গত দুইমাস ধরে তনিমার পিছনে পরে আছে রাফি। উদ্দেশ্য একটায় তনিমাকে প্রেমে রাজি করানো। গত ছয় মাস হয়েছে তনিমা গ্রাম থেকে এসে শহরের এই কলেজে এডমিশন নিয়েছে। এই পর্যন্ত অনেকেই তাকে প্রোপোজ করেছে। কিন্তু কারোর প্রস্তাবেই রাজি হয়নি সে। তার এক কথা, সে এতো দুর এসেছে লেখাপড়া করতে… প্রেম করতে নয়। তনিমার ডিরেক্ট না উত্তরের পর অনেকেই দ্বিতীয় বার এগিয়েছে আবার অনেকে সেখানেই থেমে গিয়েছে। কলেজেই সবাই এখন প্রায় নিশ্চিত যে, এই মেয়েকে কোনোভাবেই প্রেমে ফেলা সম্ভব না। কিন্তু এই রাফি ছেলেটা জোকের মতো বেজে আছে তার পিছে। তনিমা কতো করে বুঝাচ্ছে। কিন্তু কে শুনে কার কথা।
সেদিন, কলেজ থেকে হোস্টেলের দিকে যাচ্ছিলো তনিমা। এমন সময় রাফি এসে সামনে দাড়ালো।
– কি হচ্ছে কি, পথ ছাড়ুন।
– যদি না ছাড়ি?
– ভদ্রলোক কখনো রাস্তার মাঝখানে রংবাজি করেনা। যদি ভদ্র ঘরের হয়ে থাকেন, তাহলে আমার পথ ছাড়ুন।
– তোমার সামনে ভদ্রতা প্রদর্শনের কোনো প্রয়োজন আমার নেই।
ভদ্রতা দেখানোর হলে অন্য জায়গায় দেখাবো। বুঝলা জানু তনিমা আর কোনো জবাব না দিয়ে পাশ কাটিয়ে চলে গেলো। কিন্তু রাফি হাল ছাড়েনি। সে যেকোনো ভাবেই হোক, এই মেয়েকে রাজি করাবেই। ইদানীং রাফি প্রায়ই তনিমার হোস্টেলের সামনে গিয়ে বসে থাকে, দাড়িয়ে থাকে। তনিমা অনেক বুঝিয়েও তাকে সরাতে পারছেনা। অতিষ্ঠ হয়ে যাচ্ছে তনিমা। এইরকম নাছোড়বান্দা আর একটা দেখেনি সে। একদিন বিকালে তনিমা হোস্টেলের বারান্দায় চেয়ারে বসে ফোনে গান শুনছিলো। এমন সময় একটা আননোন নাম্বারে কল এলো তার ফোনে… ফোনটা রিসিভ করে বললো…
– হ্যালো, কে বলছেন? ওপাশ থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। কিন্তু কেউ কথা বলছে না।
– আশ্চর্য, কাঁদছেন কেন? কে বলছেন বলেন প্লিজ…
– তনিমা আপু..
– জ্বী বলুন আপু… কে আপনি?
– আমি রাফির বান্ধবী জিনিয়া।
– হ্যাঁ, ভালো কথা। এতে এতো কান্নার কি আছে?
– আপু, রাফি সুইসাইড করতে গিয়েছে। কান্না করতে করতে মেয়েটি বললো।
– মানে কি? সুইসাইড করতে গেছে, আর আপনারা ওর বন্ধু হয়ে জেনেও বসে আছেন। আটকাচ্ছেন না কেন? উত্তেজিত হয়ে বললো তনিমা।
– আপু, আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু ও কোনো কথায় শুনলো না আমাদের। আপনিই পারেন ওকে বাঁচাতে।
– আমি? আমি কিভাবে বাচাবো?
– রাফি বলে গেছে, আপনি যদি ওর কাছে গিয়ে ওর ভালোবাসা গ্রহণ করেন তাহলে সে সুইসাইড করবেনা।
তনিমা বেশ চিন্তিত হলো। শেষে মেয়েটির কাছ থেকে ঠিকানা নিয়ে রাফির কাছে গেলো। রাফি সবেমাত্র গাছের ডালে দড়ি লাগিয়ে গলায় দিবে এমন সময় তনিমা সেখানে গিয়ে হাজির হয়।
– কি করছেন কি? পাগল হলেন নাকি? নামুন বলছি…
– আগে বলো তুমি আমাকে ভালোবাসো।
– আহা, কি জ্বালায় পরলাম। আগে নামেন, তারপর বলছি।
– ঠিকআছে, তুমি চলে যাও। আমার কথা চিন্তা করতে হবেনা তোমার। আমি মরলেই কি আর বাচলেই কি।
– মাথা ঠিক নেই আপনার। জলদি নামেন।
– আমার ভালোবাসা গ্রহণ না করলে আমি মরবোই, বলেই গলায় দড়ি দিতে লাগলো রাফি।
– আচ্ছা, ঠিকআছে। গ্রহণ করলাম। এইবার তো নামেন।
– কি গ্রহণ করেছো?
