আজ অনুর দ্বিতীয় বিয়ে। আরে না না আপনারা যা ভাবছেন তা নয়। অনুর স্বামী মারা যায়নি বা ডিভোর্সও হয়নি যে অনুর অন্য কারো সাথে ২য় বিয়ে হবে? অনুর বিয়ে তার একান্ত বাধ্যগত স্বামীর সাথে হচ্ছে কিন্তু ২য় বার। এখন নিশ্চই ভাবছেন প্রথম একবার যখন বিয়ে হয়েছে তখন ২য় বিয়ের কি দরকার? তাহলে চলুন জেনে নি?
অনুর যখন বিয়ে হয় তখন অনু অনার্স প্রথম বর্ষে কেবল ভর্তি হয়েছে। এখন দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। সে হিসাবে ওদের বিয়ের বয়স এক বছর। অনুর ওনি মানে মহাশয়ের নাম আয়াত। নামটা কিউট তাইনা? দেখতেও কিউট। (এই কোন মেয়ে নজড় দিবা বলে দিলাম কিন্তু) পরিচয় পর্ব শেষ হলে এবার মূল কথায় আসি?
আসলে অনুর যখন বিয়ে হয় তখন ও বিয়েতে একদম রাজি ছিলো না। ওর বাবা একরকম জোড় করেই বিয়ে দিলো। এই না না অনুর অন্য কারো সাথে রিলেশন ছিলো না। ওর কাছে বিয়ে মানে পৃথিবীর সব চেয়ে বড় প্যারা।
যাক বিয়েটা হয়েই গেলো। সেটা অনুর ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায়। বধূ বরনের সব নিয়ম কানুন শেষে অনুকে আয়াতের ঘরে রেখে সবাই চলে গেলো। কিছুক্ষন পর আয়াত রুমে এসে অনুকে লম্বা করে একটা সালাম দিলো। অনু সালামের উত্তর দিলো। পরে আয়াত যেইনা খাটে বসতে যাবে অমনি অনু বলে উঠলো
অনুঃ আমার কাছে আসার চেষ্টা করলে ঠাং ভেঙে খোড়া করে দিবো।
আয়াতঃ বিয়ের রাতে এ মেয়ে বলে কি? ঠ্যাং ভাঙলে লোকে তোমাকেই খোড়ার বৌ বলবে।
অনুঃ তা বলে বলুক। আমাকে জোড় করে বিয়ে করে আবার আমার কাছে আসা হচ্ছে? দেখাচ্ছি মজা?
আয়াতঃ আমি কেন জোড় করবো?
অনুঃ কেনো বলিনি যে আমি বিয়ে করতে পারবো না আপনি বিয়ে ভেঙে দিন।
আয়াতঃ হ্যা বলেছিলে। কিন্তু আমি যখন জানতে চেয়েছিলাম কাউকে ভালোবাসো কিনা? তুমিইতো বললা না। তাই ভাবলাম কাউকে না কাউকে তো বিয়ে করবে তাহলে আমাকে কেন নয়? আর আমার তো নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে হচ্ছে তোমার মত সুন্দরী বৌ পেয়ে।
অনুঃ (খুব রাগ করে) খুব ভাগ্যবান না? আজ থেকে আপনার দূর্ভাগ্যের দিন শুরু। এমন জ্বালান জ্বালাবো যে পালানোর পথ খুজে পাবে না। নরকে আপনাকে স্বাগতম। ওয়েল কাম টু হেল মিঃ আয়াত!
আয়াতঃ জ্বালাবেন ! তাই! তাহলে এখন একটু জ্বালান না। এই বলে তনয়ার অনেকটা কাছে চলে গেলো। এবং আস্তে করে অনুর হাতটা ধরলো।
অনুঃ কিছুটা ভয় পেয়ে বললো কি করছেন?
আয়াতঃ সেটাই যা করা উচিৎ
অনুঃ দেখুন ভালো হবে না কিন্তু?
আয়াতঃ আমিও তো তাই চাই। তারপর শয়তানি একটা হাসি দিয়ে অনুর আঙুলে সুন্দর একটা রিং পড়িয়ে দেয়। আর বালিশটা নিয়ে সোফায় চলে যায়। আর বললো
আয়াতঃ দেখো অনু ফিজিক্যাল রিলেশনটাই সব না। মন ভালোবাসা বলতেই কিছু আছে। চিন্তা করো না নিজের মত সময় নাও। জাস্ট টেইক ইউর টাইম। সব ঠিক হয়ে যাবে। অনু অনেকটা অবাক হলো। তারপর শুয়ে শুয়ে ভাবছে নাহ লোকটাকে যতটা খারাপ ভেবেছি ততটা খারাপ না। এসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে পড়লো। খুব সকালে আয়াতের ডাকে ঘুম ভাঙলো।
আয়াতঃ অনু ওঠো নামাজ পড়ে নাও। আমি নামাজে যাচ্ছি।
অনু নামাজ পড়ে দেখলো ওদের রুমের সাথে একটা বেশ বড় বারান্দা । সেখানে অনেক রকম ফুল গাছ আর ঠিক মাঝখানে একটা দোলনা রাখা আছে। অনু দোলনাটায় এস সৌন্দর্য্য গুলো দেখতে লাগলো। কিছুক্ষন পর আয়াত এসে বললো
আয়াতঃ এই ভয়ংকর বৌ নাস্তা করবে নিচে চলো।
অনুঃ ভয়ংকর বৌ মানে?
আয়াতঃ কাল রাতে যে ভয় দেখাইছো তাতে আর কি বলবো?
আয়াতের কথা শুনে তনু মুখ ভেংচি কেটে চলে গেলো। খাবার টেবিলে বসে সবাই খাচ্ছিলো তখন অনু ভাবলো বেটাকে শায়েস্তা করা দরকার। আমাকে ভয়ংকর বলা? দাড়া তোর হচ্ছে? তারপর টেবিলের নিচ থেকে অনু নিজের পা দিয়ে আয়াতের পায়ে জোড়ে একটা চিমটি কাটলো সাথে সাথে আয়াতের গলায় খাবার আটকে বিশম খেলো। অনু চুপচাপ নিচের দিকে তাকিয়ে খাচ্ছে আর মুচকি মুচকি হাসছে। কিছুক্ষন পর আবার একটা চিমটি কটলো। বেচারা আয়াত সবার সামনে কিছু বলতেও পারছে না। খাবার শেষে যখন রুমে গেলো।
আয়াতঃ অনু তুমি আমাকে চিমটি কাটলা কেন?
অনুঃ আমি? *অবাক হওয়ার ভান করে) কখন? কোথায়? কিভাবে?
আয়াতঃ থাক থাক বুঝেছি । হুহহ
এভাবেই চলতে থাকে ওদের খুনশুটি। অনু প্রধান কাজ হচ্ছে আয়াতের পিছে লাগা। তাই সবসময়ই ওর পিছনে লাগে। আয়াত কিছু বলে না উল্টো অনুর ছেলে মানুষি গুলো আয়াতের কাছে বেশ ভালো লাগতো। ধীরে ধীরে অনুও আয়াতের প্রতি দুর্বল হতে লাগলো। কিন্তু অনু খুব কনফিউজ ছিলো যে ও সত্যিই আয়াতকে ভালোবাসে কিনা? তাই কিছু বুঝতে না পেরে ওর বান্ধবী ঈশাকে ফোন দেয়।
অনুঃ হ্যালো ঈশা!
ঈশাঃ হাই বেবি কেমন আছো?
অনুঃ রাখ তোর বেবি। আমি ভালো নাইরে। একটা বিষয় নিয়ে খুব কনফিউজ আছি?
ঈশাঃ কেন? কি বিষয় বেবি?
অনুঃ আমি ভাবতেছি আমি আয়াতকে ভালোবাসি কিনা?
ঈশাঃ লে হালুয়া ! বিয়ের চারমাস পর মেয়ে কয় তার স্বামীকে ভালোবাসে কি না? কেনো রে তোদের মধ্যে এখনো হয়নি?
অনুঃ দেখ একদম বাজে কথা বলাবি না। আমাদের মাঝে এখনো কিছু হয়নি। তোর কাছে যা জানতে চাইছি তার উত্তর দে?
ঈনাঃ অনু বেবি তুমি কনফিউজ মানে তুমি পাক্কা ভাইয়ার প্রেমে পড়ছো। আর কনফিউসন দূর করার একটা সহজ রাস্তা আছে।
অনুঃ তোর কার অপেক্ষা করছিস তাড়াতাড়ি বলনা?
