বলবো তোমায় ভালবাসি

বলবো তোমায় ভালবাসি

অসহ্য !!!! আজকেও লেট হবে !!!! সব দোষ এই গাধাটার !!!! আজকেও আমাকে ঘুম থেকে তুলে দেয় নাই প্রত্যেকদিন রাতে আমি বলি আমাকে সকাল সকাল ডেকে দিবা সেও তার চিরাচরিত জ্ঞানী লুক মেরে বলে “হুমমমম” আমিও বেকুবের মতো তাকে প্রতিদিন বিশ্বাস করি। যদিও এটা ভালো করেই জানি, সে কোনদিনও এই কথা রাখবে না। মহাসুখে দেই একটা ঘুম,এবং তাতেই কর্ম সাবাড়!!! অফিস শুরুর মাত্র আধ ঘণ্টা আগে কোনমতে উঠে দাঁতটা ব্রাশ করি কি না করি রেডি হয়ে দৌড়!!!!

কিন্তু দৌড় দিয়ে বেশি দূর যাওয়া যায় না গাধাটা আমাকে পথেই ধরে ফেলে, মুখে জোর করে সকালের নাস্তাটা পুরে দেয় সেটা ঠিক মতো গিলে তবে আমার মুক্তি। এই যে গাধা কেয়ারিং কিন্তু আজগুবি একটা মানুষের কথা বলছি এতটা সময় ধরে মহামান্য ব্যক্তিটি আর কেউ নন,আমার-ই জামাই। পৃথিবীর যাবতীয় ব্যাপারে সে নির্লিপ্ত… খানিকটা বিরক্তও। শুধু আমার ব্যাপারে তার দুশ্চিন্তার অন্ত নাই। অফিসে যাওয়ার পথে কোন সমস্যা হল নাকি, দুপুরে লাঞ্চ ঠিক মতো করলাম নাকি, গ্যাসের ওষুধটা ঠিকমত খেলাম নাকি সব ব্যাপারে সে কেয়ারফুল।

নিজের অফিসের শত কাজের মাঝেও সে আমায় তিনবার ফোন করে এই কথা গুলো জিজ্ঞেস করতে ভোলে না। তবে এই কথাগুলো জিজ্ঞেস করার পর আর একটাও বাড়তি কথা গাধাটা বলে না। ঝমঝম বৃষ্টির দিনেও একবারও বলে না, “ভীষণ মিস করতেসি তোমাকে”। আমার “হুমমমম জামাই” এর সব কিছুই রুটিন ধরা। যেমন রোবটের ভেতর প্রোগ্রাম সেট করে দেয়া থাকে… যেমনভাবে প্রতিদিন সকালে আমার মাথার পাশে ধোঁয়া ওঠা চা আমার অপেক্ষা করে,যদিও দেরি করে ওঠায় চা টা আমার প্রায়-ই খাওয়া হয় না। তবুও প্রতিদিন চা টা ওখানেই থাকে। রোবটিক জামাইয়ের বেরসিক রুটিনে মাঝে মাঝে হাঁফ ধরে যায়। আর কত সহ্য হয় এ জ্বালা?????

আমি আসলে একটা বড় ধরনের উজবুক মেয়ে। দুনিয়াতে এমন খুব কম কাজ-ই আছে…যা আমি ভালভাবে করতে পারি। আমি একটু পাগলাটে ধরনের। এলোমেলো কাজকর্ম করেই সুখ পাই। সব কাজ সব সময় ঠিক মতো করতে হবে…এমন কোন কথা আছে??? আর বাবা-মায়ের আদরে বড় হতে হতে টের-ই পাই নি…কখন সত্যি অনেক বড় হয়ে গেছি। হুট করে সেই বাচ্চা মেয়েটার বিয়ে ঠিক হয়ে গেল। বিয়ে শব্দটার মানে যে কি…সেটা আমি তখনও বুঝেই উঠতে পারিনি। আমাকে যখন পাত্র নামক এলিয়েনের সাথে দেখা করাতে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল…আমি গিয়ে বোকার মতো প্রশ্ন করে বসলাম,”আপনি আমাকে বিয়ে করবেন কেন??? গার্লফ্রেন্ড ছ্যাকা দিসে???” ও আমার দিকে বড় বড় চোখ করে তাকায় বলেছিল,”হোয়াট?????”

বেচারা সেই দিন-ই বোধহয় বুঝতে পেরেছিল…তার জন্য ভবিষ্যতে আরও কি কি অপেক্ষা করছে!!! কিভাবে কিভাবে যেন আমাদের বিয়েটা হয়ে গেল। পুরো ব্যাপারটা এখনও আমার কাছে একটা ঘোরের মতো। বিশ্বাস হতে চায় না হতচ্ছাড়া আমি কিভাবে বাবা মা কে ছাড়া একটা অচেনা জায়গায় এসে থাকছি। অবশ্য এর পুরো কৃতিত্ব আমার জামাইর। মানুষটার আহ্লাদ কিংবা প্রশ্রয়ে আমি দিন দিন আরও বেশি পাজী হয়ে যাচ্ছি। আজ পর্যন্ত কোন দিন সে আমাকে সকালে ঘুম থেকে তোলেনি।