– আপনি যেটা বলেছেন?
– কোনটা?
– এইবার কিন্তু বেশি হয়ে যাচ্ছে।
– স্বীকার করবে না তো। ঠিকাছে, মরলাম।
– ভালোবাসি..
– কি বললে? শুনতে পাইনি। আবার বলো।
– আপনি এতো ফাজিল কেন? বললামতো ভালোবাসি।
– সত্যি বলছো তো?
– হুম। এইবার নামুন।
– নামবো না।
– আবার কি হলো?
– ভালোবাসার মানুষকে কি কেউ আপনি করে বলে?
– একসাথে সব হবেনা। সময় দিতে হবে।
– আচ্ছা, চলে যাও। মন খারাপ করে বললো রাফি।
– হয়েছে হয়েছে, আর ঢং করতে হবেনা। এইবার নামো..
রাফি নেমে আসে। তনিমাকে জড়িয়ে ধরে সে। শুরু হয় ভালোবাসার নতুন অধ্যায়। দিন যেতে লাগলো। তনিমা আর রাফির ভালোবাসা গভীর থেকে গভীরতর হতে থাকলো। এখন তনিমা রাফির সাথে কথা না বলে এক মুহুর্ত ও থাকতে পারেনা। রাফি যেনো তনিমার বেচে থাকার নিশ্বাস। রাফিও অনেক সময় দেয় তনিমাকে। দুজনের মধ্যে আহা কি প্রেম। যেনো হিংসে করার মতো।সেদিন কলেজ ক্যাম্পাসে, তনিমা আর রাফি বসে আছে। রাফি বললো..
– তনু.. তুমি আমাকে সত্যিই অনেক ভালোবাসো তাইনা?
– হুম। নিজের থেকেও বেশি।
– আমি যদি তোমার কাছে একটা জিনিস চাই তাহলে দিবা?
– কি জিনিস বলো। দেওয়ার মতো হলে অবশ্যই দিবো।
– নাহ, আগে কথা দাও দিবা।
– ওকে বাবা, কথা দিলাম। এইবার বলো কি চাও।
– আমি আমার ফ্রেন্ডসদের সাথে অনেক গর্ব করে বলেছি.. তুমি আমাকে এতোই ভালোবাসো যে, তাদের সবার সামনেও আমাকে ভালোবাসার কথা বলতে পারবা। এখন তারা চাইছে তুমি এইটা করো।
– এখন আমাকে কি করতে হবে শুনি?
– ওদের সবার সামনে বলতে হবে তুমি আমাকে ভালোবাসো। প্লিজ, আমার জন্য এইটুকু করো। নইলে যে অদের কাছে আমার মান সম্মান থাকবেনা।
– এটা করলে তুমি খুশি হবে?
– হুম
– ঠিকআছে। একটা দীর্ঘ নিশ্বাস ফেললো তনিমা।
দুইদিন পর কলেজ ক্যাম্পাসে দাড়িয়ে আছে রাফি । সাথে তার পাচ বন্ধু জিনিয়া, রিপা, পলাশ, রিহান আর দিশা। কিছুক্ষন পর তনিমা এসে তাদের সামনে দাড়ালো। রাফি ওর সামনে হাসিমুখে গিয়ে ওর হাতে ধরলো। তনিমা কাঁপছে। কখনো এইরকম পরিস্থিতিতে পরেনি সে। রাফি বললো..
– তুমি ঠিক আছো তো তনু?
– হ্যাঁ আমি ঠিক আছি।
– তাহলে বলো তনিমা কি করবে বুঝতে পারছেনা।রাফি আবারও বললো..
– তনু, এইটা আমার মান সম্মানের প্রশ্ন প্লিজ চুপ করে থেকোনা।তনিমা এইবার আর চুপ থাকলোনা। সাহস করে বলেই ফেললো..
