Loading...
এই উঠো তো জান বাবু! কি হলো উঠো? প্লেট টা পরিষ্কার করে দাও, আমি সকালের নাস্তা খাবো! খুব ভোরে আমার স্ত্রীর ডাক শুনে উঠে পড়লাম , ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে বললাম; যাও সোনা নতুন একটা প্লেট বের করে খেয়ে নাও! ময়লা প্লেট গুলো রেখে দাও আমি ঘুম থেকে উঠে পরিষ্কার করে দিবো!
পারমাণবিক বোমার মত দ্বিগুণ শক্তিশালি একটা চিৎকার দিয়ে আমার স্ত্রী বলিলো, নতুন প্লেট কোথায় পাবো? নতুন সংসার আমাদের নতুন প্লেট নেই তুমি তো জানোই। আমি ঘুম ঘুম চোখে আমার স্ত্রীকে বললাম আম্মুকে বলো প্লেট পরিষ্কার করে দিবে, আমি এখন ঘুমাবো বেবী। আমার স্ত্রী তাহার কোমল হাত দিয়ে পিঠের উপর রাখতেই আবিষ্কার করলাম এতোবড় তাল পড়লো কোথা থেকে? ধুম করে উঠে বললাম কি বাবু কি হয়েছে? থাপ্পর দিলে যে? আমার স্ত্রী রাগে কটমট করে বললো এখানে আমার শ্বাশুরী আসলো কোথা থেকে? পাগল হয়ে গেলে? আমি একটু স্থির হয়ে চিন্তা করলাম, তাইতো আমি আর আমার স্ত্রী ঢাকাতে একটা ছোট্ট ফ্ল্যাটে থাকি। এখানে আমার আম্মা থাকার প্রশ্নই আসে না। আমি ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে বললাম, ঠিক আছে জান বাবু তুমি একটু বসো আমি প্লেট পরিষ্কার করে এনে দিচ্ছি।
বিয়ের আগের দিন সে বলেছিলো কিছু কাজ আমাকে করতে হবে, ‘প্লেট পরিষ্কার করা তার মধ্যে অন্যতম। আমিও কথা দিয়েছিলাম বেবী আমাদের সংসারে তোমাকে প্লেট টাও পরিষ্কার করতে দিবো না, আমি করে দিবো সোনা। আজ হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি সকাল বেলা প্লেট পরিষ্কার করা কেমন সুখের কাজ! ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে গেলাম প্লেট পরিষ্কার করতে। সুন্দর করে প্লেট পরিষ্কার করছি। প্লেট পরিষ্কার করে আমার স্ত্রীর হাতে দিলাম। আমার স্ত্রী প্লেট নিয়ে খেতে গেলো, আমি বেডে আসলাম, ঘুমাবো বলে! হঠাৎ আমার স্ত্রী বললো এই শুনছো প্লেট দিয়ে হুইল সাবান এর মত গন্ধ বের হচ্ছে।
আমি অবাক হলাম। পরে আবিষ্কার করলাম ভিম বার এবং কাপড় পরিষ্কার করার সাবান দেখতে একই রকম! ভিমবার এর পরিবর্তে হুইল সাবান দিয়ে প্লেট পরিষ্কার করেছি। হায়! হায়! চোখে এখনো প্রচুর ঘুম। আমার স্ত্রী অনবরত বমি করেই চলছে। বমি আর থামে না। আমার স্ত্রীকে বিছানায় বসে রেখে বললাম; সোনা তুমি চিন্তা করো না আমি ফার্মেসী থেকে মেডিসিন নিয়ে আসছি! ঘুম ঘুম চোখ নিয়েই চার তলা থেকে দ্রুত নামতে শুরু করলাম। আমার হৃদয়ের একমাত্র রানী বমি করছে! অসহ্য যন্ত্রণা হচ্ছে আমার। আরো দ্রুত যেতে হবে। দ্রুত হাটতে গিয়ে ঘটলো এক বিপদ। এক মেয়ে সামনে থেকে আসছে, আমি সাইড দিচ্ছি কিন্তু সে যেনো আমার দিকেই তেড়ে আসছে! আমি আর একটু সাইড দিতেই পাশে থাকা ড্রেনের মধ্যে আমার বাম পা চলে গেলো! কিঅভদ্র মেয়েগুলো সব! পা দিয়ে ঢাকার ড্রেনের স্মেল বের হচ্ছে। ব্যাপার না! উদ্দেশ্য ফার্মেসীর দোকান।
ফার্মেসির দোকানে গিয়ে বললাম, Tab: pase চারটে দিন তো। মেডিসিন নিয়ে জলদি বাসায় এসে স্ত্রীকে খাইয়ে দিলাম। কিন্তু কিছুতেই বমি কমছে না। মহা জ্বালা, আজকাল মেডিসিনের মধ্যেও ভেজাল ঢুকে পড়েছে। কিছুক্ষণ পর আমার স্ত্রী বলছে, জানো মাথাটা খুব দুর্বল হয়ে আসছে, ঘুম ঘুম ভাব। উফ! এমন লাগে কেনো? আমি তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললাম কিছুই হবে না জান বাবু, এগুলা ভালো হওয়ার লক্ষণ। আমার স্ত্রী আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে ফেলছে, আর বলছে সে নাকি ঘুমাবে, খুব ঘুম পাচ্ছে! আমার খটকা লাগলো, সারারাত ঘুম থেকে উঠে কেউ যদি বলে আবার ঘুমাবে চিন্তা হওয়ার ই কথা!
ঔষুধের পাতাটা দেখলাম,, হায় আল্লাহ! একি সর্বনাশ! এটাতো বমিটিং (বমির) মেডিসিন নয়। এটা ক্লোনাজেপাম গ্রুপের স্লিপিং পিল। হায় হায় বমির মেডিসিন Tab: prozine আনতে গিয়ে ভুলে Tab: pase নিয়ে এসেছি। কি হবে এখন? লক্ষ্য করলাম আমার স্ত্রী শান্ত হয়ে ঘুমোচ্ছে। আচ্ছা একটু ঘুম দিক সে! একটা স্লিপিং পিল খেলে কিছুই হবে না। আমি রান্না ঘরে গিয়ে রান্না করবো বলে মনস্থির করলাম। সকালের হাল্কা নাস্তা সেরে নিলাম। কোন খাবার আর অবশিষ্ট নেই। ঘুম থেকে উঠে আমার স্ত্রী যদি গরম বাসমতী চাউলের ভাত এবং বেগুন পোড়ানো ভর্তা পায় তাহলে সে খুব খুশি হবে! পৃথিবীর সবচেয়ে মজাদার খাবার হলো গরম ভাত আর পোড়ানো বেগুন ভর্তা। শুধু চিকেন আর গো-মাংস সুখকর খাদ্য নয়, বরং অনেক রোগের মাধ্যম এগুলো। বেগুন পুড়িয়ে ভর্তা করার নিয়ম-
ক) বেগুনের মধ্যে চাকু ঢুকিয়ে দিয়ে আগুনে পোড়ানো
খ) আগুনে পোড়ানোর পর বেগুনের চামড়া কালো খোসা ছাড়ানো।
গ) পেয়াজ কুচি কুচি করে কাটতে হবে
ঘ) শুকনা মরিচ কাড়াইতে হাল্কা তেল দিয়ে ভেজে নিতে হবে।
ঙ) কুচি কুচি করা পেয়াজ এবং শুকনা মরিচ লবণ দিয়ে সরিষার তেল দিয়ে আগে ভর্তা করে নিতে হবে।
চ) তারপর পোড়ানো বেগুন ওই ভর্তার মধ্যে দিয়ে সুন্দর করে আবার ভর্তা করতে হবে।ব্যস হয়ে গেলো গরম গরম জম্পেস পোড়া বেগুন ভর্তা। শাওয়ার নেয়ার পর দেখলাম আমার স্ত্রী ঘুম থেকে জেগে উঠেছে। তার কাছে গিয়ে বললাম নিজের রান্নার কথা। সে খুব আনন্দ পেলো। আমায় বললো সে বমি করেছে দেন অস্বাভাবিক ঘুমের জন্য উইকনেস ফিল করছে, তাই আমি যেনো তাকে খাইয়ে দিই। আমি তারাতারি করে প্লেটে গরম বাসমতী চাউলের সাদা ভাত এবং বেগুন ভর্তা নিলাম। কিন্তু কিসের যেনো স্মেল বারংবার হানা দিচ্ছে।
ভাত মাখিয়ে আমার স্ত্রীর মুখে তুলে দিলাম আমার স্ত্রী ভাত সব উগড়ে ফেলে দিলো আমি লাফ দিয়ে উঠে বললাম কি হয়েছে বাবু? আমার স্ত্রী উত্তেজিত কন্ঠে বললো, তুমি এইটা কি করেছো?বেগুন ভর্তা দিয়ে নারিকেল তেলের গন্ধ কেনো? আমি বোকার মত হা করে তাকিয়ে আছি। আমার স্ত্রী তার কোমল দুহাত দিয়ে আমার চুল ধরে টানাটানি করছে আর বলছে আগডুম বাগডুম ঘোড়াডুম সাজে নারিকেল তেল দিয়ে বেগুন ভর্তা করে আজকে আমি খাবো না! বমি আর করবো না। তোর চুল ধরে টানবো মনের সুখে গান গাইবো।