ও প্রথম দিনেই বুঝে গেছে আমি সকালে উঠতে পারি না,তাই কোন দিন আমাকে ডাকতে যায় না।এত করে বলি আমাকে তুলে দিতে… তবুও না। মাঝে মাঝে অবশ্য আমার এমনিতেই সকালে ঘুম ভেঙ্গে যায়,তখন ইচ্ছে করে ঘুমের ভান করে থাকি। বুঝতে পারি, আমার এক্কেবারে চুপচাপ, গম্ভীর টাইপ, আবেগহীন জামাইটা কেমন মুগ্ধ দৃষ্টিতে আমাকে দেখছে। প্রথম দিন একটু অবাক হয়েছিলাম… লোকটা কি আসলেই আমাকে ভালবাসে???? তবে কেন এত নীরবতা??? একটা বার কি মুখ ফুটে বলা যায় না??? এত কিসের লুকো্চুরি???

আরেকদিন রান্নাঘরে হাত পুড়ালাম। বেক্কল আমি পোড়া হাতের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। খুশিমনে ঘুমাচ্ছি। হঠাৎ মনে হল কেউ প্রবল বেগে আমাকে বকছে… আর হাতে কিছু লাগিয়ে দিচ্ছে। আধো ঘুমে বুঝলাম… তার হাতে ধরা পড়েছি। এখন এই কাণ্ডজ্ঞানহীন কাজের জন্য আরও দুই ঘণ্টা আমার মতো মাসুম বাচ্চাকে বকা দেয়া হবে।

আজকেও নাস্তা না করে দৌড় দিচ্ছিলাম দেখে এক গাদা বকা দিল। আমি ছোট… তাই বলে কি আমি মানুষ না??? সবসময় খালি আমাকে বকা দিতে হবে??? আম্মুও তো আমাকে কোনদিন এত্তটা বকা দেয় নাই!!! কি খারাপ লোক রে বাবা!! এ কেমন লোকের কাছে আম্মু আমাকে বিয়ে দিল??? ভীষণ কান্না পেল। আমি ভ্যা করে কেঁদে দিলাম।

এই প্রথমবারের মতো আমার রোবটিক জামাই হকচকিয়ে গেল। তার মুণ্ডুতে সেট করা প্রোগ্রাম মনে হয় এই ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিল না। সে হাঁ করে আমার দিকে তাকিয়ে থাকল। এই সুযোগে আমি আরও জোরে, চিৎকার করে কান্না জুড়ে দিলাম। “প্রত্যেকদিন আমার সাথে এমন করো ক্যান??? এত বকো ক্যান??? পাইসো টা কি??? আমার কষ্ট লাগে না??? আমি কি তোমার মতো রোবট??? আমার ভাল্লাগে না এইসব মানুষের জামাই কত্ত ভালো কত্ত রোমান্টিক কথা বলে বউ কে নিয়ে ঘুরতে যায়  আর তুমি কি??? খালি স্কুলের বুড়া প্রিন্সিপালের মতো রুটিন-ধরা খবরদারি আর গার্জিয়ানের মতো যত্নআত্তি!!!!! আর কি পারো তুমি???”

ফিক করে হেসে ফেলল রোবটটা। ভাবখানা এমন,যেন আমি খুব মজার কোন কথা বলেছি। আজকে সে এমন অনেক কাজ-ই করছে, যা তার মুণ্ডুর প্রোগ্রাম বহির্ভূত। হুট করে সে আলতো ছোঁয়ায় আমাকে কাছে টেনে নিল। গালটা টিপে বলল,”তুমি তো আমার পিচ্চি বউ!!! পিচ্চিরা কি রোমান্স বুঝে নাকি???? তো না বুঝলে আমি রোমান্সটা করব কিভাবে শুনি????”

এবার আমি হাঁ করে চেয়ে থাকি। সে বলেই যায়,”তুমি এ কয়দিনে একটা জিনিস তো নিশ্চয়ই বুঝসো, আমি মানুষটা কথা তেমন বলতে পারি না। নিজের ফিলিংস এক্সপ্রেসও করতে পারি না। এইটুকু যদি না বুঝো… তবে আমার বউ হইস কেন??? সারাজীবন পিচ্চি-ই থেকে যাবা??? তাইলে তোমার পচা জামাইটার মনটা বুঝবে কে বল???? আরেকটা বিয়ে করে ঐ মেয়ে কে নিজের মন বুঝাব???”

এইবার আমার হাঁ বন্ধ হল।আমি হুঁশ ফিরে পেলাম। চোখ মুছে ওর কলারটা চেপে ধরলাম। ” কি বললা?? আরেকবার বল??? আরেকটা বিয়ে করবা??? ঐ মেয়ের মাথা আমি গ্রেনেড মেরে উড়ায় দিব,বুঝলা???” “কেন??? উড়াবা কেন?? কি দোষ করসে মেয়েটা?? একটা নিরীহ মেয়ে কে কেন মারবা???” ” কারণ আমি  আমি তোমাকে ” ধুরররর আমার আর কিছুই বলা হয় না। আমি অনুভব করি কেউ ফিসফিসিয়ে আমার কানে কানে বলছে ভালবাসি ভালবাসি ভালবাসি।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত