ছদ্মবেশী

ছদ্মবেশী

সকালে অফিসে যাবো বলে যেই না রুম থেকে বের হয়েছি। তখনি সামনে তাকিয়ে আমি অবাক হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।

সামনে দাড়িয়ে আছে প্রনয়া আর ওর আব্বু। তখনি আরো বেশি অবাক হলাম ওর আব্বুর কথাগুলো শুনে। যদিও আমাকে বলছে না।

পাশে থাকা আব্বু আর আম্মুকেই বলছে। তবে আমি সেসব শুনে থ হয়ে দাড়িয়ে রইলাম।
– এই বিয়ে কিছুতেই হতে পারে না। (প্রনয়ার আব্বু)
– মানে? (আমার আব্বু)
– আপনাদের ছেলে একটি প্রতারক। একটি বেয়াদপ,
– দেখুন মুখ সামলিয়ে কথা বলবেন। আমি জানি আমার ছেলে কেমন (আম্মু)
– এহহ ধোয়া তুলসি পাতা না সে। বেঈমান বলবো আপনার ছেলেকে।
– কি হচ্ছে কি? আমার ছেলে কি আপনার মেয়েকে ঠকিয়েছে নাকি?
– হুমম সেটাই তো করেছে?
– মানে?
– খুব তো বলেছিলেন আপনাদের পরিবার একটি রুচিশীল পরিবার। প্রেম ভালোবাসা একদমই সাপোর্ট করেন না।
– ঠিকই তো,,এখনো সাপোর্ট করি না। আমার ছেলেও তো প্রেম করে না।
প্রনয়ার আব্বু এবার ভ্রু কুচকে সবার দিকে তাকালো। আমার দিকে তাকিয়ে চোখটা আরো বেশি বড় করে আছে।

আমি মাখাটা টুক করে নিচে নামিয়ে নিলাম। বোঝার চেষ্টা করছি কি বলছে ইনি? এনার কথার আগা মাথা তো কিছুই বুঝতে পারছি না।

তখনি তিনি আবার বললেন..
– খেলাটা দারুন খেললেন। প্রথমে আমার মেয়েকে দেখতে যেয়ে মিষ্টি মিষ্টি কত কথাই না বললেন। আর শেষে কিনা এই অবস্থা? ছি..
– কি হয়েছে একটু বলবেন??
– ন্যাকা সাজছেন কেনো? তবুও বলছি, মেয়ে দেখতে যেয়ে বলেছিলেন আপনাদের ছেলে প্রেম কি জানেইনা। আর এখন..
– এখন কি,??
– এখন আপনার ছেলে আগেই অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করে রেখেছে। ভয়ে নাকি সে আপনাদের জানাইনি।

আমাদের মান সম্মান নিয়ে এভাবে আপনারা না খেলা করলেও পারতেন। তাই বিয়ে ভাঙতে এসেছি।
– কি বলছেন এসব? আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। হয়ত সোসাইটির কেউ মজা করেছে।
ওনারা আর কিছু না বলে চলে গেলেন। তার মানে প্রনয়ারর সাথে আমার বিয়ে হচ্ছে না। কিন্তু আমি এখনো বুঝতে পারছি

এটা কি হল আর কেনই বা হল। আমি সত্যিই জীবনে কোনোদিন প্রেম করিনি। কিন্তু ঠিক এইটার জন্যই আমার বিয়ে ভেঙ্গে গেছে?

তাহলে কোনন হারামি প্যাচ লাগিয়েছে। হয়ত প্রনয়া প্রেম করে তার বয়ফ্রেন্ড এমন করেছে।
– ঠাসসসসস….বেয়দপ ছেলে, তোকে কত বিশ্বাস করেছি আমরা জানিস? আর শেষে কিনা তুই এমন করে বসলি? ছি, ছি..(আম্মু)
– কি করেছি আমি? আমি তো এখনো বুঝতেই পারছি কি হয়েছে?
– ঠাসসসস ফাজলামো করো? সব শেষ করে এখন বলছো কিছুই বুঝতে পারছো না?

থাপড়িয়ে তোর দাঁত সব ফেলে দিবো বেয়াদপ ছেলে কোথাকার..(আব্বু)
– তুই জানিস আমরা প্রেম ভালোবাসা সমর্থন করি না। তার পরও তুই তলে তলে প্রেম করলি। তাকে বিয়েও করেছিস। যা ধুরর হত তো..(আম্মু)
মাথাটা আবার নিচু করে ধীর পায়ে বাড়ি থেকে বের হলাম। মেজাজটাই সকাল সকাল খারাপ হয়ে গেল।

কেউ আমাকে বিশ্বাস করছে না আমি প্রেমই করিনি। শুধু সকাল সকাল দুইটা থাপ্পড় খেলাম।

গাল দুটো লাল হয়ে আছে। গেট টা ঠেলে যেই না বের হবে তখনি..
– ও মাগো…
চিৎতার করে উঠে তাকিয়ে দেখি সাইকেল এ বসে নেহা খিলখিল করে হাসছে। উঠে দাড়িয়ে যেই না ঝাড়ি দিতে যাবো তখনি নেহা বললো..
– কি হাদা, তোর নাকি বিয়ে চান্দে হচ্ছে?
– মানে কি কুত্তী?
– মানে জানো না, তোর নাকি বিয়েটা হচ্ছে না। শুনলাম নাকি তুই প্রেম করে চাপনিতে বিয়ে করেছিস। তা ভাবিটা কে গো?
– ঐ চড় খাইছিস কখনও?
– তোর মত তো আর দুইটা করে খাইনা। কিন্তু তুই আমাকে বললি না তুই তলে তলে এত কিছু করলি? আমাকে তো সব শেয়ার করতে পারতি নাকি?

আমি না হয় ফুফুকে সব বলে মেনেজ করে নিতাম।
– নেহা, তুই যাবি আমার সামনে থেকে?
– তা ভাবিটার নাম কি বল না হাদা..?
– ঐ তোর বড় না আমি? আর তোর ভাই ও হই। বেশি পাকনামো করলে…
– ঐ নিলয়ইন্না সাইকেলের চাবি দে বলছি। না হলে…
– টাটা..
তাড়াতাড়ি অফিস এর দিকে চলে আসলাম। আসার সময় নেহার সাইকেলের চাবি তালা দিয়ে নিয়ে চলে এসেছি। বাড়ি থেকে বের হতে পারিনি।

তার আগেই নেহা সব খবর পেয়ে গেছে। সবই আম্মুর কাজ প্রেস্টিজ এর বারোটা বাজানো ছাড়া উনি পারে না কিছুই।

তবে সকালে এইরকম প্যারাই পড়লাম বুঝিনি কেনো হল? কোন হারামি যে এমনটা করলো কে জানে।
– ঐ তাড়াতাড়ি বাসায় আই। (নেহা)
– কেন?
– ফুফি তোকে নিয়ে আজ মেয়ে দেখতে যাবে। চুরি করে বিয়ে করেছিস সেটা মেনে নিবে না। সো বাসায় আসেন স্যার।
– আজই কি বিয়ে দিয়ে দিবে? (আমি)
– হুমম,,ফুফি তো তাই বললো..
– আচ্ছা আসছি।
সন্ধ্যার একটু আগে বাসায় গেলাম। বাসায় পৌছেই দেখি সবাই আবার জন্য ওয়েট করে আছে। তবে কারো দিকে ভয়ে তাকালাম না।

সবাই আমার দিকে কেমন করে যেনো তাকাচ্ছে।
ভয়ে ভয়ে বললাম..
– আম্মু, আমি কি রেডি হবো?
– চুপপ শয়তান ছেলে। বের হ বাড়ি থেকে। (আম্মু)
– কেনো????
– যাকে দেখতে যাবো তাদের বাড়ি থেকে ফোন করে না করে দিয়েছে। (নেহা)
– মানে?
– মানে তোর বউ সেখানে ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করেছে। তুই নাকি ছ মাস আগে থেকেই বিয়ে করে বসে আছিস? (আব্বু)
– কি বলছো তোমরা এসব? আমি এরাকম কিছুই করিনি বিশ্বাস করো।
– আবার মিথ্যে কথা বলছিস? থাপ্পড় দিয়ে তোর দাত ফেলে দিবো।।(আম্মু)
ধুরর, কিছু না বলে রুমে এসে ধপ করে বসে পড়লাম। ফ্যানের স্পীড বাড়িয়ে গাটা এলিয়ে দিতেই..
– কিরে চান্দু, ভাবিটার নাম বল। (নেহা)
– নেহা ভাই, তুই যা তো সামনে থেকে। মেজাজ আজ সারাদিনই খারাপ হয়ে আছে।
– আচ্ছা আমাকে সব শেয়ার কর, আমি কাউকে বলবো না।
– আম্মু পাঠিয়েছে তাই না সব কিছু পাম দিয়ে জেনে নিতে?
– সত্যিই বলতে সেরকমই তবে আমারো জানার আগ্রহ আছে।
নেহার দিকে তাকিয়ে উঠে দাড়ালাম। রুম থেকে বের হয়ে আম্মুর সামনে যেয়ে বললাম.
– আম্মু বিশ্বাস করো আমি এরাকম কিছুই করিনি। আর বিয়ের দরকার নেই আমার। আমি আগামী কাল অফিসের কাজে বাইরে যাচ্ছি।

ফিরে এসে চাইলে বিয়ে দিতে পারো না চাইলে থাক। কারন, তোমরা আমার কথা শুনছোই না।
আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম রুমে। ততক্ষনে মামা এসে নেহাকে নিয়ে গেছে। আমাদের বাসায় যাই হোক না কেনো আগে মামারা জানবে।

তার আগে জানবে নেহা। কারন বাড়িটা যে পাশাপাশি প্রায়।
(পরেরদিন)
আজ চলে এসেছি নতুন জায়গায়। এখানে থাকতে হবে মাত্র তিনদিন। অফিসের কাজের জন্য এখানে আমাকেই পাঠানো হল।

ঠিকঠাক মত কাজ সেরে যখন হেড অফিসের থেকে গেষ্ট রুমে ফিরে এলাম তখন রাত প্রায়। চাবি দিয়ে দরজা খুলতেই আম্মুর ফোন..
– বলো আম্মু..
– কবে আসবি রে..?
– কেনো?
– নেহার বিয়ে ঠিক করেছি?
– সত্যিই? কবে কখন?
– আর বলিস না, আমাদের এলাকায় তো কবির কাকাকে চিনিস।
– কিহহ ঐ বুইড়ো বিয়ে করবে নেহাকে?
– হুটটট হাদা, ওনার ছেলে না আমেরিকা থেকে বাসায় আসছে, তো সেদিন সন্ধ্যায় নেহা আর তোর মামা যাওয়ার পথে ওনার ছেলে

নেহাকে দেখে পছন্দ করেছে। তাই বিয়েটা ঠিক করে ফেললাম।
– আলহামদুলিল্লাহ…যাক এতদিনে পেত্নীর বিয়েটা খেতে পারবো। তা কবে?
– এই তো দুইদিন পর..
– আচ্ছা আমি বিয়েরদিনই চলে আসবো।
টুক করে লাইনটা কেটে দিল। আম্মুর সাথে যখনি যেভাবেই কথা বলি ভয় করে। গলাটা কেমন যেন শুকিয়ে আসে। তবে মাথাটা এখন ঠান্ডা লাগছে।

একটা খুশির খবর শুনেই। আমাদের নেহার তাহলে ভালো জায়গায় বিয়ে হচ্ছে অবশেষে।
রাতের খাবার খেয়ে এসব ভাবছি। তখনি মনে পড়লো আমার বিয়ের কথা। কে এই মেয়ে, যে কিনা আমার সব বিয়ের ব্যাপারে নাক গলায়?

কিন্তু শেষের বিয়েটাতে তো আমি, আম্মু, আব্বু, আর নেহা জানতো।
তাহলে আর কি কেও জানে? যদি জানে তাহলে সে কে?
আচ্ছা নেহা এমন করে না তো?
আরে না না, নেহা তে সেরকম কিছুই বলেনি। আর হাবভাব তো কোনো সামথিং কিছু বলে না। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম বুঝতে পাইনি।
(বিয়েরদিন)
বাড়িতে এসে দেখি বাড়িটা বেশ করে সাজানো হয়েছে। বাড়িতে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে আম্মুকে বললাম..
– নেহা কই,
– দেখ ওর রুমেই আছে, সাজুগুজু করছে।
নেহার রুমে এসে দেখি নেহা চুপ করে বসে আছে।
– কিরে পেত্নী, কেমন আছিস?
-…….. (মাথা নিচু করে)
– মন খারাপ? কিসের মন খারাপপ রে, বড় হলে মেয়েদের তো বিয়ে দিয়ে দেয় আব্বু আম্মুরা। মন খারাপ করিস না বুঝলি?
-…….
– ঐ কিছু বল..এরাকম থ হয়ে বসে আছিস কেনো? প্রেম করেছিস নাকি, যে বয় ফ্রেন্ডের কথা ভাবছিস??
– আমি এ বিয়ে করতে পারবো না নিলয়। আমি তোকে খুব ভালোবাসি। তোকে ছাড়া কাউকেই বিয়ে করতে পারবো না।

তোর বিয়ে না হয় যার জন্য এতকিছু করলাম। আর কিনা আমারই বিয়ে হয়ে যাচ্ছে? আমি পারবো না রে তোকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে।
কিছু বুঝে ওঠার আগেই নেহা আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেদে কেদে কথাগুলো বললো। আমি এইবার সত্যিই হাবার মত চেয়ে আছি।

আর নেহা তখনও আমাকে জড়িয়ে ধরে কেদেই চলেছে। এতটাই শক্ত করে ধরেছে যে আমি নড়তেও পারছি না।

যেন মনে হচ্ছে আমার থেকে ওকে কেউ নিয়ে যাবে।
– এসব কি বলছিস তুই? (আমি)
হুট করেই ছেড়ে দিল নেহা আমায়। আবার আগের জায়গায় মাথাটা নিচু করে বসে পড়লো। আমি চুপ করে ওর এলোমেলো চুলের

দিকে তাকিয়ে আছি। তাহলে সেই আমার সব বিয়ে ভাঙতো? কিন্তু এখন এটা কি হল? ওর বিয়ে ভাঙবো কি করে?
এসব ভাবতে ভাবতে ওর রুম থেকে বের হলাম। সোজা ছাদে চলে আসলাম। ছাদে দাড়িয়ে পায়চারি করছি। তাহলে এটা দাড়ালো যে,

নেহা আমাকে অনেক আগে থেকেই ভালোবাসে। কিন্তু বলিনি। আর আমাদের পরিবার এসব মানবে না। যদি সবার সামনে যেয়ে বলি

নেহাকে ভালোবাসি, তাহলে ওখানেইআমি শেষ। তাহলে বিয়ে বন্ধ করবো কিভাবে?
ঠিক তখনি মাথায় বুদ্ধি আসলো…ফোনটা বের করলাম। নতুন সিম লাগিয়ে, নেহার আব্বু মানে মামাকে কল দিলাম…
– হ্যালো..(মামা)
– আব্বু এটা করবেন না প্লীজ, নেহাকে আমি খুব ভালোবাসি। ওর বিয়ে এভাবে দিতে পারে না। তাহল আমার অবিশাপে আপনার নাতি নাতনি হবে না।

বলে দিলাম।
– কে তুমি? (কড়া গলায়)
– নেহা আমার বউ, আর আমি ওর বর। তিনমাস আগে আমরা বিয়ে করেছি। বিশ্বাস না হলে নেহাকে যেয়ে জিঙ্গাসা করেন।

আর ছেলের বাড়িতে আমি জানিয়ে দিছি।
ঠিক তখনি শুনি, আমেরিকা ছেলের বুইড়া বাপ এসে বলছে..
– এ বিয়ে হবে না,নেহা বিবাহিত, ওর বর আমাকে কল দিয়ে সব জানিয়েছে।
কথাটি শুনে কলটি তখনি কেটে দিলাম। যাক কাজ হয়ে গেছে। বিয়ে ভাঙার নতুন পদ্ধতি পেয়ে গেছি। এতেই বন্ধ হয়ে যাবে নেহার বিয়ে।

ঠিক তাই হল, ছাদে দাড়িয়ে নিচ থেকে খানিক চিৎকার চেঁচামেচি শুনলাম। পরে সেটাও ঠান্ডা হল।
পরিস্থিতি ঠান্ডা হওয়াতে ছাদ থেকে যেই না নামতে যাবো। তখনি দেখি সামনে নেহা..
– কিরে তুই? শুনলাম নাকি তোর বিয়ে বন্ধ? ইসসস তা বরটা কে? বলনা দুলাভাই এর নামটা কি?
– এটা কি করলি তুই?
– কোনটা,
– বিয়েটা এভাবেই ভাঙতে পারলি? আমাকে তো প্ল্যানটা বলতে পারতি।
– কেনো?
– শুধু দুইটা থাপ্পড় খেতে হল
– হিহিহিহি,,ঐ দিন আমিও খেয়েছিলাম তোর জন্য।
– যাহ তোকে বিয়েই করবো না। গালটা ব্যাথা করছে।
আসতে আসতে ওর কাছে যেয়ে গালদুটি ধরলাম। নেহা আমার দিকে তাকিয়ে আছে। ফরসা গাল লাল হয়ে আছে।

কিছু বোঝার আগেই ওর গালে কিস করলাম..
– যা এখন আর ব্যাথা হবে না। ঔষধ দিয়ে দিছি।
– ফাজিল…
ছাদের রেলিং ধরে দাড়িয়ে আছি। পাশে নেহা দাড়িয়ে, ও হাতের চিকন আংগুলটা আমার হাতের আংগুল এর সাথে খেলা করছে।

দুজন দাড়িয়ে রাতেরর আকাশটাকে দেখছি।
– বাসায় বল (নেহা)
– উমম না, আগে কদিন সত্যিই প্রেম করি তারপর না হয় জানাবো।
– ঠিকই বলেছিস..
দুজনে রাতের আকাশ দেখাতে মনোযোগি হলাম
তবে ওর বা হাত আমার ডানে হাতে মুষ্টি বদ্ধ করে আছে। যেনো একটি ভালোবাসার বন্ধন।

………………………………………..(সমাপ্ত)…………………………………..

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত