোও’।

রুদ্রের মনে হয় যে ঘর থেকে বের হয়ে যায় কিন্তু বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে অনেক মানুষ। লোকে কি বলবে এই ভেবে বালিশটা নিয়ে চুপচাপ নিচেই শুয়ে পড়ে। এভাবেই কয়েকদিন কেটে যায় পারতপক্ষে তানিয়া কে এড়িয়ে চলে রুদ্র। সামান্য কথা হয় কিন্তু কি তেজ রে বাবা! আরে এতই যদি তাকে অপছন্দ তাহলে বিয়েতে কে তাকে রাজি হতে বলেছে- চিন্তা করে রুদ্র। মেজাজ সবসময় খিটখিটে। কোন সময় মানুষের সামনে কোন বেফাস কথা বলে ফেলে- এই জন্য ও বেশ ভয়ই পায় তানিয়াকে। ওর মুখে কি ওর মা বাবা মধু দেয়নি-ভাবে ও। অথচ ওর গার্লফ্রেন্ডগুলো কি সুন্দর করে কথা বলে আহা! শুনলেই জানটা ভরে যায়। সপ্তাহখানেক পরের কথা।

রুদ্রের মন খুব খারাপ। ওর গার্লফ্রেন্ডগুলা কিভাবে যেন ওর বিয়ের কথা জেনে গেছে। দুটো already চম্পট দিয়েছে। ক্লাসের সুন্দরী রিয়াও এখন আর চোখাচোখি করে না। এদের মধ্যে সবচেয়ে পুরানো ইমি। ওর জন্যই সবচেয়ে বেশি খারাপ লাগছে। ইমিও কেমন যেন হয়ে গেছে। বিয়ের ঝামেলার মধ্যে ওর সাথে ঠিকমত কথা না বলায় একটা gap তৈরি হয়ে গেছে। ইদানিং ইমির ফোন খালি busy থাকে। কোথাকার কোন মিলনের সাথে নাকি কথা বলে। এটাও officially চলে যাবে, experience তো আর কম হয় নি। ব্যাপক মন খারাপ ওর। যে রুদ্র মেয়েদের কাছে রীতিমত hotcake ছিল সেই কিনা আজ পান্তাভাত।। আজ ক্লাস শেষে আর বাসায় ফেরে না রুদ্র। বন্ধুর বাসায় চলে যায়। মোবাইল বন্ধ করে সারাদিন ওখানে আড্ডা দিয়েই পার করে দেয়। রাতে একেবারে খেয়েদেয়ে বাসায় ফেরে। প্রায় ১২ টা বাজে। বেল চাপে। মা’র বড়সড় ঝাড়িমূলক লেকচার শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে নেয়।

কিন্তু দরজা খোলে তানিয়া। খুলেই ব্যাপক ঝাড়ি। “মোবাইল বন্ধ ক্যান তোমার? কই ছিলা সারাদিন? জানো মা কত tension করসে!’’ রুদ্র একটু নরম সুরেই বলে ‘দেখ আমার মনটা খুব খারাপ, প্লিজ বকাবাজি কোরো না। তোমার রাগ করা চেহারা দেখলে না তোমাকে ফুলন দেবী’র মত লাগে।’’ কথাটা শুনেই তানিয়া ফিক করে হেসে দেয়। রুদ্রের শরীরে ইলেক্ট্রিক শক্ লাগে এত্ত সুন্দর ওর হাসি!!! তানিয়া কে কখনও ওর সামনে হাসতে দেখে নি রুদ্র। হঠাৎ খেয়াল করে যে, আজ তানিয়া একটা শাড়ী পড়েছে। সবুজ রঙের। চুল ছাড়া,বুঝল ভেজা। মনে হয় গোসল করেছে। ওর রাতে গোসল করার অভ্যাস আছে। ‘কিন্তু তানিয়াকে আজ এত সুন্দর লাগছে কেনো?’

-ভাবে রুদ্র। “ভেতরে আস’’- তানিয়ার কথায় তন্দ্রা ভাঙ্গে রুদ্রের। ভেতরে ঢুকে দেখে ঘর মোটামুটি অন্ধকার। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। বাথরুম থেকে fresh হয়ে বেরিয়ে দেখে যে ডাইনিং এর লাইট জ্বলছে। গিয়ে দেখে তানিয়া বসে আছে। দুটো প্লেট দেখে রুদ্র বলে, -তুমি খাও নি?

-না । বসো, খেয়ে নাও। রুদ্রের পেট ভরা। তাও খেতে ইচ্ছে করে। তানিয়া ওর প্লেটে ভাত তুলে দেয়।

-এই জিনিস্টা ও নাটক-সিনেমা এবং ওর মা’কে ওর বাবার জন্য করতে দেখেছে। রুদ্র অবাক হয়ে উদ্ধত এই ঠোটকাটা মেয়েটার অবনত আর স্নিগ্ধ রুপ দেখে। একটু একটু করে বেশ খানিকটাই খায় আর আড়চোখে তানিয়াকে দেখে । মেয়েটার চোখে অনেক কিছু আছে। একদম অন্যরকম মেয়েটা। তানিয়ার প্রতি ওর ভয়টা কেটে যায়। রুদ্রের খাওয়া শেষ। তানিয়ার একটু বাকি। পুরো বাড়ি নিরব। রুদ্র নিরবতা ভাঙ্গে।

-তানিয়া, তুমি আমার গার্লফ্রেন্ড হবা? একটু বিরতি রুদ্র ঠোট কামড়ে বসে থাকে। প্লেটের দিকে তাকিয়েই তানিয়া বলে, ‘হতে পারি এক শর্তে
-কি ??
-‘আমি কিন্তু আমার বয়ফ্রেন্ডকে কারো সাথে শেয়ার করতে পারব না ।।’ বলেই তানিয়া আবার ফিক করে হেসে দেয়।
-ইয়েস !!!! উচ্ছ্বসিত রুদ্র।। এমন গার্লফ্রেন্ড একটা হলেই তো চলে।।।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত