আমাদের পরিচয়টা মোবাইল এ ।ও আমার খালাতো বোনের বান্ধবী । সেদিন ২৫ নভেম্বর ২০০৫ ইং, ঈদ এর দিন । আমি তার নাম্বার পেয়ে তাকে মেছেজ করি । সে তার প্রতিউওর ও করে । এরপর আমাদের মাঝেমধ্যে কথা হত । আমি প্রথম দিকে আমার পরিচয়টা গোপন রেখেছিলাম । তবে সেটা বেশিদিন সম্ভব হয়নি । মাস দুই পর আমি আমার পরিচয় তার কাছে প্রকাশ করি । এরপর তার সাথে আমাদের সম্পর্ক গাঢ় হতে শুরু করে । ধীরে ধীরে আমরা খুব ভাল বন্ধুতে পরিনত হই । এরপর ধীরে ধীরে কথা বলার পরিমাণ বাড়তে থাকে । সেই সাথে সমান তালে বাড়তে থাকে সম্পর্কের গাঢ়ত্বও । ধীরে ধীরে আমরা এতটাই দূর্বল হয়ে পড়ি যে, একজনকে ছাড়া আর একজনকে শেকড়, ডালপাতাহীন গাছ মনে হত ।
ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ ঘটাতে যে ধরনের শব্দ ব্যবহূত হয়, আমাদের ভালবাসায় এর কিছুই কখনো বলার প্রয়োজন পড়েনি । কখন, কোথায়, কি করে এটা তৈরী হল আমরা নির্দিষ্ট করে কেউই বলতে পারব না । শুধু এটুকু জানি, আমরা পরষ্পরকে যতটা আর যেভাবে ভালোবেসেছি, এমন ভালোবাসার উদাহরণ খুব কমই পাওয়া যাবে পৃথিবীতে । আমরাও ভালোবাসার শব্দচয়ন বহুবার উচ্চারন করেছি, তবে সেটা পরষ্পরের ভালোবাসা পূরোপূরি জানার পর । ভালোবাসাটা বুঝি এমনই । কবে,কখন, কোথ্থেকে এসে সবকিছু গ্রাস করে ফেলে তা বোঝা মুশকিল । এখন শুধু এটুকু জানি, নিজের বলতে আমার আর কিছুই নেই, আমার সবকিছুই ও নিজের করে নিয়েছে । কিন্তূ এ নিয়ে আমার আফসোস নেই । কারন, আমার সবকিছুর বিনিময়ে ও আমাকে এতটা ভালোবাসা দিয়েছে যে, আমার ভীষণ গর্ব হয় এটা ভেবে, কোন মেয়ে আমাকে এতটা ভালোবাসতে পারে ।
আমাদের সম্পর্কের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ব্যপার হল আমাদের বোঝাপড়াটা অনেক ভাল ছিল । এই যেমন আমি কখন কি চাই, কি আমার ভালো লাগে, তাকে আমি কিভাবে আশা করি, এই ব্যপারগুলো সে খুব ভালো বুঝতো । হয়তোবা আমিও । আর তাইতো প্রায় সাত বছরের ভালোবাসায় কোন বিরক্তির ছাপ নেই । সাত বছর পরও আমাদের ভালোবাসা ঠিক প্রথম দিনটির মতই সজীব । সময়ের বিবর্তনে হয়তোবা অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে, কিন্তূ এতদিনের ভেতরকার লালিত ভালোবাসায় এতটুকু মরিচা পড়তে দেইনি আমরা কেউই । আশা করি চিরদিন এমন সজীব ই থাকবে ।
আমাদের মাঝে ঝগড়া হতো । সম্পর্কের প্রথম দিকে না হলেও কিছুদিন যাবত এটা প্রতিদিনকার ব্যপার হয়ে গেছে । ঝগড়া করাটাও আমাদের জন্য সবসময় আনন্দদায়ক ছিল । কারণ, আমাদের ঝগড়া মানেই একজন রাগ করব আর আরেকজন চুপ করে তাকে সাপোর্ট করে যাব । আর তাই শত কষ্টের মাঝেও আমাদের ভালোবাসায় এক গভীর আনেন্দর গন্ধ খুজে পাই, যা আমাকে সব সময় মাতাল করে রাখে । আর এই মাতালময় পৃথিবী ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার কথা কল্পনাও করতে পারি না আমি ।
