“তুই যে এত বড় বান্দর তা আগে জানতাম না।” প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে যখন বাড়িতে ঢুকতে যাবো তখনি আম্মু এসে কথাটি বলল। আমি আম্মুর দিকে তাকালাম। ওনার চোখ মুখ এমন একটা ভাব ধরে আছে। যেন আমাকে ঠিক নাগালে পেলে পিটিয়ে পাটিসাপ্টা পিঠা বানাবে। আমি পিছনে তাকালাম। আমার তাকানো দেখে আম্মু বলল..
– পিছনে কি দেখছিস?
– তুমিই না মাত্র বললা যে আমি বান্দর। তাই লেজ খোজার চেষ্টা করছি।
– ফাইজলামি করিস আমার সাথে?
– কখন করলাম?
– চুপ। তুই তো বান্দর না। তুই তো একটা জঘন্য টাইপ ছেলে। এতবড় ধোকা তুই দিতে পারলি?
– কি বলো এগুলো আম্মু? কাকে ধোকা দিলাম?
– ছিহ.. একটা মেয়েকে তুই তোর প্রেমের ফাঁদে ফেলিয়ে কষ্ট দিয়েছিস। আর সেই মেয়েটা আজ নিজে বাড়িতে এসে সব বলেছে।
আমি হাবার মত আম্মুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। কখন কাকে কষ্ট দিচ্ছি। আরে আমি তো কারো সাথে প্রেমই করিনি। তো কাকে কষ্ট দেবো? আম্মুর কি মাথার সমস্যা দেখা দিল নাকি? দরজা থেকে এক প্রকার দৌড়ে ঘরের মধ্যে প্রবেশ করলাম। সোফাতে আব্বুর সামনে বসে একজন ভূড়ি মোটা টাকলা লোক, আর একজন শাড়ি পরা মহিলা বসে গল্প করছে। আর তাদের পাশে আমার বোনের সাথে বসে আছে মাথায় সাদা ওড়না দেয়া একটি মেয়ে। আরিতা (আমার বোন) বেশ জমিয়েই কথা বলছে। কিন্তু কে এই মেয়ে? আগে কোনোদিন দেখিনি। আমি একটু কাশি দিয়ে উঠলাম। আমার কাশির শব্দ শুনে আংকেল আনটি টাইপ ওনারা আমার দিকে তাকাল। আর অপরিচিত মেয়েটা চুপ হয়ে বসে আমার দিকে তাকিয়ে রইল।
– নিলয়, এ দিকে আই।
আব্বু ডাকল। আমি গুটি গুটি পায়ে হেটে গেলাম কাছে। আম্মুও ততক্ষনে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমি আড়চোখে আরিতার দিকে তাকালাম। বোন আমার এমন লুক নিয়ে তাকাল যেন ভাবটা এমন “তুই আজ গেলি।”
– বড় হওয়ার পর কখনো মার খেয়েছিস?
– নাহ তো আব্বু।
– আজ খাবি।
– সরি আব্বু মার খাওয়া যায় না। অনুভব করতে হয়।
– চুপ।
– আহ ভাই সাহেব, থাকুক না এখন এসব। আজ থেকে তো নিলয় আমাদেরও ছেলে।
টাকলু লোকটার কথা শুনে ঠিক কি বলবো মাথায় আসছে না। আমি কিভাবে ওনার ছেলে হবো? কে ইনি। আর এনারা কি করছে এখানে? আর এই মেয়েটাও বা কে? ধুরর।
– নিলয়, আগামী ১৫ তারিখে তোর বিয়ে। তুই এত বড় খচ্চর জানা ছিল। কত ভালো একটা মেয়েকে তুই এভাবে কষ্ট দিলি? জানিস অহনা মেয়েটি কতটা ভালো। কি মিষ্টি করে কথা বলে। তুই আমার ছেলে হয়ে এমন একটা কাজ করবি ভাবতে পারিনি।
আব্বুর কথা শুনে মনে হল দুই তলা ছাঁদ আমার মাথায় এসে পড়েছে। কি বলে এগুলো। আমি কোন মেয়েকে কষ্ট দিলাম? আর অহনাটাকে? থাকে কোথায়? আমি কি পাগল হয়ে গিয়েছি নাকি এনারা সবাই পাগল হয়ে গিয়েছে? উফফ! কি হচ্ছে এগুলো?
– যা তো অহনা মা, নিলয়ের পাশে যেয়ে বোস। দেখি তোদের একসাথে কেমন লাগে। একটা ছবি তুলে রাখবো। (আনটি) কথাটি শোনার পর আরিতার পাশে বসা মেয়েটি আমার পাশে এসে বসল। আমি কেবল বোকার মত চেয়ে চেয়ে দেখছি। তবে এটা বুঝলাম যে মেয়েটির নাম অহনা। কিন্তু সত্যিই আমি মেয়েটাকে কোনোদিনও দেখিনি। না কখন কথাও বলেছি। কিসের মধ্যে কি যে হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছি না।
– বেশ মানিয়েছে দুজনকে। আচ্ছা তাহলে এখন আংটি টা পরিয়ে নেওয়া যাক। তা না হলে আবার বাবাজি আমাদের মেয়েটাকে কষ্ট দেবে।
– হেহেহে.. না না.. ও আর কখনই এমন কাজ করবে না। (আম্মু)
হুরর কিসের কষ্ট দেবো? যাকে চিনি না তাকে কিভাবে আমি কষ্ট দেবো? আম্মু এনারা কি বলছে? আর আম্মু আব্বুও তাদের কথাতে সাঁই দিচ্ছে। পাগল হয়ে যাবো। সবার চাপে পড়ে অচেনা মেয়েটির হাতে আংটি পরাতে হল। উফফ,,কি সাংঘাতিক ব্যাপার। এখনো আমার বিয়ের বয়সই হয়নি আর একটা মেয়েকে বিয়ের আংটি পরিয়ে দিয়েছি। ভালো লাগে না ধ্যাত..
– ওনারা একটু আলাদা কথা বলুক। যা নিলয় অহনাকে উপরে নিয়ে যা।
অহনাকে নিয়ে উপরের ঘরে আসলাম। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে ধাক্কা দিয়ে একদমই উপরে পাঠিয়ে দিই। ব্যালকনিতে এসে দাঁড়ালাম। এমনিতেই আজ মেজাজ খারাপ। তার উপর আবার এমন একটা রহস্যজনক ঘটনা ঘটল যা মানতে পারছি না।
– কেমন আছেন মি. নিলয় সাহেব?
অহনা নামের মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে কথাটি বলল। আব্বু ঠিকই বলছিল। মেয়েটির কথাগুলো আসলেই মিষ্টি টাইপ। কিন্তু কোন জেলার মিষ্টি সেটা খোজার ব্যর্থ চেষ্টা করলাম। তবে অনুধাবন করেছি অহনা মেয়েটা যখন কথা বলে তখন চোখ দুটোর পলক বারবার নাড়িয়ে দেয়। চোখের পলক বারবার নড়তে থাকে। তখন যে কতটা আকর্ষনীয় লাগে বলা মুশকিল। আমি খানিকটা বিমহিত হয়ে চেয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে। মেয়েটার চোখের ভ্রুতে একটি ছোট্ট তিল। পাওয়ার চশমা পরেছি বলে তিলটাও বেশ বড় লাগছে দেখতে। কথা বলা শেষে ঠোটগুলো মুখ দিয়ে চেপে নেয়।
– কি হল বলুন, কেমন আছেন? আবার প্রশ্ন করল সে। কিন্তু উত্তর না দিয়ে বললাম..
– দেখুন মিস, আপনাকে আমি চিনি না। আর কখনো দেখিও নিই। কে আপনি বলুন তো?
– কিহ. আপনি আমাকে চেনেন না মানে? মার খাবেন আপনি?
– মার খাওয়া যায় না,অনুভব করতে হয়। এখন ঝটপট বলুন কি মতলবে আসছেন আমাদের বাড়িতে?
– ঐ কি মতলব মানে? আপনি আমাকে চেনেন না মানে কি?
প্রতিদিন আপনি আমাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে, বসে থাকতেন। আমি রোজ ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দেখতাম আপনাকে। সকাল,বিকাল,সন্ধ্যা এমনকি বৃষ্টির দিনও আপনি আমাদের বাড়ির সামনে আমাকে দেখার জন্য যেতেন না বলেন?
পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অহনার দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালাম। খানিকটা হতভম্ব হয়ে মেয়েটির পা থেকে মাথা অবদি চেয়ে রইলাম আমি। এতক্ষন পুরো ব্যাপারটা মাথায় আসলো। তাহলে খুলেই বলি প্রতিদিন গিয়ার সাইকেল নিয়ে এখানে ওখানে ঘুরতে যেতাম। আব্বুর ব্যবসা দেখা শোনার পাশাপাশি ঘোরাঘুরি টা আমার প্রতিদিনের অভ্যাস হয়ে গিয়েছিল। একদিন ঘুরতে ঘুরতে চলে যায় বনানী ৭ এ। সেখানে ১৭ নাম্বার বাড়ির সামনে একটি ঝাল মুড়ি আর আলু,বেগুনি চপের দোকান। বিকাল হলেই সেখানে কাস্টমারের ভীড় জমে। এক মাস আগে বিকেলের দিকে যখন আমি ১৭ নাম্বার বাড়ির সামনে যায় চপ খেতে। তখনি বেশ ভীড় জমে ছিল। তাই ভাবলাম কোথাও বসে থাকি ভীড় কমলে তারপর খাবো। তাই দোকানের বিপরীত পাশে একটি কড়ই গাছের গোল চত্বরে বসে ফোন চাপতে থাকি।
আমার আবার সেই একটা পাগল টাইপ অভ্যাস আছে। কোথাও গেলে, যেমন ধরুন,কোনো রেস্টুরেন্ট এ গেলে, কারো বাসায় বেড়াতে গেলে, এমনকি শপিং এ গেলেই হুদাই ওয়াইফাই লাইন চালু করি। এটা ভেবে করি যে কোনো আহম্মক পাসওয়ার্ড ছাড়া ওয়ারলেস ব্যাবহার করছে কিনা। যদি হয় তো আমিও ফ্রীতে সারাদিন সেখানে বসে বসে চালিয়ে নিই। তাই এখানে বসেও সেটাই করলাম। আর ঠিক তখনি কয়েকগুলো ওয়াইফাই এর নাম আমার ফোনে চলে আসে। জানি সবআইডিগুলো পাসওয়ার্ড দিয়ে লক করা। তবুও সবগুলো কানেক্ট করছিলাম। হঠাৎ একটা নাম চোখে পড়ে “homhiringkiringkhot”(হোম হিড়িং কিড়িং খট।
নামটা দেখেই প্রচন্ড রকম হাসতে থাকি। কোনো এক পাবলিক আমার হাসি দেখে পাগল বলেও আখ্যায়িত করেছিল। কিন্তু পরক্ষনে হাসি থামিয়ে কৌতুহলি হয়ে নামটাতে ক্লিক করতেই পাসওয়ার্ড ছাড়া অন হয়ে যায়। ব্যাস আমাকে আর পাই কে। সেখানে রাত অবদি ফ্রী ওয়াইফাই চালিয়ে নিলাম। এরপরের দিন সকালে এসে দেখি একি ভাবে পাসওয়ার্ড ছাড়াই ফ্রী ওয়াইফাই চলছে। তারপর থেকে প্রতিদিন সকাল,বিকাল সন্ধ্যা অবদি গাছের গোড়াতে বসে ফ্রী ওয়াইফাই চালাই। এমনকি বৃষ্টি মাথাতেও আমি ফ্রী ওয়াইফাই চালিয়েছি। এভাবে কেটে যায় দেড় মাস। হঠাৎ গত এক মাস ধরে সেটা পাসওয়ার্ড দিয়ে রেখেছে। তাই আর সে দিকে যাওয়া হয়নি। কিন্তু আমি কি জানতাম, যে বাড়ির সামনে বসে ফ্রী ওয়াইফাই চালাতাম সেই বাড়ির মেয়ে উলটা পালটা ভেবে কি সব করেছে।
– কি ভাবছেন মি.? এখন কি সব মনে পড়েছে?
আমি অহনার দিকে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকালাম। দেখতে কিন্তু মেয়েটা খারাপ না। এখন যদি বলি আমি কেবল ফ্রী সার্ভিস মানে ওয়াইফাই এর জন্য যেতাম তবে নিশ্চিত এখন মার খাবো।
– জ্বি মনে পড়েছে।
– হুমমম। তা এই একমাস কেন যান নি?
জানেন প্রতিদিন আমি আপনাকে দেখতাম। রোজ সকালে যখন বাড়ি থেকে বের হতাম তখনি দেখতাম আপনি আমাদের বাড়ির সামনে বসে আছে। যে কালো গাড়িতে আমি যেতাম আপনি সে দিকে তাকাতেন।
ঠিক কি বলবো খুজে পাচ্ছি না। প্রায়ই দেখতাম একটা কালো রং এর গাড়ি সামনের বাড়ি থেকে বের হতো। কালো কাঁচ চারিদিক দিয়ে ঘেরা। কিন্তু ভিতরে কে থাকত না থাকত সেসব দেখার সময় ছিল না। এর কারন বাড়িতে কিপ্টে আব্বুকে বলেছিলাম ওয়াইফাই লাইন লাগাতে কিন্তু আব্বু একদমই দেয়নি। তাই ফ্রীতে পেয়ে আর ছাড়ার নামই নেয়নি।
– এই যে নিলয় সাহেব। আপনি কিন্তু আমাকে বলেন নি ভালোবাসি। কিন্তু আপনি রোজ আমার জন্য যেয়ে তা প্রকাশ করেছেন। তাই আপনাকে আমি নিজেই বলছি ভালোবাসি।
– দেখুন অহনা, আসলে আপনি যা ভাবছেন তা নয়।
– মানে?
– আসল কথা হল আমি আপনাদের বাড়ির সামনে যেতাম ওয়াইফাই চালাতে। আর আপনি ভাবতেন আপনার জন্য যেতাম।
– কিহহহ? তারমানে আপনিই চালাতেন ওটা? সে কারনেই বলি আমার ওয়াইফাই কেন দিন দিন স্লো হয়ে যাচ্ছে।
– না মানে আসলে।
– কি না মানে আসলে.. চোর একটা। আমার ওয়াইফাই আমি যেভাবে ইচ্ছে চালাবো,আপনি কেন চালাবেন অনুমতি ছাড়া?
– ফ্রী তো তাই…
– চুপ। আর একটা কথাও বলবেন না। আপনাকে খুন করবো। চুপ হয়ে গেলাম। অহনার রাগী মুখটার দিকে তাকাতেই কেমন যেন বুকটা কেঁপে উঠল। মেয়েটা আসলেই দেখতে মোহনীয়। কেবল একটু রাগি,তবে মানিয়ে নেওয়া যাবে।
– আপনাকে আর কোনোদিনও যেন না দেখি।
কথাটি বলেই মহুয়া হনহন করে চলে গেল। আমি ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম ব্যালকনির গ্রীল ধরে। কিছু সময় পর দেখলাম অহনারা চলে যাচ্ছে। নিশ্চয় বিয়েটা আর হবে না। কিন্তু মেয়েটাকে আসলেই আমার দরকার। একটু রাগি,তবে ওর মনে আমার প্রতি ভালোবাসা বেশ গভীর সেটা বুঝে গিয়েছি।
রাত ১১ টা বাজে। অহনাদের বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছি সাইকেল নিয়ে। দাঁড়িয়ে আছি বললে ভুল হবে সেই গাছের নিচে বসে আছি। আসার আগে আরিতার থেকে অহনার নাম্বারটি নিয়ে নিয়েছি। কিন্তু এখনো কল বা মেসেজ দেয়নি। আসলে সাহসই হচ্ছে না তাকে কল কিংবা টেক্সট করার। আর বড় কথা বিয়ে হবে না এমন কোনো কথাও অহনারা আসার আগে বাড়িতে বলে নি। তাই অহনার জন্য চলে আসলাম এখানে। অহনার ঘরের বাতিটি জ্বলছে। আমি ওয়াইফাই অন করলাম। আর অবাক করা বিষয় হল আজ পাসওয়ার্ড দেয়া নেই। কিন্তু পরক্ষনেই তা অফ করে দিলাম। কারন আজ ওয়াইফাই চালাতে আসিনি। এসেছি রাগি মেয়েটাকে নিজের করে নিতে। বসে বসে এসব ভাবছি তখনি টুং করে মেসেজের শব্দ হল। চেইক করতেই দেখি অহনার নাম্বার…
– আপনাকে না বলেছি আপনি আর আমার সামনে আসবেন না?
– আমি তো আপনার সামনে আসিনি। এসেছি ওয়াইফাই চালাতে। (রিপ্লে করলাম)
– বের করছি আপনার ওয়াইফাই.. (মেসেজ রিপ্লে)
– ওয়াইফাই টা কে আজ বাদ দিন,,একটু নিচে আসবেন?
– কেনো?
– আসুন না..
– পারবো না।
– ওকে..তাহলে চলে যাচ্ছি।
– হুমম যান…
আর কোনো টেক্সট করলাম না। উপরে তাকাতেই দেখি অহনার ঘরের বাতিটা নিভে গেছে। তারমানে সে নিচে আসছে। আমি বসে রইলাম সেখানে। একটু পর অহনা আসলো। সোজা আমার পাশে এসে বসল ও। আমি ওর দিকে তাকালাম। চোখে মুখে এখনো রাগের কুয়াশা বিস্তার করছে।
– কেনো এসেছেন? (অহনা)
– ঠিক জানিনা।
– আমি জানি..ফ্রী ওয়াইফাই চালাতে।
– নাহ।
– তাহলে..
– এবার সত্যিই এসেছি আপনাকে দেখতে।
অহনা কিছু বলল না। জানিনা সে বিশ্বাস করবে কি না। তবে আমার কথা শুনে সে যেভাবে আমার দিকে তাকাল তাতে মনে হয় আমি ভূল কিছু বলে ফেলেছি।
– আচ্ছা অহনা যদি বলি সত্যিই আপনার জন্য এসেছি তাহলে? যদি বলি আপনাকে দেখতেই এসেছি তাহলে? যদি বলি আপনার প্রতি ভালোবাসা এখনো তৈরী হয়নি তবে ভালোলাগাটা বেশ বেশিই হয়ে গেছে। যার টানে আপনাকে আজ রাতে আরেকবার না দেখে ঠিক অস্থিরতা হচ্ছিল। তাহলে অহনা চোখ বড় বড় করে তাকাল। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। জানি অহনা এখন আর আমাকে সহ্য করতে পারছে না। তাই আমার কথা তার সহ্য হওয়ারও কথা না।
তবুও তার সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে বললাম “অহনা.. জানি তুমি আমাকে আর সহ্য করতে পারছো না,, জানি আমাকে আর ভালোও বাসবে না। তুমি মায়াবী,,তুমি আকর্ষনীয়.. তুমি অধরা, তুমি রবীন্দ্রনাথের কবিতার মত সুরভী। তুমি হুমায়নের হিমুর রুপার মত প্রত্যাশিত মানবী। তোমাকে ভালোবেসে আগলে রাখা যায়। তোমাকে ভালোবাসা যায় অজস্র বার..। তোমাকে বলছি না আমাকেই ভালোবাসো,,কেবল একটা নির্দিকার অনুরোধ.. তোমার মনের বাড়িটার যে উঠান আছে সেই উঠানের এক কোণে আমি একটু জায়গা পেতে চাই। যেখানে তোমাকে ভালোবাসার জন্য ছোট্ট একটি ঘর বানাবো, সেই ঘরে তোমাকে নিয়ে সুখে থাকার সর্বদা চেষ্টা করবো। তোমার মনের রাস্তায় আমি আর তুমি মাঝে মাঝে হাঁটবো.. চলো আজ হাত ছেড়ে শূন্যতা ধরে হাঁটি,. তারপর? তারপর ঠিক করে নেবে, আজীবন শূন্যতা,না আমি”
কথাগুলো বলে অহনার চোখের দিকে তাকালাম হাতটা বাড়িয়ে। চোখ দুটো তখন গোল গোল করে চেয়ে আছে আমার দিকে। ভাবছিলাম সে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলবে “দিলাম আমার মনের উঠানে জায়গা,,সুযোগ দিলাম হাঁটতে মনের রাস্তায়, ঠিক করে নিয়েছি আমি শুনত্য না তোমাকেই ” কিন্তু কিছুই হল না। হাতটা সরিয়ে নিলাম। তারপর কিছু না বলে সাইকেল চালিয়ে বাড়ির দিকে চললাম। বনানী থেকে বের হতেই ফোনটা বেজে উঠল, তাহসানের গাওয়া “আমি পারবো না তোমার হতে” রিংটোনটি বাজতে থাকে।
আমি সাইকেল থামালাম। ফোনের স্ক্রীনে তাকিয়ে দেখি অহনার নাম্বারটি ভেসে আছে। আসি রিসিভ করলাম। হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে শুনতে পেলাম “শুনুন কাল থেকে প্রতিদিন যদি আসেন তাহলে আপনাকে আমার মনের উঠানে জায়গা দিতে পারি, আমার মনের রাস্তায় হাঁটতে সুযোগ দিতে পারি যদি রোজ আমাকে সাথে নিয়ে ঘুরেন। আর আমি আগেই ঠিক করে নিয়েছি শুন্যতা নয়,আপনাকে।” আমি সাথে সাথেই বলি.. “আসতে পারি… যদি ওয়াইফাই টা পাসওয়ার্ড না দিয়ে রাখেন।” ফাজিল কোথাকার… যান ব্রেক আপ…”
ফোনটা কেটে গেল। আমি হাসলাম। কারন এখনো শুরুই হল না প্রেম, তার আগেই ব্রেকআপ। না জানি কতবার ব্রেকআপ হবে। সাইকেল চালাতে শুরু করেছি। ডান পকেটে রাখা ফোনটাতে বেজে চলেছে তাহসানের গান ”
সন্ধ্যে নেমে এলে অন্ধ এ মন বলে তোমায় একটু ছুয়ে দিতে গুনগুন করে গাইতে গাইতে চলেছি বাড়ির উদ্দেশ্যে.. কিন্তু সেটা আর বেশিক্ষন স্থায়ী হল না। আবারো বেজে উঠল ফোন। অহনারই কল। তবে এবার আর থামলাম না। রিসিভ করলাম।
– সাবধানে বাড়িতে যাবেন।
– হুমম।
– যেয়ে ফোন দিবেন।
– হুমম…
কথা থামলো না। সাইকেল চালাচ্ছি আর কথা বলছি। চলুক না হয় কিছুক্ষন কথা। ক্ষতি কি শুধু ব্যালেন্স টাই শেষ হবে আর কি।