– আই লাভ ইউ রাফির বন্ধুরা বলতে লাগলো..
– কি রে রাফি, এই তোর ভালোবাসা? কি বললো আমরা শুনতেই পেলাম না। সে কি তোর ভালোবাসা প্রকাশ করতে ভয় পাচ্ছে নাকি? নাকি কোনো সিক্রেট কারণ আছে? রাফি তনিমাত দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকালো। সেই দৃষ্টি সহ্য করতে পারলোনা তনিমা। জোরে চেচিয়ে বলতে লাগলো তনিমা..
– আই লাভ ইউ রাফি।
আমি তোমাকে অনেক অনেক অনেক বেশি ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবোনা। তুমি ছাড়া যে আমি অর্থহীন। কথাগুলো এক দমে বলেই নিচের দিকে তাকালো তনিমা। পানিতে তার চোখ দুটো ছলছল করছে। রাফি এইবার বিজয়ের হাসি দিলো। চারিদিক থেকে হাত তালির প্রতিধ্বনি আসতে লাগলো । তনিমা অবাক চোখে চারিদিকে তাকালো। কলেজেই সবাই যে এখানে উপস্থিত। কখন এরা এসেছে বুঝতেই পারেনি সে। লজ্জায় মরেই যাচ্ছে সে। এক এক করে সব বন্ধুরা রাফিকে উয়িশ করতে থাকলো বাজি জেতার জন্য কংগ্রেটস জানাচ্ছে তাকে। জিনিয়া বললো..
– বাহ রাফি.. তোকে বস মানতেই হবে। কি চালটাই না দেখালি। যে কাজটা আজ পর্যন্ত কেউ করতে পারেনি, যেটা প্রায় অসম্ভব ছিলো, বাজি ধরে সেটা তুই দেখিয়েই দিলি। তনিমা অবাক চোখে তাদের দেখছে। কিসের বাজির কথা বলছে সে বুঝতে পারছেনা। শেষে রাফিকে জিজ্ঞেস করেই ফেললো..
– রাফি, ওরা কিসের বাজির কথা বলছে?
– তোমার আর আমার ভালোবাসার বাজি।
– মানে?
– মানে, তুমি কি ভেবেছো?
তোমার মতো একটা দুই টাকার মেয়েকে আমি ভালোবাসবো? অসম্ভব। আমি তো আমার বন্ধুদের সাথে বাজি ধরেছিলাম, তোমাকে আমার প্রেমের ফাঁদে ফেলব আর সেটা পুরো কলেজের সামনে তোমার মুখ দিয়েই বলাবো। তনিমা কেদে দিলো.. বললো..
– কি বলছো এইসব তুমি? তুমি মজা করছো তাইনা?
– মজা তো আমি এতোদিন করেছিলাম। এখন যা হচ্ছে সেটা মজা না, সত্যি।
– কেন করলে আমার সাথে এইসব? ফুপিয়ে কেদে উঠলো তনিমা।
– কেন করলাম জানতে চাও? তাহলে শুনো..
পুরো কলেজে তুমি সেলিব্রেটি হয়ে যাচ্ছিলে প্রেম না করার জন্য। সবার মুখে মুখে তুমি এসে গেছিলে। তোমাকে নাকি কেউ পটাতে পারবেনা। তাই আমিই এই কাজটা করে তাদেরকে ভুল প্রমানিত করলাম।
– আর আমাকে বলির পাঠা বানালে? কি লাভ হলো তোমার? অস্ফুট স্বরে কাঁদছে তনিমা।
– লাভের হিসাব মাথায় রেখেই আমি মাঠে নামি। প্রথম লাভ.. আমি আজ থেকে এই কলেজের সেলিব্রিটি হলাম আর সেকেন্ড লাভ… আমি এই বাজির জন্য ওদের কাছ থেকে দুই লক্ষ টাকা পাবো।
– মাত্র দুই লাখ টাকার জন্য আমার ভালোবাসাটাকে তুমি বেচেঁ দিলা রাফ?
– তুমি কি বয়রা? শুনতে পাচ্ছোনা আমি যে বলছি আমি বাজি ধরে এইসব করেছি। কোনো ভালোবাসার টানে করিনি। আর তোমার মতো একটা গেয়ো ভুত কে আমি ভালোবাসবো? ইম্পসিবল। যাও তো এইখান থেকে!!
তোমার সাথে ফালতু কথা বলে টাইম নষ্ট করার মুড আমার নাই। বলেই রাফি বন্ধুদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিলো। খুব হাসি তামাশা করছে ওরা। যা তনিমা সহ্য করতে পারছে না। দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেলো তনিমা।
সেদিনের পর থেকে তনিমা আর একদিনের জন্যও কলেজে আসেনি। দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন কেটে গেলো। রাফি, প্রথমে অনেক হ্যাপি থাকলেও ইদানীং তনিমার কলেজে না আসাটা তাকে শান্তি দিচ্ছে না। খুব মিস করতে লাগলো তনিমাকে সে। কলেজে আসলেই তনিমার কথা তার বড্ড মনে পরে। শুধু কলেজেই না, খাওয়া, পড়া, ঘুমানো কিছুই তার ভাললাগেনা। তনিমাকে সে প্রচন্ড রকমের মিস করতে লাগলো। মনে হতে লাগলো তার দেহে যেনো প্রাণ নেই।
সেদিন কিছু না ভেবেই তনিমার হোস্টেলে চলে যায় রাফি। কিন্তু তনিমাকে খোঁজে পায়নি সে। পাবে কি করে, সেদিনের পরই যে তনিমা হোস্টেল ছেড়ে চলে গিয়েছে। কিন্তু হোস্টেল থেকে তনিমার বাড়ির এড্রেস সে জোগাড় করতে পেরেছে। এড্রেস টা পেয়ে সে যেনো চাদ হাতে পেলো। পরেরদিনই সেই ঠিকানায় চলে যায় রাফি। কিন্তু কপাল খারাপ। সেখানেও তনিমাকে পায়নি সে। এই পরে অনেক জায়গায় খোজেছে সে তনিমা কে। প্রতিবারই সে ব্যর্থ হয়েছে। ইদানিং রাফি অনেক কাদে তনিমার জন্য। কি জন্য কাদে সে জানেনা। শুধু জানে, তনিমাকে তার চাইই চাই। তনিমাকে ছাড়া সে বাঁচবে না। এখন রাফি যেখানেই যায় সেখানেই তার চোখ তনিমাকে খোজতে থাকে। রাফির বন্ধুরাও বেশ অবাক। ঘটনাটা এতো দুর গড়াবে সেটা তারাও বুঝতে পারেনি। তারাও তনিমার জন্য আফসোস করতে থাকলো। রাফির সাথে সমান তালে তারাও খোজতে লাগলো তনিমাকে। কিন্তু কোথাও পায়নি মেয়েটাকে।
১ বছর দুই মাস পর সেদিন ছিলো রাফির ফ্রেন্ড পলাশের জন্মদিন। জন্মদিন উপলক্ষে রাফিসহ সব বন্ধুদের নিজেদের চট্রগ্রামের বাড়িতে ডাকে। সেখানেই সব এরেঞ্জ করেছে। রাফিসহ বাকিরা ভেবেছিলো সেখানে হয়তো অনেক জমকালো বার্থডে পার্টি হবে। কিন্তু গুড়ে বালি। সেখানে গিয়ে জানতে পারলো পলাশের বনেদি ফ্যামিলি হওয়ায় তারা কোনো পার্টি করেনা। তবে কোনো বিশেষ দিন এলে কোনো এতিমখানায় গিয়ে সকল এতিম বাচ্চাদের খাবারের আয়োজন করে। সেটাও বেশ ধুমধাম করে। পলাশের বার্থডে তেও এর ব্যাতিক্রম হয়নি। কথা অনুয়ায়ী পলাশের ফ্যামিলি সহ সব বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে পরদিন সকালে একটা এতিমখানায় যায় পলাশের বাবা।
বেলা ১০:৩০ এতিমখানার বাচ্চাদের বারান্দায় এক সাড়ি বেধে বসিয়ে খাওয়াচ্ছে পলাশের বাবা আর চাচা মিলে খাবার পরিবেশন করেচ্ছে। পলাশ , রাফি আর বাকিরা মিলে বাইরে দাড়িয়ে কথা বলছে। সবাই যখন হাসি তামাশা আর কথা বলায় ব্যস্ত তখন পলাশের চোখ গেলো এতিমখানার একটা রুমের সামনেকিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সবাইকে ইশারা করলো সেখানে তাকানোর জন্য । রাফি সেখানে তাকাতেই চমকে উঠলো সে। পলাশের বাবা একটা মেয়ের সাথে দাড়িয়ে কথা বলছে। মেয়েটি আর কেউনা। স্বয়ং তনিমা। নেভি ব্লু শাড়ি.. চোখে মোটা ফ্রেমের চশমা চুলে লম্বা বেনুনি.. সব মিলিয়ে অসাধারণ লাগছে তনিমাকে। রাফি যেনো পাথর হয়ে গেছে। কিছু না ভেবেই এক দৌড়ে তনিমার কাছে গেলো। ততোক্ষনে পলাশের বাবা সেখান থেকে চলে গেছে। রাফি যেয়ে তনিমার সামনে দাড়ালো। তনিমা কিছুক্ষন অবাক চোখে তাকিয়ে থাকলো রাফির দিকে। তারপর বললো..
– আমাকে কিছু বলবেন আপনি?
– তনু.. কেমন আছো তুমি? কোথায় ছিলে এতোদিন? তোমাকে কতো জায়গাতেই না খোজেছি আমি। হাঁপাতে হাঁপাতে বললো রাফি। তনিমা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো..
– বুঝলাম না আপনার কথা। আমাকে আপনি চিনেন?
– জানি কথাগুলো রাগ হয়ে বলছো। মাফ করে দাও আমায় প্লিজ। তোমাকে হারিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি, তোমাকে আমার কতোটা দরকার। ফিরে এসো আমার কাছে।
– এক্সিউস মি. কি আবোল তাবোল বকছেন? আমি তো আপনাকে চিনি না। এর আগে দেখেছি বলে মনে হয়না। আপনি কি মানুষিক ভাবে অসুস্থ?
– কি বলছো এইসব তুমি? আমি রাফি, তোমার ভালোবাসার রাফি।
– sorry ..
এই নামে আমি কাউকে চিনিনা। বলেই তনিমা রুমের ভিতরে চলে গেলো। রাফি চোখের পানি গুলো ছেড়ে দিলো। পলাশ আর বাকিরা রাফির পিছনে দাড়িয়ে আছে। কিছুই বুঝতে পারছে না তারা। তনিমা সবকিছু কেন অস্বীকার করলো। হতে পারে ওরা মেয়েটাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। তাই বলে এইভাবে না চিনার ভান করবে। রাফি পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে। তখনই পিঠে কারো হাতের ছোঁয়া পেলো। পলাশের বাবা দাড়িয়ে আছে।
– আংকেল, আপনি?
– হ্যাঁ .. মেয়েটাকে তোমরা চিনো?
– হ্যাঁ আমাদের কলেজেই পড়তো। কিন্তু এখন আমাদেরকে অস্বীকার করছে। বলছে আমাদেরকে চিনে না।
– এটাই তো স্বাভাবিক।
– মানে আংকেল?
– ছোট বেলায় মেয়েটির বাবা মারা গিয়েছিলো।
অনেক কষ্টে ওর মা ওকে বড় করেছে, লেখাপড়া শিখিয়েছে। এক বছর হলো মেয়েটির মা মারা গেছে। এমনিতেই নাকি মেয়েটি অনেক ডিপ্রেশনে ছিলো.. মা মারা যাওয়ার পর মেয়েটি মেন্টাললি ভাবে আরো উইক হয়ে যায়। আসতে আসতে মেয়েটির স্মৃতি শক্তি ড্যামেজ হতে থাকে। কিছুদিন পর মেয়েটি পুরোপুরি মানুষিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। অনেক চিকিৎসা করার পর এখন কিছুটা সুস্থ হলেও আগের কথা কিছুই মনে নেই তার। আগের কিছুই তার ব্রেইনে নেই এখন। ইনফ্যাক্ট.. নিজের নামটাও বলতে পারেনি সে।
ওর এক মামা থাকে এইখানে মানুষিক ভাবে সুস্থ থাকার জন্য ওর মামা ওকে এই এতিমখানার ম্যাম হিসেবে নিয়োগ দেয়। সারাদিন বাচ্চাদের সাথে থাকতেই ভালোবাসে মেয়েটা। কথাগুলো বলে পলাশের বাবা সেখান থেকে চলে যায়। রাফিসহ বাকিদের চোখেও পানি কিছুক্ষন পর একগাদা বাচ্চা নিয়ে এতিমখানার এরিয়ার মধ্যে বের হয় তনিমা। তাদের সাথে খেলায় মেতে উঠে সে। রাফি এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে তাদের দিকে। তার চোখে আর মনে কি কাজ করছে তা বুঝার সাধ্য নেই..