গফ – কি করো জানু। ঘুম হয়ছে ঠিক মতো..?
বফ – এইতো জান সাঁতার কাটতেছি নদীতে। আসো একসাথে সাঁতার কাটি।
গফ – যাও দুষ্টু কোথাকার। আর এই ঠান্ডার মধ্যে কেউ সাঁতার কাটে..?
বফ – তো তাহলে সাঁতার কাটে না যখন তাহলে এতো সকাল এ ঠান্ডার মধ্যে মানুষ কি করে ঘুমায় তাহলে এতো ঢং করে বলার কি আছে যে করি…??
গফ – আসলে এমনেই ( মন খারাপ করে)
বফ – (বুঝতে পেরে) আচ্ছা ঠিক আছে আর অভিমান করতে হবে না।
গফ – আচ্ছা তুমি ঘুমাও রাখলাম আমি..
টুট টুট টুট….
কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে ফোনটা কেটে গেল।
এতোক্ষন কথা হচ্ছিল কাউছার আর জান্নাত এর মাঝে। তারা দুজনে একই ভার্সিটিতে পরে। সমবয়সী দুজনেই। একই ক্লাসে পরার দরুন ওদের পরিচয়।
কিছুদিন এর মধ্যে খুব ভাল বন্ধুত্ব হয় ওদের। এক মুহুর্ত কেউ কাউকে ছাড়া চলতে পারত না। দুজনেই দুজনার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ে।
দুজন দুজনকে ভালবেসে ফেলেছিল কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারতো না। কারন তারা মনে করতো যে হয়তো কিছু মনে করবে আমাদের মাঝে যে
সম্পর্কটা আছে হয়তো সেটাও ভেঙে যাবে। তাই দুজনেই চুপ থাকে
এক সময় সব জড়তা ভেঙে কাউছার জান্নাত কে প্রপোজ করে। নিজের মনের মানুষ এর প্রোপোজাল সেদিন হাসি মুখ এ গ্রহন করেছিল জান্নাত।
ভালই চলছিল তাদের মিষ্টি প্রেম। একে অন্যের কেয়ার করতো অনেক। জান্নাত একটু বেশীই কেয়ার করে কাউছার এর। সে কখন কি করলো না করলো,
খাওয়া করছে কিনা ঠিকমতো সবকিছুর দিকে খেয়াল রাখে ময়েটা। এভাবেই কেটে যায় ২ বছর। কিন্তু ইদানিং কাউছার এর মাঝে একটু পরিবর্তন লক্ষ্য করে।
আগের মতো ঠিকমতো কথা বলে না ফোন দেয় না দেখা করতে বল্লেও এড়িয়ে যায় সে। কিছু বল্লেই কেমন যেন একটা আচরন করে।
আজ সকালে যেমনটা করলো। এগুলো ভাবতে ভাবতে নিরবে চোখের পানি ফেলে জান্নাত। হঠাৎ কাউছার এর মেসেজ আসে ফোন এ ঃ
আমার তোমার সাথে কিছু কথা আছে। আজকে জিয়া পার্কের বিকাল ৫ টায় আমরা যে জায়গাটাতে দেখা করতাম সেখানে চলে এসো।
ওখানেই কথা হবে ” মেসেজটি দেখে ভেবে পাইনা জান্নাত যে হঠাৎ কেন এতো জরুরি দেখা করার কথা বলতেছে ও। এতোদিন দেখা করার কথা বলেও
দেখা করে না আজ হঠাৎ। এগুলো ভাবতে থাকে জান্নাত। এদিকে কাউছার ভাবতে থাকে কিভাবে বলবে জান্নাত কে যে ভুলে যেতে এই সম্পর্কটাকে,
ভুলে যেতে তাদের দুজনের দেখা সমস্ত সপ্ন তাদের ভবিষ্যৎ আশা কিভাবে ভাঙবে। কাউছার এর মনে পরে সেদিন এর কথা যেদিন জান্নাত এর বাবা
ওকে ফোন করেছিল। একদিন কাউছার আর জান্নাত হাত ধরে রিক্সায় করে হসপিটাল রোড দিয়ে যাইতে ছিল সেদিন জান্নাত এর বাবা তার অফিসের
কলিগের সাথে এসেছিল হসপিটাল এ। তাদের দুজনকে এমন অবস্থায় দেখে বাসায় চলে যায় তিনি। জান্নাতকে কিছু বলে না তার বাবা। কোথা থেকে
কাউছার এর ফোন নাম্বার যোগাড় করেন আর কাউছারকে দেখা করতে বলেন তিনি। কাউছার দেখা করে এবং জান্নাতের বাবা বলে সে যেন তার মেয়ের
সাথে দেখা না করে কিন্তু কাউছার এটা মানে না একপর্যায়ে নিজের মেয়ের ক্ষতি করবে বলে জান্নাত এর বাবা। নিজের ভালবাসাকে কিভাবে ক্ষতি হতে
দিবে সে তাই মেনে নেয় কাউছার। যার জন্য এই নাটক করছে আজ সব কিছু শেষ করবে কাউছার। এভাবে কষ্টটা আর সহ্য হচ্ছে না। বিকেল ৫ টায়
সেই চিরচেনা যায়গায় বসে আছে কাউছার। এখানে কত না স্মৃতি জড়িয়ে আছে। কত সপ্নের জাল বুনেছে এখানে বসে। এগুলো ভাবতেই চোখের কোনে
পানি চলে আসে কাউছার এর। কিছুক্ষন পর জান্নাত চলে আসে। আজকে নীল শাড়ি পরে এসেছে ও হাত এ নীল চুড়ি খোলা চুল এককথায় এক অপরুপা নারী।
জন্নাত এসে কাউছার এর পাশে বসে কাউছার হাতটা ছাড়িয়ে নেই। তারপর বলতে শুরু করে
কাউছার – কেমন আছো..?
জান্নাত – ভাল আছি। কিন্তু আজকে হঠাৎ কি হলো তোমার যে এতোদিন পর দেখা করতে বললে।
কাউছার – কারন আজকে আমার আর তোমার শেষ দেখা করা।
জান্নাত- কি বলো এসব। ফাইজলামি ভাল লাগছে না। এমনেই সকালে মুড খারাপ করে দিছ। আর এতোদিন পর দেখা করার কথা বললে মনটা ভাল করে আসছি।
তাই উল্টাপাল্টা কিছু বলো না।
কাউছার – কি বলবে কিছু ভেবে পাই না। কষ্টটা বুকে চেপে রেখে বলে। হ্যা আমি ঠিক ই বলছি জান্নাত আমাদের আর দেখা হবেনা। আর আমাদের মাঝে যে
সম্পর্কটা ছিল ভুলে যাও সেটা।
জান্নাত – কিন্তু কেন.?? আমার কি কোন ভুল আছে। বলো আমি সুধরে নিব তবুও আমাকে একা ফেলে যেও না। (কান্নাজড়িত কন্ঠে)
কাউছার – না তোমার কোন দোষ নেই। আমি তোমাকে আর ভালবাসিনা। আমি অন্য কাউকে ভালবাসি। তাই আমাকে ভুলে যাও।
জান্নাত – না তুমি মিথ্যা বলছো কেন বলছো এমন। প্লিজ এমনটা করো না।
কাউছার – এটাই সত্যি জান্নাত। ভুলে যাও আমাকে। ভাল থেকো।
দেখলাম মেয়েটা কাঁদছে। উঠে চলে আসলাম ওখান থেকে ওর কান্না আমার একদম সহ্য হয়না। ওখানে থাকলে হয়তো আমিও কেঁদে ফেলবো। হাটতেছি
পিছনে মেয়েটার কান্নার আওয়াজ আসছে বুকটা ফেটে যাচ্ছে কিন্তু কিছু করার নেই। ও যেন সুখে থাক এটাই চাওয়া।
কিছু ভালবাসা পবিত্র হয় যার মধ্যে থাকে না কোন কষ্ট কোন দুঃখ কিন্তু সেই ভালবাসা কোন এক কারনে এক হতে পারেনা। সব ভালবাসাই এক হতে পারেনা
কিছু কিছু ভালবাসা অপূর্নই থেকে যায়।