ঈশাঃ তুই কিছু দিনের জন্য ভাইয়ার থেকে দূরে থাক। মানে তোদের বাড়ি গিয়ে থাক। খেয়াল রাখবি ভাইয়া যেনো তোর সাথে না থাকে। তারপর দেখবি ভাইয়াকে ছেড়ে থাকতে কেমন লাগে! আর দিনের মধ্যে কয়বার তোর ভাইয়ার কথা মনে পড়ে। যে কয়বার মনে পড়বে সে কয়বার তুই খাতায় ভাইয়ার নাম লিখে রাখবি। তারপর পরের খবর পরে বলবো। আগে এটুক কর।
অনুঃ ওকে ডান সুইটি। লাভ ইউ বেবি।
ঈশাঃ ভাইয়া শুনলে আমাকে দেশ ছাড়া করবে। বাই বেবি।
অনুঃ বাই। অনু এবার মনে মনে ফন্দি আটলো কিভাবে বাড়ি যাওয়া যায়। অনু আয়াতের কাছে গিয়ে বললো
অনুঃ আয়াত আমার না বাড়ির জন্য মন কেমন করছে।
আয়াতঃ ঠিক আছে তাহলে কাল চলে যেও। কিন্তু
অনুঃ কিন্তু কি?
আয়াতঃ আমি যেতে পারবো না। কারন কয়েকদিন ধরে কাজের চাপ খুব বেশি।
অনুঃ রিয়েলি ! মনে মনে খুশি হয়ে বললো এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। তারপর নিজের খুশি কন্ট্রোল করে ঠিক আছে যখন যেতে পারবেন না তখন আর কি করা?
পরের দিন আয়াত অনুকে ওদের বাড়ি দিয়ে চলে আসলো। আয়াত চলে যাবার পর থেকে অনুর একা একা খুব খারাপ লাগতে ছিলো। আর ওর সারাদিন শুধু খাতায় আয়াতের নাম লিখেই কেটে গেলো। দুদিন পর অনু ঈশাকে ফোন দিলো
অনুঃ ঈশা
ঈশাঃ হ্যা বল?
অনুঃ ঈশা
ঈশাঃ ঢং না করে বল কি হয়েছে?
অনুঃ তিন দিন ধরে লেখার খাতা হাত থেকে রাখতেই পারছি না। তিনটা খাতা অলরেডি শেষ এখন ফলাফল কি বল?
ঈশাঃ অনু বেবি তুমিতো ফেষে গেছো!
অনুঃ মানে?
ঈশাঃ মানে তুমি আয়াত ভাইয়াকে ভালোবেসে ফেলেছো।
অনুঃ কিভাবে ?
ঈশাঃ ন্যাকা কিছু বোঝে না। এখন যা ভাইয়াকে প্রপোজ কর আর তাকে তোর ভালোবাসার কথা বলে শান্তি দে বেচারাকে। আর এখন আমাকে শান্তি দে। তোর একলার স্বামী নাই আমারো আছে আর আমি তাকে খুব ভালোবাসি। তোর মত সবার সাথার স্ক্রু ডিলা না। ফোন রাখ। গাঁধি। ফোন রেখে অনু এবার আয়াতকে ফোন দিলো।
আয়াতঃ হ্যা বলো অনু!
অনুঃ আপনি আমাকে নিতে আসছেন না কেন?
আয়াতঃ কালকেই আসবো।
অনুঃ নাহ এখন আনবেন। রাতের মধ্যে আমি আপনাকে আমাদের বাসায় দেখতে চাই।
আয়াতঃ ওকে ওকে আসতেছি তবুও রাগ করো না।
রাতে আয়াত আসলো কিন্তু আসার পর থেকে বাড়ির সবার সাথেই কথা বলায় বিজি হয়ে পড়লো। এমন কি অনুর রুমে পর্যন্ত আসলো না। এদিকে অনুতো রেগে আগুন। খাওয়া দাওয়া শেষে আয়াত রুমে ডুকে তো অবাক। অনেক সুন্দর করে ফুল দিয়ে রুমটা সাজানো। আর অনুও খুব সুন্দর করে সেজেছে। লাল শাড়ি, লাল চুড়ি হালকা মেকাপে অসাধারন লাগতে ছিলো। আয়াত অপলক দৃষ্টিতে অনুর দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে জিগেস করলো
আয়াতঃ অনু এসব কি?
অনুঃ চোখ নাই দেখেন না। আর আপনার এতক্ষনে রুমে আসার সময় হলো।
আয়াতঃ অনু তুমি ঠিক কি বলতে চাইছো আমি বুঝতে পারছি না?
অনুঃ দেখুন আমি অন্য মেয়েদের মত ন্যাকামি ভাব করা পছন্দ করি না। যা বলার সোজা সুজি বলে দেই।
আয়াতঃ হ্যা বলো?
অনুঃ I think I love u
আয়াত শুনেও না শোনার ভান করে মনে মনে দুষ্টমি ফন্দি এঁটে বললো কি বললা ঠিক শুনতে পাইনি। অনু আয়াতের খুব কাছে গিয়ে। একদম ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো I love u মিঃ হ্যাজবেন্ড। তারপর লজ্জা পেয়ে আয়াতের বুকে মুখ লুকালো।
আয়াতঃ (মুচকি হেসে) তাহলে মিসেস অনু সত্যি সত্যিই আমার প্রেমে গেছে। আর তুমি যে বলেছিলে সারা জীবন আমাকে জ্বালাবে তার কি হবে?
অনুঃ তাতো জ্বলাবোই। মরে গিয়েও ভুত হয়ে তোমাকে জ্বালাবো।
আয়াত অনুর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে বললো কখনো মরার কথা বলবে না। আমি চাই তুমি সারা জীবন আমাকে এভাবেই জ্বালাও। বাকিটা ইতিহাস আর ভুগল এর পরের দি ন গুলো প্রচন্ড ভালো কাটতেছিলো। কিছুদিন পর ওদের প্রথম বিবাহ বার্ষিকি। তাহলে দ্বিতীয় বিয়ে কেন হচ্ছে? অনু সবসময়ই আয়াতকে বলতো আমার বিয়েতে আমি কোন মজা করতে পারিনি। কারন বিয়েতে রাজি ছিলাম না বলে ঠিকমত সাজিও নাই আর কোন ফ্রেন্ডকে ইনভাইটও করেনি। এটা নিয়ে ভিষন আফসুস লাগে।
আয়াতঃ ডোন্ট ওরি ডিয়ার এবার তোমার সব আফসুস দূর করে দিবো। আমাদের বিবাহ বার্ষিকি তে আমরা আবার ধুমধাম করে বিয়ে করবো। যেমনটা তুমি চেয়েছিলে। অনুর স্বপ্ন পূরন করতে আয়াত আবার অনুকে আজ বিয়ে করবে। হ্যালো ফ্রেন্ড কল্পনা শেষ এবার বাস্তবে চলে আসেন। কাজি যখন অনুকে কবুল বলাতে আসলো তখন অনু আয়াতকে ফেনি দিয়ে বললো
অনুঃ হ্যালো আয়াত! আমার একটা শর্ত আছে পূরন করলে কবুল বলবো নয়তো বলবো না।
আয়াতঃ হ্যা বলো।
অনুঃ আজ থেকে রোজ তুমি আমাকে কোলে নিয়ে ছাদে উঠবা?
আয়াতঃ রোজ কিভাবে সম্ভব?
অনুঃ শর্ত মানো নইলে ভাগো।
আয়াতঃ ওকে কবুল
অনুঃ কবুল কবুল কবুল কবুল
কাজিঃ মা তিনবার বলতে হয় এতবার বলার দরকার নাই। অবশেষে আবার অনু ঘরে। চেনা রুমটাও আজ সুন্দর করে সাজানোর ফলে অচেনা আর নতুন লাগছে।
আয়াত রুমে এসে অনুকে কোলে নিয়ে ওদের বারান্দায় গেলো। আর বললো
আয়াতঃ কি ম্যাডাম স্বপ্ন পূরন হলো ? বিবাহ বার্ষিকির গিফ্ট কেমন লাগলো?
অনুঃ হুমম। (খুশিতে গলাটা ভারী হয়ে আসছে।) তোমার উপহরে নিবে না।
আয়াতঃ আচ্ছা কি? তাড়াতাড়ি বলো? অনু আয়াতের হাতটা নিয়ে নিজের পেটে রেখে বললো এটা। আয়াত ছলছল চোখে অনুর দিকে তাকিয়ে।
আয়াতঃ সত্যি!
অনুঃ হুমমমম! খুব শিগ্রই আসছে আমাদের মাঝে ছোট্ট একটা আয়াত।
আয়াতঃ আই লাভ ইউ। বাহ! বিয়ের রাতে স্বামীকে বাচ্চা উপহার! এটাতো ব্রেকিং নিউজ হবে
অনুঃ যাহ পাজি।
আয়াতঃ পাজির কি হলো তুমিতো আমার দ্বিতীয় বিয়ে করা প্রথম / দ্বিতীয় বৌ। আর ও আমাদের প্রথম ভালোবাসার প্রথম চিন্হ। তাই নয়কি? দুজন একসাথে হেসে দিলো।
অনুঃ আয়াত!
আয়াতঃ হুমমম
অনুঃ আই লাভ ইউ
আয়াতঃ লাভ ইউ টু ডিয়ার।