সুমি- ভাইয়া ৫০ টাকা দে তো.?
নিলয়- এই তুই কালকে না ১০০ টাকা নিলি, এতো তারাতারি শেষ হলো?
— ওটা দিয়ে আমি চকলেট খেয়েছি, এখন টাকা দে.?
— আমার কাছে আর টাকা নেই তুই যা।
— তার মানে তুই টাকা দিবি না তাই তো?
— হ্যা দেবো না যা এখান থেকে।
— ঠিক আছে, আমি আম্মুকে গিয়ে বলছি যে আমি কালকে সন্ধায় ছাদে কাকে যেনো সিগারেট খেতে দেখেছি, মুখটা একটু চেনা চেনা লাগছিলো।
— আরে আপু আমি তো মজা করছিলাম তোর সাথে। আয় আমার কাছে আয়, তোর টাকা লাগবে তো, এই নে।
— না থাক লাগবে না। এই যে পেত্নীটার নাটক শুরু হয়ে গেছে। হাতি কাঁদায় পড়লে কোলা ব্যাঙ ও লাত্থি মারে.!
নিলয়- আরে না, আমার আপুটা স্কুলে যাবে কিছু না খেয়ে থাকবে কি রকম লাগে না, এই নে টাকা।
— এখন ১০০ টাকা লাগবে।
— এই তুই একটু আগে না বললি ৫০ টাকা?
— হুম, এখন ওটা সুদ সহ ১০০ টাকা হয়েছে। আরও দেরি করলে আরো বাড়বে।
— থাক লাগবে না এই নে টাকা।
— ধন্যবাদ ভাইয়া। উমমম্মা..
— হয়েছে, মাঝে মাঝে তোর চুমুটাও মনে হয় ব্লাকমেইলের একটা অংশ।
— না, না এটা একদম ফ্রি।
— হয়েছে, যা এখন।
ও আপনাদের তো পরিচয়ই দিলাম না। আমি নিলয় ছোট্ট একটা চাকরি করি। আর যে আমাকে ব্লাকমেইল করে টাকা নিয়ে গেলো সে আমার ছোট বোন সুমি। দেখতে মিষ্টি হলেও সবসময় আমার পেছনে লেগে থাকবে। রোজ সকালে আমার রুমে আসবে আর যেকোনো ভাবে আমাকে ব্লাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নিয়ে যাবে। আরে ভাই আমি আম্মুর কাছ থেকে কতো মিথ্যা বলে যে টাকা নেই সেখানে ও ভাগ বসিয়ে রোজ টাকা নিয়ে যাবে। তবে বোনটা আমার খুব ভালো খুব ভালোবাসে আমাকে।
সুমি- এই ভাইয়া কই তুই, আয়। ও আপনাদের সাথে কথা বলতে বলতে দেরি হয়ে গেলো, বোনকে স্কুলে দিয়ে আবার আমাকে অফিস যেতে হবে
নিলয়- হ্যাঁ, দারা আসতেছি।
পরে বোনকে স্কুলে নামিয়ে দিয়ে আমি চলে আসলাম অফিসে। অফিস শেষ করে আবার বোনের স্কুলে গিয়ে ওকে বাড়িতে নিয়ে আসলাম। এসে ফ্রেস হয়ে একটু রেস্ট নিচ্ছি একটু পর সুমি আসলো হাতে একটা লাঠি। কি ব্যাপার কোনো ভুল করলাম না কি।
নিলয়- কিছু হয়েছে আপু?
