হেড মাস্টারের মেয়ে

হেড মাস্টারের মেয়ে

প্রতিদিনের মতো সেদিন ভোরেও নিজের হাতে লাগানো গোলাপ গাছটাতে জল দিচ্ছিলাম,হঠাৎ একটা
বাচ্চা আমারই বাড়ির নীচতালা থেকে এসে বলল,
>>”ভাইয়া,দুইটা ফুল দিবা”,
>>”তুই কে রে,তোকে তো দেখিনি কোনোদিন”
>>”আমি এই বাড়িতে নতুন এসছি।”
তারপর আমার মনে পড়ল কাল রাত্রে বা নতুন ভাড়াটে নীচে এসেছে তবে কে বা কারা এসেছে জানি না।
>>”টুটুন, ওই টুটুন কোথায় গেলি”??
হঠাৎ নারী কন্ঠস্বরে চমকে গেলাম। তারপর দেখি একটা চশমা পরা মেয়ে বাচ্চা ছেলেটাকে ডাকছে।
>>”আপা আসছি”,বলে বাচ্চাটা চলে গেল।
ও আমার পরিচয়টা দেই,আমি সায়ন,অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। পড়াশুনাটা মন দিয়ে না করলেও একটা
কাজ করতে পারি তা হল সাইকেল চালানো আর সাইকেলে ঘুরে বিশ্ব ঘোরার একটা সুপ্ত ইচ্ছা বা আমার
আছে।আর ঐ যে মেয়েটা ওকে আমি চিনি মানে আমার স্কুলের প্রধান শিক্ষক মহাশয়ের মেয়ে শ্রেয়া,ইন্টার
দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে।তাই আগে অনেকবার ক্রাশ ছেলেও কিছু করতে পারিনি।তবে কি হেডস্যার
বাড়িতে ভাড়া এলেন,এসব ভাবতে দোতালায় গিয়ে,
>>মা,নতুন কে ভাড়া এসছে গো,
>>তোর পুরানো স্কুলের হেডস্যার,
>>আর কি কোনো লোক পেলে না??
>>কেন খারাপ কি?খুব ভাল আর সজ্জন মানুষ উনি।
>>কোন হেডস্যার সজ্জন না??
তারপরই বাবা চলে এল আর আমরা চুপ করে গেলাম কারণ বাবা সামনে বেশি কথা বলার সাহস আমার নাই।
একটু বইখাতা নিয়ে নাড়াচাড়া করার পর ভার্সিটি গেলাম আর স্কুল জীবনের
বন্ধু প্রেমের ওস্তাদ রাহুলের সাথে ব্যাপারটা ডিসকাস করতে রাহুল বলল,
>>ভাই,উপরওয়ালা তোর কাছে শ্রেয়াকে পাঠিয়েছে
>>না ভাই,সে হেডমাস্টারের মেয়ে,
>>এখন কি তুই আর স্কুলে পড়িস?
>>না তা না,এই লোকটাকে আমি কত ভয় পাই তা তুই তো জানিস।
>>ভার্সিটি তে পড়ছিস আর ভয় পাচ্ছিস,তোকে প্রেম করতে হবে হবে না,আমি বরং শ্রেয়ার সাথে প্রেম করি।
>>না দোস্ত তুই কিছু একটা কর।
>>আচ্ছা হোক আজ দিনটা ভাবতে দে।
তারপর কলেজ থেকে আমার এলাকাখ্যাত সাইকেল টা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেট টা খুলব দেখি
শ্রেয়া আমার সাধের বাগান দেখছে আর আমাকে দেখেই ঘরে পালিয়ে গেল।যাইহোক আমি বাসায় গিয়ে
ফ্রেশ হয়ে আবার সাইকেলটা নিয়ে পাড়াভ্রমণে বের হব,সামনে হেডস্যার,
>>কি সায়ন,তোমার সাইকেল ছাড়া কি তুমি থাকতে পার না?? আমার সাইকেল,আমি চড়ি আপনার
অসুবিধা কি বলুন তো, আর কত দিন জ্বালাবেন,(মনে মনে)
>>নানা মামানে এএমনি স্যাস্যারর,
>>কি হল তোতলাচ্ছ কেন??এখনও ভয় পাও,বাহহহহ আচ্ছা যাও। আমিও ঘুরতে বের হলাম।সন্ধাবেলা
বাড়ি ফিরতে দেরি হয়ে গেল। ফিরে দেখি হেডস্যারের স্ত্রী আন্টি আর ওনার মেয়ে বসে আমারমায়ের সাথে গল্প করছে।

আমি দেখেও না দেখার ভান করে রুমে চলে গেলাম।ভাবছি,”মহারানী হঠাৎ ওপরে কেন??”একটু পর,
>>বাবু,শ্রেয়া নতুন সাইকেল কিনেছে একটু শিখিয়ে দিবি তো।
>>আমি,কেন শেখাতে যাব??(অবাক হয়ে গেছি আর কি)
>>না তোর আন্টি এত করে রিকুয়েষ্ট করলেন যে,আমি কথা দিয়ে ফেলেছি।
>>আমাকে জিঙ্গাসা না করে কথা দাও কেন??(মনে তো আনন্দের বন্যা বইছে)
>>আচ্ছা হোক বাবা এবারটা একটু দেখ।
>>আচ্ছা হোক যাও কাল দেখা যাবে। এদিকে আমি ভাবছি, মাইয়া হঠাৎ সাইকেল কিনতে গেল কেন?

পরের দিন কলেজ গিয়ে,
>>দোস্ত মহা ফ্যাসাদে পড়ছি।
>>কেন কি হল।
>>নতুন চাকরি পাইছি।
>>চাকরি পাইছস্ ট্রিট দে।
>>আরে ধুর,এ হল শ্রেয়াকে নতুন সাইকেল শেখানোর চাকরি।
>>তাহলে ডবল ট্রিট দে ভাই,তোর তো লাইন ক্লিয়ার। বলেছিলাম না,উপরওয়ালা পাঠিয়েছে।
>>কিন্তু আমি তো কাউকে সাইকেল শেখাইনি।
>>তাতে কি এবার শিখাবি। তারপর কলেজ থেকে ফিরে ফ্রেশ হয়ে বসছি হঠাৎ আন্টি এসে,
>> সায়ন,একটু যাও না।
>>হুম আন্টি যাচ্ছি। এদিকে যত নীচে যাচ্ছি আমার হার্টবিট তত বাড়ছে। যাইহোক নীচে
গিয়ে আমার স্বপ্নের রাণী সাইকেল নিয়ে রেডি।
>>চলুন যাওয়া যাক।(আমি)
>>হুম।(শ্রেয়া)
সামনের মাঠটাতে নিয়ে গিয়ে বললাম,
>>সাইকেলে উঠে বসুন।সোজা
তাকাবেন।নীচের দিকে তাকাবেন না।ইত্যাদি ইত্যাদি।
তারপর কিছুক্ষণ ক্যারিয়ার ধরে রেখে সাইকেল চালানো শেখাচ্ছি,হঠাৎই ঘটল বিপত্তি।একটা ছোটো ইঁটে
ধাক্কা লেগে পুরো ডিসব্যালেন্স হয়ে আমাকে ধাক্কা মেরে ফেলে শ্রেয়া এসে পড়ল আমার বুকের ওপর।আর
গোটা মাঠ আমার দিকে তাকিয়ে আছে যেন বিরাট অপরাধ করে ফেলেছি।আর শ্রেয়া মুচকি হেসে
উঠে পড়ল।আর আমি তো পুরাই শকড।কি করতে এলাম আর কি হল।যা হোক কয়েকদিনের চেষ্টায় সাইকেল
চালানোটা শেখাতে পারলাম। সাইকেল শিক্ষা দিতে গিয়ে একটা ব্যাপার বুঝলাম শ্রেয়া আমাকে ভাল••••।

>>ভাই,শ্রেয়ার ব্যাপারটা আমার কাছে কেমন লাগছে।(আমি)
>>কেন ভাই।(রাহুল)
সবকিছু শেয়ার করার পর বলল,” ভাই তুই প্রোপোজ কর।”এরপর কিন্তু দ্যারি হয়ে
যাবে।তারপর,বলতে বলতে পাড়ায় নববর্ষের অনুষ্ঠান চলে এল।সবাই ব্যস্ত হয়ে গেলাম। পয়লা বৈশাখের দিন
সন্ধ্যায় হঠাৎ কাজ করছি,গান ভেসে এল,”এস হে বৈশাখ এস এস”।গিয়ে দেখি
শ্রেয়া গাইছে।গান শেষে স্টেজ থেকে নামার সময় আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে
চলে গেল।পরের দিন সকালে গিয়ে দেখলাম আমার বাগানে সবচেয়ে বড়ো গোলাপ ফুটেছে।ভাবলাম এইটা
দিয়েই প্রপোজ করব।ব্যাস পরের দিন বিকালে শ্রেয়া কোচিং থেকে ফিরছিল,আমি আমার প্রিয় গোলাপ টা নিয়ে গেলাম,
>>শুনছেন,
>>কি
>>বলছিলাম যে ,বলছিলাম যে
>>কি বলছিলেন,আমার এত সময় নেই। তাড়াতাড়ি বলুন।
>>(গোলাপগুলো সামনে নিয়ে),এটা তোমার জন্য।আজ থেকে আমার বাগানের সব গোলাপ তোমাকে
দিতে চাই।বলে দিলাম দৌড়। গোলাপটা তার হাতেই দিয়েছিলাম। তারপর দুদিন তার সামনে যাইনি ভয়ে।
তিন দিনের দিন,
>>এই যে মিষ্টার পালালেন কেন সেদিন??
>>না মমমানে।
>>কি স্পষ্ট করে বলুন।
>>ভালোবাসেন বলতে পারেন না।
ক্লাস নাইন থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতেন।তাইতো আপনাদের বাড়িভাড়ার বিজ্ঞাপন
দেখে আমি বাবাকে বলে রাজি করাই।আমিই আমার আম্মুকে রাজি করাই আপনার কাছে সাইকেল শিখব
বলে।আর আপনি??ভীতুর ডিম।সাইকেল ছাড়া কিছু বোঝেন না।
>>আমি মানে বুঝতে পারিনি।আই লাভ ইউ।
>>আই লাভ ইউ টু। এভাবে শুরু হল নতুন প্রেমকাহিনী।যদিও
এটা হেডস্যার জানেন না।তবে আমি আর স্যারকে ভয় পাই না।হবু শ্বশুরকে কেউ ভয় পায় ||||
কেমন হল জানাবেন কিন্তু।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

আরও গল্প

সর্বাধিক পঠিত