ভালবাসা এমনি হয়

ভালবাসা এমনি হয়

এত ভালবাসা কবে থেকে??‍

– তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠ। তোর না ইন্টার্ভিউ আছে আজকে একটা? (আপু)
– হ্যাঁ আপু উঠছি।

উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে বের হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় দেখি সামনে নিঝুম। আমাদের পাশের ফ্ল্যাটে থাকে। অনেক ঝগড়াটে। আমাকে দেখলে যেন ওর ঝগড়ার ইচ্ছে বেড়ে যায়।

– এই যে লাট সাহেব আজ এত সকাল সকাল হাবলুর মত হয়ে কোথায় যাচ্ছেন?
– তোমার কি খেয়েদেয়ে আর কাজ নেই?
– আছে তো। এই যে আপনার সাথে ঝগড়া করাও একটা কাজ।
– সাইড দাও। চাকরীর ইন্টার্ভিউ দিতে যাচ্ছি। মনে হয়না চাকরী টা আর হবে।
– কেন?
– সকাল সকাল তোমার মুখ দেখা মানে সারাদিন বিফলে যাওয়া।
– একদম মেরে নাক ফাটিয়ে দেব।

এমনিতেও গত একবছর ধরে চাকরীর চ টাও পাচ্ছেন না। এভাবে না বলে ইন্টার্ভিউ দিন। আল্লাহর রহমতে এবার চাকরী টা হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। মেয়েটার মুখে এমন কথা শুনে অবাক হয়ে গেলাম। এই মেয়ে আমি চাকরী পাওয়ার জন্য দোয়া করছে? কোনোদিন তো ঝগড়া ছাড়া কথাও বলেনি।

প্রচন্ড জোড়ে বৃষ্টি হচ্ছে। রাস্তাঘাট খালি। লোকজন ফুটপাথ আর দোকানের ভিতরে খালি জায়গা দখল করে আছে। মাঝে মধ্যে দুই একটা গাড়ি আসতে দেখা যাচ্ছে। আমি আনমনা বৃষ্টি তে ভিজে ভিজে হাটছি। লোকে হয়তো পাগল ভাবছে আমাকে, এত বৃষ্টি তে পাগল ছাড়া আর কে ভিজবে? আমার পকেটে চাকরীর এপয়েন্টম্যন্ট লেটার। অবশেষে চাকরী টা পেয়ে গেলাম। ৭০০০০ টাকা মাসিক বেতন। কিছুদিন পর আরো বাড়বে। একটা সফটওয়্যার কম্পানির চাকরী। কিন্তু এখন এত টাকার চাকরীর দরকার ছিল না আমার। গত ৬মাস আগে দরকার ছিল। খুব করে দরকার ছিল একটা চাকরীর। একদিন সকালে মোবাইল এর আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায়। বিরক্তি নিয়ে মোবাইল রিসিভ করে দেখি তামান্না কল দিয়েছে।

– হ্যালো (আমি)
– তুমি এখনো ঘুমাচ্ছো? (তামান্না)
– হুম।
– আচ্ছা এখন তারাতারি উঠে কেএফসি তে আসো।
– এখন! কিন্তু কেন?
– কেন টেন বুঝিনা, তাড়াতাড়ি আসো আমি অপেক্ষা করছি।
– আচ্ছা আমি ১০ মিনিট পরে আসছি। তৈরি হয়ে পৌঁছে গেলাম কেএফসি তে তামান্নার সাথে দেখা করতে।
– ৩০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি, এই তোমার ১০মিনিট!
– আসলে….

– আচ্ছা শোনো, আগামী সপ্তাহ আমার বিয়ে।
– বিয়ে? মজা করোনা তো।
– মজা না আমি সিরিয়াসলি বলছি।
– ভালই হলো; একটা দাওয়াত খেতে পারব।
– তোমার কষ্ট হচ্ছে না? আমাকে একবার ও আটকাবে না?
– কষ্ট কিসের? আর আটকাবো কেন? তা ছেলে কি করে?
– ছেলে সুইডেন থাকে।
– তাহলে তাকে বিয়ে করে নাও। খুব সুখী হবে।
– আমি জানি।
– হুম।
– ঠিক আছে। আমি যাচ্ছি। ভালো থেকো।

তামান্না চলে যাচ্ছে। আমি ওর চলে যাওয়া দেখছিলাম। তামান্নার চোখে জল স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। না মেয়েটা কে এভাবে বলা উচিৎ হয়নি। সেদিন খুব বৃষ্টি হয়েছিল। সেদিন যেমন টা ভিজেছি, আজকেও তেমন ভিজছি। সেদিন বৃষ্টির আড়ালে অনেক কেঁদেছিলাম। তবে আজকে আর কান্না আসছে না। তামান্নার যাওয়ার পরে এখন কাওকে ভালবাসতে ভুলে গেছি, ভুলে গেছি কিভাবে কাঁদতে হয়। ভিজতে ভিজতে বাসায় চলে এলাম। রাতে আর খাওয়া হয়নি। আজ আর খেতে ইচ্ছে করছে না।

– আপু চাকরী টা হয়ে গেছে।
– সত্যি! এ তো অনেক খুশীর খবর। তুই এমন মুখ গোমড়া করে আছিস কেন?
– না এমনে।
– আয় খেতে চল।
– না আজকে খাবো না। ক্ষিদে নেই।
– তামান্নাকে এখনো ভুলতে পারিস নি?
– আরে না। এমনি তে ক্ষিদে নেই আজ।

রাত ১টা বাজছে। মেঘ চমকাচ্ছে আর হালকা শিতল বাতাস বইছে সাথে গুড়িগুড়ি বৃষ্টি। ছাদে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি। পরশু থেকে চাকুরী জয়েন দিব। পেছন থেকে কেও এসে ডাক দিল।

– আপনি এত রাতে এখানে? (নিঝুম)
– হুম। কিন্তু তুমি এখানে?
– হ্যাঁ। ঘুম আসছিল না তাই ছাদে এলাম।
– হুম।
– আপনি সিগারেট ও খান?
– হুম।
– এটা কিন্তু সাস্থের জন্য ক্ষতিকারক।
– জানি।

– তবুও খান? কেন? খুব টেনশন? তামান্না কে খুব মিস করেন তাইনা?
– তুমি তামান্নার কথা কিভাবে জানো?
– আপু আমাকে সব বলেছে। আর আমি এখানে আপনার জন্য এসেছি। রাতে খান নি কেন?
– ভাল লাগছেনা তাই।
– আচ্ছা এখনো কি তামান্না কে খুব ভালবাসেন?
– হয়ত হ্যাঁ; হয়ত না। মেয়টা খুব করে চেয়েছিল আমি তাকে আটকাই। কিন্তু আটকানোর যোগ্যতা আমার ছিল না।
– ওহ। অবশেষে চাকরি টা পেয়ে গেছেন। মেয়েটা কে আর ৬ মাস অপেক্ষা করতে বলতে পারতেন।
– পারতাম। কিন্তু আত্মবিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছিলাম। কিন্তু তুমি এইসব জিজ্ঞাসা করছ কেন?

– না এমনে।
– আচ্ছা একটা কথা বলব?
– হুম বল।
– আমাকে বিয়ে করবেন?
– বিয়ে?
– হুম আমি আপনাকে অনেক অনেক ভালবাসি।
– হাহাহা।
– হাসছেন কেন? আমি সত্যি বলছি।
– না এমনে। আমাকে ভালবেসে শুধু কষ্ট পাবে।
– আমি এসবের পরোয়া করি না। আমি আপনাকে অনেক আগেই বলতে চেয়েছিলাম। আপু না করেছিল। বলেছিল চাকরী পেলে জানাতে।

– আপু!
– হুম।
– কিন্তু আমি কখনো তোমাকে নিয়ে এমন কিছু ভাবিনি।
– এখন ভাবেন।
– এটা আমার দ্বারা হবেনা। সরাসরি আমার শার্টের কলার ধরে টেনে বলতে লাগল।
– কথা কানে যায়না?
– না মানে…
– চুপ কোনো কথা না। খেয়াল করে দেখলাম নিঝুম কাঁদছে।
– তুমি কাঁদছ কেন? [এটা বলতেই ও আমাকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে]
– ধুর পাগলি কাঁদছ কেন? সবসময় তো ঝগড়া করতে। তবে এত ভালবাসা কবে থেকে? [ওর মুখে কোনো কথা নেই]

ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে। গুড়িগুড়ি বৃষ্টি পরছে। নিস্তব্ধতা বিচরণ করছে চারিপাশে। ঝিঁঝিঁ পোকার ডাকে অন্ধকারের গভীরতা আরো প্রখর করে দিয়েছে। অনেকদিন মন থেকে কাওকে ভালবাসিনি। এখন থেকে বাসতে হবে। নাহলে এই মেয়ে আমাকে মেরে ফেলবে।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত