প্রেম বিবাহ প্রেম

প্রেম বিবাহ প্রেম

-বৌমা চা হয়ে গেছে?
-এই তো মা দিচ্ছি। এই নিন মা(হাতে কাপটা দিলো)।
-(চায়ে চুমুক দিয়ে) বৌমা চিনি দিতে ভুলে গেছো বোধহয় ?
-এমা! চিনিটা দিই নি না? দাঁড়ান আমি দিচ্ছি।
-না থাক তার আর দরকার নেই। আজ কাল একটু অন্যমনস্ক লাগছে তোমাকে বৌমা..
-না মা সেই রকম কিছুই না…

-বিল্টুর সাথে রোজ ঝগড়া হয়, রোজ তোমাদের কি নিয়ে অশান্তি হয় মা?
-না মা আসলে সেই রকম কিছুই না।
-শোনো আমি রোজ পাশের ঘর থেকে শুনতে পাই, তোমরা রোজ রাতে ঝগড়া করো, সেদিন তো বোধহয় ফুলদানি টাও ভেঙে দিলে। দেখো মা এত অশান্তি ভালো না এতে ঘরের বাস্তু ঠিক থাকে না।
-মা আমি কাজ গুলো সেরে নি।
-এখানে এসে বসো তো দেখি, কোনো কাজ নেই এখন তোমার। বল কি হয়েছে?

-আসলে মা ইদানিং আপনার ছেলে খুব রাত করে ঘরে ফেরে, তার ওপর কিছু বললে শুনতে চায়ে না। রোজ বাইরে খেয়ে আসে, আমার রান্না গুলি রোজ সকালে ফেলা যায় , আজকাল অল্পতেই রেগে যায়, কোনো কিছু বললেই তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠে, এই কয়েকটা মাস আমি একদম ভালো নেই মা, একদম ভালো লাগছে না। মনে হচ্ছে সব ছেড়ে…..

-পালিয়ে যাই তাই তো? তা বলছি পালালে কি সমস্যার সমাধান হবে? হবে না তো? তো সমস্যার সম্মুখীন হও। ওকে জিজ্ঞেস কর, ওর সাথে কথা বলো দেখবে নিশ্চয় সেই কারণটা খুঁজে পাবে।

-মা ও আমার সাথে কোনো কথাই বলে না আজ কাল।
-কেন বলে না কখনো ভেবেছো? এখন তো তোমাদের এই ইন্টারনেট এর যুগ, একটু ভালো করে ভেবে বল তো তোমরা দুজন দুজন কে সেই অর্থে কত সময়ে দিয়ে থাকো?

-মা.. ও কাজে থাকে আর আমার ও কাজ থাকে, কাজে ছুটি পাই না তাই….
-ও গুলি তো বাহানা রাগ করো না তোমরা যখন প্রেম করতে কাজ কামাই করতে না? তো এখন কেন এত কাজের চাপ বাড়লো?
-না! মা! আসলে…
-আসলে তোমরা ভালোবাসতে ভুলে গেছো।

ভালোবাসা সেটাই যেখানে হাজার কাজের ফাঁকেও একটু সময়ের জন্য হলেও মানুষ টার সাথে কথা বলা। এখন তো তোমাদের ফোন আছে যখন তখন কথা বলতে পারো,আমাদের সময়ে সেই সুযোগ ও ছিল না। প্রেম করার সময়ে তোমরা ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলতে কত রাত জেগে,আমি তো সবই শুনতাম,কাজ কামাই করে দেখা করা , ঘুরতে যাওয়া, সিনেমা দেখা, সবই করতে। মানুষটা যখন কাছে ছিল না তখন কাছে পাওয়ার আকাঙ্খা ছিল আর আজ যখন সেই মানুষ টা তোমার কাছেই তখন তার কোনো মূল্য নেই? প্রেমের মৃত্যু ঘটল নাকি বিয়েতে! এমন করাটা কি ঠিক হলো? কিন্তু প্রেম করে বিয়ে করেছ, এ কথা তোমাদের চারপাশের মানুষজন হামেশাই যে বলে থাকেন। বিয়ের আসরে এটি জনপ্রিয়তম রসিকতাও বটে, যা অনুষ্ঠানের বাতাসে উড়তেই থাকে। আসলেই কি বিয়ের পর প্রেম উবে যায়? বিয়ের পর কি প্রেম হয় না?

-মা সেটা নয়।
-কি সেটা নয় সেটা নয় করছো?

‘যে ভালোবাসা…আকাশে মুক্ত থাকে অন্তরের মধ্যে সে দেয় সঙ্গ; যে ভালোবাসা…প্রতিদিনের সবকিছুতে যুক্ত হয়ে থাকে সংসারে সে দেয় আসঙ্গ’ ভালোবাসছি-বেসেছি-বাসব; প্রেম করে বিয়ে করছি, বিয়ে করেও প্রেম করব। তখন আমার ২১,সদ্য বিয়ে করেছি| বিশ্ববিদ্যালয় পেরিয়ে চাকরিতে ঢোকা এক তরুণী আমি। বিয়ের আগে ভালোবাসা হয়নি ওনার সাথে । দূর থেকে চেনাচেনি নেই এমন মানুষটিকে বিয়ে করেছিলাম পারিবারিকভাবে। বিয়ের পর কাছাকাছি হয়ে মাস ছয়েকেই গভীর প্রেমে পড়লেম দুজনেই|

বিয়ের পরও ‘প্রথম’ প্রেম হয়। তিনি ওতো কিছু মাথায় রাখতে পারতেন না, আমার জন্মদিন তো ছাড়ো বিবাহ বার্ষিকী ও প্রথম দুবছর ভুলে গেছিলেন তোমার শ্বশুরমশাই। কিন্তু আমি এত টুকুও রাগ করিনি কারণ আমি বুঝতাম কত চাপ থাকে বাড়ির বড় ছেলে হওয়ার , তাছাড়া আমি ও তো কাজ করতাম.. কাজের চাপ যে কি সেটাও বুঝতাম। আমি প্রতিটা বিশেষ দিনগুলোকে ওনার কাছে বিশেষ করে তুলে ধরতাম, ব্যাস ওই দুটো বছরের পর থেকে বিশেষ দিন গুলো আমাদের হয়ে উঠলো, আমার প্রিয় খাবার, প্রিয় গান , প্রিয় সিনেমা, সাথে প্রিয় মানুষটা। তারপর বিল্টু এলো । কিন্তু আমাদের দিন গুলো আমাদেরই রইলো বিশেষ। চোখ থেকে মুক্ত ঝরে পড়লো অশ্রুরুপে।

-মা…
-আমি ঠিক আছি বৌমা। adjust নয় ভালোবাসো, দেখবে সেও তোমাকে সবটা উজাড় করে দিয়েছে। চোখ দুটো মুছে নিলো মলিনী দেবী….
-বৌমা কাল আমি একটু বেড়াবো তারপর মন্দির হয়ে বাড়ি ফিরবো রাত হবে একটু।
-আচ্ছা মা।
-কাল শনিবার বিল্টুর হাফ ছুটি না?
-হ্যাঁ মা
-বিয়ের তিন বছর হতে চলল আমি ঠাকুমা কবে হবো?
-না মানে মা
– হা হা হা পাগলী মেয়ে লজ্জা পাচ্ছে দেখো কেমন। কাল দিনটা তোমাদের হোক।

মলিনীদেবীর কথা গুলো শুনে সৃজার মনে হলো, কৈ সেও তো কখনো তার স্বামীকে বিশেষ অনুভব করায় নি। বিয়ের আগে এগুলো হতো বটে কিন্তু এখন তো সম্পর্কে এতটা তিক্ততা।মলিনীদেবীর কথাগুলো সৃজার মনে গেঁথে গেল।

শনিবার বিকেল ৫ টা কলিং বেলের ঘন্টা বেজে উঠল। দৌড়ে এলো সৃজা। দরজা খোলার সাথে সাথে বিল্টু অবাক চোখে তাকালো এত তার বউ নয়, এত শ্রী তার প্রেমিকা। এত চাপে ঝামেলাতে বিল্টু কত দিন তার বউয়ের মুখটা দেখে নি। আজ বিস্মিত হলো। ভিতরে ঢুকতেই সৃজা জড়িয়ে ধরলো বিল্টুকে, বিল্টুও নিজেকে হালকা অনুভব করলো কত দিন সে সৃজার এই ছোঁয়া টা পায়েনি। সূচনা হলো তাদের নতূন প্রেমের অধ্যায়। তুমি ভালোবাসো তোমার ওই ও পারের বন , যেথায় গাঁথা ঘনচ্ছায়া পাতার আচ্ছাদন । যেথায় বাঁকা গলি নদীতে যায় চলি , দুই ধারে তার বেণুবনের শাখায় গলাগলি । মলিনীদেবীর কণ্ঠ ক্ষিণ হয়ে এলো।

-দেখো আমি এসেছি তোমার প্রিয় গঙ্গার তীরে, যেখানে আমরা একসাথে সময়ে কাটাতাম। তোমার প্রিয় রঘুর দোকানের তেলেভাজা, আর আমার কণ্ঠে তোমার প্রিয় রবীন্দ্রনাথ। আজ যে ১১ই এপ্রিল। আজ কি করে ভুলি? আজ যে আমাদের বিশেষ দিন।

গল্পের বিষয়:
ভালবাসা
DMCA.com Protection Status
loading...

Share This Post

সর্বাধিক পঠিত