আমি ছোট থেকেই জীবনের সঙ্গে অনেক যুদ্ধ করে এই অবস্থানে এসেছি । আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন মূহুর্ত গুলোতে সে আমার পাশে ছিল আর আমাকে সবসময় সাপোর্ট করে গেছে । আর তাই তাকে এত কাছ থেকে দেখে এটুকু বলতে পারি, আমার জন্য তার চেয়ে ভালো লাইফ পার্টনার পাওয়া কোনদিন সম্ভব ছিলনা ।
আমাদের স্বপ্ন
প্রতিটি ভালোবাসার সৃষ্টি হয় কিছু স্বপ্ন থেকে । প্রতিটি সম্পর্কই টিকে থাকে কিছু ছোট ছোট স্বপ্নের উপর ভিত্তি করে । আমাদের স্বম্পর্কেও এমন ছোট ছোট কিছু স্বপ্ন ছিল, যা আমাদের ভালোবাসাকে ক্রমশই বৃহৎ থেকে বৃহাদাকার করে তোলে । মূলত আমাদের ভালোবাসার মূলেই ছিল আমাদের স্বপ্ন । ঐ স্বপ্ন দেখতে পারি বলেই আমাদের ভালোবাসাটা আজও টিকে আছে ।
আমাদের স্বপ্নের একটা বড় অংশ জুড়ে আছে আমাদের সন্তানদের কথা । আমরা দুজনই খুব স্বপ্ন দেখি আমাদের বিয়ে হবে । ছোট্ট একটা বাড়ী হবে । তারপর আমাদের ঘর আলো করে আমাদের সন্তান আসবে পৃথিবীতে । একটি নয় তিনটি । তাদের নামও ঠিক করে ফেলেছি আমরা । আমাদের বড় মেয়ের নাম অর্পি, তারপর আরো একটি মেয়ে পূর্বা, আর সবার ছোট আমাদের ছেলে পর্ব । বড়টার নাম আমার দেয়া, বাকি দুইটা ওর । ওদের সবার নামের একটা বিশেষত্ব আছে । ওদের সবার নাম আমাদের দুজনের নামের সংমিশ্রন । যেমনি আমাদের ভালোবাসার সংমিশ্রনে ওরা পৃথিবীতে আসবে, ঠিক তেমনি আমাদের ভালোবাসার মিশেলে ওরা ধীরে ধীরে বড় হয়ে উঠবে । আর আমরা সেটা গভীর আনন্দে উপভোগ করব । আমি পর্বকে ক্রিকেটার বানাবো, এতে ওর কোন আপত্তি নেই । শুধু একটাই কথা, পড়া বাদ দিয়ে কিছু করা চলবে না । আমিও ওকে বলেছি পড়ার ব্যপারটা ওকে দেখতে, আর আমি দেখব ওকে কি করে ক্রিকেটার বানানো যায় । পর্ব যেদিন জন্মাবে, সেদিনই আমি ওর জন্যে ক্রিকেটের সব সরন্জাম কিনে আনব ।
আর ওগুলো দিয়েই সে খেলা করবে । আমাদের বড় মেয়েটা যথেষ্ট শান্ত ও ভদ্র । অর্পি ঠিক যতটা ভদ্র পূর্বা ঠিক ততটাই দূষ্ট । কিন্ত তারা দূজনই খূব ভাল । এছাড়াও এমন অনেক স্বপ্ন আমাদের প্রতিনিয়তই আকড়ে ধড়ে আছে । আমরা দুজনই যেহেতু চাকরি করব তাই প্রতি শুক্রবার শুধু আমাদের জন্যই রাখব । ঐদিন আমরা বাইরে খাব, অনেক ঘুরব, অনেক অনেক ভালোবাসব । এছাড়াও প্রতিদিন বাইরে বেরোনোর সময় তাকে আদর করে বাইরে বের হওয়া, মাঝে মাঝে তাকে রান্না করে খাওয়ানো, এমন অনেক স্বপ্নই আমাদের ভালবাসার স্বর্গরাজ্যে প্রতিনিয়তই ভিড় করে । আর আমাদের আরও বেশি করে ভালোবাসার প্রেরণা জোগায় । আর এভাবেই এগিয়ে চলেছে আমাদের ভালোবাসার সাম্পান । তবে এটা হয়তো আমরা কেউই জানিনা, এই সাম্পান আদৌ তীরে ভীড়তে পারবে কিনা । নাকি তার আগেই !
আমরা যখন একে অপরের কাছাকাছি আসি, তখন আমরা দুজনেই খুব ছোট ছিলাম ।বলা যেতে পারে, একজন মানুষের আবেগ যে বয়সটাতে সর্বোচ্চ পর্যায়ে থাকে, ঠিক তখনি আমরা দুজন দুজনকে ভালোবেসেছি । ঐ সময়টাতে আমাদের কাছে ঠিক বেঠিক বাছবিচার করার চেয়ে আবেগটাই প্রাধান্য পেয়েছে বেশী । আর তাই আমরা খুব সহজেই একটা ভুল এ জরিয়ে পড়ি । যে ভুলটার কথা বুঝতে পেরেও আজ আর এখান থেকে বের হয়ে আসতে পারছি না । হয়তোবা কোনদিনই বের হতে পারব না । আমাদের ভালোবাসার শুরুটাই হয়েছে একটা ভুল থেকে । আর এই ভুলটা হল আমাদের এই সমাজ ব্যবস্থা । কারন, আমরা দুইজন দুই ধর্মের । যা আমাদের এই সমাজ কোনদিন মেনে নিবে না বা ভাল চোখে দেখবে না ।
আর তাই আমরাও জানিনা, আমাদের ভবিষ্যতটা কেমন হবে । আমরা অজানা এক ভবিষ্যত এর দিকেই এগিয়ে চলেছি । আর এই ভূলটাই আজ আমাদের কাছে সবচেয়ে বড় সত্যি । সেই দিনটি ছিল ২৩শে জুন ২০০৬ ইং । ওর জন্মদিন । পুরো বিকেলটা সে আমার সাথে ছিল । প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার যে কি আনন্দ তা আমি প্রথমবারের মতো জেনেছি তার কাছ থেকে । সেদিনের সেই আনন্দানুভুতি আমার পক্ষে কোনদিন ভোলা সম্ভব নয় । তবে আমরা তখনো জানতাম না আমরা দুজন দুজনকে কতটা ভালবাসি । এটা জানতে পারলাম ২৪ জুন, ২০০৬ এর সকালে । ওদের ওখানে আশুলিয়া নামে একটা সুন্দর জায়গা আসে । এটা অবশ্য ঢাকার আশুলিয়ার মত নয় । তারপরও জায়গাটা অনেক সুন্দর । ২৪ তারিখ সকালে আমি, আমার ফ্রেন্ড শান্ত, আমার খালাতো বোন আর ওকে নিয়ে আশুলিয়াতে ঘুরতে যাই । পুরো সকালটা আমরা একসাথে ছিলাম । কোন এক কথার প্রসঙ্গে আমি তাকে আমার ভালবাসার কথা বলে ফেলি । ওকে জিজ্ঞেস করে তখন কোন উত্তর পাইনি । কিছুক্ষন পর আমারা রাস্তায় হাটছিলাম ।
হঠাৎ সে ঘাসফুল ছেরার জন্য রাস্তায় ঝুকে পরে । আমার ফ্রেন্ড আর আমার খালাতো বোন তখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছিল । এটা দেখে আমিও তার সামনে বসে পড়ি । আর তাকে জিজ্ঞেস করি, “তুমি কি সত্যিই আমাকে ভালবাস না?” তার প্রতি উত্তরে সে ঘাসফুল ছেরা বন্ধ করে আমার হাটুর উপর তার হাতটা রেখে আমার মুখের ঠিক সামনে তার মুখটা এনে আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমাকে বলে, “ ভালোই যদি না বাসতাম, তাহলে কি………” আর কিছু বলতে পারে না সে, মুখটাও নামিয়ে নেয় । আর এতেই আমি আমার উত্তর পেয়ে যাই । ঐ মূহুর্তটা আজ অবধি আমার জীবনের সেরা মূহুর্ত । এর পর ওর সাথে আমার আরো অনেক কিছুই ঘটেছে, মনে রাখার মতো অনেক অনেক স্মৃতিই তৈরী হয়েছে । কিন্তু ঐ মূহুর্তটা আলাদা করে মনে রাখার মতই বিশেষ কিছু আমার জন্য ।
বলতে গেলে ২৪শে জুন তারিখটাই আমার জ়ীবনের সবচেয়ে স্মরণীয় দিনগুলোর মধ্যে সবার উপরে স্থান করে নিয়েছে । কারন ঐ দিন বিকেলে প্রথমবারের মত খুব কাছাকাছি পেয়েছিলাম তাকে । আমার মনে হয়না আমার জীবনের আর কোন মুহুর্তই ঐ দিনটিকে পেছনে ফেলতে পারবে । আমাদের ভালোবাসায় বেশ কিছু অসাধারন মুহুর্ত আছে, যা এই অল্প কথায় লিখা সম্ভব না । ২৫শে নভেম্বর, ২৪শে জুন ছারাও ১৭ই জুন ২০১০, ২রা জুলাই ২০১০, ৭ই অক্টোবর ২০১০, ৪ঠা মার্চ ২০১১ এমন অনেক তারিখ আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে আছে ।
আমাদের ভালোবাসায় সুখ যেমন ছিল, কস্টও ছিল । ওদের ওখানে ওর সাথে একবার দেখা করতে গিয়ে ধরা পরে যাই ।আমিতো কোনরকম ওর ভাই, চাচাদের হাত থেকে বেচে এসেছিলাম । কিন্তু সমস্ত অপমান ওকে একা সইতে হয়েছে । ও কারো সাথে মাথা উচু করে কথা বলতে পারত না, রাস্তায় বের হলে মানুষ বাজে কথা বলতো, এমনকি ওকে ওর স্কুল থেকে ওকে TC পর্যন্ত দিতে চেয়েছিলো । তারপরও সে আমাকে ভালোবেসেছে, একটা বারের জন্যও সে আমার কাছ থেকে সরে যায়নি ।
আমি সত্যিই অনেক ভাগ্যবান যে ওর মতো একজন গার্লফ্রেন্ড পেয়েছি ।কিন্তু তারপরও বাস্তবতা আমাদের দুইজনকে চিরদিনের জন্য এক সুতোয় বাধা পরতে দেবে না । কারন আমরা দুইজনই আমাদের নিজের ধর্ম আর পরিবারকে অনেক বেশি ভালবাসি । কিন্তু এটাও ঠিক যে, ওকে ছাড়া একটা মূহুর্তও কল্পনা করতে পারি না আমি । সে ও না । আমরা জানিনা আমরা দুজন একে অপরকে ছাড়া ভবিষ্যতে কি করে বাচব। আর তাই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যে ভবিষ্যতের উপর আমাদের কোন হাত নেই, যে ভবিষ্যত সম্পর্কে আমরা কিছুই জানিনা,ওই অচেনা ভবিষ্যত এর জন্য অপেক্ষা না করে যতদিন সম্ভব একে অপরের পাশাপাশি থাকব।
আর যদি বেচে থাকি, তাহলে জীবনের শেষ দিনে হলেও, যখন এই সমাজে আমাদের নিয়ে মাথা ঘামানোর জন্যে খুব বেশী মানুষ পাওয়া যাবে না, সেইদিন আমি ওকে একান্তই আপন করে চাইব । আজ আমার প্রভূর কাছে শুধু একটাই প্রার্থনা, আমাদের দুজনের পাশাপাশি থাকার ব্যবস্থা করাতো তোমার জন্যে এমন কোন কঠিন কাজ না । তবে কেন তুমি আমাদের বঞ্চিত করবে ? প্লিস GOD, এমন কিছু কর যাতে ও আমার হয়ে যায় । আর তা যদি না পার তবে জীবনের শেষ মূহুর্তে তাকে তুমি আমার করে দিও । আর ওকে সর্বদা সূখে রাখ ।
প্রিয় পাঠক, আর লিখতে পারছি না । চোখ জলে ভিজে আসছে । প্লিজ, আমাদের জন্য দোয়া করবেন । আমরা যেন পরস্পর কে সারাজীবন একইভাবে ভালোবেসে যেতে পারি । আর আমার প্রান পাখিটা যেন সবসময় অনেক ভাল থাকে । শেষ বেলায় আমার ভালোবাসার মানুষটিকে বলতে চাই, “ আমি তোমাকে অনেক অনেক অন্নেক ভালোবাসি”।।