–….. (কোনো কথা নেই শুধু রাগি লুক নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
— কি হয়েছে আপু তোর।(একটু ভয় ভয় লাগছে কারন একবার যদি ও কান্না শুরু করছে তাহলে আম্মু আমার বারোটা বাজিয়ে দেবে)
— আমার আইস্ক্রিম কোথায়? এই রে কলেজ থেকে এসেতো আমি ওর আইস্ক্রিম খেয়ে ফেলেছি।
— আ- আমি কেনো তোর আইসক্রিম, তুই কোথায় রেখেছিস তোর আইসক্রিম সেখানে গিয়ে দেখ।
— আমি দেখেছি নেই তুই আমার আইসক্রিম খেয়ে ফেলেছিস।আমার আইসক্রিম দে। (এই রে কেদে দিয়েছে ।)
— আপু কাঁদিস না রে, চল তোকে তোর আইসক্রিম আমি নিয়ে দিচ্ছি তারপরেও তুই কাঁদিস না।
— হুম চল।
তারপর ওকে নিয়ে গেলাম দোকানে। ভাইরে একটা আইসক্রিমের বদলে চারটা আইসক্রিম নিয়েছে সাথে আরও চকলেট নিয়েছে সুদ হিসেবে। আরো যানি কি কি নিলো। আমার পকেট পুরাই ফাঁকা। তারপর ওকে নিয়ে বাসায় আসলাম। রাতে খেয়ে ঘুমাতে গেলাম।
সুমি- এই কোলবালিশ দিলাম, এইপাশে আমার যায়গা ওইপাশে তোর।
— এ বললেই হলে তুই পিচ্চি একটা মেয়ে তোর এতো যায়গা লাগে, আমার ওইপাশে এইপাশে তোর।
— আমি যা বলছি তাই।
— ঠিক আছে তাহলে তুই আমায় আজকে জরিয়ে ঘুমাতে পারবি না।
— আমার বয়েই গেছে তোকে জরিয়ে ধরে ঘুমাতে।
— ঠিক আছে দেখে নেবো।
তারপর ও মুখ ভেংচিয়ে অন্য পাশে ঘুরে শুয়ে পড়লো। ও আপনাদের তো বলিনি আসলে আমার বোন আমার সাথেই থাকে। শুধু অফিস টাইম ছাড়া আমার পিছু ছাড়বে না। আর রাতে ও আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমায় তাই অমন করে বললাম। অনেক রাত হয়ে গেছে ও না ঘুমিয়ে বিছানায় শুধু এপাশ ওপাশ ঘোরা ঘুরি করছে।আমি বুঝতে পারছি কেনো ও এমন করছে, আপনারা কি বুঝতে পারছেন?
নিলয়- হয়েছে আর ভাব দেখাতে হবে না, আয় আমার কাছে। বলতে দেরি কিন্তু আসতে দেরি নেই। এসে আমাকে জরিয়ে ধরলল।
— i love you ভাইয়া। আমার লক্ষি ভাইয়া, উম্মা।
— হয়েছে হয়েছে, এখন ভালোবাসিস সকালে উঠে আবার শুরু করবি।
— না আর করবো না।
— জানি, তুই রোজ এক কথা বলিস কিন্তু সকালে উঠে সব ভুলে যাস। এখন ঘুম যা।
তারপর ও আমাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পড়লো। আসলে আমার বোনটা হলো আমাদের বাসার জীবন। ওর কিছুর প্রয়োজন হলে মুখে বলতে দেরি কিন্তু সেটা আনতে দেরি নেই। আসলে বাসার সবাই ওকে খুব আদর করে। যাই হোক অনেক রাত হয়েছে এখন ঘুমাই।
সুমি- ভাইয়া। এই ভাইয়া।
–হুম,
— ভাইয়া ওঠ না।
— একটু পর উঠি বোন।
— ওই যে আম্মু আসতেছে।
— এইতো আমি উঠে পরেছি।
— খুব ভালো, এখন ৫০০ টাকা দে।
–এই তুই ৫০ টাকা থেকে একবারে ৫০০ তে গেলি।
— হুম। লাগবে দে টাকা দে।
— টাকা নেই যা।
— ঠিক আছে, তবে সকালে উঠে নিলিমা আপুর সাথে কথা বললাম, আহা কি মিষ্টি কথাগুলো। আম্মুকে বলতেই হয়।
— বোন শোন, একটু কম করা যায় না।
— আরো দেরি করলে সুধ বাড়বে কিন্তু…
— না থাক লাগবে না। এই নে, কাল আম্মুর কাছ থেকে বলে ৭০০ টাকা নিয়েছি তাও তুই নিয়ে নিলি।
— হুম, গুড বয় একটু পরে
নিলয়- এই আপু কই তুই চল।
— ভাইয়া আমি আজকে স্কুলে যাবো না।
— কেনো.?
— আমার জ্বর আসছে ।
আর কতো মিথ্যা বলবি। জানি ও যখন একবার না বলেছে তখন ওকে আর স্কুলে নিয়ে যাওয়া যাবে না। ছোট মানুষ তাই বাড়ি থেকেও কিছু বলে না। আমি চলে গেলাম অফিসে। ক্লাস করে এসে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে আছি । একটু পর সুমি আসলো
সুমি- ভাইয়া দেখি তোর হাতটা।
— কেনো?
— দিতে বলেছি দেনা।
— এই নে। (একটা ঘড়ি হাতে পড়িয়ে দিলো)
সুমি- হ্যাপি বার্থডে ভাইয়া। ও আজতো আমার জন্মদিন আমি ভুলেই গেছি।
নিলয়- ধন্যবাদ আপু, এটা কোথা থেকে আনলি।
— আব্বুর সাথে মার্কেট থেকে এনেছি। এটা হাতে যখনই দেখবি তোর আমার কথা মনে পড়বে। আমি ওকে জরিয়ে ধরে একটা চুমু খেলাম।
সুমি- ভাইয়া আয় আমার সাথে
–কোথায়?
— আসতে বলেছি আয়।
সুমি আমাকে টানতে টানতে ছাদে নিয়ে গেলো। আমি গিয়ে দেখি সবাই কেক নিয়ে আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমি কেক কেটে সবাই মিলে আনন্দ করে বাসায় আসলাম। সবাই খেয়ে রুমে গেলাম। সুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে পড়লো।
— ভাইয়া,
— হুম, বল,
— আমি তোকে অনেক জ্বালাই.?
— না রে বুড়ি। এটা তো তোর ভালোবাসা। আমার পাগলি বোন কি আমাকে জ্বালাতে পারে।
— আমি তোকে এত্তগুলা ভালোবাসি ভাইয়া।
— আমিও তোকে এত্তগুলা ভালোবাসি আপু। এখন ঘুম যা।
— ঠিক আছে, উম্মা।
— হয়েছে, এটা টাকা নেওয়ার ধান্দা তাই না।
সুমি হাসতেছে। তারপর ঘুমিয়ে গেলো। এভাবেই চলতেছে আমাদের ভাই বোনের ভালোবাসা আর ব্লাকমেইল। একদিন বাবা বললো দাদুর বাসায় যেতে কিসের একটা কাগজ আনতে। আমিও যেতে রাজি হলাম। আমি রুমে রেডি হচ্ছি এমন সময় প্রেমা আসলো।
সুমি- ভাইয়া কোথাও যাচ্ছিস.?
— হ্যাঁ রে দাদুর বাসায় যাচ্ছি। আব্বু যেতে বললো।
— ঠিক আছে যা, আসার সময় আমার জন্য চকলেট আর দাদুর গাছের আম নিয়ে আসবি।
— ঠিক আছে, আমার বোন যখন বলেছে তাহলে তো আনতেই হবে।
তারপর আমি চলে গেলাম। যেতে রাত হয়ে গেলো। তাই দাদুর বাসায় থাকলাম সকালে উঠে আম পারলাম। সুমি নিয়ে যেতে বলেছে না নিয়ে গেলে আবার মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে। আম পেরে সব কিছু গোছগাছ করছি, হঠাৎ হাসিবের ফোন (আমার ফ্রেন্ড)
নিলয়- হ্যাঁ হাসিব বল।
— কোথায় তুই ?
— আমিতো দাদুর বাসায়, কেনো?
— তারাতারি বাড়িতে আয়, সুমি কান্না করতেছে।
— ওকে দারা আমি ওকে ফোন করতেছি।
— না, ও ফোনে কথা বলবে না, তুই এক্ষুনি চলে আয়।
— আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসতেছি। তারপর আমি কাগজ নিয়ে বেরিয়ে পরলাম। রাস্তায় প্রেমার জন্য চকলেট নিলাম। তারপর বাড়ির দিকে রহনা দিলাম। কি ব্যাপার বাড়িতে এতো মানুষ কেনো। ওইতো হাসিব,,,
— কি রে হাসিব বাড়িতে এতো মানুষ কেনো রে?
— ভেতরে চল।
— আরে তুই কান্না করেছিস না কি, তোর চোখ ফোলা কেনো।
— ও কিছু না তুই চল। দরজায় দেখলাম বাবা কান্না করতেছে, আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে আরো জোরে কান্না করতেছে।
— কি হয়েছে বাবা তুমি এই রকম কান্না করতেছো কেনো?
— বাবা রে তোর বোন আমাদের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে রে।
— চলে গেছে মানে,, ও এখনো ছোট ও আবার কোথায় চলে যাবে।
আমি ভেতরে গেলাম, দেখলাম কিছু মহিলা একখানে কি যেনো ঘিরে ধরে বসে আছে। আমি সামনে এগিয়ে যাচ্ছি হাসিব আমাকে ধরে আছে, আমি যতই সামনে যাচ্ছি ততোই আমার হার্ট বিট বেড়ে যাচ্ছে। আমি গিয়ে দেখলাম মাঠিতে কাকে যেনো শুয়ে রেখেছে উপরে একটা চাদর দেওয়া। আমার কলিজাটা কেনো যেনো কেঁপে উঠলো। আকাশ চাদরটা সারাতে বলল। কে যেনো চাদরটা সরিয়ে দিলে আমার হার্টবিট বেড়েই চলেছে। চাদর যেই সরিয়েছে আমার পায়ের নিচের মাঠি সরে যাচ্ছে। এ যে আমার কলিজার টুকরা সুয়ে আছে। আমি কি করবো বুঝতে পারছি না আমি কাছে গেলাম।
— বোন এই বোন তুই কি ঘুমিয়ে আছিস। এই দেখ তোর ভাইয়া এসেছে। ওঠ না বোন, দেখ আমি তোর জন্য আম নিয়ে এসেছি, চকলেট নিয়ে এসেছি নিবি না।
সুমি-(চুপ)
— এই বোন তুই কি তোর ভাইয়াকে একলা রেখে যেতে পারিস, এই বোন আমাকে শাসন করবে কে। প্রতিদিন সকালে আমার কাছে এসে টাকা চাইবে কে। আমি যে তোকে ছাড়া থাকতে পারবো নারে বোন। হে আল্লাহ তুমি আমার কলিজায় হানা দিয়ে আমার কলিজার টুকরাকে এইভাবে কেড়ে নিলে। আমি কেমন করে থাকবো আল্লাহ।
— বোন তুই আমাকে ছেড়ে কিভাবে গেলিরে, তোর ভাইয়াকেও সাথে নিয়ে যা। আমার বোনের ছোট্ট শরীরটাতে সারা গায়ে রক্ত লেগে আছে। কিভাবে হলো আমার কলিজার টুকরার এমন.
হাসিব- স্কুলে তোর আব্বু দিয়ে এসেছে, আসার সময় একাই আসছিলো। রাস্তা পার হতে গিয়ে গাড়ির সাথে ধাক্কা খেয়ে ছিটকে রাস্তার উপর পড়ে যায়। হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেনি।ওখানেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
নিলয়- ইস আমার এই ছোট্ট আপুটা কি কষ্ট পেয়েছে। এই আপু তোর ভাইয়াকে ছেড়ে থাকবি তোর কষ্ট হবে না। তুই তো আমার সাথে ছাড়া ঘুমাস না। তাহলে আমায় ছেড়ে একলা কিভাবে থাকবি তুই। তোর কষ্ট হবে না। আমার আপুটাকে সাদা কাপড় পরিয়ে রেখেছে। ওকে সবাই মিলে নিয়ে যাচ্ছে আমার কলিজাটা যেনো ছিঁড়ে নিয়ে যাচ্ছে সবাই । আমার বোনকে একাই একটা অন্ধকার কবরে শুয়ে রাখছে।
নিলয়- আমার বোন থাকতে পারবে না ও ভয় পাবে তোমরা ওকে ওখানে রেখো না।
হাসিব- তোর বোন আর আসবে না তোর কাছে, ও সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে।