ভার্সিটি যাচ্ছি। পাশ দিয়ে দুইটা পিচ্চি ছেলেমেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। দেখে মনে হল ক্লাস 4/5 এ পড়ে। কিন্তু ওদের কথোপকথন শুনে আমি টাস্কি খাওয়া অবস্তা।
মেয়ে -তোর প্রথম ভালোবাসা কে?
ছেলে -আমার মা।
মেয়ে -আর শেষ ভালোবাসা?
ছেলে -আমার বাচ্চার মা।
মেয়ে -তাহলে তো আমি অনেক লাকি।
বিষয়টা নিতে পারলাম না। বুকের বা পাশটা কেমন জানি করে উঠল। জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফেরার পর নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। দুদিন পর রিলিজ দিল। পরে জানতে পারলাম আমার নাকি ছোটখাটো হার্টএটাক হয়েছিল। আজ আবার ভার্সিটি যাচ্ছি। ক্যাম্পাসে ঢুকেই দেখলাম মায়া ফুসকা খাচ্ছে। মেয়েটাকে আমি ভালোবাসি। বলেছিলামও। বাট সেদিন শুধু গালটা লাল হয়েছিল। ওর পাশে গিয়ে বসলাম। আমাকে দেখল কিন্তু কিছু বলল না। ওর ফুসকা খাওয়া দেখতে লাগলাম। আচ্ছা মেয়েটা এভাবে ফুসকা খায় কেন? ফুসকা মুখে দিতেই মুখটা লাল হয়ে যায়। চোখ পানিতে টলমল করে উঠে। নাকটা টেনে টেনে একটার পর একটা ফুসকা মুখে পুরে দেয়। এই দৃশ্যটা দেখলেই কেমন বুকের বা পাশটা কেমন করে উঠে। ওকে বললাম – মনে পড়ে সেইদিন?
মায়া -কোনদিন?
আমি -যেদিন হয়েছিল আকাশ মেঘলা, অন্ধকারময় ছিল পরিবেশ, আর তুই দাড়িয়ে ছিলি একেলা।
মায়া -যা ভাগ, আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
আর নিতে পারলাম না। বুকের বা পাশটা কেমন হাহা করে উঠল। জ্ঞান হারালাম। আবার নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম। এইবার হার্টএটাক হয়েছিল কিনা তা আর জানা যায় নি। আবার আমি ভার্সিটির পথে। মনটা খারাপ।
হঠাৎ কোত্থেকে কুদ্দুস ভাই আইসা বলল, চল আমার মেসে, লালপানির ব্যাবস্তা করছি। এই ভাইয়ের মেসে যেতে ভয় করে কারন দিনের বেলায়ও মশারা রাজত্ব করে। তারপর ও রাজি হলাম। অনেকদিন হল খাই না এসব।
মেসে ঢুকতেই দেখি কুদ্দুস ভাইয়ের রুমমেট বশির ভাই একের পর এক মশা মারতেছে আর উনার ভাত খাবার প্লেটে রাখতেছে। এটা দেখেই বুকটা কেমন করে উঠল। কারন আগের বার এই প্লেটেই আমি বিরিয়ানি খেয়ে গেছিলাম। বুকের বা পাশে হাত রেখে বশির ভাই কে বললাম – তা ভাই কয়টা মশা হত্যা করলেন? বশির ভাই -২০টা। ১২টা ছেলে মশা আর ৮টা মেয়ে মশা। আমি টাস্কিত হয়ে বললাম কেমনে? বশির ভাই -কারন ১২টা মশা বসেছিল মদের বোতলের উপর আর বাকিরা বসেছিল মোবাইলের উপর। আর নিতে পারলাম না। বুকের বা পাশটা কেমন জানি করে উঠল। বুঝলাম জ্ঞান হারাচ্ছি। তাই কোনোমতে এক প্যাগ মেরে শান্তি মত জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান আসার পর আবার নিজেকে হাসপাতালে আবিষ্কার করলাম।
আজকে অনেক সাহস নিয়ে আবার ভার্সিটির পথে যাত্রা করলাম। বুকের অবস্তা ও আগের থেকে ভালো। ক্যাম্পাসে ঢুকতেই বড়মামার জরুরি ফোন। তাই তড়িঘড়ি করে মামাবাড়ি গেলাম। গিয়ে যা শুনলাম তা শুনার পর বুকের ব্যাথাটা বেড়ে গেল। আমার ষাটোর্ধ দাদু কোত্থেকে এক পঞাশোর্ধ এক বুড়িকে বিয়ে করে এনেছেন। নতুন বউএর মুখ দেখার পর আর কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। জীবনে এই প্রথম এত সুন্দর বুড়ি বউ দেখালাম। মামারা বিষয়টা মেনে নিতে পারলেন না।তারা তাদের বউদের নিয়ে দাদুর সাথে আলাদা মিটিং এ বসলেন। সাথে আমিও। দাদু কেন এই বয়সে এই রকম কাজ করলেন এটা নিয়ে অনেক তর্কবিতর্ক হল। তখন দাদু বললেন –
আচ্ছা আমাকে গোসল কে করিয়ে দেয়? বড়মামি বললেন -আমি। আচ্ছা আমাকে কে খাইয়ে দেয়? মেঝমামি বললেন -আমি। আচ্ছা আমার মশারী কে টাঙিয়ে দেয়?
ছোট মামি বললেন -আমি।
তখন দাদু বললেন -আচ্ছা তুমরা তো মশারী টাঙানোর পর চলে যাও। একবারো কি ভেবে দেখেছ যে তুমরা চলে যাবার পর দরজার ছিটকিনি লাগানোর জন্য ও একটা লোক দরকার। আর পারলাম না। বুকের বা পাশটা আবার মোচড় দিয়ে উঠল। জ্ঞান হারালাম। অনেক ক্ষণ হয়ে যাবার পরও বুঝতে পারলাম কেউ আমাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে না। চোখ খুললাম। দেখলাম মামামামিরা সবাই অচেতন অবস্তায় পড়ে আছে। বুকটা আবার ধকধক করে উঠল। তাই নিজ দায়িত্বে বুকের বা পাশে হাত রেখে হাসপাতালের দিকে রওয়ানা হলাম। না আর ভার্সিটি যাব না। যেইদিন ই ভার্সিটি যাবার চেষ্টা করি উল্টো সেইদিন আমার জায়গা হয় হাসপাতালে।।।